হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪

0
364

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪

জারা মুখটা মলিন করে নিজের ঘরে ঢুকে। অয়ন্তি জারার মলিন মুখ দেখে বলে।

“কি হয়েছে জারা?”

ভাবির কথা শুনে জারা মুচকি হেসে অয়ন্তির কাছে এসে বসে বলে, “কিছু হয় নি ভাবি। তুমি ওয়েন্টমেন্টটা লাগিয়ে নাও না হলে সময়ের সাথে সাথে ব্যথাটা আরো গাঢ় হতে শুরু করবে।”

অয়ন্তি জারার কাছ থেকে অয়েন্টমেন্টটা নেয়। কিন্তু অয়ন্তির ঠিক ভাল ঠেকছে না জারাকে দেখে। একটু আগ পর্যন্ত যে মেয়েটা হাসিখুশি ছিল আর এখন কি এমন হল এতটুকু সময়ের মাঝে যে এভাবে গুমরে গেছে। অয়ন্তি অয়েন্টমেন্টটা পায়ে লাগিয়ে রাখবে ঠিক সেই সময় চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসে নিচ থেকে। অয়ন্তি স্পষ্ট বুঝতে পারছে জাহিনকে নিয়ে কিছু একটা বলছে মেয়েলি কন্ঠের মালিক। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না মেয়েটি কে যে এভাবে চিৎকার করছে? অয়ন্তি না বুঝলেও জারা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে চিৎকার করে কথা বলার মালিকটা কে? জারা অয়ন্তিকে বলে।

“ভাবি তুমি বসো আমি আসছি।”

কথাটা বলে জারা দ্রুত পায়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। অয়ন্তি কিছুক্ষণ বসে থেকে ধীর পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে করিডোরে এসে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাতেই চমকে যায়।

জাহিনের এক হাত আঁকড়ে ধরে একটা মেয়ে অঝোরে কান্না করছে। আর এদিকে জাহিনের চোখে মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব বিরক্ত হয়ে আছে সে। যে কোনো সময় হয়তো বোমা ফেটে যেতে পারে। অন্য দিকে মেয়েটি বার বার বলছে, “কেন করলে এমনটা জাহিন ভাই আমার সাথে? কেন করলে? তুমি তো জানতে আমি তোমাকে ভালবাসি তারপরও এটা কি করে করলে আমার সাথে?”

বাড়ির সবাই হিয়া আর জাহিনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। জাহিনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। জাহিনকে এভাবে চুপ মেরে থাকতে দেখে হিয়া আলেয়া বেগমকে বলে।

“মা জাহিন ভাইকে কিছু বলতে বলো। এভাবে কেন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে? আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বলো।”

আলেয়া বেগম মেয়েকে বোঝানোর স্বরে বলেন, “হিয়া মা আমার পাগলামো করিস না একটু শান্ত হো।”

মায়ের কথা শুনে হিয়া যেন আরো তেতে উঠে আর উচ্চ স্বরে চেঁচিয়ে বলে, “না আমি শান্ত হব না। জাহিন ভাইকে উত্তর দিতে হবে কেন আমার সাথে এমনটা করল?”

এতক্ষণ চুপ থাকা জাহিন শান্ত গলায় বলে, “হাতটা ছাড় হিয়া।”

“না ছাড়ব না আমি তোমার এই হাত। আমি সারা জীবন ধরে রাখব তোমার হাত।”

জাহিন এবার আর সহ্য করতে না পেরে জোর গলায় ধমকে স্বরে বলে, “ছাড়তে বলছি আমি তোকে আমার হাতটা হিয়া।”

হিয়া জাহিনের এমন চিৎকার করা দেখে কেঁপে উঠে আর সাথে সাথে জাহিনের হাতটা ছেড়ে দিয়ে ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। জাহিন জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে অনামিকা আঙ্গুল দ্বারা বা চোখের ভ্রুটা চুলকিয়ে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। এটা জাহিনের মুদ্রাদোষ যখনই রাগ উঠবে তখনই এমনটা করবে।

চারিদিকে পিনপিন নিরবতা বজায় করছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই শুধু ভেসে আসছে হিয়ার নাক টানার শব্দ। ছোট্ট আহান নুডুলস খাবে বলে বায়না ধরেছিল মায়ের কাছে। কিন্তু ভাইয়ের ওমন ভুবন ফাটানো চিৎকার শুনে সেও তব্দা খেয়ে বসে গেছে নুডুলস খাওয়ার কথা হয়তো সে ভুলেই গেছে।

জাহিন চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে ফুফুর দিকে তাকিয়ে বলে, “ফুফু‌ তোমার মেয়েকে সভ্যতা শেখাও। এর পরের বার যদি ও এই রকম অসভ্যতামো করে আমার সাথে তাহলে কিন্তু আমার মুখ কথা বলবে না, আমার হাত চলবে। তখন কিন্তু এই বিষয় নিয়ে তুমি বাড়াবাড়ি করতে পারবে না বলে দিলাম আমি।”

কথাটা বলে জাহিন দু কদম এগোতেই থেমে গিয়ে আবারো ফুফুর উদ্দেশ্যে বলে, “আরেকটা কথা এই ব্যাপার নিয়ে যদি তোমার আদরের মেয়ে আমার স্ত্রীর সাথে কোনো রকমের বাজে আচরণ করে তাহলে কিন্তু তোমার মেয়েকে এর মাশুল গুনতে হবে। আমি জানি তোমার মেয়ে অয়ন্তির সাথে বাজে আচরণ করবে তাই আগে থেকেই ওয়ার্নিং দিয়ে গেলাম।”

কথাটা বলেই জাহিন হনহনিয়ে উপরে চলে যায়। এদিকে অয়ন্তি হতবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে জাহিনের করা কার্যত্রুম গুলা। একটা লোক এতটা বিচক্ষণ কি করে হতে পারে সেটা জাহিনকে না দেখলে অয়ন্তি বুঝতে পারত না। জাহিনকে এদিকে আসতে দেখে অয়ন্তি মাথা নিচু করে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জাহিন অয়ন্তিকে দেখে অয়ন্তির কাছে এসে দাঁড়িয়ে কোমল স্বরে বলে।

“আপনার পায়ের ব্যথা কমেছে অয়ন্তি?”

“অয়ন্তি” সেই শান্ত আর কোমল গলার ডাক। জাহিনের গলায় এই অয়ন্তি ডাকটা যেন এক্কেবারে কলিজাতে গিয়ে বিঁধে অয়ন্তির। কারো গলায় যে তার নামটা এতোটা মানাতে পারে সেটা জাহিনের গলায় শুনতে না পারলে বুঝতে পারত না অয়ন্তি। অয়ন্তিকে চুপ করে থাকতে দেখে জাহিন আবারো বলে।

“আপনি চাইলে ডাক্তার ডাকতে পারি অয়ন্তি।”

ডাক্তার ডাকার কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল অয়ন্তি। এই টুকু ব্যথার পাওয়ার জন্য তাও আবার ডাক্তার ডাকার কথা বলছে পাগল নাকি লোকটা। অয়ন্তি মাথা তুলে জাহিনের দিকে তাকিয়ে বলে, “না না ডাক্তার ডাকার কোনো দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।”

“ঠিক আছে তাহলে বিশ্রাম নিন গিয়ে।”

অয়ন্তি পা বাড়িয়ে যেতে নিবে তখনই জাহিন বলে, “শুনুন!”

থেমে যায় অয়ন্তি। জাহিন ধীর গলায় বলল, “নিচে এতক্ষণ যা দেখছেন বা শুনেছেন তা নিয়ে টেনশন করার মতো কিছু হয় নি। আপনি আমার উপরে ভরসা রাখতে পারেন।”

কথাটা বলেই জাহিন নিজের রুমে চলে যায়। কি বলে গেল মানুষটা তার উপরে অয়ন্তিকে ভরসা রাখার কথা। জাহিন কি ভাবছে অয়ন্তি তাকে সন্দেহ করবে! কখন না? অয়ন্তি এমন মেয়েই নয় যে সে এক পাক্ষিকের করা আচরণ দেখে অন্য পাক্ষিকে সন্দেহ করবে, সে যথেষ্ট ম্যাচিউর।

অয়ন্তি আবারও নিচের দিকে তাকায়। হিয়া মেয়েটা কে এভাবে কান্না করতে দেখে খুব মায়া লাগছে অয়ন্তির। মেয়েটির অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে জাহিনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আজকের এই ঘটনাটা শুধু মাত্র তার জন্যই হয়েছে। জাহিন যদি ওকে বিয়ে না করতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। সবাই হিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু হিয়া শুধু মাথা নাড়িয়ে না বলে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই হিয়া উপরের দিকে তাকায়। হিয়ার তাকানো দেখে অয়ন্তি ভড়কে যায়। হিয়ার চোখ দুটো রক্ত লাল বর্ণ হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্নার করার জন্য। আর তার উপরে অয়ন্তির দিকে এমন ভাবে রাগী চোখে তাকিয়েছে যে অয়ন্তি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। অয়ন্তি আর এক মুহূর্ত এখানে না থেকে ব্যথা পা নিয়েই দ্রুত কদমে রুমে চলে আসে। আর এদিকে হিয়া দাঁতে দাঁত চেপে নাকের পাটা ফুলিয়ে বলে।

“যে আমার জাহিন ভাইকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাকে এর মাশুল গুনতে হবে। জাহিন ভাইকে পাই কিংবা নাই পাই কিন্তু তোমার সাথে আমার ফাইট ঠিকেই হবে। জানি তোমার এতে কোনো প্রকার দোষ নেই কিন্তু এটা আমি মেনে নিতে পারছি না আর হয়তো মেনে নিতেও পারব না। তবে চেষ্টা করব মেনে নিতে। কিন্তু যত দিন চেষ্টা করব সবটা মেনে নিতে তত দিন না হয় তোমার আর আমার মাঝে একটু ফাইটটা চলুক। দেখি সেই ফাইটে কে বিজয়ী হয়?”

অয়ন্তি রুমে এসে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে। রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠে। আচমকা এভাবে ফোন বেজে উঠাতে অয়ন্তি ফোনের কর্কশ শব্দ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠে। নিজেকে অয়ন্তি স্বাভাবিক করে দেখে মামনি ফোন করেছে। অয়ন্তি কানের কাছটায় ফোন নিয়ে বলে, “হ্যালো! মামনি।”

ফোনের ওপরপ্রান্ত থেকে ফাতেমা আক্তার ভারাক্রান্ত গলায় বলেন, “কি করছিস মা? ওখানের সবকিছু ঠিক আছে তো।”

অয়ন্তি ওই বাড়ির সকলকে দুশ্চিন্তায় না ফেলানোর জন্য বলে, “হ্যাঁ মামনি সব ঠিক আছে। তোমরা ঠিক আছো?”

“হ্যাঁ মা ঠিক আছি।”

অয়ন্তুি মন ভার করে বলে, “তুমি আমার বিদায় বেলার সময় আসলে না কেন?”

“একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম মা। কালকে তো আসবেই তোর বাবা আর ফাইজ মন খারাপ করিস না।”

“অবন্তি ফোন করেছিল তোমাকে?”

“হুম করেছিল তো আর তোর খোঁজও নিয়েছিল।”

“ও কি আমার সাথে কথা বলবে না?”

“বলবে! তোর উপরে একটু অভিমান করেছে তো, দেখিস ওর অভিমানটা খুব জলদি কমে যাবে। আর যখন বাড়িতে এসে দেখবে তুই নেই তখনই ও তোকে নিজে থেকে ফোন করবে। তাই এত চিন্তা করিস না।”

“ওর পরীক্ষা কেমন হয়েছে?”

“বলল তো ভাল হয়েছে। আচ্ছা রাখি রে মা অনেক কাজ পড়ে আছে।”

ফাতেমা আক্তার ফোনকেটে দেন। অয়ন্তি কিছুক্ষণ একাই বসে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর জারা আসে হাতে করে দু তালা খাবার নিয়ে। খাবারের তালা দুটো টি-টেবিলের উপরে রেখে জারা বলে।

“ভাবি আজকে আমি আর তুমি একসাথে খাবো।”

“খেতে ইচ্ছে করছে না জারা।”

“তা বললে কি করে হয়! কিছু তো খেতেই হবে না হলে মা আমাকে আস্তো রাখবে না।”

এমন সময় আহান আসে হাতে এক বাটি নুডুলস নিয়ে আর খেতে খেতে বলে, “ভাবি তুমি বরং নুডুলস খাও আমার সাথে খুব মজা হয়েছে। মা খুব ভাল নুডুলস রান্না করে।”

জারা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “এই আহান তুই যা তো এখান থেকে। আর তোর কয় বেলা নুডুলস খাওয়া লাগে বলত? সকালে একবার খেলি আর এখন আরেক বার। আর চাচিকেও বলিহারি তুই চাইতেই নুডুলস বানিয়ে দেয় কেন তোকে?”

“তোমার সমস্যা কি আমি নুডুলস খেলে? তুমি জানো না আমি হচ্ছি মায়ের একমাত্র আদরের ছেলে তাই আমি যা চাই তাই দেয়। আর বাড়ির সবাই তোমার থেকে আমাকে বেশি আদর করে বলে তুমি কি হিংসা করো আমাকে।”

জারা ভেংচি কেটে বলে, “হুমম তোকে হিংসা তাও আবার আমি। তুই তো আমার হাটুর বয়সি তোকে আমি কোন দুঃখে হিংসে করতে যাবো। অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার! পৃথিবীতে আর কত কিছু যে শুনতে হবে আমাকে।”

“থাক তোমাকে আর ডং ধরতে হবে না আমার সামনে।”

অয়ন্তি শুধু অবাক হয়ে দুই ভাই বোনের ঝগড়া দেখছে। জারা মেকি হাসি দিয়ে আহানের পাশে বসে বলে, “আহান… ভাই আমার!”

আহান গম্ভীর গলায় বলে, “কি হয়েছে?”

“বলছিলাম নুডুলস কি আরো আছে?”

আহান কিছুক্ষণ চুপ মেরে বসে থেকে শরীর দুলাতে দুলাতে বলে, “আছে তো যাও কিচেনে গিয়ে দেখো।”

“সত্যি বলছিস তো।”

“হ্যাঁ সত্যি বলছি।”

“যদি মিথ্যে কথা বলেছিস তো তোর খবর আছে বলে দিলাম।”

জারা কিচেনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে যায়। আহানের চোখে মুখে ফুটে উঠে দুষ্টুমির হাসি। অয়ন্তি আহানের চেহারা দেখে বলে।

“আহান তুমি মিথ্যে কথা বললে কেন?”

আহান অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বলে, “জানো ভাবি বাড়ির সবাই‌ আমাকে বেশি বেশি আদর করে দেখে আপু খুব হিংসে করে আমাকে।”

“কিন্তু তুমি বুঝলে কি করে জারা তোমাকে হিংসে করে?”

“আপুর চোখ মুখ দেখলেই বোঝা যায়। জানো সবাই কেন আমাকে বেশি আদর করে?”

“কেন বেশি আদর করে?”

“আমার একটা বড় ভাইয়া ছিল। কিন্তু ভাইয়াটা আমাদের সবাইকে একা রেখে পরপারে চলে গেছে। এর পরে এত্ত এত্ত বছর পরে আমি আমার মায়ের কোল আলো করে আসলাম। তাই তো সবাই আমাকে বেশি আদর করে।”

আহানের কথা শুনে অয়ন্তি ভাবনায় পড়ে যায়। তার মানে এই শেখ বাড়ির আরো একজন ছেলে ছিল। কিন্তু কি করে মা রা গেল? অয়ন্তি কোমল গলায় আহানকে বলে, “ওনি কি করে মা রা গেছেন আহান?”

আহান মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলে, “তা তো জানি না।”

এমন সময় নিচ থেকে জারার চিৎকার ভেসে আসে। আহানকে বকতে বকতে আসছে। আহান তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে বলে।

“আমি পালাই! না হলে এই হিংসুটে নারী‌ আমাকে মে’রেই ফেলবে।”

আহান নুডুলসের বাটি নিয়ে দৌঁড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। আহানকে বাইরে দেখতে পেয়ে জারা বলে, “এই আহান দাঁড়া বলছি।”

আহানকে আর কে পায় নিজের ঘরে ঢুকে দরজার সিটকানি লাগিয়ে দেয়। আর এদিকে জারা বকেই যাচ্ছে আহানকে আর আহান ঘরের ভেতর থেকে চেঁচিয়ে বলে।

“এতই যখন শখ নুডুলস খাওয়ার হিংসুটে নারী তাহলে নিজে বানিয়ে খাও গিয়ে আমারটার দিকে বদ নজর দেও কেন?”

জারা বকতে বকতে নিজের রুমে ঢুকে আর অয়ন্তি বলে, “আহান খুব দুষ্টু তাই না।”

“ভীষণ দুষ্টু। ওর সব দুষ্টুমি আমি ফেইস করি জানো। সবে তো এলে এই বাড়িতে ওর দুষ্টুমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবে কিন্তু ও ক্লান্ত হবে না। আসলে কি বলত কথায় আছে না আদরে বাদর হয়ে যায়। ও হচ্ছে একটা বাদর।”

অয়ন্তি আহানের বলা কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায়। সবে মাত্র এই বাড়িতে এসেছে এখন ২৪ ঘন্টা পার হয় নি। এখনই যদি এসব জিঙ্গেস করে তাহলে ব্যাপারটা খুব খারাপ দেখায়।

________

নিশুতি রাত সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিন্ত একজনের চোখে ঘুম নেই। তার অতি প্রিয় একজন মানুষের কথা বার বার মনে পড়ছে। যাকে চাইলেই ছুঁতে পারবে না, চাইলে‌ও তার‌ সাথে মজার ছলে মা রা মা রি করতে পারবে না, চাইলেও তার কন্ঠ শুনতে পারবে না। এই না পারাটা যেন জাহিনের হৃদয়কে প্রতি মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত করে।

জাহিন বন্ধ এক কক্ষে সাদা দেয়ালটাতে টানানো বড় একটা ফ্রেম করা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে পকেটে দুহাত গুঁজে। কিয়ৎক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছবিটির দিকে তাকায় জাহিন। ছবিতে থাকা একজন সুদর্শন পুরুষ মানুষ হাস্যজ্জল চেহারা তাকিয়ে আছে। জাহিন ধরা গলায় বলে।

“কেমন আছো ভাইয়া? জানি তুমি খুব ভালো আছো। কিন্তু আমি ভালো নেই, ভালো থাকতে পারি না যখনই তোমার কথা মনে পড়ে তখনই বুকের মাঝে এক অসহ্য রকমের যন্ত্রণা অনুভব করি।”

জাহিন কথাটা বলে থামে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি হাসি মুখে বলে, “জানো ভাইয়া আমি বিয়ে করেছি। তুমি বলতে না তোমার আগে আমার বিয়ে হবে, দেখো সত্যি সত্যি তোমার আগে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি… তুমি দেখছো তো উপর থেকে সবটা, অবশ্যই দেখছো আমি জানি সেটা। তোমার নিশ্চয়ই এখন খুব হিংসে হচ্ছে তাই না, তোমার আগে আমি বিয়ে করে ফেলেছি দেখে।”

জাহিন আবারো থামে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দুর্বল গলায় বলে, “খুব মনে পড়ে তোমাকে খুব। কেন আমাদের একা রেখে চলে গেলে চিরকালের জন্য কেন? এক বারও কি চেষ্টা করা যেত না নিজেকে রক্ষা করার, হয়তো করেছিলে কিন্তু পারো নি।”

বলতে বলতে জাহিনের গাল বেয়ে দু ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। হাত বাড়িয়ে ভাইয়ের ছবিটাতে হাত বুলিয়ে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে।

#চলবে__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here