কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৩৯ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
331

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সবকিছু চোখের সামনে ভেসে উঠতেই মেহবিন নিজেকে আবারও কঠোরতার চাদরে ঢেকে নিল। এতোক্ষণ বসে বসে সেই আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা সে মনে করছিল। সে চোখের পানি পড়া আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।হাতের রক্ত গুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে তবুও ক্ষতটা গভীর হওয়ায় হালকা হালকা লাল বর্ন ধারন করছে বারবার। বৃষ্টি নেই এখন থেমে গেছে আরো আগেই। মেহবিন চারপাশটা একবার দেখে নিল সে বাড়ির পথে না গিয়ে চলে এসেছে রেলস্টেশনের দিকে। ও উঠে দাঁড়ালো তখনি পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পেল ভেতরটা চমকে উঠলেও মানুষটার আওয়াজ পেয়ে সে শান্ত হলো।

“বিহঙ্গিনী তুমি ঠিক আছো তো?”

মেহবিন পেছনে ফিরে মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘হুম ঠিক আছি।”

মুখর ভালো করে মেহবিনের দিকে তাকালো। বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে পুরো চাঁদটার জন্য চারদিক আলোকিত হয়ে আছে। চাঁদের আলোতে
অদ্ভুত লাগছে মেহবিন কে ওর কাছে। শুভ্র রঙের গাউনটার দিকে নজর যেতেই মুখর নিজের সোনালী রঙের কোটি খুলে ওকে পরিয়ে দিল। মেহবিন কে খুঁজতে প্রথমে সে দৌড়ে মেহবিনের বাড়ি গিয়েছিল যখন দেখলো ওখানে নেই তখন মুখর প্রায় পাগল পাগল হয়ে গেল। ও গ্ৰামের রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে লাগলো। একটা সময় গাছের নিচে শেখ শাহনাওয়াজ কে দেখলো কিন্তু সে ওদিকে না গিয়ে মেহবিনকে খুঁজতে লাগলো ওখান দিয়ে একটাই রাস্তা স্টেশনের দিকে ও আর দেরি না করে সেদিকে দৌড় দিল। মিনিট দশেক দৌড়াতেই কাউকে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখলো রাস্তায় দেখেই বুঝতে পারলো ওটা মেহবিন। স্টেশনের কাছাকাছিই মুখরের ভাড়ার বাড়ি। তাই মুখর বলল,,

“চলো বাড়ি যাই অনেকক্ষণ ভিজেছো এর পরে অসুস্থ হয়ে পরবে। এমনিতেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি।”

“হুম।”

মুখর কিছু না বলেই মেহবিনকে কোলে তুলে নিল তারপর ওকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। তা দেখে মেহবিন প্রথমে হকচকিয়ে উঠলেও পরে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,,

‘আমি হাঁটতে পারবো আমার কিছুই হয় নি তো।”

“আমি জানি হাঁটতে পারবে। কিন্তু আমার ইচ্ছে হলো তোমাকে কোলে নেওয়ার তাই নিলাম। এখন একটা কথা কথাও বলবে না তুমি।

মেহবিন ও কোন শব্দ না করে ওর গলা জড়িয়ে রইলো। মুখর কোলে না নিয়ে যদি হাতের আঙুলের ভাঁজে হাত রাখতো তবে হয়তো কোন রক্তাত্ব হাতের অস্তিত্ব পেতো। কিন্তু সে পায় নি কোলে নেওয়াতে।রাস্তার দিকে নজর যেতেই মেহবিন বুঝতে পারলো মুখরের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে ওকে তবুও কোন কথা বললো না সে।মুখর এক তলা এক বাড়িতে ভাড়া থাকে। সেখানে সবকিছু শহরে ফ্ল্যাটের মতোই। মুখর বাড়ি ঢুকে মেহবিন কে নামিয়ে সব লাইট অন করতেই ওর নজর গেল মেহবিনের হাতের দিকে দুটো হাতই থেঁতলে বাজে অবস্থা। ও তাড়াতাড়ি করে হাত ধরে বলল,,

“এসব কখন হলো? আর কিভাবে হলো? তুমি কি নিজেকে আঘাত করেছো?’

মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,

“হুম আঘাত করেছি। এসব ছাড়ুন আমার ঠান্ডা লাগছে চেন্জ করতে হবে।”

মেহবিনের কথায় মুখর ওকে তাড়াতাড়ি করে চেন্জ করতে বলল তবে পরক্ষনেই ভাবলো। এখানে তো মেহবিনের পড়ার জন্য কিছু নেই। তাই বলল,,

“তোমার পড়ার মতো তো আমার কাছে কিছু নেই।”

মেহবিন বলল,,

“আপনার আলমারি কি লক?’

“না।”

মেহবিন আলমারি খুললো নরমাল টাউজার। একটা টিশার্ট আর একটা হুডি নিল। তারপর টাওয়াল নিয়ে বলল,,

“আমি এসব পরে নিচ্ছি। আপনি আরেকটা ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে আসুন নাহলে আপনার ঠান্ডা লাগবে।’

বলেই ওয়াশরুমে চলে গেল। মুখর ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ও বোঝার চেষ্টা করলো এই মেয়েটা এমন কেন? কিছুক্ষণ ভেবে ও নিজেও ড্রেস নিয়ে অন্য ওয়াশরুমে গেল। মুখরের সবকিছুই মেহবিনের বড় লাগলো। টাউজারের নিচে চিকন হওয়ার সব মোটা খানিক পায়ের কাছে গিয়ে থেমেছে। নিচে টিশার্ট ওপরে হুডিটা অনেক সুন্দর লাগছে বাইরে দেশের মেয়েদের মতো যদিও হুডির হাতাটা বড় দেখে মেহবিন হাতা ভাঁজ করেছে ওকে পুরো টমবয়দের মতো লাগছে। মেহবিন ড্রয়ার থেকে দু’টো ঘুমের ওষুধ নিল খাবে দেখে। তখন মুখর ওষুধ হাতে দেখে বলল,,

“এগুলো কিসের ওষুধ?”

“ঘুমের ওষুধ এর আগেরবার আমি রেখে গিয়েছিলাম।”

“তুমি ঘুমের ওষুধ দিয়ে কি করবে?”

“আমার একটা ঘুমের প্রয়োজন।”

“তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে তো। তাছাড়া চুলটাও তো দেখি ভালোভাবে মুছোনি।”

মেহবিন পাশ থেকে পানি নিয়ে ওষুধ উটো খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আর বলল,,

“আমি ঘুমিয়ে গেলে আমার হাতের ব্যান্ডেজ করে দিয়েন। আর আপনার শখ হলে চুল মুছিয়ে দিয়েন। আর হ্যা আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে আমার কাছে আসবেন না। আর হ্যা আমার মনে হয় ওদের এঙ্গেজমেন্টটা হবে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে রেডি হয়ে চলে যায়েন চেয়ারম্যান বাড়ি। নাফিয়ার এমন ইম্পোর্টেন্ট একটা দিনে আপনার ওর পাশে থাকা উচিৎ। সকালে উঠি যদি দেখি আপনি যান নি তাহলে আমার খুব খারাপ লাগবে। আজ সবাই বোধহয় ঐ বাড়িতে থাকবে আপনিও থাইকেন আমি সকাল হলে চলে যাবো বাড়িতে। এখন একটাও কথা বলবেন না আপনি আমি ঘুমাবো খুব ঘুম পাচ্ছে।

কথাটা শুনে মুখর স্তব্ধ থম হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।মেয়েটা এমন কেন? অতঃপর দশ মিনিট অপেক্ষা করলো। মেহবিন অসুস্থ ছিল সেই সাথে আজ দূর্বল আর ওষুধ দুটোও ভালো কাজে দিয়েছে আজ দশ মিনিটেই ঘুমিয়ে পরেছে ও। মুখর আস্তে আস্তে করে মেহবিনের কাছে গেল তারপর যত্ন করে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। ঘুমের মাঝে মেহবিন অবশ্য একটু কপাল কুঁচকে ছিল কিন্তু মুখ দিয়ে একটু আওয়াজ ও বের করে নি। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে মুখর মেহবিনের মাথা মুছিয়ে দিল। তারপর ওকে বুকে জড়িয়ে বলল,,

“বিহঙ্গিনী আমি জানি তুমি বোধহয় আরবাজের কোন কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছো। তাই তো তার গায়ে হাত তুলেছো। কারন তুমি তো কাঁদতে পারো না এই জন্য কষ্টগুলো খুব তাড়াতাড়ি রাগে পরিনত হয়। জানি না তোমার সাথে কি ঘটেছিল আগে তবে আমার মনে সবসময় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় শেখ শাহনাওয়াজ তোমার বাবা আরবাজ তোমার ভাই তবে তোমাদের কিসের এতো দূরত্ব। কিসের জন্য তুমি আলাদা হয়েছিল আর কেন তুমি এরকম। আমার যে রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনী কে খুব জানতে ইচ্ছে করে। জানি না তোমার ভেতর কিসের এতো দুঃখ কিসের এতো বিষন্নতা তবে যাই হয়ে যাক না কেন তোমার কাব্য তোমায় সবসময় আগলে রাখবে আর খুব ভালোবাসবে। আর এতো ভালোবাসবে যে দুঃখরা তোমায় ছুঁতে পারবে না। সবশেষে ভালোবাসি বিহঙ্গিনী।”

_______________

এদিকে শেখ শাহনাওয়াজ অনুভূতিহীন হয়ে বসে আছে। আরবাজ আর মিশু খুঁজতে খুঁজতে একটা সময় ওনাকে পেয়ে গেল। আরবাজ আর মিশু ওনাকে বসে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি করে ওনার কাছে গেল। মিশু বলল,,

“বাবা ফুল কোথায়? আর তুমি এভাবে বসে আছো কেন?

শেখ শাহনাওয়াজ শান্ত স্বরে বললেন,,

“আমি আমার আম্মাকে একেবারের জন্য হাড়িয়ে ফেললাম মিশু। ও আর আসবে না আমাদের কাছে।”

“কি হয়েছে বাবা ফুল কোথায়?”

“জানি না ও চলে গেছে। আর বলে গেছে কখনো আমাদের বাড়িতে আর আমার ত্রিসীমানায় আসবে না।”

আরবাজের ভিশন কষ্ট হচ্ছে। ও শেখ শাহনাওয়াজ এর হাত ধরতেই তিনি আরবাজকে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারলেন। আর বললেন,,

“কেন তুমি মুসকান কে ঐসব বলতে গেছো। তুমি কি জানতে সেদিন কি হয়েছিল? তুমি কি জানো সেদিন সেই সাত বছরের ছোট্ট মেয়েটা কি কি সহ্য করেছিল। তুমি কি জানো সারাজীবন ধরে ও কি বয়ে যাচ্ছে। সে তার পর থেকে এই উনিশ বছরে এক ফোঁটাও পানি আনেনি চোখে। আজ তোমার জন্য তার চোখে পানি এসেছে। কি বলেছিলে ও তোমার মায়ের মৃত্যুর কারন তাই আমি ওকে ঘৃনা করে ওর দিকে তাকাই না। আর তোমাদের মতো তাকে তুমি করে বলি না। আর কি বলেছিল তাকে তাকে আমি খুজেনি সেই কারনে।

কি করে তাকাতাম আমি তার দিকে তার কাছে যে মস্ত বড় অপরাধী আমি। যে অন্যায় করেছি তার সাথে এই জন্য তার চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাই না আমি। তাই তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলি না আমি। আর তাকে তুমি করে বলি না কেন কারন সে শ্রদ্ধার পাত্রী তাকে সর্বদা ভালোবাসার সাথে শ্রদ্ধা করি আমি। আর ছোটবেলা থেকেই আমি ওর সাথে আপনি বলতাম সেটা হয়তো তুমি ভুলে গেছো। সবশেষে তুমি বলেছিলে সে তোমার মায়ের মৃত্যুর কারন তাই না তাহলে বলবো সে তার মাকে বাঁচানোর সবটুকু চেষ্টা করেছিল ঐটুকু বয়সেই কতটা তার মাকে আঁকড়ে ধরেছিল। তুমি জানো সে তার মৃত মায়ের বুকে ঘুমিয়েছেও তার হাতটা ধরে সারাক্ষণ ছিল। তোমরা তো খবর পেয়েছিলে তোমার মা মারা গেছে আর সে প্রথম থেকে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত তার মায়ের সাথেই ছিল। কতটা ছটফট করেছে তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। আমি শুনেই সহ্য করতে পারছিলাম না আর ঐ মেয়েটা সব একাই সহ্য করে গেছে। আর সবথেকে বড় কথা সে হাঁড়িয়ে যায় নি আমি তাকে হাড়িয়ে ফেলেছিলাম ইচ্ছে করে আমাদের জীবন থেকে। তুমি তাকে কোন সাহসে এইসব বলো তোমার সাহস কি করে হয় মুসকান কে ঐসব বলার।

বলতে বলতে তিনিও আরো দু’টো থাপ্পড় দিল আরবাজকে । আরবাজ কাঁদতে লাগলো মিশুও কাঁদছে। আরবাজ বলল,,

“আমায় যতো ইচ্ছে মারো বাবা। আমি এটা ডিজার্ভ করি আমি চাইনি ওকে বলতে এইসব। আমি চাইনি আমি তো ওকে বিশ্বাস করি আর ভালোওবাসি। সকালে বড় মা আর তার ভাই কথা বলছিল এই নিয়ে যে আজ বড় ছেলের এঙ্গেজমেন্ট ওদের মামাবাড়ির লোকজন ও আসছে তারা এসে ফুলের কথার প্রসঙ্গ তুলবে তখন কি বলবে আরবাজদের বাবা। সে তো সেদিনের পর মুসকান কে খোঁজেনি। তখন বড় মা বলল তুমি নাকি ফুল নাকি মায়ের মৃত্যুর কারণ বলো এই জন্যই নাকি তুমি ওর খোঁজ করো নি। এই কথাটাই সারাদিন আমার মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিল। এরপর তোমার আর ফুলের সবকিছু মনে করলাম তখন দেখলাম তুমি ওর সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলো না। সবকিছু মাথায় এমনভাবে ঘুরছিল যে আজ খুব ডিসটার্ভ ছিলাম তখন ফুল তোমার ব্যাপারে খারাপ কথা বলতেই ভেতর থেকে সকালের কথাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আমি এক মুহুর্তের জন্য ভুলে গেলাম আমার বোনকে তাই তো এসব বলে ফেলেছি তবে আমি চাইনি ঐসব বলতে বিশ্বাস করো। আমি ফুলের পা ধরে মাফ চাইবো বাবা।

বলতে বলতেই আরবাজ জোরে কেঁদে উঠলো। ছেলেরা নাকি কাঁদেনা এটাই হলো প্রমান। শেখ শাহনাওয়াজ ছেলেকে ধরলেন না। মিশুও সব শুনে ওর দিকে গেল না। শেখ শাহনাওয়াজ আরবাজের কাঁধে হাত রেখে বলল,,

“বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছে চলো বাড়ি চলো। আর এইসব কান্নাকাটি বন্ধ করো। কারন যার জন্য কাঁদছো তার সামনে এভাবেও কাঁদলে তার ক্ষমা পাবে কিনা সন্দেহ। কারন সে আবেগী নয় সে বাস্তববাদী। কথার তীরের ক্ষত তরবারির আঘাতের থেকেও গভীর হয়।”

“বাবা আমি?”

“আর একটাও কথা না তবে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি কিভাবে সামলাবে সেটা ভাবো। মুসকান কে কি তার পরিচয় আপতত সেটা থাক এতোদিন যেভাবে ছিল। আমরা আমাদের লক্ষ্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি এখন কোন ভাবেই তীরে এসে তরী ডুবতে দেব না আমি।”

“কি বলছো তুমি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“তোমাদের না ভাবলেও চলবে‌। এখন চলো। আর মিশুমনি তুমি তো গুড গার্ল এখানে যা হলো তুমি কিন্তু কাউকে বলবে না।

তিনি জানেন না মিশুর সুস্থ হওয়ার কথা। তাই তিনি এভাবে বললেন। মিশুও বাবার কথায় তার মেলালেন।

ওরা তিনজন বাড়ি ফিরে গেল। ওরা বাড়ি ফিরতেই সবার প্রশ্নের ঝড় উঠলো‌। নাফিয়া অদ্ভুত ভাবে আরবাজের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আরবাজ আর ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না। তখন মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,

“শাহনাওয়াজ ভাইসাব আপনারা আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।”

শেখ শাহনাওয়াজ তাতে সম্মতি জানিয়ে ওপরে গেলেন। আরবাজ আর মিশুও গেল তিনজনে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ নরমাল একটা পাঞ্জাবি পরে এলো আর মিশু নরমাল থ্রিপিচ। কেউ কিছু বলবে তার আগে মিশু বলল,,

“সবাই হয়তো ভাবছেন আমার ভাইকে কেন মারা হলো তাই না? সে কি কোন অসভ্যতামি করছিল ফুলের সাথে। না সেরকম কোন কিছুই সে করে নি আমার ভাই মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করতে জানে। এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে‌। বাজপাখি ফুলের সাথে আমায় নিয়ে কথা বলছিল কিন্তু তাদের মিল হচ্ছিল না তাই বাজপাখি রেগে ভুলে ফুলের হাত ধরে‌। এখানে তার খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু এটা ফুলের পছন্দ হয় নি এই জন্য সে আমার ভাইকে মেরেছে। কারন ফুলকে কোন পুরুষ মানুষ স্পর্শ করুক এটা তার পছন্দয নয়। ফুল খুব রেগে গিয়েছিলো এই জন্য বৃষ্টির মধ্যে চলে যায়। এই জন্য বাবা ফুলকে বোঝাতে গিয়েছিলেন বাবাকে যেতে দেখে বাজপাখি আর আমিও গিয়েছিলাম তাকে বাবা আর বাজপাখি বুঝিয়ে এসেছে এখন কোন সমস্যা নেই। সে এখন বৃষ্টিতে ভিজে এখন আর আসবে না তাই আসে নি‌। তবে সে সবকিছুর জন্য সবাইকে দুঃখিত জানিয়েছে।

মিশুর সেই আগেকার মতো গোছানো কথা দেখে শেখ শাহনাওয়াজ আর আরবাজ দু’জনেই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। বাকিরাও অবাক হয়েছে। মিশু এমনভাবে প্রেজেন্ট করলো তাছাড়া মিশু কিরকম এখন সেটা সবাই জানে আর ও মিথ্যা বলবে না এই ভেবে সবাই বিশ্বাস করে নিল। সবশেষে আরবাজ বলল,,

“সত্যিই আমি ভাবতে পারি নি এরকম আমার দ্বারা ভুল হয়ে যাবে। আঙ্কেল বা নাফিয়া এখন যদি আপনারা এ বিয়েতে রাজি না থাকেন তাহলে সমস্যা নেই। এই বিয়ে
হবে না।”

হুট করে আরবাজের বিয়ে ভাঙার কথা শুনে সবাই আরো বেশি অবাক হলো। নাফিয়া দেখলো এখনো তার চোখে পানি অনুতাপের জন্য চোখ তুলে কারো দিকে তাকাতেও পারছে না। মাহফুজ শাহরিয়ার মেহবিন কে ভালো মতোই চেনে এরকমটা হওয়া অসম্ভব কিছু নয় এর ডেমো তিনি দেখেছেন এর আগে। তাই তিনি নাফিয়ার দিকে তাকালেন। নাফিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করলো তার কোন সমস্যা নেই তাই তিনিও বললেন তার সমস্যা নেই এই বিয়ে হবে। অতঃপর জানানো হলো এঙ্গেজমেন্ট হবে। হুট করে জিনিয়া আর মুনিয়া বলল,, মুখর ভাইয়া কোথায় তার বোনের এঙ্গেজমেন্ট এ কি সে থাকবে না। ওদের কথা শুনে সবাই মুখরকে নিয়ে ভাবলো সেই ঘটনার পর সবার আগে মুখরই বেরিয়েছে। মাহফুজ শাহরিয়ার মুখরকে ফোন করলো। ফোন পেয়ে মেহবিন কে যত্ন করে শুয়িয়ে দিল কপালে একটা চুমু দিয়ে দরজা আটকিয়ে চলে এলো। ড্রেস চেঞ্জ করলো ফরমাল শার্ট আর প্যান্ট ড্রেস আপ করে ও চলে এলো। মুখর আসতেই সবাই বলল কোথায় গিয়েছিল তখন সে বলল একটা ইম্পোর্টেন্ট কাজে গিয়েছিল ওকে আবার যেতে হবে ইমার্জেন্সি আছে। শুধু নাফিয়ার এঙ্গেজমেন্ট এর জন্য এসেছে। মুখর আসার পর আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকায় নি। অতঃপর নাফিয়া আর আরবাজের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেল। এখন খাওয়ার পালা সবাই খেতে বসলো তবে আরবাজ শেখ শাহনাওয়াজ মুখর আর মিশুর গলা দিয়ে খাবার নামলো না। মিশু না খেয়ে ওপরে চলে গেল শেখ শাহনাওয়াজ কিছু বললেন না। মুখর কাজের বাহানা দিয়ে ও বাড়ি থেকেই চলে এলো। ও বলল আবার সকালে আসবে একবার এখন খুব জরুরী কাজ আছে যেতেই হবে। মুখরের এমন কথা শুনে কেউ আর বাঁধা দিলো না। হুট করে মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,

“আপনি আজ স্পেশাল কাদের সাথে দেখা করাবেন বলেছিলেন?”

শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“হুম বলেছিলাম তবে দুঃভাগ্যবসত তারা আসে নি। তাই দেখা হলো না।”

“তারা কারা ছিল?”

“আরবাজের আরেক মামা ও তার পরিবার।”

“ও আচ্ছা হয়তো অনেক ব্যস্ত ছিলেন এই জন্য আসেন নি নাহলে ভাগ্নের অনুষ্ঠানে কে না আসে।”

“হয়তো।”

“ইনশাআল্লাহ পরে আমাদের আবার দেখা হবে।”

“হুম ইনশাআল্লাহ।”

_________________

মুখর বাড়ি এসে দেখল মেহবিন বালিশ সরিয়ে বিছানায় মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে এরকমটা ও প্রায়ই দেখে ও বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমায় না। তবে এটা নিয়ে কখনো ওকে জিজ্ঞাসা করে নি। মুখর চেন্জ করে নরমাল ড্রেস পরে এলো। যেখানে ওর বউটা খায়নি এতো কষ্ট পেয়েছে আজ সেখানে ওর গলা দিয়ে ভাত নামবে কিভাবে। ও মেহবিনের কাছে গিয়ে ওকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো মেহবিন ও আজ গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে রইল হয়তো অনেক দিন পর যে কারো ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।

অতঃপর নতুন সকালের আগমন। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যেস আছে তাই সকালেই উঠে পরলো।মেহবিন চোখ খুলেই দেখলো মুখর ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। মেহবিন হাত দিয়ে সরাতে গেলেই দেখলো ওর হাতে ব্যান্ডেজ। কালকে রাতের কথা মনে পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সকাল ছয়টা মেহবিন মুখরকে ডাকলো মুখর উঠেই বলল,,

“উঠে পড়েছো?”

“হুম এখন একটু মুখটা মুছিয়ে দিন তো বাড়ি যাবো। নেত্রী পরতে আসবে ওকে পড়াতে হবে।”

“তুমি এই অবস্থায় বাড়ি যাবে?”

“তো আমার কি হয়েছে শুনি? শুধু হাতে ব্যান্ডেজ।”

“না মানে এই ড্রেস এ।”

“হ্যা যাবো আপনার একটা ক্যাপ আর না ইউজ করা মাস্ক দেন । কিভাবে যেতে হবে সে আমি ভালো করেই জানি। এখন তাড়াতাড়ি করুন।”

মুখরের আর কি তার বিহঙ্গিনীর কথা শুনতেই হবে। ও মেহবিনকে মগ দিয়ে কুলি করতে বললো তারপর মুখটা ধুয়িয়ে দিল‌। মুছিয়েও দিল। ঘরে কাপ নুডুলস ছিল গরম পানি করে ওটাকে বয়েলড করে নিল। তারপর মেহবিনের হাত ধরে বসিয়ে বলল,,

“কাল রাতেও কিছু খাও নি এখন না বললেও শুনবো না। তাড়াতাড়ি হা করো।”

মেহবিন আর কোন কথা বললো না চুপচাপ খেয়ে নিল। এরপর শুধুমাত্র নিজের জুতো ছাড়া আর সবকিছু মুখরের পরে নিল চুলগুলো খোপা করে নিল যদিও কষ্ট হলো। তারপর ক্যাপ পড়লো ক্যাপের ওপর দিয়ে হুডি টেনে দিল । মুখে মাস্ক পরে নিল ব্যস রেডি। তখন মুখর বলল,,

“একেবারে পারফেক্ট লাগছে। আমি গাড়ি করে দিয়ে আসি।”

“আপনার ইচ্ছা।”

মুখর নিজেও একটা হুডি আর মাস্ক পরে নিল তারপর গাড়ি নিয়ে বের হলো। মেহবিন কে পাকা রাস্তায় নামিয়ে দিল। সকাল বেলা কেউ বাজারে যাচ্ছে নয়তো ক্ষেতে তাই যাদের নজরে মেহবিন পড়লো সবাই অবাক হলো বাইরের দেশের মেয়েদের মতো ড্রেসাপ দেখে তবুও এগিয়ে এসে কিছু বললো না। মেহবিন বাড়ি এসে গেট খুলবে তখন আমাদের দ্য গ্ৰেট শেখ তাজেলের আগমন ঘটলো তিনি এসেই বললেন,,

“ঐ মিয়া তুমি আমার ডাক্তারের বাড়ি চুরি করবার ঢুকতেছো। আমারে চেনো তুমি তোমার সাহস তো কম না আমার ডাক্তারের বাড়ি চুরি করতে আইছো।”

না চাইতেও মেহবিনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ও গলার স্বর চেন্জ করে বলল,,

“হ্যা চুরি করতে এসেছি তোমার ডাক্তাররে।”

“কি এতো বড় চোর তুমি। তুমি আমার ডাক্তাররে চুরি করবা তার আগে আমি খাড়াও তুমি।

বলেই তাজেল এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজতে লাগলো । একটা সময় একটা লাঠি পেয়েও গেল ও দৌড়ে ওকে মারতে এলো তা দেখে মেহবিন এবার নিজের স্বরেই বলল,

“নেত্রী।”

নেত্রী শুনেই তাজেল থেমে গেল। আর বলল,,

“তুমি ডাক্তাররে চুরি কইরা নিজের ভেতর ঢুকালাইছো। তাড়াতাড়ি ডাক্তাররে বাইর করো। না হইলে এই লাঠি মাইরা তোমার মাথা ফাটাই দিমু।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে তাজেলের দিকে এগিয়ে গেল আর কন্ঠ চেন্জ করে বলল,,

“আচ্ছা তোমার ডাক্তারকে নেব না কিন্তু তার বদলে তোমাকে নিয়ে যাবো রাজি।”

“এহন আইছে আমি তো আমার ডাক্তাররে যাইতে দিমু না আর নিজেও যামু না। কারন আমি ডাক্তাররে ছাড়া ভালো থাকবার পারি না। এহন তুমি তাড়াতাড়ি ডাক্তাররে বাইর করো নাইলে বাড়ি মারলাম।”

বলেই লাঠি উঁচু করলো তা দেখে মেহবিন হেঁসে উঠলো। আর মাস্ক সরিয়ে বলল,,

“এই যে নেত্রী আমিই তোমার ডাক্তার। তুমি আমাকে মারবা।

মেহবিনের চেহারা দেখেই তাজেল লাঠি ফেলে দিল আর বলল,,

‘ওহ এইডা তুমি তাইলে আগে কইলা না ক্যা? তোমারেতো আজক্যা আমি চিনবার পারি নাই তোমার চোখ যে দেখতে পাই নাই তাই । তোমার চোখ দেখলেই বুঝবার পারতাম এইডা তুমি।”

“তাই বুঝি?”

“হ তাই তোমারে তো আজ অনেক সুন্দর লাগতাছে। যদিও একটু ঢুলাঢালা তাও মেলা সুন্দর লাগতেছে। আমি ভিডিও তে দেখছিলাম একবার বিদেশি মাইয়া গো মতো।’

“হুম হয়েছে এবার পরতে আসো‌।”

‘আমিতো চেক করতে আইছিলাম তুমি বাড়ি আছাও কিনা?

“বাড়ি ছিলাম না এখন এলাম। এখন পরতে আসো।”

“আইচ্ছা কিন্তু তোমার হাত কই দেহি না ক্যান? এতো বড় হাতা ক্যান?হাত দেহাই যায়না।”

বলেই তাজেল ওর হাতাটা উঠাতে লাগল। উঠাতে উঠাতে হাত বের করলো হাতে ব্যান্ডেজ দেখে বলল,,

“ও আল্লাহ তোমার হাতে ব্যান্ডেজ ক্যান ডাক্তার? দেহি ঐ হাত দেহি।

ও আরেকটা হাত ও দেখলো তারপর দেখে বলল,,

“কোনে গেছিলা তুমি ? কাইল না তুমি চেয়ারম্যান বাড়িতে গেছিলা তাইলে এই অবস্থা হইলো কেমনে? কেউ কি তোমারে মারছে নাম কও খালি আমিও মারুম ওরে । ঐ পাগল মাইয়া মারছে না কও তুমি?”

তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে তাজেলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,,

“না নেত্রী আমায় কেউ মারেনি। আর ফুল পাগল হলেও আমাকে ভালোবাসে আর পাগল রা নিজেদের স্বার্থ বোঝেনা এই জন্য তাদের প্রিয় মানুষদের আঘাত করে না। আঘাত তো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষরাই করে যখন তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে।”

“তুমি কি কইলা আমার মগজে কিছুই ঢুকলো না।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“তোমার ঢুকাতেও হবে না শুধু এইটুকু ঢুকাও আমাকে কেউ মারে নি।”

“তাইলে এমন কেমনে হইলো?”

“ওটা একটা এক্সিডেন্ট বুঝছো।”

“আইচ্ছা এহন তুমি ঘরে যাও আমি দাদিরে কইয়া আসি তোমার রান্দার কতা। তারপর পরতে আসতেছি।”

বলেই তাজেল দৌড়। মেহবিন ও হেঁসে ঘরে চলে এলো এই মেয়েটাও না হাত কাঁটা দেখেই বুঝতে পেরেছে রান্না করতে কষ্ট হবে তাই দৌড়ে বাড়ি চলে গেল। কিন্তু বারান্দার সামনে এসে ও অবাক হয়ে গেল গেট এ তালা নেই । ও বারান্দায় গিয়ে দেখলো কয়েক জোড়া জুতো। ও তাড়াতাড়ি করে ঘরে ঢুকতেও দেখলো মেহরব চৌধুরী, মিহির, মাইশা আর মিসেস মেহরব ‌ বসে আছে আর আদর ঘুমিয়ে রয়েছে। মেহবিন কে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো। মেহরব চৌধুরী মেহবিনের কাছে এসে বলল,,

“মেহু তুই ঠিক আছিস তো?”

মেহবিন অবাক হয়ে বলল,,

“তোমরা এখানে? ও বাড়িতে যাও নি।”

তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

“ওখানে গিয়েছিলাম আমরা বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর। কিন্তু যখনি ঢুকবো তখন দেখি তুই আর আরবাজ কথা বলছিস আমরা আরবাজের সব কথাই শুনেছি। এমনকি ওখানে তুই যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই ছিলাম। সব দেখে ভেতরে ঢোকার রুচি হয়নি। বেশ অন্ধকার আর বৃষ্টির জন্য কেউ আমাদের খেয়াল করে নি। মিহির আর মাইশা তো তোর বাড়ি চেনে আমরা ভেবেছিলাম তুই বাড়ি আসবি তাই এখানে এসেছিলাম কিন্তু দেখলাম তুই এলিনা তখন মিহির তোকে খুঁজতে বেরিয়েছিল পেয়েও ছিল তখন দেখলো মুখর তোকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে তাই ও আর ওদিকে না গিয়ে ফিরে আসে।”

সবশুনে মেহবিন দুই হাত ভাঁজ করে বলল,,

“তোমার ভাগ্নের এঙ্গেজমেন্ট আর তোমরা সেখানে না গিয়ে আমার জন্য এখানে এসেছো?”

‘আমরা না যাওয়াতে খুব একটা সমস্যা হতো নাতো। তাছাড়া ওখানে যাওয়ার প্রয়োজন দেখছি না।

“তোমার গার্ডস গাড়ি ওগুলো কোথায়? মন্ত্রী হয়ে তো ওগুলো ছেড়ে আসার কথা নয়।”

‘গার্ডস আনিনি তবে গাড়ি এনেছি মিহির একটু দূরে রেখে এসেছে।”

“কি গার্ডস আনোনি।”

“না ওগুলো স্টেশনে রেখে এসেছি। যদিও আনতে চাইছিলাম না তবুও মিহির নিয়ে এলো।

‘ওহ আচ্ছা। মামী তোমরা কিছু খেয়েছো? আদর কে ওঠাও আমি কিছু বানিয়ে দিচ্ছি ওর তো খিদে পেয়েছে। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি।

তখন পেছন থেকে কেউ বলল,,

“এই হাত নিয়া তুমি রান্না ঘরে যাইবা?”

মেহবিন পেছনে ফিরে দেখলো কোমরে দুই হাত দিয়ে তাজেল দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে মেহবিন হাসলো তখন মাইশা বলল,,

” কি হয়েছে হাতের দেখি হাত দেখি।”

মাইশা এসে মেহবিনের হাতের হাতা উঠালো দুই হাত উঠিয়ে দেখলো দুই হাতেই ব্যান্ডেজ। তা দেখে মামী বললেন,,

‘এই সব কি মেহু মা?”

“ধূর বাদ দাও নেত্রী ভেতরে এসো।”

তাজেল ভেতরে ঢুকলো হাতে একটা বাটি। মেহবিন হেঁসে বলল,,,

“এখানে কি আছে?”

“এইহানে মুড়ি মাখা আছে দাদি তোমার কথা শুইনা মাখাই দিল। রানতে মেলা সময় লাগবো তাই এইগুলা পাঠাইছে। কিন্তু এনেতো দেহি মেলা মানুষ এইটুকুতে হইবো না আমি দাদিরে যাইয়া কই আবার।”

‘না না কিছু করতে হবে না মা আমি রান্না করবো।”

মেহবিনের মামীর কথায় তাজেল ওনার দিকে তাকালো তারপর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ডাক্তার?”

মেহবিন বুঝতে পারলো ও জানতে চাইছে নতুন মানুষ গুলা কারা। মেহবিন বলল,,

‘এরা হলো আমার মামা মামী সেদিন মিহির ভাইয়া আর মাইশা আপু এসেছিল এই যে এই দুজন ওদের মা বাবা। আর যে শুয়ে আছে সে হলো মিহির ভাইয়ার ছেলে। আর মামা মামী এই হচ্ছে আমার নেত্রী।

“ওহ আইচ্ছা।”

মেহরব চৌধুরী তাজেলের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,

‘শেখ তাজেল তুমি জানো আমিও কিন্তু একজন মন্ত্রী।”

‘তাতে কি তুমি তো আর শেখ হাসিনার মতো প্রধানমন্ত্রী না।”

তাজেলের কথায় সবাই হেঁসে উঠলো। এই মেয়েটা এমন যে কেউ না হেঁসে থাকতেই পারে না। মেহরব চৌধুরী তাজেলকে কোলে নিল। মিসেস মেহরব বলল,,

‘এই প্রথম কেউ এই মন্ত্রীকে সঠিক কথা বলছে। মন্ত্রী দেখে যে ভাব যেন সে প্রধানমন্ত্রী।

মেহরব চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“হুম সেই জন্য এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার জন্য আফসোস হচ্ছে।”

সবাই আরো একবার হেঁসে উঠলো। মেহবিন কে দেখে মাইশা বলল,,

‘এই যে মেহু তুই কি জামাইয়ের পোশাকেই থাকবি। নাকি চেন্জ করবি।”

এই কথা শুনে তাজেল বলল,,

“এইগুলা পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালার ড্রেরেস হেই জন্যই তো কই এতো বড় ক্যা।”

তাজেলের বলার ভঙ্গিতে সবাই আরো একবার হাসলো। মেহবিন মুচকি হেঁসে তার নেত্রীর দিকে তাকিয়ে রইল। এই মানুষটা ওর জীবনে না আসলে বোধহয় অনেক বেশি কিছু মিস করতো সে।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের জন্য বোনাস পার্ট আসবে রাত নয়টার দিকে। আরবাজের দৃষ্টিকোন থেকে এখন বলুন আমার কি করা উচিৎ। আমার তো একটু অন্যরকম লাগছে। আপনারাই বলুন আমার আরবাজের জন্য কি করা উচিৎ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here