হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৫

0
819

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫

প্রকৃতির নিয়ম মেনে রাতের আঁধার কেটে দিনের আলো ফুটলো ভুবন জুড়ে। চারদিক হালকা কুয়াশায় ডেকে আছে সবকিছু। শীত আসার আগাম বার্তা দিচ্ছে যেন প্রকৃতি। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ ভেসে আসছে গাছ গাছালি থেকে। সূর্যের মৃদু কিরণ গাছের ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প করে দৃশ্যমান হচ্ছে।

অয়ন্তি এই মনোরম পরিবেশের মাঝে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে তার সর্বাঙ্গ জুড়ে। চোখ বন্ধ করে রইল আবেশে। অচেনা জায়গা হওয়াতে রাতে ঠিক ভাল মতো ঘুমাতে পারি নি। আর তার উপরে টেনশনেও আছে না জানি আজকে মানুষজন বউ ভাতে এসে জাহিন আর তার নামে কে কি বলবে তা নিয়ে। নিচে মানুষদের আনাগোনা দেখে অয়ন্তি বেশিক্ষণ বেলকনিতে না থেকে রুমে চলে আসে।

এর মাঝে আহান বায়না ধরেছে অয়ন্তিকে নিয়ে ছাদে যাবে। আহান নাকি অয়ন্তিকে তাদের পুরো ছাদটা ঘুরিয়ে দেখাবে আর‌ তার সাথে আরেকটা জিনিসও নাকি দেখাবে। অয়ন্তি আহানকে বোঝানোর স্বরে বলে।

“আহান আমি অন্য একদিন ছাদটা ঘুরে দেখব। আমি তো এই বাড়িতেই থাকব তাহলে এত তাঁড়া কিসের?”

আহান জেদ ধরে বলে, “না তুমি এক্ষুণি যাবে।”

আহানের এমন জেদ করা দেখে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকা জারা ঝাঁঝালো স্বরে বলে, “এই‌ আহান তুই কিন্তু এখন বেশি বাড়াবাড়ি করছিস। সব সময় সব জায়গায়তে জেদ মানায় না। তুই রুম থেকে বের হো তো। সকাল‌ সকাল ভাব ধরছিস আমার রুমে এসে।”

আহান জোরে চিৎকার করে বলে, “সকাল কোথায় ঘড়িতে আটটা বাজে। আর বাড়ির সকলেই উঠে গেছে শুধু তুমি ছাড়া।”

জারা তড়িৎ বেগে শুয়া থেকে উঠে বসে। আহানকে রাগী গলায় কিছু বলতে যাবে কিন্তু পরক্ষণে নিজের রুপ‌ পরিবর্তন করে‌ নরম গলায় বলে, “আহান! ভাই‌ আমার দেখ ভাবি হচ্ছে এই বাড়ির নতুন বউ। এখন ভাবি যদি ছাদে যায় তাহলে‌ বাড়ির সবাই খুব খারাপ ভাববে।”

“না কেউ খারাপ ভাববে না।”

জারা এবার বেড থেকে নেমে ভাইয়ের দিকে তেড়ে এসে রেগে উচু গলায় বলে, “আহান এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে দিলাম।”

আহান দিল ফোঁস করে কেঁদে। কিন্তু চোখে কোনো পানি নেই। এটা হচ্ছে এক‌ প্রকার কুমিরের কান্না যেটা আহান প্রায়ই করে থাকে। আহান চোখ টলতে টলতে বলে, “তুমি আমাকে বকা দিলে তো আমি চাচ্চুর কাছে তোমার নামে বিচার দিব।”

“যা বাবার কাছে গিয়ে আমার নামে নালিশ কর আর তাতে আমার বা…।”

জারা কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যায়। ভাবির দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে, “তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। যা মন চায় তাই কর।”

কথাটা বলেই জারা হনহনিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। দিন দিন এই ছেলের বায়না বেড়েই চলছে যত বড় হচ্ছে তত যেন বাচ্চায় পরিণত হচ্ছে। আর তাকে নিয়ে বাড়ির সকলে কত মাতামাতি। এক্কেবারে অসহ্যকর। অয়ন্তি আহানের হাতটা ধরে বলে।

“আহান আমরা অন্য দিন যাব ছাদে কেমন।”

আহান ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, “আজকে গেলে কি হবে? জানো ছাদে না ভাইয়ার মানে জাহিন ভাইয়ার একটা জিনিস আছে যেটা আকাশে উঁড়ে।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “আকাশে উঁড়ে।”

“হ্যাঁ!”

অয়ন্তির দেখার কৌতূহল জাগে কি এমন জাহিনের জিনিস আছে যেটা আকাশে উঁড়ে। অয়ন্তি আহানকে আবারো প্রশ্ন করে, “কি জিনিস আহান?”

“এটা বলব না। তুমি দেখতে চাইলে ছাদে চলো।”

অয়ন্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “আচ্ছা চলো।”

“সত্যি তুমি দেখবে তাহলে চলো।”

একটু আগে যেই ছেলের মনে বৃষ্টি নেমেছিল সেই‌ ছেলের মনে রংধনুর উদয় হয়ে গেছে নিমিষেই। অয়ন্তি আহানের খুশি দেখে মুচকি হাসে। মনে পড়ে যায় ফাইজের কথা। ও তো অনেক বায়না ধরত তার কাছে আর এখানে এসে আহানও বায়না ধরছে তার কাছে। আহান‌ খুশিতে গদগদ হয়ে বলে, “চলো চলো।”

“আহান বলচ্ছিলাম বাইরে‌ কেউ আছে কি না আগে‌ দেখে‌ আসো।”

“কেউ নেই সবাই কাজে ব্যস্ত।”

আহান অয়ন্তিকে টানতে টানতে রুম থেকে বের হয়ে অর্ধেক সিঁড়ি‌ পর্যন্ত আসতেই বলে উঠে, “এই রে একটা ভুল হয়ে গেছে।”

অয়ন্তি চিন্তিত হয়ে বলে, “কি ভুল?”

“তুমি যাও আমি এক্ষুণি আসছি।”

“আহান শুনো আমার কথাটা।”

আহান অয়ন্তির ডাক শুনলো না। নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল। অয়ন্তির আর কি করা সে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে‌ কিছুটা ভয়ও কাজ করছে কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে।

এদিকে আহানকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে জাহিন বলে, “এই আহান এভাবে দোঁড়াচ্ছিস কেন? যদি পড়ে যাস তাহলে কি‌ হবে? আস্তে যা।”

কে শুনে কার কথা‌ আহান‌ দৌঁড়ে নিজের ঘরে ঢুকে‌ পড়ে। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। অর্ধেক সিঁড়ি পর্যন্ত এসে অয়ন্তিকে দেখে চমকে যায়। এই মেয়ে এখানে কি করছে এত সকালে? একা একা তো আসার কথা নয় এটা নিশ্চয়ই আহানের কাজ আর পথেও আহানের সাথে দেখা হওয়াতে আরো সিউর হল জাহিন।

এদিকে অয়ন্তি ছাদের দরজা খোলার সাথে সাথে কতগুলা‌ পাখি উঁড়ে যায়। আকস্মিক এমনটা হওয়াতে অয়ন্তি ভয় পেয়ে পিছু হাঁটে। জাহিন তা দেখে দ্রুত পায়ে বড় বড় কদম ফেলে সিঁড়ি বেয়ে অয়ন্তিকে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। অয়ন্তি তো ভেবেই বসে ছিল আজকে ও সিঁড়ি থেকে পড়ে এক আশ্চর্যজনক ইতিহাস গড়বে যে নতুন বউ, বউ ভাতের দিন সিঁড়ি থেকে পড়ে কোমড় ভেঙ্গে ফেলেছে। অয়ন্তি ভয়ে চোখ বন্ধ করে‌‌ আছে। ভয়ে ষেন মনে হচ্ছে সকল ইন্দ্রিয় কাজ করা বন্ধ করে‌ দিয়েছে। সে কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। অয়ন্তি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে জাহিনকে চোখের সামনে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে। না চাইতেই ঠোঁট দুটো আগলা হয়ে যায়। জাহিনের ভীষণ হাসি পাচ্ছে অয়ন্তির এমন প্রতিক্রিয়া দেখে। জাহিন অয়ন্তিকে সোজা করিয়ে দাঁড় করাতে যাবে এমন সময় আহান বলে।

“ভাইয়া ভাবি স্মাইল।”

জাহিন সামনের দিকে তাকাতেই আহান ক্যামেরা তে ক্লিক করে জাহিন আর অয়ন্তির সুন্দর মুহূর্তটা ফ্রেম বন্দী করে নেয়। জাহিন তাড়াতাড়ি করে অয়ন্তিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। আহান ছবিটা তুলে এক সেকেন্ড দাঁড় নি।

অয়ন্তি শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে দেয়। লজ্জায় জাহিনের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না। কেন যে আহানের কথায় এখানে আসতে গেল?‌ যদি এখানে না আসত তাহলে তো এমন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হত না আজকে তাকে। এবার জাহিন তাকে কি বলবে? জাহিন অয়ন্তিকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করল। মেয়েটা যে ভীষণ নাজুক স্বভাবের বুঝতে বাকি রইল না তার। অস্বস্তিতে মুখটা এক্কেবারে পাংশুটে হয়ে গেছে। অয়ন্তিকে স্বাভাবিক করার জন্য জাহিন গলা খাকারি দিয়ে বলে।

“আপনি ঠিক আছেন?”

অয়ন্তি মাথা উপর নিচ করে বুঝলো সে ঠিক আছে। জাহিন পুনরায় প্রশ্ন করল, “এখানে কি‌ করছেন এত সকালে?”

“আসলে‌ আহান আমাকে…।”

“বুঝতে পেরেছি দুষ্টুটা আপনার সাথেও দুষ্টুমি করা শুরু করে দিয়েছে।”

নাহ অয়ন্তিকে স্বাভাবিক করতে পারছে না জাহিন। তাই এখন অন্য টেকনিক কাজে লাগাতে হবে মনে হচ্ছে। অয়ন্তিকে একটু চমকে দিতে হবে, তাও আবার যেমন তেমন ভাবে না ভীষণ ভাবে চমকে দিতে হবে। জাহিন নিঃশব্দে হেসে বলে।

“আপনি ভীষণ ভারী অয়ন্তি ভীষণ। মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে আমাকে অনেক বেগ পোহাতে হবে। তাই আরো বেশি বেশি জিম করে‌‌ নিজেকে‌ ফিট করতে হবে।”

অয়ন্তি হতভম্ব হয়ে যায় জাহিনের আকস্মিক‌ এমন অদ্ভুত কথা শুনে। বড় বড় চোখ‌‌ করে জাহিনের দিকে‌ তাকাল। বার কয়েক বার চোখের পাতা ঝাপটালো। জাহিন অয়ন্তির হতবাক, বিস্মিত চেহারা দেখে নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসল। তারমানে সে সফল হয়েছে অয়ন্তিকে চমকে দিতে। এবার অয়ন্তি এই ভাবনা নিয়ে‌ পড়ে থাকবে এটা সিউর। জাহিন যে কাজে এসেছিল ছাদের উদ্দেশ্যে সে কাজে আর না গিয়ে‌ নিচে নামতে যাবে তখন কিছু একটা ভেবে থেমে গিয়ে বলে।

“আরেকটা কথা একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন। সবসময় তো আর‌ আমি থাকব না আপনাকে বাঁচাতে। তাই খাওয়া দাওয়া করে‌ নিজেকে একটু স্ট্রং বানাবেন যাতে করে পড়ে গেলেও নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারেন।”

জাহিন কথাটা বলে ভাবুক অয়ন্তিকে একা রেখে চলে যায়। অয়ন্তির এতক্ষণে নিজের ভাবনায় ছেদ পড়ল। কি বলে গেল জাহিন তাকে সে ভারী তাও আবার ভীষণ ভারী? তার মানে জাহিন কি তাকে ইনডাইরেক্টলি মোটা বলে গেল। অয়ন্তি নিজের বডির দিকে তাকাল না সে তো এতটাও মোটা নয় সে যথেষ্ট চিকন তাহলে ভারী বলার মানে কি? কিন্তু এর পরে কি বলে গেল তাকে বেশি করে খাওয়া দাওয়া করতে। মানে এক মুখে দুই কথা। এ তো পুরাই দুমুখো সাপ।

_____

জাহিন প্যান্টের পকেটে দু হাত গুঁজে মুচকি মুচকি হেসে হেঁটে যাচ্ছে। বোনকে আসতে দেখে সাথে সাথে মুখের অবয়ব চেইন্জ করে ফেলে। জারা জাহিনকে ছাদ থেকে আসতে দেখে বলে, “ভাইয়া ভাবি কি ছাদে?”

“হুম ওনি ছাদে। আচ্ছা আহান কোথায় আছে জানিস?”

“আহান কোথায় মানে? ওই তো ভাবিকে জোর‌ করে‌ ছাদে নিয়ে‌ গেছে? আর এখন ভাবিকে‌‌ একা রেখে চলে গেছে।”

“তুই যা আমি আহানকে খুজে বের করছি।”

জারা আর‌‌ কিছু না বলে‌ চলে যায়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই অয়ন্তিকে এভাবে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, “ভাবি তাড়াতাড়ি‌‌‌ নিচে চলো তোমাকে সকলে‌ দেখতে এসেছে।”

অয়ন্তির কোনো হেলদোল নেই জারা অয়ন্তির কাছে এসে বলে, “কি হলো ভাবি চলো?”

অয়ন্তি আনমনেই বলে, “জারা আমি কি খুব মোটা?”

জারা ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”

অয়ন্তি চুপ হয়ে যায়‌। জারাকে যদি কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বলে তাহলে জারা হয়তো‌ খারাপ ভাববে তাই অয়ন্তি কথাটা ঘুরিয়ে বলে, “কিছু না চলো নিচে চলো।”

জারা সন্দেহের চোখে ভাবির দিকে তাকিয়ে বলে, “ভাবি তুমি ঠিক আছো।”

“হুম আমি ঠিক আছি।”

________

জাহিন আহানের ঘরে ঢুকে দেখে আহান ভিডিও গেইম খেলেছে। আহান ভাইয়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবারো খেলায় মনযোগ দেয়। জাহিন ধীর পায়ে আহানের পাশে বসে আহানকে বলে।

“আহান যেই ছবিটা তুলেছো সেই ছবিটা দেখি তো।”

আহান সিরিয়াস গলায় বলে, “আমি এখন গেইম খেলছি পরে দেখাব।”

জাহিনের নজর পড়ে টেবিলের উপরে ক্যামেরাটা পড়ে আছে। জাহিন উঠে ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে ছবিটা দেখে অজান্তেই হাসির রেখা ফুটে উঠে ঠোঁটের কোণে। কিন্তু এই ছবি যদি কেউ দেখে তো খুব বাজে একটা ব্যাপার হয়ে যাবে। তাই জাহিন বুদ্ধি করে‌ মেমোরি কার্ডটা খুলে নিয়ে আহানকে বিরক্ত না করে চলে যায়।

________

অয়ন্তি মাথা নিচু করে বসে আছে। জোহরা বেগম আসা আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে বলে, “কি বউ পছন্দ হয়েছে আপনাদের?”

এক জন বলেন, “হুম বউ তো মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু জাহিন কি ওকে মেনে নিয়েছে। যেভাবে বিয়েটা হয়েছে শুনলাম।”

আরেকজন বলেন, “হুম ভাবি ঠিক বলেছেন এখনকার যুগের ছেলেরা তো নিজের মতের বিরুদ্ধে কিছু করতে চায় না। তার জলজ্যান্ত প্রমান দিল রিহান।”

জাহিনের চাচি রুনা আক্তার বলেন, “না ভাবি জাহিন আমাদের উল্টো ও সবটা মেনে নিয়েছে।”

“মেনে নিলেই ভালো। কিন্তু রিহান যদি ফিরে আসে তখন কি হবে?”

অয়ন্তি চোখ তুলে তাকায়। সত্যি তো রিহান যদি ফিরে আসা তখন কি হবে? আর রিহান একদিন না একদিন তো ফিরবেই।

এবার জোহরা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে‌ বলেন, “তখনেরটা তখন দেখা যাবে ভাবি। এখন নতুন বউ দেখতে এসেছেন আর তার সংসার জীবন যেন সুখের হয় দেই দোয়া করে যান।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ দোয়া করি ওরা যেন সুখে শান্তিতে সংসার করুক। কারো কু নজর যেন না লাগে।”

এমন সময় জাহিন আসে। জাহিনকে দেখে জোহরা বেগম বলেন, “কোথায় যাচ্ছিস তুই এখন?”

অয়ন্তি জাহিনের দিকে তাকায়। সাদা রঙের শার্ট পড়েছে ইন করে, কুনুই পর্যন্ত শার্টের হাতা গুলা গুটিয়ে রেখেছে, জিম করার কারণে হাতের পেশির ফোলা ভাবটা দৃশ্যমান রুপে ভেসে আছে, আর সাথে কাল প্যান্ট। দেখতে ভালোই লাগছে। কিন্তু অয়ন্তি এত কাল পর্যন্ত জেনে এসেছে রাজনীতিবিদরা সবসময় পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে। কিন্তু এই‌ লোক তো দেখে যায় পুরাই উল্টো। জাহিন অয়ন্তির দিকে তাকাতেই অয়ন্তি থতমত খেয়ে দৃষ্টি‌ সরিয়ে ফেলে।

এমন সময় বসে থাকা একজন মহিলা বলে, “নতুন বউ ঘরে রেখে কোথায় যাওয়া হচ্ছে জাহিন?”

জাহিন দুর্বৃত্ত হাসল আর বলল, “চাচি বিয়ে করেছি বলেই তো এখন আরো বেশি বেশি করে কাজ কর্ম করতে হবে। যাতে বউয়ের ভরণপোষণ ঠিক মত দিতে পারি। এখন যদি আমি বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকি আর বউয়ের ভরণপোষণ না দিতে পারি ঠিক মত তাহলে বউ‌ তো আমাকে দু’চোখে দেখতে পারবে না। সবসময় দুর দুর করবে।”

অয়ন্তি হা হয়ে জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। জাহিনকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। এ লোক‌ কি দিয়ে‌ তৈরি? মানে মুখে যা আসে তাই বলে দেয়। এর মাঝে জোহরা বেগম বলেন।

“নাস্তা করে যাবি না।”

“না মা খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে যেখানেই যাচ্ছিস কাজ সেরে জলদি চলে আসবি। অয়ন্তির বাড়ি থেকে লোকজন এসে তোকে দেখতে না পেলে খারাপ ভাববে।”

“হুম।”

জাহিন বের হতে নিবে তখনই হিয়ার সাথে মুখোমুখি হয়। মেয়েটার চোখের নিচে কাল দাগ পড়ে গেছে।‌ জাহিন সৌজন্য দেখাতে কিছু বলতে যাবে তখনই হিয়া জাহিনকে এড়িয়ে চলে যায়।‌ জাহিনও আর কিছু না বলে বের হয়ে যায়। কাইফ জাহিনকে দেখা মাত্রই এসে বলে।

“ভাই কোথাও যাবেন?”

“হুম পার্টি অফিসে যাবো।”

“ঠিক আছে তাহলে চলুন।”

“না কাইফ তুমি বাড়িতেই থাকো। বাড়িতে কখন কি দরকার পড়ে বলা তো যায় না। আমি বরং আজকে নিজেই ড্রাইভ করে চলে যেতে পারব।”

কাইফ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। জাহিন চোখে কালো সানগ্লাস পড়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

#চলবে______

পর্ব:১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=808708307935635&id=100063894182680&mibextid=Nif5oz
পর্ব:২
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=810104194462713&id=100063894182680&mibextid=Nif5oz
পর্ব:৩
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=812024354270697&id=100063894182680&mibextid=Nif5oz
পর্ব:৪
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=814013314071801&id=100063894182680&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here