#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪১
রাতের আঁধার ছাড়িয়ে তখন দিনের আলো ফুটলো কেবল। আদিব গাড়ির পিছন সিটে বসে ঘুমে কাত। আদ্রিতাও ঘুমাচ্ছে জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে। ফারিশ জেগে। চুপচাপ বসে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে। ফারিশের বর্তমান অনুভূতি কেমন তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে ফারিশের মাথায় ঘুরছে আরশাদ। কিশোর আজকের মধ্যে ধরতে না পারলে এই কাজটা ফারিশই করবে। ফারিশ তার লোক লাগিয়ে দিয়েছে। আরশাদকে খোঁজা হচ্ছে। আশা রাখে খুব শীঘ্রই আরশাদকে ধরতে সে সক্ষম হবে। আরশাদের সাথে ফারিশের পরিচয় খুব অল্প সময়ে। তারা ঔষধের কেনা বেচা নিয়ে পার্টনারশিপে ব্যবসা করত। ফারিশ যে আলাদাভাবে মাদক ব্যবসায়ী এ সম্পর্কে আরশাদ অবগত ছিল না। কিন্তু আরশাদ সম্পর্কে ফারিশের সব জানা ছিল। পার্টনারশিপের দশদিনের মাথাতেই ফারিশ জেনে যায় আরশাদের আলাদাভাবে মেয়ে পাচার করার কাজ করছে। যা ফারিশের পছন্দ হয় নি। মেয়ে মানুষ নিয়ে ব্যবসা করা ফারিশের পছন্দ নয়। তাই ফারিশ পুলিশের নিকট আরশাদকে ধরিয়ে দেয়। তার পনের বছরের জেলবন্দীর সাজা দেয়া হয়। কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই আরশাদ জেল থেকে পালায়। আদ্রিতা সম্পর্কে আরশাদ কতটুকু অবগত বা আধও অবগত কি না এ সম্পর্কে ফারিশ তেমন কিছু জানে না। তবুও কোথাও গিয়ে সংশয় যদি জেনে থাকে।’
আদ্রিতার ঘুম ভাঙলো হঠাৎ। সে দ্বিধাহীন ফারিশের বুকে মাথা রাখলো। ফারিশ কিছুটা চমকে উঠলো এতে। নিজের ভাবনা গুলো ভুলে গেল মুহূর্তেই। ফারিশ নিজেকে সামলালো। আদ্রিতা ফারিশের গলা জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হেঁসে বললো,“শুভ সকাল মিস্টার বখাটে।”
ফারিশ আদ্রিতার পানে না তাকিয়েই বললো,“আপনায় কতবার বলবো আমি বখাটে নই।”
হাসে আদ্রিতা। বলে,“জানি তো। তাও আপনাকে বখাটে ডাকতে আমার ভালো লাগে।”
ফারিশ এ কথার আর জবাব দিলো না। আদ্রিতা কিছু সময় চুপ থেকে বলে,“আজ আমার বন্ধু মৃদুলের বৌভাত আপনি কি যাবেন ফারিশ?”
ফারিশের দ্বিধাহীন জবাব,“কি পরিচয়ে যাবো?”
আদ্রিতা অবাক হয়ে বললো,“কেন আমার বয়ফ্রেন্ডের পরিচয়ে।”
ফারিশ নাকচ করলো তাতে। বললো,“না আমার কাজ আছে। আপনি ঘুরে আসুন।”
আদ্রিতা খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বললো,
“আপনি কি আমায় তুমি করে বলতে পারেন না ফারিশ?”
“আপনিটাতেই কেমন যেন আমি সস্থি পাই।”
“কিন্তু আমার অসস্থি লাগে।”
চোখ মুখ কুঁচকে বললো আদ্রিতা। ফারিশ হাসলো। বললো,“বিয়ে হোক বলবো?”
আদ্রিতা খুশি মুখে বললো,“সত্যি বলবেন।”
ফারিশ এক ঝলক আদ্রিতাকে দেখলো। পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে বললো,
“হুম।”
“বিয়ে কবে করবেন ফারিশ? চলুন আজই করে ফেলি।”
ফারিশ নিরুত্তর। আদ্রিতা বিচলিত হয়ে বললো,“করবেন বিয়ে চলুন আজই করে ফেলি।”
ফারিশ এবারও উত্তর দিল না। আদ্রিতা এবারও উত্তর না পেয়ে পাল্টা কিছু জিজ্ঞেস করলো না। নীরবতা চললো বেশ কতক্ষণ। ফারিশ গাড়ি থামালো হঠাৎ। আদিব একটু নড়ে চড়ে উঠে। পরক্ষণেই আয়েশ করে শুয়ে পড়লো গাড়ির সিটে। গভীর ঘুম পেয়েছে তার। আদ্রিতা তার মাথাটা ফারিশের নিকট থেকে উঠালো। সোজা হয়ে বসে বললো,“গাড়ি থামালেন যে?”
ফারিশ আদ্রিতার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল স্বরে শুধায়,“আপনার আচরণ আমার কাছে ঠিক লাগছে না ডাক্তার ম্যাডাম?”
আদ্রিতা বিষম খেয়ে বল,“মানে?”
ফারিশের তড়িৎ উত্তর,“আমি একজন মাফিয়া আদ্রিতা।”
আদ্রিতার ভাবনাহীন উত্তর,
“তো।”
“আপনি আমার সাথে সত্যি থাকতে চান? বিয়ে করতে চান?”
আদ্রিতা তক্ষৎণাৎ উত্তর,
“হুম।”
ফারিশ আবার বলে উঠে,“ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন নাকি ডাক্তার ম্যাডাম?”
আদ্রিতার মুখটা মলিন হয়ে গেল। ফারিশ তা দেখে হাসলো। বললো,“আরে মজা করছিলাম চলুন।”
এই বলে ফারিশ আবার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটলো দূরে। গাড়ি এসে সোজা থামলো আদ্রিতাদের বাড়ির সম্মুখে। আদ্রিতা গাড়ি থেকে নামলো না। চুপটি করে বসে রইলো। ফারিশ বললো,“কি হলো যান?”
আদ্রিতা গেল না। তাও বসে রইলো। ফারিশ তার কপাল চুলকে বলে,“কি হয়েছে? রাগ করেছেন?”
আদ্রিতা জবাব দেয় না। ফারিশ আদ্রিতার দু’কাধ চেপে ধরে বলে,“আমি মজা করছিলাম।”
আদ্রিতা মলিন মুখে তাকালো ফারিশের দিকে। চোখ ভিজে এসেছে তার। আদ্রিতা বলে,“কি করলে বুঝবেন আমি ধোঁকা দিবো না?”
ফারিশ হাসলো। আদ্রিতার চোখের পানিটুকু নিজ হাতে মুছে দিয়ে মজার ছলে বললো,“বিকেলেই বিয়েটা করলে। এখন নামুন আপনার বাবা মা আপনার অপেক্ষা করছে। দুশ্চিন্তা করছে নিশ্চয়ই। তাড়াতাড়ি যান।”
আদ্রিতা নেমে পড়লো। গাড়ির দরজা আঁটকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বললো,“সাবধানে যাবেন।”
ফারিশ মাথা নাড়িয়ে বলে,“নিশ্চয়ই।”
অতঃপর ফারিশ চলে যায়। আদ্রিতাও জোরে দম ফেলে ছুটে চলে গেল বাড়ির ভিতর। ঘরে ঢুকতেই তার মা এসে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। আদ্রিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল শুধু। মনে মনে কি যেন ভাবে?”
—-
মৃদুলের বউভাত শেষের পথে। নয়নতারা আর আশরাফকে বেশ সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে দুপুর থেকে। বেলা তখন প্রায় চারটা। আদ্রিতা ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে নিজেকে সাজিয়েছে খুব। বড় কমিউনিটি সেন্টারে মৃদুলের বৌভাতের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে ছিল।’
আদ্রিতা সবাইকে একত্রে ডাকলো। এখন তারা বাড়ি ফেরার মেজাজে ছিল। আদ্রিতার ডাকে সবাই একজোট হলো। মৃদুল বললো,“কি হইছে কি কবি তুই?”
আদ্রিতা সবার দিকে একঝলক তাকিয়ে তড়িৎ বলে,“আমি বিয়ে করবো আজ আর এক্ষুণি।”
সঙ্গে সঙ্গে সবাই যেন বিষম খেল। রনি মাত্রই তার কোকের বোতলে এক চুমুক দিয়েছিল। সেটাও হজম করতে না পেরে কলকলিয়ে ফেলে দিল। চাঁদনী বললো,“মজা করছিস আদু?”
আদ্রিতা চোখে মুখে সিরিয়াস দৃষ্টি ভঙ্গি এঁটে বলে,“না আমি সিরিয়াস।”
আশরাফ আদ্রিতার দিকে এগিয়ে গেল। শান্ত গলায় আওড়ালো,
“ছেলেটা কে?”
“ফারিশ মাহমুদ।”
এবার যেন আরো শকড হলো সবাই। মুনমুন বললো,“ফারিশ ওই যে ঔষধ কোম্পানির মালিক।”
আদ্রিতার দ্বিধাহীন উত্তর,“হুম।”
——
শেষ বিকেলের রোদটুকু বিছানায় চুইয়ে ফারিশের গায়ে ঠেকছে। গায়ে তার পাতলা কাঁথা জড়ানো। জানুয়ারির শীতটা খুব একটা গায়ে লাগে না তখন। ফারিশ ঘুমোচ্ছে। বাড়ি এসেই গোসল সেরে ন’টার দিকে সে ঘুম দেয়। যেই ঘুম এখনো ভাঙে নি। গত কয়েকদিনের না হওয়া ঘুমগুলো যেন আজ একদিনেই পূরণ করছে ফারিশ। আদিব রুমে ঢুকে তখন। পরে আবার বেরিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ভাড়ি লেহেঙ্গা গায়ে জড়িয়ে আদ্রিতা আসে। ফারিশকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মৃদু হেঁসে গিয়ে পাশে বসে। কপালে হাত ছুঁইয়ে বলে,
“মিস্টার বখাটে উঠুন।”
ফারিশ এক চুলও নড়লো না। আদ্রিতা এবার আর একটু উচ্চ শব্দে বললো,“ফারিশ শুনছেন,
এবার খানিকটা নড়লো ফারিশ। ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো,“উফ। ডাকছো কেন? দেখছো না আমি ঘুমোচ্ছি।”
আদ্রিতা মিষ্টি হাসে। বলে,“এখন উঠুন পরে ঘুমাবেন।”
ফারিশ স্বপ্ন দেখছে আদ্রিতা নতুন বউয়ের মতো লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে তাকে ডাকছে। ফারিশ ঘুমের ঘোরে আদ্রিতার হাতটা জড়িয়ে ধরে বললো,”এত সেজেছো কেন তোমায় যে পুরো বউ বউ লাগছে।”
বাস্তবিক আদ্রিতা তা শুনে হেঁসে উঠলো। সে বুঝলো ফারিশ স্বপ্ন দেখছে। আদ্রিতা খানিকটা ঝুকলো ফারিশের দিকে। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিস ফিস করে বললো,“ফারিশ উঠুন বিয়ে না করলে বউ বউ লাগবে কেমন করে?”
তড়িৎ ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো ফারিশ। ঘুম ভেঙে গেল তার। চোখ মেলেই আদ্রিতাকে মুখোমুখি আর ভাড়ি লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা পড়নে দেখে অবাক স্বরে বললো,“আপনি এখানে কি করছেন ডাক্তার ম্যাডাম?”
আদ্রিতা আয়েশ করে বসে বললো,“কি আর করবো? বিয়ে করবো উঠুন।”
ফারিশের মুখভঙ্গি পাল্টে গেল হঠাৎ। বিস্মিত স্বরে আওড়ালো সে,“কি বলছেন? পাগল হলেন নাকি।”
আদ্রিতার বিরক্ত লাগলো এবার চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“পাগল হওয়ার কি আছে বিয়ে করবো বলেছি।”
ফারিশ শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ মুখ ঢলতে ঢলতে হাই তুলে বললো,
“মজা করছেন?”
“আশ্চর্য মজা করবো কেন? ফ্রেশ হন আমরা কাজি অফিস যাবো।”
আদ্রিতার কথাগুলো এবার যেন সত্যিই সত্যিই লাগছে ফারিশের। সে প্রশ্ন করলো,
“সত্যিই কাজি অফিস যাবো?”
আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে লাজুক স্বরে বললো,“জি।”
সঙ্গে সঙ্গে গুরুতর ভাবে বিষম খেল ফারিশ। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলো শুধু, তার ডাক্তার ম্যডামের দিকে।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প আরো আগেই লিখেছিলাম কিন্তু ফেসবুক সমস্যার কারণে দিতে পারি নি। আমি জানি আমার গল্পটায় খুব গ্যাপ যাচ্ছে। আসলে মানসিকভাবে কিছু সমস্যার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু ইনশাআল্লাহ এবার থেকে আর গ্যাপ যাবে না। এখন থেকে রেগুলার গল্প দিবো।]
#TanjiL_Mim♥️.