#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৯ বাকি অংশ]
মৃদু বাতাসে নগ্ন গায়ে কাটা তুললো খুশবুর।পেটে ভারি অনুভব হতে মাথা তুলে তাকালো একবার।এ আর নতুন কী?প্রতিটা সকাল খুশবুর এক ভাবেই শুরু হয়।হয় আরশাদ তার সারা দেহ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আর না হয় আরশাদের বুকের পাটায় বন্দি সে।বিছানায় দুমড়ে মুচড়ে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে দেখলো খুশবু।গত রাতের কথা মাথায় আসতে ঠোঁট বাকায়।তার মনে হয় আরশাদ একটা পাগল, না না শুধু পাগল নয় বুঝদার পাগল।এই পাগলের পাগলামি শুধুমাত্র তাকে ঘিরে।
আরশাদের চুলের দরুনে খুশবুর পেটে সুড়সুড়ি লাগতে খুশবু কুচকে যায়।নিজেকে ছাড়াতে ছেলেটাকে যতটা সম্ভব পারা যায় সরিয়ে দিতে চায়।ধাক্কায় আরশাদের ঘুম ভেঙে যায় ঘুমঘুম দৃষ্টিতে চমকে তাকালো খুশবুর পানে।
” ফ্লুজি কি হয়েছে?জান ঠিক আছো?”
আরশাদের আকুল কণ্ঠে খুশবু চুপসে যায়।আরশাদের চাহনিয়ে লজ্জায় পড়ে দ্রুত হাত রাখে উন্মুক্ত বক্ষ ভাজে।আরশাদ হাসে মেয়েটার চোখে চোখ রেখে বলে,
” লজ্জা পায় না জান।আর কতবার লজ্জা ভাঙতে হবে?”
” আরশাদ সরে যান উঠতে হবে।”
আরশাদ সরে না বরং উঠে এসে নিজের বুকের কোনে জড়িয়ে ধরে খুশবুকে।মেয়েটার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
” জান যাবে?”
” কোথায়?”
” ভেনিস!স্বপ্নের শহরে।”
” সত্যি?”
” হুম।তৃতীয় বাসর ওখানে করতে চাই।”
” এসব ছাড়া কি আর কোন কথা নেই আপনার?”
“আর কি বলবো?ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর কথা বলবো?তাতেও তো আবার সেই কথা।”
” আরশাদ।”
” বলো জান।”
” আমাকে উঠতে দিন।”
আরশাদ শরীর বাকিয়ে উঠে বসলো।হাত টেনে ধরলো তার ফ্লুজির।মেয়েটা উন্মুক্ত দেহে দ্রুত চাদর টেনে নিজেকে আবৃত করল।আরশাদ মৃদু হেসে কোলে তুলে নেয় তার ফ্লুজিকে।পূর্ব আকাশে সূর্যটা উঠতে শুরু করেছে।নীল আকাশ তার মাঝে মৃদু বাতাস জানান দিচ্ছে ইতালির বসন্ত।ব্যাক ইয়ার্ডে সবুজ ঘাসে হেলেদুলে নৃত্য করছে সাদা ডেইজিরা।আরশাদ জানলার সম্মুখে দাঁড়ালো শীতল সমীরে খুশবুর গায়ে কাটা দিল সহসা।আরশাদের বাদামী চোখের তাকিয়ে খুশবু হারিয়ে যায় বারংবার।খুশবুর হাত আপনা আপনি ছুঁয়ে গেল আরশাদের চুলে।আরশাদ হেসে বলে,
” আরেক বার চলবে?”
” মানে?”
” লুক এট মি জান।”
” তাকিয়ে কি হবে?”
” তুমি গলে যাবে?”
” গলে কি হবে?”
” গলে তুমি নিজেই বাধ্য হবে আমার কাছে নিজেকে উজাড় করতে।”
” আমি উজাড় করি আর না করি আপনি তো এক ধাপ এগিয়ে আমাকে সিডিউস করতে।”
” আমি জোরাজোরি করে কিছু করতে চাই না।জোরাজোরি করে করার চাইতে তোমাকে সিডিউস করা বেটার অপশন, তাই না জান?”
খুশবু ঠোঁট কুচকায়।আরশাদ তার ফ্লুজির কানের লতিতে চুমু খেয়ে ছুটে চলে যায় ওয়াশরুমে।
” একটা হট শাওয়ার দরকার জান।”
” ওকে আপনি যান।আমি পরে যাব।”
” তুমি ছাড়া শাওয়ার হবে তবে হট হবে না।”
আরশাদ তার ফ্লুজিকে নামালো না।বরং কোলে নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
.
আরিবের ক্লাস শেষ হতে দুপুর হয়ে গেল তার ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়া থেকে কফি নিয়ে ফিরে এলো মাঠে।আরিব তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল হঠাৎ তার সম্মুখে উপস্থিত হয় ডিলান, অ্যাডেন, কডি এবং এলোন।
তাদের সকলের পেছন এসে দাঁড়ায় জন।আরিব তার হাস্যজ্বল মুখ ধরে রেখে বলে,
” হ্যালো ব্রো।”
ডিলান কিঞ্চিৎ হেসে প্রশ্ন করে,
” কেমন আছো আরিব?”
” ফাইন।হঠাৎ এখানে?”
” তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।”
” আমার সাথে?”
কডি আরিবের কাঁধে হাত রেখে বলে,
” তোমার সাথে কথা আছে আরিব প্লিজ আমাদের কিছুটা সময় দাও।”
আরিব ঘাবড়ে গেল।তার ভাইয়ের বন্ধুরা এভাবে কখনো একা আসেনি।
” কিছু কি হয়েছে?”
” কিছু হয়েছে কি না জানি তবে তোমাকে কথা গুলো জানানো জরুরি।”
” কি হয়েছে?”
” ক্যাফেটেরিয়ায় বসি?”
” শিওর।”
সবাই মিলে চলে গেল ক্যাফেটেরিয়ায়।আরিবের বুকের ভেতরটায় ধুকপুক করছে।কোন ভনিতা ছাড়া জন বলে,
” আমাকে চিনতে পেরেছো?”
” জি না।”
” আমি এলোনের কাজিন।আরশাদের সিনিয়র।”
” ওকে।”
” সমস্যাটা আরশাদকে নিয়ে।সরাসরি এই কথাটা আরশাদকে বলা মানে আমরা সবাই লা শ হওয়া।তাই আমরা চাই না কেউ বলতে।”
” কি হয়েছে ভাইয়া?”
” আরশাদের ফ্লুজি অর্থাৎ সেই মেয়েটা একজন প্রফেশনাল কলগার্ল।”
” হোয়াট!”
” ইয়েস।”
” এতটা বাজে কথা বলার সাহস কি করে পেলেন?ভাবি যথেষ্ট ভালো মেয়ে সে ভালো ফ্যামিলির মেয়ে।”
” ভালো মেয়ে মাই ফুট।”
” কোথাও কোন ভুল হচ্ছে।ফ্লুজি ওমন মেয়ে নয়।”
” প্রুভ লাগবে?প্রুভ ছাড়া কথা বলতে আসিনি।”
জন তার ফোন বের করে সব ছবি দেখাল।আরিবের গা শিউরে উঠলো।বিশ্বাসের আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মুহূর্তে।ঘৃণায় বিষিয়ে উঠলো মন।
” বিশ্বাস হয়?”
” হোয়াট দা হেল।আরশাদ ভাইয়া জানলে…”
“আরশাদকে এসব যে জানাবে সেই বিপদে পড়বে তাই তো তোমার কাছে এলাম।”
” আপনারা এসব ছবি কোথায় পেলেন?”
জন হাসে।গা ছেড়ে বসে বলে,
” বাংলাদেশ গিয়েছিলাম আমার সিনিয়রদের সাথে সেখানে একটি বিলাসবহুল হোটেলে এক রাতের জন্য সবাই তোমার ভাইয়ের ফ্লুজিকে বুক করে।মেয়েটার চার্জ জান?পুরুষের মনরঞ্জের এক্সপার্ট।আরশাদ তো প্রতিদিনি ভোগ বিলাশ করছে।”
আরিব চোখ বন্ধ করে লজ্জায় বিষিয়ে যচ্ছে তার শরীর।
” আমাকে এখন কি করতে হবে?কোন প্রমান ছাড়া আমার ভাইয়ের সংসার ভাঙতে হবে?”
আরিবের কথায় ভ্রু কুচকে ফেললো কডি।ছেলেটা টেবিলে আঘাত করে বলে,
” প্রমান?আরো প্রমান চাই?এসবে হচ্ছে না।”
” না হচ্ছে না।”
” বোকা ছেলে তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করতে?শুনো আরশাদ আমাদের বন্ধু আমরাও আরশাদের ভালো চাই।তুমি ওর ভাই ওঁকে সহজে বোঝাতে পারবে।আমাদের কথা কোন কালে আরশাদ গায়ে মাখেনি।”
আরিব হ্যাঁ না কোন কথাই বললো না।ছেলেটা মূঢ় হয়ে বসে রইল।আরিবকে আরো বুঝিয়ে সবাই চলে গেল।ছেলেটা নিজের দিশা হারালো এতটা বাজে সত্যের মুখোমুখি তাকে কেন হতে হলো?আরশাদ সুখে আছে থাক না সুখে কেন আচমকা প্রলয় এসে ছিন্ন করছে তার জীবন।
.
সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসলো আরশাদ।নিজের ভিলায় ফিরতে গ্র্যানি আর এলিনাকে বিছানায় দেখলো।সবার মাঝে খুশবু শুয়ে।মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন আফরোজ।আরশাদ উত্তেজিত হলো দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলে,
” কী হয়েছে ফ্লুজির?”
আফরোজ চিন্তিত হয়ে বলেন,
” হঠাৎ মেয়েটার জ্বর এলো কেন?”
আরশাদ ঢোক গিললো।আবেগে পড়ে তখন দুজনে মিলে মিশে ভিজে একাকার হয়েছিল।ঘন্টার পর ঘন্টা আবেগকে স্বীকৃতি দিয়ে এই অঘটন ডেকে আনলো।আরশাদ দ্রুত বসলো তার ফ্লুজির কাছে মেয়েটার জ্বরে গা পুড়ছে।
” চলো ডাক্তারের কাছে যাই।”
আফরোজ বলেন,
” ওষুধ আনা হয়েছে আজ রাতটা দেখো কাল যদি জ্বর না সারে তবেই যেও। ”
” না না আজ যাব এক্ষুনি যাব।”
” মেয়েটা জ্বরে দাঁড়াতেই পারছে না তুমি এখন কীভাবে যাবে?”
” কোলে নিয়ে যাব।”
গ্র্যানি পাশ থেকে বলেন,
” এত উতলা হতে হবে না।ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে জলপট্টি দিয়েছে অসুখ সেরে যাবে।”
” যদি না সারে?”
” যদি সেরে যায়?”
গ্র্যানির পালটা প্রশ্নে আরশাদ প্রত্যুত্তর করলো না।সে একমনে চেয়ে রইল খুশবুর দিকে।তখন রুমে এলো আরিব, ছেলেটা শুকনো মুখে বলে,
” মম ড্যাড তোমায় ডাকছে।”
” কেন?দেখো তার কিছু লাগবে কি না।”
” জিজ্ঞেস করেছি বললো তো আর্জেন্ট।”
আফরোজ উঠে দাঁড়ালেন।আরশাদের পানে তাকিয়ে বলেন,
” শুনো মেয়েটাকে ঘুমাতে দাও।প্রপার রেস্টের প্রয়োজন।ওষুধ যা খাওয়ানোর আমি খাইয়ে গেছি।রাতে আরেকটা ওষুধ আছে।তুমি গরম গরম স্যুপ করো।আমি গেলাম।”
আফরোজ চলে গেলেন সেই সাথে গ্র্যানিও চলে গেলেন।এলিনা সব কিছু এড়িয়ে অবাক হয়ে তাকালো আরিবের পানে।আরিবের হঠাৎ কি হলো?সারাক্ষণ ছেলেটা ভাবি ভাবি বলে অস্থির অথচ ভাবি আজ জ্বরে পুড়ছে ছেলেটা দেখেও আগ্রহ দিল না!কিন্তু কেন?
.
আরশাদের সারাটা রাত গেল দুশ্চিন্তা।তার ফ্লুজির সুস্থতা রাতের ঘুম কেড়েছে।ঘুমন্ত ফ্লুজির গালে কপালে কত বার যে চুমু খেয়েছে তার হিসেব নেই।ছেলেটার ভয় বাড়লো অতি জ্বরে তার ফ্লুজির না আবার কোন ক্ষতি হয়ে যায়।
রাত পেরিয়ে ভোর হলো।আরশাদের শরীর ততক্ষণে ঝিমিয়ে এসেছে।ঘুমন্ত ফ্লুজিকে জড়িয়ে রেখে বিড়বিড় করে বলে,
” আমার সুখ অসুখে পুড়ছে আমি সুখে থাকবো কেন?”
আরশাদের মনে হঠাৎ জেদ চাপলো।ছুটে গেল ওয়াশরুমে।ঝরনার নব ঘুরাতে ঝিরঝিরে পানি ভিজিয়ে দিল তাকে।মনের জেদে ঘন্টার পর ঘন্টা সে দাঁড়িয়ে রইল।আসুক আজ জ্বর সেও তার সুখ অসুখে সে কেন থাকবে সুখে?
চলবে…