#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪০(বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিন মুচকি হেঁসে তার ড্রেস নিয়ে চেন্জ করে এলো। তার আগে মাছ মাংস সব ভিজিয়ে রেখে গেল। মিসেস মেহরব চৌধুরী রান্না করবেন। আদর উঠে দেখলো তাজেল মেহরব চৌধুরীর কোলে তা দেখে ও নেমে বলল,,
‘এই তুমি আমার দাদুর কোলে উঠেছো কেন?”
তাজেল একবার ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“উঠছি তো কি হইছে তোমার দাদুর কোল কি খইসা পরছে।”
‘এগুলো কিরকম কথা।”
“এগুলো এমনই কথা। আমি উঠি নাই তোমার দাদুই আমারে কোলে নিছে।”
“এখন নামও আমার দাদুর কোলে আমি শুধু উঠবো।”
“উঠো আমার কি ডাক্তার তুমি কোনে?”
বলেই তাজেল নেমে গেল। আদর আর সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেহবিন আসলেই ও বলল,,
‘ আজ আর পরা লাগবো না আমি বাড়ি গেলাম।”
‘কেন তুমি তো একেবারে খেয়ে দেয়ে যাবে।”
“মেলা দেরি হইবো আমি স্কুলে যামু।”
‘আজ স্কুলে যেতে হবে না। আজ তুমি আমার সাথে থাকবে। ওরা খেয়ে দেয়েই চলে যাবে।”
“স্কুলে না যাইতে তুমি কইতেছো? আল্লাহ কি কও তোমার শরীর ঠিক আছে? সত্যি তুমি কইতেছো?”
“হুম আমি বলছি আজ সারাদিন আমি তোমার সাথে থাকবো।”
“ক্যান?”
“এমনিই।”
তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“আচ্ছা আমি এহন বাড়ি গেলাম পরে আসমুনি।”
‘না থাকো তুমি।”
‘আমার নতুন মানুষ ভাল্লাগে না শরম করে ।”
‘ তাই নাকি নেত্রী তবে শরম পায়।”
“ধুরু তুমি না ডাক্তার আমি গেলাম।”
বলেই তাজেল দৌড়। তখন মেহবিন একটু চিৎকার করে বলল,,
‘খাবার খেয়ে যেও কিন্তু নেত্রী আজ বিয়ে বাড়ির খাবার আছে তোমার পছন্দের।”
তখন তাজেল থেমে বলল,,
“দুপুরে খামুনি তারা যায়া নিক।”
বলেই ও হাওয়া মেহবিন ঘরে আসলো। তখন আদর ওকে বসতে বলল। ও বসলেই আদর ওর গলা জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,
‘তোমাকে অনেকগুলা মিস করেছি মনি।”
‘তাই বুঝি মনিও তোমায় মিস করেছে।”
“এই পাকা মেয়ে তোমার বন্ধু হলো কিভাবে? আমায় কি বলল জানো?”
বলেই আদর সব খুলে বলল। তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,
“আমি ওর মাঝে তোকে দেখতে পাই মেহু।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘আমিও ওর মাঝে আমার ছোটবেলার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তবে যাই হোক না কেন আমি ওর ভবিষ্যৎ আমার মতো হতে দেব না। ”
“এখনো এখানেই থাকবি?”
“দেখি তবে বেশি দিন না আর কিছু মাস থাকবো। সব মিটিয়ে তারপর এখান থেকে চলে যাবো তোমার হাসপাতালে জয়েন করবো যেটা তুমি মায়ের নামে খুলেছিলে।”
‘হুম!”
মেহরব চৌধুরী আর কিছু বললেন না রান্না শেষ হলে ওনারা সবাই একসাথে খেলেন। তারপর একটু সময় কাটিয়ে যার যার মুখ ঢেকে চলে গেলেন। মিহির ফোন করে গাড়ি এনেছিল ওরা গাড়ি করে চলে গেল। কেউ ওদের চিনতে পারলো না তাই দেখলেও কিছু বললো না। ওনারা চলে গেলে মেহবিন তাজেলদের বাড়ি গিয়ে ওকে নিয়ে এলো। মেহবিন বলল,,
“আজ কিছু খেলবো নেত্রী। দুজনে মিলে কি খেলা যায় বলো তো?”
“তুমি হাসপাতালে গেলা না ক্যান?”
‘ছুটি নিয়েছি সকালে। আমার হাতে তো ব্যান্ডেজ আমি এই হাত দিয়ে কিছু করতে পারবো না তাই।এখন বলো কি খেলা যায়।”
“সবাই তো স্কুলে গেছে সবাইরে নিয়া আজ বরফ পানি খেলা যাইতো। দুইজন যহন তাইলে কুতকুত খেলাই নাইলে খুঁটি মুচি?”
“খুটি মুচি কি?”
‘ঐ যে ছোট ছোট তইলা পাতিলায় মিছিমিছি রান্না করে ঐগুলা।”
“ওহ আচ্ছা রান্না বাটি।”
“তারমানে শুদ্ধ ভাষায় রান্না বাটি।এই নামডা রাখলো কেরায় বাটি কি রানদে নাকি। এই তোমাগো শুদ্ধ ভাষার নামগুলো সব ফাউল একটারও মিল নাই।”
“তা তোমার খুটিমুচি মিল আছে নাকি।”
‘না থাকলো তাও আমাগোডাই সুন্দর। এহন কি খেলবা কও।”
“চলো কুতকুত খেলবো আমি কখনো খেলি নি।
‘আইচ্ছা!”
তাজেল একটা চারা এনে কোটের দাগ কাটলো। তারপর শিখিয়ে দিল কিভাবে খেলতে হয়। মেহবিন খুব তাড়াতাড়ি শিখে গেল। প্রথমে চারা মারতে হয় তারপর একপা উঠিয়ে কুতকুত বলে দম নিতে হয়। মেহবিনের খেলাটা ভালো লাগলো। ওরা দুজনে মিলে খেলতে লাগলো। ওদের কুতকুত খেলতে দেখে কিছু মানুষের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। মিশু এসেছে মেহবিনের কাছে ওকে আসতে শুনে সব ইয়াংস্টাররাই এসেছে সেই সাথে নাফিয়া মারিয়া আলভিও । মুখর ছুটি নিয়েছিল আগেই তাই সেও এসেছে । সবাই বলেছে ওর বাড়ির সাথে সাথে গ্ৰাম ও ঘুরবে। ওরা দুপুরেই ঢাকা ফিরে যাবে তাই এখন এসেছে। ওদের খেলতে দেখে মিশু পেছন থেকে বলল,,
“ফুল?”
মেহবিন আর তাজেল পেছনে তাকালো। ওদের সবাইকে দেখে মেহবিন একটা মুচকি হাসি দিল। যা দেখে আরবাজ আর মিশুর ভেতরটা পুরতে লাগলো। মেহবিন বলল,,
“আরে সবাই আমার মতো নগন্য একজনের বাড়িতে। আসুন ভেতরে আসুন।”
সবাই ভেতরে ঢুকলো মেহবিনের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে মিশু ওর হাত ধরে বলল,,
‘তোর হাতে কি হয়েছে ফুল?”
“তেমন কিছু না । এসো বসো না তোমরা।”
মেহবিনের কথা শুনে ও আর কিছু বললো না। তখন মুখর বলল,,
“আমরা একটু গ্ৰাম দেখতে চেয়েছিলাম মিশু বলল এখানে আসবে তাই আমরাও চলে এলাম। তারপর গ্ৰামটাকেও না হয় দেখবো।”
“ভালো এখন ভেতরে চলুন।”
সবাই ভেতরে গেল। মিশু সুযোগ বুঝে মুনিয়া আর নিসাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। এখন শুধু আরবাজ, মিশু, মুখর, মারিয়া, নাফিয়া আর আলভি। মেহবিন তাজেলকে কোলে নিয়ে বসে আছে। মেহবিন ওদের সামনে নাস্তা দিয়েছে। হুট করেই নাফিয়া বলল,,
“কালকে যা,
নাফিয়াকে বলতে না দিয়ে মেহবিন বলল,,,
“কালকেরটা কালকে চলে গেছে সেই বিষয়ে কথা না বলাই উত্তম আমি চাই না তোমরাও বলো। আর নাফিয়া আপু তোমার যদি মনে হয় তোমার হবু বরকে মেরে আমি ভুল করেছি তাহলে তুমি ভাবতে পারো তবে এই বিষয়ে আমার একটুও অনুশোচনা নেই আর আমি এর জন্য দুঃখিতও না।”
“না মানে উনি ইচ্ছে করে তোমার হাত ধরেনি?”
এটুকু শুনে মেহবিন বুঝতে পারলো। ওরা অন্যকিছু গল্প বানিয়ে বলেছে। তাই ও বলল,,
“বললাম তো আমি কিছু শুনতে চাই না। সেসব থাক না।
তখন আরবাজ বলল,,
“আমার ডক্টর মেহবিন এর সাথে একটু কথা আছে তোমরা সবাই একটু বাইরে যাবে।”
তখন মেহবিন বলল,,
‘আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ। এখানে নেত্রী আছে আমি চাচ্ছি না কোন সিন ক্রিয়েট করতে। কাল যা হয়েছে আমি ভুলে গেছি আপনিও ভুলে যান।
এইটুকু আলভির দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘বিয়ের জন্য অনেক শুভকামনা আলভি ভাইয়া। ”
সবাই বুঝতে পারলো মেহবিন সে বিষয়ে কথা বলতে চাইছে না। তাই মুখর প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,
‘আর শুভকামনা বেচারা মন্ত্রীর মেয়ের সাথে ঠিক ভাবে করা বলতেও পারে না।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“মন্ত্রীর মেয়ে কি খুব ব্যস্ত থাকে আলভি ভাইয়া?
আলভি মুচকি হেসে বলল,,
“দু’জনেই বিজনেস করি দিনশেষে দু’জনেই বেশ টায়ার্ড হয়ে পরি। ও ভিশন ঘুমকাতুরে তাই বলেছে এসব রাত জেগে কথাবার্তা একদম পোষাবে না। বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবে নাকি জামাইয়ের সাথে।”
কথাটা শুনে মেহবিন হাসলো তখন তাজেল মেহবিনকে টান দিল মেহবিন নিচু হতেই তাজেল ফিসফিস করে বলল,,
‘ডাক্তার এহন পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা রে কি পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কওয়া যাইবো।”
মেহবিন ও ফিসফিস করে বলল,,
‘কেন বলে কি করবে?”
“ওহ হো তুমি আগে কও কওয়া যাইবো নাকি।’
“যাবে।”
তখন তাজেল হেঁসে জোরে বলল,,
‘পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি আমার সাথে আইসো তোমার সাথে কথা আছে।”
হুট করে তাজেলের কথায় সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। মুখর হেঁসে বলল,,
‘বাহ নেত্রীর তাহলে আমার দিকে নজর পরলো।”
‘তুমি এমনে কথা কও ক্যা আমার শরম করে তো।”
‘আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম নেত্রী আমায় দেখে শরম পায়।”
‘হ আইসো তুমি।”
তাজেল হাঁটা ধরবে এমন সময় মুখর হেঁসে ওকে কোলে তুলে নিল। আর বলল,,
“কি এমন কথা যে আলাদা করে বলতে হবে চলো যাই।”
তাজেল কোলে নেওয়ার জন্য কিছু বলতে পারলো না।মুখর চলে গেল। তখন নাফিয়া বলল,,
“ও চিনে মুখর কে?”
‘হুম এদের গল্প না হয় পরে জেনে নিও আপু। এখন খাও তোমরা। তোমরা তো কিছু নিচ্ছো না।”
‘তোমার হাতের এই অবস্থা কি করে হলো বলো তো? এই অবস্থা খাওয়া দাওয়া রান্না করা সব ঝামেলার হবে তো।”
“হবে না নেত্রী আছে তো ঠিক তার ডাক্তারকে সামলে নেবে।”
‘এর কথাই কি বলেছিলে কাল।”
“হুম!”
“মেয়েটা বেশ।”
“হুম।”
এদিকে তাজেল ওকে বাইরে নিয়ে বলল,,
“তুমি তো পুলিশ তাইনা?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
‘হুনো কাইল ডাক্তার চেয়ারম্যান বাড়ি গেছিল। আর ঐহান থিকা হাতে ব্যান্ডেজ নিয়া আইছে। এহন তোমার কাম ডাক্তাররে কষ্ট দিছে কিরা যার জন্য হাতের এই অবস্থা তারে ধরা আর জেলে ঢুকান আর শাস্তি দেওয়া।”
তাজেলের মুখে এরকম কথা শুনে মুখর স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটা এমন কেন? তার ডাক্তারকে কেউ কষ্ট দিতে পারবে না এই কথাই যেন সে বলছে। মুখর হেঁসে বলল,,
‘আমার শাস্তি দিতে হবে না নেত্রী। তোমার ডাক্তারই তারে শাস্তি দেবে।”
‘তাই নাকি ঐ শামীমরে যেমনে দিছিল?’
‘কি জানি হয়তো তার থেকেও কঠিন কিছু অথবা মাফ ও করে দিতে পারে।”
“ক্যান?”
‘জানিনা তুমি কি শুধু এই কথা বলতেই এনেছো?”
“হুম এহন ঘরে নও।”
‘হুম চলো।”
ওরা ঘরে চলে এলো। তাজেল গিয়ে মেহবিনের কোলে বসলো। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা বেরিয়ে এলো। আরবাজ শুধু অসহায় চোখে সব দেখলো কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। সারাদিন তাজেল মেহবিনের সাথেই ছিল। দুপুরে খায়িয়েও দিয়েছে সে মেহবিন মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। এমনকি রাতে থাকবে বলেছে মেহবিন বলেছে দরকার নেই থাকার। কাল সকালে আবার আসতে। তাজেল আর জেদ করেনি। রাতে বারান্দায় দরজায় তালা দেবে এমন সময় একজন দৌড়ে এসে দরজা ধরলো। মেহবিন তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা কে তাই ও বলল,,
“এখানে কেন এসেছেন শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ?”
আরবাজ ওকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো আর দরজা আটকে দিল। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“এসব কি ধরনের অভদ্রতা।”
আরবাজ অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,,
‘কথা আছে ফুল বোস!”
মেহবিন শান্ত চোখে ওর দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না। আরবাজ ওকে একটা চেয়ারে বসালো। মেহবিন অন্যদিকে ঘুরে বসলো। আরবাজ আস্তে আস্তে করে মেহবিনের সামনে গিয়ে পায়ের কাছে বসলো তারপর বলতে শুরু করল,,
“ক্ষমা চাওয়ার কোন মুখ নেই আমার তবুও বলবো আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি ফুল। আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি চাইনি ঐ তিক্ত কথাগুলো তোকে বলতে। আমি তো রেগে গিয়েছিলাম তখন বাবাকে নিয়ে ঐ কথাটা শুনে।
মেহবিন শান্ত ভাবেই বলল,,
“রাগের মাথায় সবাই সত্যি কথাই বলে।রেগে গেলে মানুষ নিজের ভেতরে থাকা সামনের মানুষটার প্রতি যে মনোভাব সে সেটাই প্রকাশ করে। আপনি চলে যান আমি কিছু শুনতে চাই না শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ।
‘তুই যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নেব। তবুও দূরে সরিয়ে দিস না ফুল।”
মেহবিন আরবাজের দিকে তাকালো তারপর একটা মুচকি হেঁসে বলল,,
“বুলেটের আঘাতের থেকেও কোন আঘাত আমাদের বেশি যন্ত্রনা দেয় জানেন? কথার আঘাত। আপনি জানেন? সত্যি আমি মায়ের মৃত্যুর কারন ।
কথাটা শুনে আরবাজ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মেহবিনের দিকে। মেহবিনের ঠোঁটে মুচকি হাঁসি। মেহবিন আবার বলল,,
“জানেন আমি আমার মাকে সঠিক সময় হাসপাতালে নিতে পারি নি। এটা ডাক্তার বলেছিল যদি আরো আগে হাসপাতালে নেওয়া হতো তাহলে হয়তো মা বেঁচে থাকতো। এখন বলুন তো হলাম না মায়ের মৃত্যুর কারন?”
কথাটা শুনেই আরবাজের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মেহবিন আবারও বলল,,
“আপনি জানেন সেই ছোট্ট সাত বছরের বাচ্চাটা হাসপাতালে নেওয়ার পরও তার মায়ের হাত ধরেছিল। এক মুহুর্তের জন্যও ছাড়েনি। ডাক্তার কতো বলেছিল সরে যেতে কিন্তু সে যায় নি। অতঃপর তার মায়ের জ্ঞান ফিরলো তখন সেই ছোট্ট মেয়েটা মায়ের কথা মতো তার বুকে শুলো। তার মা তাকে অনেকগুলো কথা বলল সে সব মনোযোগ দিল। অতঃপর সে বলল তার ঘুম পাচ্ছে তার মাকে ঘুমাতে বলল কারন তার মায়ের ঘুমানো প্রয়োজন সাথে মেয়েটারও ঘুম পাচ্ছিল। তাই তার মাকে কথা বলতে বারন করে ঘুমাতে বলছিল। তার মা তার কথা শুনেছে ঘুমিয়েছিল কিন্তু একেবারের জন্য। মেয়েটার কথা শুনেই সে ঘুমিয়েছিল। তাহলে এখন বলুন তো হলাম না মায়ের মৃত্যুর কারন?
এবার আরবাজ একটু শব্দ করেই কেঁদে উঠলো। মেহবিন মুচকি হাসলো তা দেখে আরবাজের কান্না বেড়ে গেল তা দেখে মেহবিনের হাসিটা যেন আরো প্রসারিত হলো। মেহবিন মুচকি হেঁসে আবার বলল,,
“জানেন মেয়েটা তার মায়ের বুকে শুয়েছিল কারো টেনে উঠানোতে তার ঘুম ভাঙলো। তার মনে হলো সে কোন স্বপ্ন দেখে উঠেছে সামনে তাকাতেই দেখলো তার মায়ের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে। সে দৌড়ে সেখানে গেল আর আটকালো কারন তার মা মুখ ঢেকে ঘুমাতে পারতো না। ডাক্তার জানালো তার মা আগেই মারা গেছে সে নাকি তার মৃত মায়ের বুকেই শুয়েছিল এতোক্ষণ। সে মানতে নারাজ তার মায়ের বুকে নাকি ঢিপঢিপ আওয়াজ হয় সেটা শোনা মেয়েটার খুব পছন্দ ছিল। সে বলল তার মায়ের বুকে ঢিপঢিপ আওয়াজ হয় সে রোজ শুনে। এখনো হবে এই বলে মেয়েটা জোর করে তার মায়ের বুকের ওপর শুয়ে পরলো। অনেকক্ষণ যাবৎ খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলো কিন্তু শুনতেই পেলো না। তখন সে বলল তার মাকে ইনজেকশন দিয়ে ঠিক করতে যাতে তার মা চোখ খুলে আর তার মায়ের বুকে ঢিপঢিপ আওয়াজ হয়। তখন ডাক্তার তাকে খুব করে বোঝালো তার মা মারা গেছে। মেয়েটার সে কি তার মাকে আঁকড়ে ধরে কান্না। তার একটাই কথা সে তার মাকে কোথাও যেতে দেবে না। অতঃপর জানেন মেয়েটাকে সব নার্স ডাক্তাররা জোর করে মায়ের থেকে আলাদা করে দিল।
এইটুকু শুনে আরবাজ মেহবিনের হাত ধরলো। মেহবিন সেদিকে না তাকিয়ে আবার বলল,,
“তারপর মেয়েটা হুট করেই শান্ত হয়ে গেল। তার কিছুক্ষণ পর সে জানতে পারলো তার মা সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে মারা যায় নি। তার মাকে বিষ দিয়ে মারা হয়েছিল। কথাটা শুনে মেয়েটা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর যখন শুনলো এখন মেয়েটাকেও মারা হবে। কথাটা শুনতেই মেয়েটা দিক বেদিক ভুলে দৌড়ালো। একটা সময় দৌড়াতে দৌড়াতে দেখলো রাস্তার উল্টো পাশে তার বাবাকে। তার বাবাকে দেখেই মেয়েটা তার বাবাকে ডাক দিল। কিন্তু মেয়েটার বাবা মনে হয় ডাকটা শুনলো না। মেয়েটা রাস্তা পার হতে নিল তখন একটা গাড়ি এসে মেয়েটাকে ধাক্কা মারলো। মেয়েটা প্রথমে তার বাবার দিকেই তাকালো কিন্তু তার বাবা তাকে দেখে এগোলো না ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়েটা তার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একটা সময় অজ্ঞান হয়ে গেল। তারপর সে নিজেকে পেল হাসপাতালে তারপর থেকেই তার জগত আলাদা।
কথাগুলো শুনেই আরবাজ হাওমাও করে মেহবিনের হাত ধরে কেঁদে উঠলো কিছুক্ষণ পর শক্ত হয়ে বলল,,
‘মাকে মেরে ফেলা হয়েছিল?”
মেহবিন বলল,,
‘হুম তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল কারো স্বার্থপরাতর কাছে তাকে বিলীন হতে হয়েছিল।”
‘কে সেই ব্যক্তি তুই শুধু নাম বল। আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেব আমার মায়ের খুনীকে আমি কঠিন শাস্তি দেব। তার সাথে আমার বোনের জীবনকে যারা এরকম গড়ে তুলেছে আমি তাদের কাউকে ছাড়বো না। তুই শুধু নাম বল ফুল।তাদের কঠিন শাস্তি হবে।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘আমি না বললে কখনো জানতেন আপনি যে আপনার মাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আপনি তো জানতেন আমি আপনার মায়ের মৃত্যুর কারন।”
কথাটা শুনেই আরবাজ স্তব্ধ হয়ে গেল। ও অসহায় কন্ঠে মেহবিনের হাত ধরে বলল,,
“আমায় শাস্তি দে ফুল। আমি ক্ষমার অযোগ্য তুই আমায় শাস্তি দে। তবে আমি বুঝতে পারি নি আমি তোকে এতটা আঘাত করে ফেলবো।আমি জানতাম না আমার ফুল সেদিন এতটা কষ্ট পেয়েছিল। ঐ আরিফা জামান আর আরিফ জামানের কথায় আমি প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিলাম তাই তোকে ওগুলো বলে ফেলেছি। ওনারা বলেছিল বাবা তোকে এই কারনে খোঁজে নি কারন বাবা তোকে মায়ের মৃত্যুর কারন মনে করে তাই নিয়েই আমি ভিশন ডিস্টার্ব ছিলাম। তখন রাগের মাথায় ওগুলো বলেছি যেভাবেই হোক বলেছি তুই আমায় শাস্তি দে ফুল। আমি কথা দিচ্ছি তুই যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নেব। তবুও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকিস না তুই শাস্তি দে ফুল।
সবশুনে মেহবিন বলল,,
“যদি শাস্তি পাওয়ার জন্য এখানে আসেন শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ তবে আপনি ভুল আমি আপনাকে কোন শাস্তি দেব না। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনি আমার থেকে শাস্তি নয় ক্ষমা পেয়েছেন। এখন আপনি আসতে পারেন শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ।”
এতো সহজে ক্ষমা করে দেওয়ায় আরবাজের কেন যেন বুক চিড়ে কান্না এলো । এর থেকে কঠোর শাস্তি দিলেও বোধহয় এতটা কষ্ট হতো না। এতো সহজে ক্ষমা ওর জন্য নয়।ও অসহায় চোখে বলল,,
‘ফুল!”
‘আপনি এখন আসতে পারেন শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ। আমার শরীরটা খুব একটা ভালো নয় আমি ঘুমাবো।”
‘আমি!”
‘যেতে বলেছি আপনাকে। না আমি এখন এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।”
এ কথা শুনে আরবাজ অসহায় চোখে তাকিয়ে চলে গেল। সেদিকে তাকিয়ে মেহবিন বলল,,
“আমার মা আমাকে একটা কথা বলেছিল তোমাকে কেউ আঘাত করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি দেবে। তবে সবসময় মারামারি করে নয় মাঝে মাঝে এমনভাবে শাস্তি দেবে যেন সে সে নিজেই নিজের চোখ না মেলাতে পারে। শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ আপনি তো খুব সহজে আমার থেকে ক্ষমা পেয়ে গেলেন কিন্তু নিজের কাছ থেকে পাবেন তো। আপনার অবস্থা দেখে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে তবে উর্দুতে। যদি উর্দুতে বলি তাহলে হলো,,,
Mere Apne Mujhe Dard de Usko Hum Aise Nhi Jane de te. Hum to hat Nhi uthate or Mafi bhi De dete. Per Nazro Se Gira De te Hai.
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। বোনাস পার্ট দিলাম কিন্তু আপনাদের কালকের অনুরোধেই তাই কিছু মন্তব্য তো আপনাদের থেকে আশা করতেই পারি তাই নয় কি।