দ্বিতীয় বারের মতো নববধূ রুপে সজ্জিত হয়েছে অয়ন্তি। এই বিয়েটা সে করতে চায় নি, কিন্তু বাবা আর মামনির মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু মাত্র রাজি হয়েছে এই বিয়েতে। যবে থেকে অয়ন্তি বুঝতে শিখেছে তবে থেকেই গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষের মুখে মুখে বলতে শুনেছে সে নাকি অপয়া। তার দ্বারা সবসময় খারাপ কিছু ঘটে থাকে। এই অপয়া শব্দটা ছোট বেলা থেকে শুনতে শুনতে এত টুকু বড় হয়েছে অয়ন্তি। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে অয়ন্তি এই অপয়া ডাকটা নিজেও মেনে নিয়েছে। আসলেই সে একটা অপয়া তার জন্য তার মা আর দাদি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চিরকালের জন্য না ফেরার দুনিয়াতে চলে গেছে। তার পোড়া কপালের জন্য তার প্রথম বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু এবার দ্বিতীয় বিয়েতে কি হতে চলেছে সেটা তার অজানা। তবে মন বলছে কোনো একটা অঘটন হবেই হবে কারণ সে যে জন্মগতই অপয়া তার কপালে সুখ নেই। কারোর ডাকে অয়ন্তি নিজের ধ্যান থেকে ফিরে আসে।
“এই অয়ন্তি?”
অয়ন্তি চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে লিজা প্রশ্নবোধক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। লিজা আবারো বলা শুরু করে।
“কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? কখন থেকে ডাকছি তোকে?”
অয়ন্তি ঢোক গিলে বলে, “কি হয়েছে?”
লিজা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “বুঝতে পারছি টেনশনে আছিস। কিন্তু টেনশন করার মত কিচ্ছু হয় নি আগের ঘটনাটা একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে মাথা থেকে ছেড়ে ফেলে দে অয়ন্তি, সামনে যেই নতুন জীবনটা পেতে চলেছিস সেটা নিয়ে ভাব। অতিতের তিক্ততা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। লাইফে মুভ অন করতে হবে।”
কিন্তু অয়ন্তির মন মানচ্ছে না তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বার বার জানান দিছে কিছু একটা হতে চলেছে তার জীবনে। আবারো ভ’য়ংক’র কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে সে। এমন সময় বাহির থেকে বর এসেছে বর এসেছে বলে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। লিজা মুচকি হেসে অয়ন্তিকে ধাক্কা দিয়ে বলে।
“দেখলি এবার আর কোনো অঘটন ঘটবে না মিললো তো আমার কথা। যাই আমি বরং তোর সুদর্শন বরটাকে দেখে আসি। একবার শুধু চোখের দেখা দেখেছিলাম।”
কথাটা বলেই লিজা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু অয়ন্তির মুখে কোনো হাসি নেই আছে শুধু আতংক। কেন জানি নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে পারছে না বার বার মন বলছে “অয়ন্তি তোর জীবনে সুখ আসবে না কোনো দিন, কোনো দিন আসবে না।”
ঠিক তাই হলো লিজা মুখটা অন্ধাকার করে কয়েক মুহূর্ত পরে ঘরে ঢুকে চুপচাপ খাটের উপরে বসে পড়ে। অয়ন্তি লিজার দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলে।
“কি হয়েছে?”
“বর আসে নি এখনো! শুধু বর যাত্রীরা এসেছে। বর নাকি তার বন্ধুদের সাথে আসবে।”
অয়ন্তি ছোট করে বলে, “ও”।
লিজার মনের মাঝে আতংক কাজ করছে। কিন্তু প্রিয় বান্ধবীর সামনে সেটা প্রকাশ না করে হাসিমুখে বলে, “সমস্যা নেই বর একটু পরেই চলে আসবে তুই এত টেনশন করিস না। তুই থাক আমি একটু আসছি।”
কথাটা বলেই লিজা বাহিরে চলে যায়। বাহিরের পরিবেশ বড্ড গুমোট হয়ে আছে। বর যাত্রী আসার পনেরো মিনিট পেরিয়ে গেছে কিন্তু বরের গাড়ি আসার কোনো নাম গন্ধই নাই।
______
আজমল শেখ ছোট ছেলের আসার অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে গিয়েছেন। যোহরের নামাজ শেষ হওয়ার পরপরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ছেলের কোনো চিহ্ন নেই। সব কিছু কি করে সামাল দিবেন কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। একটু পরপর মেয়ের বাড়ির লোকেরা বরের খোঁজ নিতে আসছে। কিন্তু আজমল শেখ আশানুরুপ কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। আজমল শেখ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বসা থেকে উঠে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বড় ছেলে জিহানের কাছে গিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে।
“ফোনে পেলে বাদমাইশটাকে?”
জিহান কানের কাছ থেকে ফোনটা সরিয়ে বলে, “না বাবা পাই নি।”
“কাইফকে ফোন করো।”
“কাইফকেও ফোন ধরছে না।”
আজমল শেখ রাগী গলায় বলেন, “আমারেই ভুল হয়েছে ওকে একা রেখে আসাটা। বন্ধুদের সাথে আসবেন ওনি আর এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে ওর এখনো আসার নাম নেই। ওর বন্ধুদের ফোন দাও।”
জিহান আস্তে করে বলে, “ওর বন্ধুদের কাছেও নাকি ও এখনো পৌঁছায় নি।”
আজমল শেখ চিন্তিত হয়ে বলেন, “কি বলছো কি তুমি? ওদের দুজনের কোনো বিপদ হলো না তো।”
পাশ থেকে আযহার শেখ বলেন, “ভাইজান আপনি চিন্তা করবেন না রিহান চলে আসবে হয়তো জ্যামে পড়েছে কোনো ভাবে।”
“তুই বুঝতে পারছিস না আযহার যত সময় যাচ্ছে তত জটিলতায় পরিণত হচ্ছে পরিবেশ।”
ঠিক সেই সময় একটা সিএনজি এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। সিএনজির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে কাইফ। কাইফকে সিএনজি করে আসতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আযহার শেখ, আজমল শেখ আর জিহান। জিহান দু কদম এগিয়ে গিয়ে কাইফকে বলে।
“কাইফ তুমি সিএনজি করে? রিহান কোথায় আর ফোন ধরছিলে না কেন?”
কাইফ মাথা নিচু করে বলে, “ভাই আমি আসলে।”
“কি হয়েছে কাইফ স্পষ্ট ভাবে বল?”
“রিহান ভাই অর্ধেক রাস্তায় আসতেই গাড়ি থেকে আমারে নামাইয়া দিচ্ছে।”
“মানে।”
কাইফ পকেট থেকে একটা চিঠে বের করে জিহানের হাতে দিয়ে বলে, “রিহান ভাই আমারে এই চিঠিটা দিয়ে বলছেন আপনাকে দিতে আর ওনি নাকি এই বিয়েটা করতে পারবেন না।”
কাইফের মুখে এমন কথা শুনে জিহান, আযহার শেখ আর আজমল শেখের পা থেকে মাটি সরে যায়। আজমল শেখ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। দু কদম পিছিয়ে যেতে আযহার শেখ ভাইকে ধরে ফেলে বলেন।
“ঠিক আছেন ভাইজান আপনি?”
আজমল শেখ দুর্বল গলায় বলেন, “আমার সারা জীবনের যতটা মান সম্মান অর্জন করেছিলাম সবটা শেষ করে দিল ছেলেটা। হা’রা’ম’জা’দাটা চিঠিতে কি লিখেছে পড়ো জিহান।”
জিহান চিঠিটা পড়া শুরু করে।
“সরি ভাইয়া! আমি এই বিয়েটা করতে পারব না। আমি জানি তুমি চাইলেই আমাকে খোঁজে বের করতে পারবে এই ক্ষমতাটা তোমার আছে। কিন্তু তুমি আমাকে খোঁজে বের করলেও আমি এই বিয়েটা করব না। বিয়ের আগেই আমার মর’দেহ পাবে তুমি। তাই আমাকে খোঁজে বের করার সাহস করো না। সময় হলে আমি এমনি বাড়ি ফিরে আসব।”
জিহান চিঠিটা পড়ে কাগজটা হাতের মুঠোয় করে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে নেয়। ইচ্ছে করছে রিহানের দু গালে ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতে। এত বড় একটা অঘটন ঘটাতে একটু ভয় করল না আর তার উপর আবার তাকে মরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
আযহার শেখ জাহিনের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান।
________
বিয়ে বাড়ির আনাছে-কানাছে ছড়িয়ে পড়েছে ছেলে বিয়ে করতে আসতে পারবে না। খবরটা যেন বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়েছে সারা গ্রামে। বিয়ে বাড়িতে আসা প্রেসের লোকজন এতক্ষণে টিভিতেও নিউজ করে দিয়েছে বিশিষ্ট শিল্পপতির ছোট ছেলে, সাবেক মেয়রের ভাতিজা আর জন নেতার ছোট ভাই কাপুরুষের মত বিয়ের দিন পালিয়ে গেছে একটা মেয়েকে অপমানের দিকে ঠেলে দিয়ে।
এদিকে গ্রামের মানুষজনও নানা রকমের কথা বলছে অয়ন্তিকে নিয়ে। যে কথা গুলা অয়ন্তি খুব ভালো করেই শুনতে পারছে। অয়ন্তির খুব ইচ্ছে করছে জোরে জোরে প্রাণ খুলে হাসতে। তার জীবনটা এত জটিলতায় ভরা কেন? কি দোষ তার, কেন এত শাস্তি দিচ্ছে তাকে উপরওয়ালা?
প্রেসের লোকজনদের জিহানের দলের ছেলেরা আটকে রেখেছে। যতটুকু নিউজ করেছে তো করেছেই আর যাতে কিছু না করতে পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা করেছে।
_______
বাড়ির এক কোণে শেখ পরিবারের সদস্যগণ দাঁড়িয়ে আছে। জারার পাশে দাঁড়ানো ছোট আহান বলে, “আপু ছোট ভাইয়ার কি বিয়ে হবে না আজকে?”
জারা আহানের মুখ চেঁপে ধরে চাপা গলায় বলে, “চুপ কর আহান কথা বলিস না এখন।”
হামিদ খন্দকার আজমল শেখের সামনে এসে দুর্বল গলায় বলেন, “এভাবে অপমানিত না করলেও পারতেন আমাদের। আপনার স্ত্রীকে আমি সবটা বলেছি আমার মেয়ের অতিত সম্পর্কে। আপনার স্ত্রী সবটা শুনে আমার মেয়েকে নিজের বাড়ির পুত্রবধূ করে নিতে চেয়েছেন। আমরা তো যেচে যায়নি আপনাদের কাছে, আপনারা এসেছেন আমাদের কাছে। তাহলে আমার মেয়েটা কি এই আপমানটা পাওয়ার যোগ্য ছিল বলুন। আমি ওনাকে বার বার বলে এসেছি যদি কোনো অঘটন ঘটে তাহলে আমার মেয়েকে এবার হয়তো বাঁচাতে পারবো না। ওনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন খারাপ কিছু না হওয়ার কিন্তু ওনি ওনার কথা রাখতে পারেন নি। আমার মেয়েটা যদি এখন কিছু করে বসে তাহলে এর দায় কে নিবে বলুন আপনি নিবেন এর দায়।”
আযহার শেখ বলেন, “বিশ্বাস করুন আমার ভাতিজা যে এমন একটা কাজ করে বসবে বিয়ের দিন আমার সেটা ঘুনাক্ষরেও টের পায় নি।”
আজমল শেখ কিছু বলতে যাবেন সাথে সাথে ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে ছলছল করছে স্ত্রীর নামটা। আজমল শেখ ফোনটা কানে ধরতেই জোহরা বেগম অস্থির গলায় বলে উঠেন।
“কি গো! কি শুনছি? রিহান নাকি বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে গেছে।”
“তুমি এই খবরটা কোথায় পেলে?”
“খবরের হেড লাইনে সবটা ছাপা হয়ে গেছে।”
আজমল শেখ এবার চিৎকার করে বলে উঠে, “তোমার ছেলে সবটা শেষ করে দিল জোহরা। ও বিয়ে করবে না আগে বলত তাহলে তো এই পরিস্থিতি হত না।”
“মাথা ঠান্ডা করো। আমার কথাটা শুনো।”
“কি করে মাথা ঠান্ডা করব? ও আমার মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিল। মেয়েটার পরিবার আর মেয়েটার কথাটা একবারও ভাবলো না। কি করব এখন?”
“জিহান কোথায়? ওকে ফোনটা দাও।”
জিহান বাবার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আজমল শেখ ছেলের দিকে ফোনটা এগিয়ে দেন। জিহান কানে ফোন রেখে হ্যালো বলতেই জোহরা বেগম বলে উঠেন।
“জিহান বাবা একটা কথা রাখবি মায়ের?”
জিহান মায়ের মুখে আকস্মিক এমন কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলে, “মানে!”
“এই পরিস্থিতিটা এখন এক মাত্র তুই পারবি সামাল দিতে।”
“কি বলতে চাইছো তুমি মা?”
“আমি চাইছি…. তুই অয়ন্তুিকে বিয়ে কর?”
জিহান হতভম্ব হয়ে বলে, “হোয়াট? কি বলছো তুমি এসব মা?”
“প্লিজ জিহান তুই রাজি হয়ে যায় এই বিয়েতে। না হলে মেয়েটার মরণ ছাড়া কোন পথ খোলা থাকবে না। গতবারও ওর সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে আর তুই তো জানিস গ্রামের মানুষরা কেমন? ওদের হয়তো এক ঘরে করে দিবে এবার।”
“কিন্তু মা ওনার সাথে আমার বয়সের অনেক গ্যাপ আর আমি কি করে?”
“বয়সটা কোনো ব্যাপার না। তুই শুধু রাজি হয়ে যায় বাপ।”
“না মা পারব না। আমি চাই না আমার জীবনের সাথে জুড়ে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাক। আমার চারিদিকে শত্রু গিজগিজ করছে।”
“মেয়েটার জীবন এমনেতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে যেটা তোর আদরের ছোট ভাই করে গেছে। প্লিজ জিহান রাজি হয়ে যা আমাদের শেখ বাড়ির সম্মান আর মেয়েটার কথা ভেবে রাজি হয়ে যা বাবা। অয়ন্তিকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে আয়। মনে কর এটা তোর কাছে আমার শেষ চাওয়া। এই চাওয়াটা পূরণ করে দে বাবা।”
জিহান কোনো উত্তর দেয় না মায়ের কথায়। জিহান এমন একটা প্রফেশন বেছে নিয়েছে যেটাতে নিজের জীবনেই রিস্কে আর এখন আরেক জনকে নিজের জীবনে এনে ওই মানুষটাকে কি করে রি’স্কে ফেলতে পারে। তার সামনে তার আরেক ভাইয়ের মৃ’ত্যু হয়েছে এই রাজনীতির জন্য। এর পর হাজার চেষ্টা করেও এই রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে সরাতে পারে নি, নিজের চাচা এই নোংরা রাজনীতি ছাড়তে পারলেও সে পারে নি। এরপর থেকেই শুরু হয় জিহানের মনে পরিবারকে নিয়ে আতংক। মনের মাঝে সবসময় একটা ভয় কাজ করে, না জানি কখন কোথা থেকে আপনজনদের উপরে আ’ক্র’ম’ণ করে বসে। এই ভয় থেকেই পণ করে বসে নিজের জীবনের সাথে কাউকে জড়াবে না। কিন্তু পরিস্থিত মনে হচ্ছে আজ জিহানের বিরুদ্ধে চলে গেছে।
জিহানের কানের কাছে থেকে আযহার শেখ ফোনটা নিয়ে নিজে কথা বলা শুরু করে, “ভাবি! সবটা কি করে সামলাবো এখন আমরা?”
“আযহার তুমি তোমার বড় ভাতিজাকে বুঝাও এক মাত্র ওই পারে এখন এই পরিস্থিতিটা সামাল দিতে। ওকে বুঝিয়ে বলো ও যেন অয়ন্তিকে বিয়ে কর নেয়।”
আযহার শেখ জিহানের দিকে তাকাতেই জিহান শান্ত গলায় বলে, “এই বিয়েটা করব আমি। আমার পরিবারের সম্মান আর….”
জিহান কিয়ৎক্ষণ থেমে জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে, “ওনাদের পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য বিয়েটা আমি করব।”
জিহানের বলা কথাটা শুনে জোহরা বেগমের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে শেষমেষ তাহলে নিজের পরিকল্পনায় সফল হলেন। ছেলে যখন একবার বলে দিয়েছে বিয়েটা করবে তাহলে করবেই। জোহরা বেগম ফোনের লাইন কেটে দিয়ে অন্য একটা নাম্বারে ফোন করে। ফোনের ওপর প্রান্তের লোকটা কল ধরতেই জোহরা বেগম হাসি খুশি গলায় বলে উঠেন।
“পরিকল্পনা সফল হয়েছে আমাদের রিহান। এবার তুই শুধু সময় মতো বাড়ি ফিরে আসবি পরিবেশটা ঠান্ডা হওয়ার পরে। আর তোর যত টাকার প্রয়োজন হবে আমাকে কল করবি আর খুব সাবধানে থাকবি।”
_______
লিজা অয়ন্তির কাছে দৌঁড়ে আসে আর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “দোস্ত তোর বিয়েটা হচ্ছে।”
অয়ন্তি জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ঘরের পেছনের শেওলা পড়া পুকুরের দিকে তাকিয়ে থেকে উদাস গলায় বলে, “কার সাথে?”
“ছেলের বড় ভাইয়ের সাথে।”
অয়ন্তি চমকে লিজার দিকে তাকায়। অয়ন্তি ভেবেছিল হয়তো গ্রামের কোনো লোকের সাথে বিয়ে হবে কিন্তু লিজা কি বলল এটা। লিজা আবারো বলে, “সত্যি বলছি দোস্ত ওনি তোকে বিয়ে করবেন।”
অয়ন্তি সশব্দে হেসে উঠে। তার জীবনটা এতটা নাটকীয়তায় ভরপুর কেন? কেন বার বার সবাই তাকে এত কোণঠাসা করে। মা মরা মেয়ে বলে নাকি এটা তার কপালের দো’ষ। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে অয়ন্তি, বুকের ভেতরের চাপা কান্নাটা আটকে রাখার প্রচেষ্টা করছে। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করেন ফাতেমা আক্তার। ফাতেমা আক্তার এতটা সময় জানলার আড়াল থেকেই বার বার উঁকি দিয়ে দেখে গিয়েছেন মেয়ে তার কি করেছেন? ফাতেমা আক্তার অয়ন্তির কাছে এসে অয়ন্তির মাথায় হাত রেখে বলেন।
“আমার বড় মেয়েটা আজকে সত্যি সত্যি পর হয়ে যাবে। কি করে থাকব বলত তোর মুখে মামনি ডাকটা না শুনে।”
অয়ন্তি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ফাতেমা আক্তারের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। ফাতেমা আক্তার অয়ন্তির মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন।
“ধুর বোকা মেয়ে এভাবে কেউ কান্না করে। দেখি….।”
অয়ন্তিকে নিজের বুক থেকে তুলে অয়ন্তির চোখের জল মুছে দিয়ে বলেন, “ইস! চোখের জল দিয়ে এক্কেবারে সাজটা নষ্ট করে দিয়েছে। লিজা ওর সাজটা ঠিক করে দে তো মা একটু পরেই কাজী আসবেন বিয়ে পড়াতে।”
লিজা চোখের কোণে আসা জলটা মুছে বলে, “হ্যাঁ চাচী! এক্ষুনি ঠিক করে দিচ্ছি।”
ফাতেমা আক্তার চলে যান। লিজা অয়ন্তির কাছে এসে অয়ন্তিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে, “দেখ অয়ন্তি যা হয় ভালোর জন্যই হয়। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। হয়তো ওনার সাথেই তোর জুড়ি লেখা আছে তাই ওনার সাথে তোর বিয়েটা হচ্ছে।”
অয়ন্তি কিছু বলে না চুপচাপ বসে আছে আর দৃষ্টি নিবন্ধ করে রেখেছে কালচে রঙের ফ্লোরের দিকে।
#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#সূচনা_পর্ব
দিয়ে দিলাম এত দিন আপনাদের অপেক্ষায় রাখার গল্পটা। জানি না কেমন লাগবে আপনাদের। তবে যেমনেই হোক সবাই একটু রেসপন্স করবেন।