#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১২]
” আজ রোহানকে দেখলাম হসপিটালে ভর্তি।অনিমা তুমি যদি ছেলেটার মুখ দেখতে আঁতকে উঠতে।”
” তুমি কেন গেলে সেখানে?”
” আমার কাজ ছিল বিধায় আমি গিয়েছি।হঠাৎ দেখা হলো রোহানের দুলাভাইয়ের সাথে সে বললো সবটা।আমিও গিয়ে এক নজর দেখে এলাম।ঠোঁট ফুলে কলাগাছ জিহ্বা নাড়ানোর শক্তিও নেই।”
” পোকা কামড়েছে নাকি?”
” না না তাকে নাকি কে বিছুটি পাতা খাইয়ে দিয়েছে।চুলকাতে চুলকাতে ছেলেটার অবস্থা ভীষণ খারাপ।”
ভাতের লোকমা তুলে কেশে উঠলো খুশবু।রাত বাজে বারোটা তার মনটা উড়ো উড়ো করছে কখন আরশাদের সাথে কথা বলবে আর রোহানের ব্যপারে আপডেট পাবে।তার আগেই বাহারুল হক খবর নিয়ে হাজির।খুশবুর হাসি হাসি মুখটা দেখে জহুরি চোখে তাকালেন তার বাবা,
” আরশাদের সাথে রাতে কোথায় ছিলে তুমি?”
” কোথায় আর থাকবো রেস্টুরেন্টে।”
” তুমি যে রাতভর তার সাথে এমন ঘুরোঘুরি করছো এসব কিন্তু আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না।আমি মেয়ে তুলে দেইনি তাই নিজের মর্জি মতো চলা বন্ধ করো।”
খুশবু মাথা ঝাকালো।বাহারুল হকের চিন্তা ভাবনায় অনিমা সায় দিলেও তবুও বিপক্ষে একটা উত্তর যেন তার তৈরি থাকে।তিনি ফোড়ন কেটে বলেন,
” এসব কি বলছো তুমি?মেয়ে তার স্বামীর সাথে ঘুরছে আমরা বাঁধা দেওয়ার কে?”
” এইজন্যই তো চুপচাপ থাকি।তবুও এটাই আমার ফাইনাল অর্ডার সাতটার মধ্যে তোমাকে বাড়তে ঢুকতেই হবে।মেয়ে বিয়ে দিয়েছে বিদায় তো আর করিনি।যেদিন মেয়ে বিদায় হবে সেদিন সারারাত বাইরে থাকবে আপত্তি থাকবে না।”
” আচ্ছা বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে।”
খাবার টেবিলে পুনরায় নিরবতা ছেঁয়ে গেল।খুশবুর ছোট মামারা চলে গেল আজ দুপুরে তাই সারা ঘরটা কেমন নিরব শান্ত।অনিমা ভাতের লোকমা মুখে পুরে বলেন,
” নুহাটা চলে গেল ঘরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ঘরে বাচ্চা-কাচ্চা থাকলে ঘরটা আমেজে থাকে।কবে যে নিজের নাতি নাতনির মুখ দেখবো।”
অনিমার কথায় ফোড়ন কাটলেন বাহারুল হক
” নাতি নাতনির মুখ দেখা তো দূরের কথা এমন জায়গায় মেয়ে দিয়েছো সচক্ষে নিজের মেয়েকে দেখতে পাবে কি না সন্দেহ।”
“আমার মেয়ে ভালো থাকলে তাকে না দেখার আফসোস আমার জাগবে না।”
খুশবুর গলায় খাবারটা বিধে গেল।বাবা মায়ের এমন ধীর স্থির রেষারেষি আর কতকাল চলবে?
.
সাধা সিধে জীবনটায় কীভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসে জীবন পালটাতে হয় তা যেন আরশাদ থেকে শিখতে হয়।খুশবুর জীবনটা ছিল সাধাসিধা অন্যরকম।অথচ আরশাদ এসে পালটে দিল সবকিছু।তাদের ভালোবাসার বন্ধনে কেটে গেছে তিনমাস।খুচরো হিসেবে বললে এই তো চারমাসের কাছাকাছি।খুশবুর ইতালিতে যাওতার পাসপোর্ট সহ সকল কাগজ পত্র তৈরি হলেও ভিসায় গন্ডোগোল দেখা দিয়েছে।এখন শুধু ভিসার কাগজ পত্রের অপেক্ষা,একবার ভিসাটা ঠিক ঠাক হোক আরশাদ আর এক মুহূর্ত দেরি করবে না।সেদিনি উড়াল দেবে তার ফ্লুজিকে নিয়ে।
খুশবুর পরিক্ষা চলছে,এই পরিক্ষা নিয়ে আরশাদের সাথে খুশবুর খুব কম সময় কাটানো হচ্ছে।পরিক্ষার পূর্ব সময়টাতে পড়াশোনার প্রতি ভীষণ সিরিয়াস হয়ে যায় মেয়েটা অথচ সারা বছর বইয়ের সাথে তার বিচ্ছেদের প্রহর কাটে।
আরশাদ গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।আরিব তার পাশে দাঁড়িয়ে এটা ওটা বিশ্লেষণ করছে।খুশবু তাড়াহুড়ো করে আরশাদের সামনে এসে দাড়ালো।বাসা থেকে ভার্সিটির দূরত্ব বেশি নয় কিন্তু খুশবু আজ একটু আগে বেরিয়েছে।অবশ্য এর পেছেনেও একটা কারণ আছে।আরশাদের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর বাহানা।আজ পরিক্ষা শেষ এরপর আবার আগের বেশভুষায় ফিরে যাবে খুশবু।
খুশবুর দিকে আগাগোড়া তাকিয়ে কিঞ্চিৎ অবাক হলো আরশাদ।ইদানীং তার মনে বাসা বাঁধছে কিছু প্রশ্নেরা।অনলাইনে যখন ফ্লুজির সাথে প্রেম চলছিল তখন সে দেখেছে ফ্লুজি সবচেয়ে বেশি খোলামেলা পোশাক পড়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।এক কথায় মেয়েটা ওয়েস্টার্ন লাভার।আর খুশবুকে শুরুর দিন থেকে দেখছে গাউন বা থ্রিপিস যেটাই পরবে ওড়নাটা এক পাশ ঝুলিয়ে চুল খোলা রাখবে।
আরশাদের মনে কিছু প্রশ্নেরা উকি দেয়। সেই মেয়েটির নাম তুবা ছিল।
খুশবুর সাথে এই মেয়েটার চাল-চলন আচার-আচরণের অনেক ফারাক যেমন তুবার সর্বদা এটা চাই ওটা চাই আরশাদের কাছে তার বায়নার শেষ নেই।আর খুশবু লজ্জায় কখনো আরশাদের কাছ থেকে কিচ্ছুটি নিতে চায় না।আরশাদের সান্নিধ্যে যেন মেয়েটার সকল প্রাপ্তি।
আচ্ছা সত্যি কি এই মেয়েটা তার ফ্লুজি নয়!আরশাদ আর ভাবতে পারে না।মাথাটা তার কেমন কেমন করছে।সত্য আর মিথ্যা সে বোঝে না জানে না।আরশাদের ভেতরের মনটা যেন বলে উঠে, তোমাকে হারালে আমি সব হারাবো।তোমাকে হারালে মুখ থুবড়ে পড়বো ঠিকানা হারানো পাখির মতো।”
আরশাদের চিন্তিত মুখটা দেখে খুশবু অবাক হলো আলতো হাতে ধাক্কা দিল আরশাদকে।
” এই কি হলো আপনার? ”
” ক..কিছু না।গাড়িতে বসো।”
আরিব খুশবুর দিকে মন বসালো সে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে,
” ভাবি আমি কিন্তু কাবাবে হাড্ডি হতে আসিনি সামনেই নেমে যাব।”
” আরিব ভাইয়া তুমি আমাকে আর তোমার ভাইকে একসাথে দেখলে পালাই পালাই কর কেন?”
” আমি চাইনা তোমার প্রাইভেসি নষ্ট করতে।”
” আমাদের আবার কিসের প্রাইভেসি!”
বিড়বিড় করে বললো খুশবু।আরশাদ বুঝতে পেরে কিঞ্চিৎ হাসলো।তাদের গন্তব্য বেশি দূর নয় আরিব নেমে গেল মাঝ পথে।আরশাদের চুপচাপ মুখখানি দেখে খটকা লাগলো খুশবুর।
” আপনি আজ এমন চুপসে আছেন কেন?”
” জানি না কিছু ভালো লাগছে না।”
” আমার প্রতি কি বিরক্ত এসে গেছে?”
আরশাদ আচমকা ব্রেক কষলো টেনে ধরলো খুশবুর হাত।
” এসব কথা কখনো বলবে না প্লিজ তোমার প্রতি আমার কেন বিরক্ত আসবে?”
” জানি না।”
দুজনের মাঝে ছড়িয়ে গেল নিরবতা।আরশাদ মনটা খচখচ করছে।এলোমেলো তার সকল ভাবনা।
” ভিসাটা নিয়ে আপনি চিন্তিত আরশাদ?”
” একদম না ভিসা আজ না হোক কাল হবে এসব ছাড়ো।”
দুজনের কথা চললো দীর্ঘক্ষণ।ভার্সিটির কাছাকাছি আসতে আরশার গাড়ি থামালো।দুহাত আগলে জড়িয়ে ধরলো তার ফ্লুজিকে।ফ্লুজিও আজ নিজ থেকে আরশাদের কপালে চুমু খেল।দুজনের গভীর আলিঙ্গন শেষে মন খারাপেরা বিদায় জানিয়েছে।
” পরিক্ষা দেখে শুনে ভালোভাবে দেবে।যাওয়ার সময় আমি আসবো নিয়ে যাব।আজ কিন্তু সন্ধ্যায় মুভি দেখবো।ডিনার শেষে ছাড়বো তোমায় এর আগে যদি বাহারুল হক আমার নামে যু দ্ধ ঘোষণা করেন তাতেও আমি আমার বউ ছাড়বো না।”
” শ্বশুরের নাম ধরে কেউ ডাকে?”
” আমি ডাকলাম।মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমার শ্বশুর নয় শত্রু।”
“আরশাদ।”
” লাভ ইউ জান।এবার যাও।”
.
খুশবু পরিক্ষা শেষে প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইল আরশাদের আশায়।কিন্তু আরশাদ আসেনি।ছেলেটার কোন বিপদ হয় নি তো?দুশ্চিন্তারা এসে দখল করে খুশবুর মন মস্তিষ্ক।মনের ভুলে আজ ফোনটাও নেওয়া হয়নি, একটা খবর যে নেবে সেই উপায়ও নেই।খুশবু বাড়ি ফিরে দেখতে পেল অনিমার ফ্যাকাশে মুখ।
” আম্মু কিছু কি হয়েছে?তোমায় এমন লাগছে কেন?”
” ফ্রেশ হয়ে নে।আমি ভাত বাড়ছি।”
” না আমি এখন ভাত খাব না।তুমি বলো কি হয়েছে?”
” আরশাদ চলে গেছে মা।”
” চলে গেছে মানে?কোথায় চলে গেছে?”
” ইতালি।”
ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো খুশবু।আরশাদ তাকে না বলে চলে গেল!কেন চলে গেল?মেয়ের অবস্থা দেখে অনিমা বিচলিত হলো খুশবুকে আগলে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,
” তুই ভয় পাচ্ছিস?আরশাদ আসবে তো।ওর দাদিমাকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে উনার অবস্থা নাকি ভীষণ খারাপ।আরশাদ যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে গেছে।”
” আমি উনার কাছে যাব আম্মু।”
” আরশাদ আসবে তো।তোর কাগজ পত্র তৈরি হলে তোকে নিয়ে যাবে।”
খুশবু উঠে দাঁড়ালো।দ্রুত নিজের কক্ষে গিয়ে ফোন চেক করলো।হোয়াটসঅ্যাপে আরশাদের মেসেজ এসেছে।
” আমার ফ্লুজি,আমি চলে যাচ্ছি মানে ভেবো না আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি।গ্র্যানি হসপিটাল ভর্তি।মম ড্যাড পূর্বে আমাকে এই কথা না জানালেও গ্র্যানির শারিরীক অবস্থা অবনতিতে আমাকে জানাতে বাধ্য হলো।সুযোগ মতো আমি তোমাকে সব আপডেট দেব।আমি জানি এখন তুমি আশাহত হয়ে ছিটকে পড়েছো তুমি শুধু বিশ্বাস রাখো আমার উপর।আমি ফিরে আসবো।আজ হয়তো আমাদের সবচেয়ে সুন্দর সন্ধ্যা হতো কিন্তু তা যে এভাবে বিষাদে রূপ নেবে কে ভেবেছিল?আমি তোমাকে এই ম্যাসেজ যখন লিখছি তখন আমার হাত কাঁপছে,একেকটা শব্দ তুলতে আমার ভীষণ কসরত করতে হচ্ছে।এক দিকে গ্র্যানির চিন্তা অন্যদিকে তোমাকে রেখে যাওয়ার আফসোস,শোক।
দৃঢ়তা দিয়ে বলছি আমি ফিরবো।যদি আমি ফিরে না আসি তবে তুমি আমাকে ফিরিয়ে এনো,যেমনটা আমি তোমায় ফিরিয়ে এনে পুনরায় তোমাকে বদ্ধ করেছে আমার পিঞ্জিরায়।নিজের যত্ন নেবে,নিজেকে ভালোবাসবে।আজ আবারো বলছি,এই ম্যাসেজটি যখন পড়ছো, মন থেকে ভেবে নিও তোমার চোখের জলে ভেজা ঠোঁট দুটো আমার দখলে।
চলবে___
~ আরশাদের চলে যাওয়া নিয়ে কার কি সন্দেহ?আরশাদ কি তবে সত্যি তার ফ্লুজিকে ঠকালো!নাকি প্রতিশোধ নিলো?
আসসালামু আলাইকুম পাঠক।গল্পের ছোট্ট গ্রুপে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ- অনুপ্রভার বৈঠকখানা – Onuprova Meherin 🍂
আইডি – Onuprova MeHerin