কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৩৮ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
283

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

শেখ শাহনাওয়াজ আর মেহেরুন নিসা ছিলেন ক্লাসমেট। দুজন দুজনের সাথে চোখাচোখি হতো মাঝে মাঝে একটু কথাও হতো দুজন দুজনকে পছন্দ করতো। শেখ শাহনাওয়াজ ভেবেছিলেন পড়াশোনা শেষ করে তারপরে মেহেররুনিসার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। মেহেরুননিসার পরিবার ছিল শিক্ষিত মার্জিত ও রাজনৈতিক পরিবার। রাজনীতি পছন্দ করতো না বলে মেহেরুননিসা তার পরিবারের সাথে থাকতো না‌ হলে থাকতো। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই শেখ শাহেনশাহ তার বন্ধুর মেয়ে আরিফা জামান কে পছন্দ করে তার ছেলের জন্য বিয়ে ঠিক করেন। তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। বাবার বাধ্যগত সন্তান আর যেহেতু ঠিক করে ফেলেছে আবার মেহেরুননিসা কে মনের কথা জানানোও হয় নি। সবদিক বিবেচনা করে শেখ শাহনাওয়াজ দেখলেন ওনার বাবার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া পথ নেই। তাই তিনি না করতে পারলেন না। পড়াশোনা চলাকালীন তৃতীয় বর্ষে থাকতেই উনার বিয়ে হয়ে গেল। বলা বাহুল্য তিনিও শেখ শাহনাওয়াজ এবং মেহেরুননিসা ও ডাক্তারি পরছিলেন। ছেলের জন্যই শেখ শাহেনশাহ এস.এস. হাসপাতালটি খুলেছিলেন। শেখ শাহনাওয়াজ এর বিয়ের কথা শুনে মেহের ভেতরে ভেতরে অনেক ভেঙে পড়ে কিন্তু ওপরে বুঝতে দিতে চায় না। কিন্তু এই বিষয়ে তারই বা কি করার যেখানে শেখ শাহনাওয়াজই কিছু বলছেন না। আরিফা জামান আর শেখ শাহনাওয়াজ এর বিয়ে হয়। শেখ শাহনাওয়াজ সব ভুলে তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। মেহের এর থেকে মন সরিয়ে আরিফার দিকে দিয়েছিলেন। এভাবেই একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা তৈরি হয় তাদের। আরিফা জামান বাচ্চার চেষ্টা করেন কিন্তু হয় না অতঃপর তিনি ডক্টরের শরনাপন্ন হলে তিনি জানান আরিফা জামান কখনো মা হতে পারবে না। ব্যস এতেই তিনি অনেক ভেঙে পরেন। এদিকে শেখ শাহনাওয়াজ এর পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। শেখ শাহনাওয়াজ ও মেহেরুননিসা এস.এস. হাসপাতালের ডাক্তার হন। মেহেরুননিসা চাইতেন শেখ শাহনাওয়াজ এর আশেপাশে থাকতে তাই তিনিও শেখ হাসপাতালের ডাক্তার হন। আরো একটা বছর কেটে যায় কিন্তু আরিফা জামান নিজেকে শান্ত করতে পারে না এরপর শেখ শাহেনশাহ তিনবেলা সমানে বলেন তার ছেলে ওয়ারিস চাই। তার বংশ এগিয়ে নেওয়ার জন্য। আরিফা জামান সহ্য করতে পারলেন না। একদিন তো বলেই ফেললেন তিনি শেখ শাহনাওয়াজ কে আবার ও বিয়ে করাবেন। শেখ শাহেনশাহের সাথে তিনি কথা বললেন। ওয়ারিসের জন্য তিনি শুনেই রাজি হয়ে গেলেন। শেখ শাহেনশাহ এই জন্য দুই তিন জন মেয়েও দেখলেন ব্যস হয়ে গেল ।

আরিফা জামান কোন ভাবে শেখ শাহনাওয়াজ যে মেহেরুননিসা কে পছন্দ করতেন এটা জানতে পারেন। তিনি শেখ শাহনাওয়াজ কে মেহেরুননিসার সাথে কথা বলতে বলেন। শেখ শাহনাওয়াজ ও মেহেরকে মনে মনে ভালোবাসতেন তাই রাজি হয়ে যায়।তখনও মেহেরুননিসা তার পছন্দের মানুষ কে পায়নি বলে অবিবাহিত ছিলেন। মেহরব চৌধুরীর বাবা বা তিনি ও কখনো জোর করেনি তবে ছেলে দেখেছিলেন কোনটাই ঠিকঠাক হচ্ছিল না এই জন্য বিয়ে হয় নি। তবে শেখ শাহনাওয়াজ প্রস্তাব টা রাখবেন কি না এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। তিনি এমনিই মেহরব চৌধুরীর বাড়ি যান। তিনি নিজে সাহস যুগিয়ে কিছু বলতে পারলো না চলে এলো। আরিফা জামান কে জানালে তিনি পরের দিন মেহেরের হাসপাতালে গেল ওর সাথে কথাবার্তা বললো একটা পর্যায়ে বলেই ফেলল কথাটা। তিনি না করে দিলেন একসময় যতোই পছন্দ করুক না কেন স্বার্থের জন্য তিনি কোন সম্পর্কে জড়াবেন না। আরিফা জামান জানান তিনি তার সকল দায়িত্ব পালন করবেন। তবুও তিনি রাজি হলেন না।

কিন্তু বিয়ে নিয়ে মেহেরুননিসা আর আর ওনার বাবার মাঝে এক সময় তর্কবিতর্ক হয় তাদের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি রাগে সিন্ধান্ত নিলেন তিনি শেখ শাহনাওয়াজ কে করবেন।এই জন্য বলা হয় রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত কখনো সঠিক হয় না। তিনিই মানা করেছিলেন কিন্তু তার বাবার জন্য তিনিই আবার রাজি হলেন। এটা অবশ্য শেখ শাহেনশাহ আর আরিফা জামান লাগিয়েছিলেন তিনি মেহের কিছু কথা ওনার কানে তুলেছিলেন। এই জন্য তিনি রেগে মেয়ের সাথে বিয়ের কথা তুলেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয় তার তো কথা খাটেই না উল্টো আরিফা জামানের ফাদে পা দিয়ে মেয়েকে রাজি করেন। পরে অবশ্য বিষয়টা তিনি বুঝতে পারেন।মেহরব চৌধুরী জানতেন মেহের শেখ শাহনাওয়াজ কে পছন্দ করেন তাই তিনি বাঁধা দেন না। অতঃপর মেহেরুননিসা জানান শেখ শাহনাওয়াজ কে বিয়ে করবেন। মেহেরের সাথে শেখ শাহনাওয়াজ এর বিয়ে হয় তখন মেহরব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আরিফা জামান প্রথমে হাঁসি মুখে মেনে নিলেও ভেতরে ভেতরে সহ্য করতে পারতেন না। তবুও তিনি সন্তানের আশায় মুখিয়ে ছিল। অতঃপর এক বছর পর আরবাজ আর মিশু হয়। ছেলে হয়েছে এই খুশিতে আরিফা জামান তার নামের সাথে মিলিয়ে রাখেন আরবাজ। এই নিয়ে শেখ শাহনাওয়াজ কিংবা মেহের কিছুই বলে নি। কারন আরিফা জামান এর অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলেন। মেহেরুননিসা তার মেয়ের নাম রাখলো মিশুমনি।

বাচ্চা হওয়ার পর থেকে আরিফা জামান শুধু তাদের নিয়েই থাকতেন। এদিকে শেখ শাহনাওয়াজ আগে থাকতেই মেহের কে ভালোবাসতেন বাচ্চা হওয়ার পর থেকে যেন তা ভালোবাসাটা যেন বেড়ে গেল। তা আরিফা জামানের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তবুও তিনি কাউকে বুঝতে দিতেন না। মেহের ও আরিফা জামান কে আপা বলতো তাদের দেখে কেউ বলতেই পারবে না তারা সতিন ছিল বরং তারা দুই বোন ছিল। তার চার বছর পর মেহবিন আসে কোল আলো করে‌। মেহবিন নাম রাখে মেহেরুননিসা আর মুসকান রাখে শেখ শাহনাওয়াজ। তারা দু’জনেই মেহবিন কে আদর করতো সেই সাথে আরবাজ আর মিশু তো আছেই। আরবাজ কে মামনি বলতে শেখালেও আরবাজ কখনো আরিফা জামান কে মামনি বলেনি বড় মা বলেছে কিন্তু মিশু মায়ের কথা শুনে মামনিই বলেছে। আরবাজকে আর মিশুকে এক বছর পর স্কুলে দেওয়া হবে তাই আরিফা জামান শেখ শাহেনশাহ কে বলেন । শেখ শাহেনশাহ নাতি কী গ্ৰামের স্কুলে পরবে নাকি তাদের শহর স্কুলে পড়ানো উচিৎ। এ কথা শুনে তিনিও তাই মনস্থির করেন। উনি এই কারনেই বলেছিলেন যে মেহেরকে তার পছন্দ নয় সে ওনাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই সুযোগে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলেন। শেখ শাহনাওয়াজ পরে যান বিপদে ( তখন হাসপাতাল মহুয়াপুর গ্ৰামেই ছিল পরে সেটা অন্য জায়গায় শিফ্ট করা হয় গল্পে এখনো সেটা উল্লেখ করিনি।) তাছাড়া দুই বউ ওনার থাকারও তো একটা সাম্যতা রাখতে হবে। অতঃপর তিনি মনস্থির করেন পনেরোদিন আরিফার কাছে থাকবে পনেরোদিন মেহেরের কাছে। এক কথা শুনে দুজনেই রাজি হয়।

এভাবেই চলতে থাকে সাত বছর। ঢাকায় আসার পর মেহেরুননিসা আরবাজদের ঠিকমতো মানুষ করার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু এই সাত বছরে আরিফা জামান আর মেহেরুন মুখোমুখি খুব কমই হয়েছে। মেহবিন পাকা পাকা কথা বলতে শিখেছে। বেশিরভাগ সময়ই তার শেখ শাহেনশাহ এর সাথে ঝগড়া লাগতো। আরিফার পেছনেও বড়মা বড়মা বলে লাফালাফি করতো। সবথেকে দুরন্ত বাচ্চা ছিল মেহবিন তবে এই নামটি শুধু তার মা বলতো আর সবাই মুসকান বলতো। এই জন্যই মেহবিন নামটা সবার অপরিচিত। আর ভুলে গেছে সবাই। আরবাজ আর মিশু মেহবিন কে ফুল বলতো। মেহবিনই ছোটবেলায় আরবাজকে নাম দিয়েছিল বাজপাখি। মিশুকে ও সবসময় ফুল আপু বলতো‌। তিন ভাইবোন পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো।

সেবার স্কুল ছুটি বিধায় মিশু আর আরবাজ ওর বাবার সাথে গ্ৰামে আসে। মেহবিন আর ওর মা ঢাকায় রয়ে যায়। মেহবিন পড়ার সময় বলল,,

“আচ্ছা মা বড়মা আমায় বাজপাখির মতো এতো আদর করে না কেন?”

মেহের মুচকি হেসে বলল,,

“মানুষ স্বার্থপর স্বার্থ হাসিল হলে কেউ কারো পরোয়া করে না।”

“তাহলে কি আমিও স্বার্থপর মা? তুমিও কি স্বার্থপর? বাবাও বাজপাখি ফুল আপু সবাই কি স্বার্থপর?”

“তুমি আরবাজ মিশু স্বার্থপর কি না তা এখনো বুঝিনি কারন তোমাদের মাঝে আমি এখনো স্বার্থপরতা দেখিনি। তবে আমি আর তোমার বাবা স্বার্থপর। আমরা একে অপরের স্বার্থের জন্য একে অপরের সাথে জড়িয়েছি। আমি জরিয়েছি আমার পছন্দের মানুষটাকে প্রাপ্তির খাতায় রাখবো বলে। আর তোমার বাবা জড়িয়েছে এই তোমাদের কে পাবে বলে।”

“তুমি কি বললে আমি কিছুই বুঝলাম না।”

“তোমার এইটুকু মাথায় এতকিছু বোঝাতে হবে না পাকুন্নি। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবে মেহবিন তোমার জন্য যেন কারো কখনো ক্ষতি না হয়। সবসময় যেন ভালো হয়।

“আচ্ছা। আজ তো কেউ নেই চলো আমি আর তুমি মিলে কানামাছি খেলবো।”

“এই রাতে?”

“আমাদের বাড়ি কি অন্ধকার নাকি যে রাত দিন আলাদা করতে হবে চলো তো তুমি।”

“তোমার কুসুম আপু ( কাজের মেয়ে)কোথায়? ওকেও ডাকো তিনজনে একসাথে খেলবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

মেহবিন তাকে গিয়ে নিয়ে এলো। অতঃপর তিনজনে মিলে কানামাছি খেললো। রাতে খাবার দাবার সেড়ে নয়টার দিকে ওরা শুতে গেল মেহবিন দুষ্টুমি করছিল ওর মায়ের সাথে। শেখ শাহনাওয়াজ ফোন করলে তারা দুজন সবার সাথে ফোনে কথা বলে। ফোন রেখে মেহবিন কে শুয়াবে এমন সময় তখন কুসুম নিচে ডাক দিল তিনি মেহবিন কে শান্ত হয়ে বসে থাকতে বলল। তিনি মেহববিনকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলে বের হন।। মেহের সিঁড়ির কাছে আসতেই কুসুম মেহেরের হাত ধরে বলল,,

“আপনার সময় ফুরাই আইছে কিছুজনের আপনারে এক ফুটাও সহ্য হয় না।”

বলেই দিল ধাক্কা। উনি ব্যাথাতুর আওয়াজ করতে করতে একদম নিচে চলে যায়। এদিকে মেহবিন মায়ের আওয়াজ পেতেই দৌড়ে আসে। সিঁড়ির কাছে আসতেই ও দেখলো ওর মা নিচে পরে আছে মাথা দিয়ে রক্ত পরছে। ও “মা; বলে চিৎকার করে নিচে নামলো তারপর কুসুম কে ডাকতে লাগলো কিন্তু পুরো বাড়িতে কেউ নেই মনে হলো। তিন চার মিনিট পর তখনি আল্লাহ বলে কুসুম এলো। মেহবিন বলল,,

“কুসুম আপু তাড়াতাড়ি মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

সে বলল,,

“তুমি খাড়াও আমি তো নিতে পারুম না ড্রাইভাররে আর দারোয়ান রে ডাইকা নিয়া আসি।”

কুসুম যেতেই মেহবিন ওর মায়ের হাত ধরে বলল,,

“তোমার কিছুই হবে না মা আমরা হাসপাতালে যাবো।”

উনি কিছু বলার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। শুধু মেয়ের কান্না দেখতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর কুসুম এলো দুজনকে নিয়ে অতঃপর হাসপাতালে নেওয়া হলো ততক্ষণে মেহের অজ্ঞান হয়ে গেছে। মেহবিন ওনার হাত ধরে রইল এক মুহুর্তের জন্যও ছাড়লো না। ডাক্তাররা কতো বলল তবুও মেহবিন জেদ ধরে মায়ের হাত ধরেই রইলো। কিন্তু সব ট্রিটমেন্ট করার পর এতক্ষনে মেহেরের জ্ঞান ফিরে আসার কথা কিন্তু আসছে না দেখে ডাক্তাররা একটু চিন্তিত হলেন। উনারা একটা ইনজেকশন দিলে মেহেরের জ্ঞান ফিরে আসে।প্রথম চোখ খুলেই তিনি দেখতে পান তার সেই ছোট্ট কলিজাটা তার হাত ধরে কাঁদছে। মুহুর্তেই তার মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। তিনি মেয়ের হাত ধরে বলল,,

“মেহবিন?”

মেহবিন মাথা উঁচু করে মায়ের দিকে তাকালো চোখ মুখ ফুলে গেছে ফর্সা চেহারাটা লাল বর্ন ধারন করেছে‌।‌ মেহবিন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মা তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে।”

“যেখানে আমার মেহবিন আমার সাথে আছে সেখানে কষ্ট কিসের?”

“তুমি জানো মা কুসুম আপু সেই যে গেল আর এলো না।কাউকেই দেখছি না আমি কুসুম আপুকে বলেছি বাবাকে খবর দিতে দিয়েছে কিনা। বাবাও তো এলো না মা।”

“তোমার বাবা খবর পেলে ঠিকই আসবে মেহবিন।”

মেহেরুননিসা মেহবিন কে তার বুকের ওপর শুয়ালেন ডাক্তার নার্স মানা করল তবুও তিনি শুনলেন না। মেহেরুননিসা ডাক্তারদের বলল ওখান থেকে চলে যেতে তিনি তার মেয়ের সাথে থাকবেন। তারা চলে গেল। মেহের বলল,,

“মেহবিন?”

মায়ের বুকে শুয়ে শুয়েই বলল,,

“হুম!”

“আমি যা বলবো একদম মন দিয়ে শুনবে। আর আমি যখন থাকবো না তখন আমার এই কথাগুলো মনে রাখবে।”

“তুমি কোথায় যাবে মা আমি তোমায় যেতেই দেব না। তোমার বুকে না শুলে তো আমার ঘুমই আসে না। তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমাবো কিভাবে? তুমি সবসময় আমার সাথে থাকবে।”

“আল্লাহ চাইলে থাকবো তো মা।এখন মন দিয়ে শুনো।

এই দুনিয়ায় কেউ কারো না সবাই নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করে একটা সময় ছুড়ে ফেলতে পারে। নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করবে যাতে কেউ তোমাকে তার স্বার্থের জন্য কাজে লাগাতে না পারে। এই দুনিয়ায় মুখোশধারী ভালোবাসার অভাব নেই। তবে সবার আগে তুমি মানুষ চিনতে চেষ্টা করবে কে কেমন সহজেই কাউকে বিশ্বাস করবে না। তুমি নিজেকে ভালোবেসো আর নিজের ওপর সবসময় বিশ্বাস ভরসা রেখো আর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ভরসা করে চলবে জীবনে ধোঁকা খাবে না। নিজের দূর্বলতা কারো কাছে প্রকাশ করবে না তাই কেউ তোমার দূর্বলতা জানবে না আর আঘাত ও করতে পারবে না। যতো যাই হয়ে যাক না কেন কখনো কাঁদবে না। কারন কান্না মানুষ কে দূর্বল করে দেয়। আর কাদলে কি কখনো সব ঠিক হয়ে যায় নাকি হয়না তো তাহলে শুধু শুধু চোখের পানি ঝড়িয়ে কি লাভ। কেউ তোমার সাথে অন্যায় করলে তাকে তুমি অবশ্যই শাস্তি দেবে তবে সবসময় মারামারি করে নয় মাঝে মাঝে এমন ভাবে দেবে সে নিজেই যেন নিজের চোখে চোখ রাখতে পারে না। যাতে সে নিজেই বুঝতে পারে সে কি ভুল করেছে। আর যদি তাও না বুঝে তাহলে তুমি তাকে কঠিন শাস্তি দেবে যেটা তোমার মনে চায় তবে কখনো অন্যায়ভাবে নয়। আমি জানি তুমি বুঝতে পারবে কখন কাকে কিভাবে শাস্তি দিতে হবে। নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করবে তোমাকে ছুঁতেও যেন কেউ দশবার ভাবে।

তুমি থাকবে মুক্ত বিহঙ্গিনীর মতো বিহঙ্গিনী বুঝোতো মেয়ে পাখি। তুমি থাকবে বিহঙ্গিনীর মতো তার নিজের মর্জির মালিক সে নিজে থাকবে। একটু অবাধ্য হবে অন্যের মন যুগিয়ে চলার জন্য কিছু করবে না। কারো মনমতো হওয়ার তার কোন দায় থাকবে না। সে থাকবে তার নিজের মতো। তার কাছে তার আত্মসম্মান সবার ওপরে থাকবে। সে এতটাই শক্ত থাকবে যে কেউ সহজে তাকে ভাঙতে পারবে না। নিজের পায়ের তলার মাটি সবসময় শক্ত রাখবে যাতে চাইলেও সহজে তোমার পায়ের তলার মাটি সরিয়ে না ফেলতে পারে। কখনো অন্যায় দেখলে তার প্রতিবাদ করবে। তোমার চোখের সামনে কেউ যেন অন্যায় করে পার না পায়‌। সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখবে ঠান্ডা মাথায় কিভাবে সব সামাল দেওয়া যায় সেটা ভাববে। তাড়াহুড়ো করে কোনদিন সিদ্ধান্ত নেবে না। আর রাগের মাথায় তো কোনোদিন ও না। কারন রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করলে সেই সিদ্ধান্ত কখনো সঠিক হয় না। তার প্রমান আমি নিজেই।কেউ কিছু বললে সাথে সাথেই তার জবাব দেবে না। এক মিনিট সময় ব্যয় করে তারপর জবাব দেবে দেখবে জবাব পাল্টে গেছে আর তুমি তাকে এমন একটা জবাব দিয়েছো যার প্ররিপেক্ষিতে সে আর কিছুই বলতে পারছে না। নিজেকে খুশি থাকার উপায় নিজেই খুঁজবে সর্বদা হাসিমুখে সব সামাল দেবে। কারো কথা ভেবে বা দুই কথা শুনে ভেঙে পরবে না। নিজেকে শক্ত ভাবে তৈরি করবে। জীবনে যাই হোক না কেন কেউ যেন বিহঙ্গিনী কে বুঝতে না পারে। নিজের চারপাশে একটা গন্ডী টানবে সবাইকে বিশ্বাস করতে সময় নিবে। যেখানে তোমার অসম্মান হবে সেই স্থান ত্যাগ করবে।

আর এটা মনে রাখবে তোমার জীবনে যা হবে তা তকদিরে লেখা ছিল যাই হোক না কেন কখনো আফসোস করবে না। আল্লাহর ওপর ভরসা আর তাওয়াক্কুল রাখবে। কারন কেউ তোমার সাথে না থাকলেও ঐ একজন সবসময় তোমার সাথে থাকবে। সবশেষে যারা তোমায় নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসবে তাদের নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসবে। তোমার দ্বারা যেন অন্যের ভালো ছাড়া ক্ষতি না হয়। অন্যায়ের জন্য কঠোরতা রাখলেও মন থেকে যেন কোমলতা হাঁড়িয়ে না যায়। অসাধারণ ব্যক্তির অধিকারী হবে তুমি। যাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। নিজেকে আগুনের ন্যয় তৈরি করবে যাকে ছোয়া তো দূর কাছে আসতেও যেন আশংকা সে যেন ঝলসে না যায়। অতঃপর যাই হোক না কেন তুমি বাঁচবে প্রানখুলে। তোমাকে বাঁচতে হবে আমার জন্য।

সবশুনে মেহবিন অনেক কিছুই বুঝতে পারলো আবার কিছুই বুঝতে পারলো না তেমন করে। তবুও সে মায়ের কিছুটা বুঝতে পেরে ও বলল,,

“আমি সব করবো মা তুমি শুধু আমার সাথে থেকো।”

মেহেরুননিসার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। এতোক্ষণ খুব কষ্ট করে শান্ত ভাবে মেয়েকে কথাগুলো বলেছিল। তিনি বললেন,

‘আল্লাহ চাইলে থাকবো মা। আমি সবসময় তোমার সাথে থাকবো।”

“হুম আর কোন কথা বলো না মা। ডক্টর আন্টি বললো না বেশি কথা না বলতে। তুমি এখন ঘুমাও কুসুম আপু মনে হয় বাবাকে ফোন করেছে বাবা এসে পরবে মা।”

‘হুম তুমিও ঘুমাও মা অনেক রাত হয়ে গেছে।”

‘হুম।”

“মেহবিন?”

“হুম!”

“আমি তোমায় অনেক ভালবাসি মেহবিন। হয়তো সবসময় আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না। কিন্তু তুমি মনে রেখো তোমার মা তোমায় অনেক ভালোবাসে। আর যখন আমাকে খুব মনে পরবে তখন চোখ বন্ধ করে ভাববে আমি তোমার পাশেই আছি।”

“এসব কেন বলছো মা।”

“কিছু না এমনিই।”

“ঘুমাও এখন তুমি। আমার ও খুব ঘুম পাচ্ছে মা।”

“আচ্ছা আমি আর একটা কথাও বলবো না। তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

মেহেরুননিসা মেয়েকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। মেহবিন ঘুমিয়ে পরেছে‌। তিনি মাথায় একটা চুমু দিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,

“আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি মেহবিন মা। জানিনা তোমার সাথে থাকতে পারবো কিনা। আরবাজ আর মিশু ঠিক থাকবে কারন তারা শাহের কাছে এখন। কিন্তু তোমাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি আমার কিছু করার নেই। এই জন্য ক্ষমা করে দিও আমায়। তোমায় অনেক শক্ত হতে হবে মা। নাহলে ওরা যে তোমায় বাঁচতে দেবে না। কারো কারো স্বার্থপরতার কাছে আমাকে বিলীন হতে হলো কিন্তু আমি চাই না তুমিও হও। অনেক ভালো থাকবে তুমি মা এই দোয়াই করি। সবশেষে ভালোবাসি আমার কলিজা।”

বলতে বলতেই ওনার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। তিনি আস্তে আস্তে চোখ বুঝলেন। ঘন্টাখানেক পর কারো টান পরায় মেহবিনের ঘুম ভেঙে গেল। ও চোখ খুলেই দেখলো ওর মায়ের মুখটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে ডাক্তার। তা দেখে মেহবিন নার্সের কোল থেকে নেমে দৌড়ে এসে বলল,,

“ডাক্তার আন্টি তুমি মায়ের মুখ ঢাকছো কেন? মা তো ঘুমাচ্ছে আর মা মুখ ঢেকে ঘুমাতে পারে না‌। মায়ের দমবন্ধ হয়ে আসে। কাপড় সরাও মুখ থেকে।”

মেহবিনের কথায় ডাক্তারের চোখ ছলছল করে উঠলো। তিনি আজ পর্যন্ত এমন বাচ্চাকে দেখেনি যে সবটা সময় তার মায়ের হাত ধরে বসেছিল। এমনকি মায়ের মৃত্যুর পরও তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল। এই মেয়েটাকে তিনি কি করে বলবেন তার মা ঘুমের মাঝেই চলে গেছেন। আর এতোক্ষণ তার মৃত মায়ের বুকে শুয়ে ছিল। তিনি মেহবিন কে কোলে নিয়ে বলল,,

“তোমার মা একেবারে ঘুমিয়ে গেছে আম্মু। তোমার আম্মু আল্লাহর খুব প্রিয় ছিল তো তাই আল্লাহ তায়ালা তার কাছে নিয়ে গেছে।”

ডাক্তারের কথায় মেহবিন গোল গোল করে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে রইল। আর বলল,,

“তুমি মিথ্যা কথা কেন বলছো? একটু আগেও মা আমার সাথে কথা বলছিল কতো কিছু বলছিল। আমি মায়ের বুকের ওপর শুয়ে ছিলাম। মায়ের বুকে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছিলো আমার তো সেটা শুনতে ভালো লাগে। সেই আওয়াজ টা হচ্ছিল তো।”

“আর হবে না আওয়াজ আম্মু ।”

“হবে আমাকে নামাও আমি শুনছি।”

মেহবিন জোর করে নেমে আর মেহেরুননিসার ওপর থেকে কাপর সরিয়ে বুকের ওপর শুয়ে পড়লো আর বলল,,

‘মা দেখো তো ডাক্তার আন্টি কি বলছে তোমার বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ নাকি শোনা যাবে না। আমি তো সবসময় শুনি বলো। একটু আগেও শুনছিলাম।”

মেহবিন চুপ করে ওর মায়ের বুকের বুকের মাঝে লেপ্টে রইলো আর খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলো তার মায়ের বুকে ঢিপঢিপ আওয়াজ। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরেও তখন শুনতে পেল না। তখন ও মাথা উঠিয়ে বলল,,

“ডাক্তার আন্টি দেখো তো মায়ের কি যেন হয়েছে আওয়াজটা হচ্ছে না। ইনজেকশন লাগাও একটা হবে তবে আস্তে দিও মা কিন্ত ইনজেকশন এ ভয় পায়।”

ডাক্তার এখন কেঁদেই দিলেন মেহবিনের কাজে তিনি নিজেকে সামলে বললেন,,

“তোমার মা মারা গেছে আম্মু। ঐ আওয়াজ কখনোই হবে না। তোমার মা তোমায় ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে।

“কি মারা গেছে?”

“হুম।ওনাকে হাসপাতালে আনতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। যদি আরো আগে আনা হতো তাহলে হয়তো তোমার মা বেঁচে থাকতো।”

এইকথাটা শুনে মেহবিন গোল গোল তার দিকে তাকিয়ে রইলো। ও মনে মনে আওয়ালো আরো আগে আনলে মা বেঁচে থাকতো। তারপর বলল,,

“উঁহু আমি বিশ্বাস করি না একটু আগেও আমার মা আমার সাথে কথা বলেছিল।

মেহবিন ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,,

‘দেখো না মা ডক্টর আন্টি কি বলছে। তুমি নাকি মারা গেছো। তুমি একটু আগে বললে আমার সাথে সবসময় থাকবে। তাহলে তাছাড়া তোমার বুকে না শুলে তো আমি ঘুমাতেই পারি না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কিভাবে? আচ্ছা মা তুমি উঠছো না কেন আচ্ছা তুমি কি আজ তুমি ডক্টর ডক্টর খেলছো আজ খেলতে হবে না। তুমি তো সবসময় পেশেন্ট থাকো আজ তোমায় থাকতে হবে না। উঠো না মা। তুমি উঠে বলে দাও তুমি আমায় ছেড়ে যাও নি।”

ডাক্তার সামনে এগিয়ে গিয়ে মেহবিনকে উঠানোর চেষ্টা করলো। মেহবিন শক্ত করে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। টপ ডাক্তার বলল,,

“উঠো আম্মু তোমার মাকে নিয়ে যেতে হবে।”

‘না না আমি মাকে কোথাও যেতে দেব না। মা আমার আমার সাথেই থাকবে।”

এবার মেহবিন চিৎকার করে কেঁদে উঠলো মাকে জড়িয়ে ধরে। যা দেখে ওখানে থাকা নার্স ডাক্তার সবার চোখেই পানি চলে এলো।এক নার্স গিয়ে মেহবিনকে জোর করে ছাড়াতে চাইলো মেহবিন বলল,,

“না আমি মাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। মা আমার সাথে থাকবে।”

ডাক্তার আর নার্স মিলে জোর করে ওকে ছাড়ালো।আর শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ডাক্তার। মেহেরুননিসাকে নিয়ে যাওয়া হলো যতোক্ষন পর্যন্ত না মেহবিনের চোখের আড়াল হলো সেই পর্যন্ত ও তাকিয়ে রইল। তাকে চোখের আড়াল করতেই মেহবিন কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল। ওর মায়ের কথাগুলো মনে করতে লাগলো। ও চোখ মুছে নিল। হঠাৎ করে এমন হওয়ায় ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। তারপর ওখানে কুসুম আসলো ওকে দেখে ডাক্তার চলে গেল।সে মেহবিনকে বলল,,

“তোমার বাবাকে আসতে বলেছি তিনি আসছে। তোমার মা কোথায় মুসকান?”

মেহবিন কোন কথা বললো না চুপ করে বেঞ্চে বসে রইলো। কুসুম তা দেখে অবাক হলো। ওর একটা ফোন আসতেই ও চলে গেল। তারপর একটা কেবিনে ঢুকলো তখন মেহবিনও কেন যেন ওখানে গিয়ে দাঁড়ালো। ও কেবিনে ঢুকবে এমন সময় ও শুনতে পেল একজনের গলা।

“এতোক্ষণ কোথায় ছিলে আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।”

তখন কুসুম বলল,,

“ভয়ের কি আছে এখানে তো ঐ ছোট বাচ্চা ছাড়া পেশেন্ট এর বাড়ির আর কেউ নেই। আর আসবেও না আর যে আসার সে জানেও না এখানে কি হয়েছে। আমি যে ওনাকে বিষ দিয়েছিলাম আগে তিন ঘন্টা পর পর সেই বিষ কাজ শুরু করে। আর সেটা করেছেও মেহেরুননিসা মরে গেছে। কিন্তু আফসোস সেটাও কেউ জানবে না। সেটার রিপোর্ট পাল্টাতে গিয়েই তো আসতে দেরি হয়ে গেল। ঐ ডাক্তার খুব চালাক সে মুসকানের মায়ের ভাব দেখেই টেস্ট করতে দিয়েছিল। সেই টেস্টের আসল রিপোর্ট এলে তো সবাই জেনে যেতো তার মৃত্যু সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়ার কারনে হয় নি বিষের কারনে হয়েছে। এখন মুসকানকেও সরাতে হবে। এই মেয়েও খুব ধরিবাজ। এই জন্যই তো স্যার আর ম্যাডাম সরাতে বলেছে।”

‘ঐ বাচ্চা মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগছে। মেয়েটা কতো কাঁদছিল ওকে না মারলে হয় না।”

“না হয়না ঐ মেয়েকে এখন তাদের দরকার নেই। কেন যেন ঐ মেয়েকে তারা সহ্য করতে পারে না তাই তো তাকে মেরে ফেলতে বলেছে। এখন অনেক হয়েছে এখন যাই ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এই হাসপাতাল থেকে বের করতে হবে। বাইরেই গাড়ি রেডি আছে।”

এই সবকিছু মেহবিন আড়াল থেকে শুনলো ওর মায়ের একটা কথা ছিল। অতঃপর তুমি প্রানখুলে বাঁচবে। তোমায় বাঁচতে হবে আমার জন্য। কথাটা মস্তিষ্কে আসতেই ও ওখান থেকে চলে আসলো। ও খুব ভয় পেয়েছে সদ্য মা হারা মেয়ে এখন নিজের বাঁচার তাগিদে দৌড়াচ্ছে। এদিকে কুসুম বাইরে এসে মেহবিন কে খুঁজতে লাগলো। কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করলো তখন একজন বলল বাইরে বেরিয়ে গেছে। মেহবিন দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূরে এসে পড়লো রাত প্রায় একটা এখন ও রাস্তায় হালকা গাড়ি চলছে। হুট করেই মেহবিন দেখলো ওর বাবা এক হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছে। তা দেখেই মেহবিন জোরে ডাক দিল।

“বাবা!

প্রথম ডাকটা শেখ শাহনাওয়াজ এর কানে গেল না। মেহবিন জোরে জোরে ডাকতে লাগলো। মেহবিন রাস্তা পার হওয়ার জন্য এগুতেই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগলো ও রাস্তায় পরে গেল। চোখ সামনের দিকে মেহবিন দেখলো ওর বাবা ঠায় দাঁড়িয়ে ওর দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে আসছেও না। তখন গাড়ি থেকে দুজন মানুষ নামলো তারা আর কেউ নয় আলম আহমেদ আর মিসেস সাবিনা। মিসেস সাবিনা ওকে কোলে তুলে নিল মাথা দিয়ে রক্ত পরছে তবুও ওর দৃষ্টি শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে। ওনাকে দেখতে দেখতেই মেহবিন চোখ বুঝলো। চোখ বোঝার আগে একবার অস্ফুট স্বরে বলেছিল “আমার বাবা!’আলম আহমেদ ওকে তাড়াতাড়ি করে সামনের হাসপাতালে নিয়ে গেল। তারপর নিজের বাড়িতে এভাবেই শুরু হয়েছিল মেহবিনের জীবনের আরেকটা অধ্যায়।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আমি নিজেই আজ ভাষাহীন। এই প্রথম কোন পর্ব লিখতে গিয়ে এতটা …….. । যাই হোক আজকে অনেক বড় পর্ব ছিল। আজ মেহবিন সম্পর্কে দুই লাইন হলেও বলে যাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here