কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৫০ (বোনাস পার্ট) #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

1
315

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫০ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন শক্ত করে তাজেলকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,,

‘আল্লাহ চাইলে আমি আর তুমি সবসময় একসাথে থাকবো নেত্রী। ডাক্তার কখনো তার নেত্রীর থেকে আলাদা হবে না।”

মেহবিন তাজেল কে ছাড়িয়ে বলল,,

“এখন খেয়ে নাও নেত্রী আজ তোমার ডাক্তার তোমায় খায়িয়ে দেবে ‌। আর হ্যা তোমার মুরগির ঠ্যাং এ তোমার ডাক্তার হাত দেওয়া তো দূরে থাক চোখ দিয়েও দেখবে না।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

‘তোমার পছন্দ হইলে তুমি খায়া ফালাও আমার ঠ্যাং খাওয়া লাগবো না। তহন তো তোমার মুখের হাঁসি ফোটানোর লাইগা ঐগুনা কইছি।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে তাজেলের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

‘আল্লাহ তাআলা আমার সব হাঁসি তোমায় দিক।”

“আমিন কমুনা আমি?”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“কেন?কেন?”

‘আল্লাহ যদি তোমার হাঁসি আমারে দিয়ে দেয় তাইলে তোমার মুখের হাঁসি থাকবো নাকি।”

“আচ্ছা ভুল হয়েছে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে আর আমাকে সবসময় হাসিখুশি রাখুক।”

“এহন ঠিক আছে। আমিন আল্লাহ আমিন একশো বার।”

মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“এবার খাওয়া শুরু করা যাক।”

‘হুম!”

মেহবিন তাজেলকে খায়িয়ে দিতে শুরু করলো তিন বার খাওয়ার সময় তাজেল বলল,,

“ও আল্লাহ আমি তো খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ কইতে ভুইলা গেছি। এহন তো সব শয়তানে খায়া নিল। এহন কি হইবো?

মেহবিন বলল,,

“আরে নেত্রী দাঁড়াও আগেই হায়হুতাশ আরো না। খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলতে
ভুলে গেলে। আরেকটা দোয়া আছে সেটা পড়।

‘ঐটা তো আমি জানি না।”

“আচ্ছা আমার সাথে পড়,,
বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ “বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু” (খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।)
[সুনানে আবু দাউদ ৩৭৬৭, তিরমিজি ১৮৫৮, ইবনে মাজাহ ৩২৬৪]

তাজেল মেহবিনের সাথে পড়লো। তাজেল ও মেহবিন কে খায়িয়ে দিল। অতঃপর তাদের দুজনে খাওয়া শেষে তাজেল বলল তার ঘুম পাচ্ছে। মেহবিন ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তাজেল ঘুমিয়ে গেলে এরপর মেহবিন পেছনের বারান্দায় গেল। ওখানে লাইট দেয় নি অনেক অন্ধকার। ও অন্ধকারের মধ্যেই সেখানে থাকা দোলনায় বসে রইলো। চোখ দু’টো স্থির অন্ধকার হলেও যেন সবকিছুই ও দেখতে পাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওর ফোনটা বেজে উঠলো। তাজেল ঘুমে দেখে ও তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরলো।

‘হ্যালো!”

“বারান্দা খুলো।”

মেহবিন বুঝতে পারলো মুখর এসেছ। ও বারান্দায় গিয়ে তালা খুললো। ঘরে আসতেই দেখলো তাজেল ঘুমিয়ে আছে। তাই মুখর অন্যরুমে গেল আর মেহবিনকে আসতে বললো। মেহবিন ভালো করে সবকিছু লক করলো। তাজেলের হাতের নিছে একটা বালিশ দিয়ে রুমটা ভিড়িয়ে দিয়ে এলো। আরেকটা রুমেও বিছানা আছে তবে মেহবিন ইউজ করে না বলে এমনিই পরে থাকে। তবে মেহবিন সবসময় রুমটা পরিস্কার করে রাখে। মেহবিন গিয়ে ঐ রুমের লাইট অন করে দিল। মুখর চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। মেহবিন পানি এনে ওর সামনে ধরলো। মুখর ওর হাত থেকে পানি খেয়ে নিল। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘আপনি এখানে কেন?”

মুখর মেহবিন কে নিজের পাশে বসালো ‌। তারপর বলল,,

‘আজকের পোস্ট টা কিসের ছিল বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘কিছু তিক্ত সত্যি অভিজ্ঞতা।”

“আমাদের পূর্নতা কি অসময়ে হয়ে গেল। অথচ এই পূর্ণতার জন্য কতটা অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।”

“অসময়ে পূর্নতার চেয়ে অপেক্ষা শ্রেয়।”

“অসময় কেন বলছো? কি আছে এখন যে এটা আমাদের অসময়।”

‘জানি না তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা অসময়।”

‘তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে।”

‘না!”

“আজ আমি রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনী সম্পর্কে জানতে চাই।”

“তাজেল রুমে একা আছে আজ ওর সাথে থাকতে হবে। রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনী কে জানতে হলে আপনাকে অনেক সময় নিয়ে আসতে হবে মুখর শাহরিয়ার।”

“তাহলে সেই দিনটা না হয় তিনদিন বাদেই হোক।”

“ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে সেদিনই হবে।”

“তাহলে আজ উঠি?”

‘আজ কি শুধু কাব্যের বিহঙ্গিনী কে জানতেই এসেছিলেন?”

‘হ্যা!”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“চলে যাবেন?”

‘তো কি তোমার আর তোমার নেত্রীর মাঝে এলাচি হবো নাকি। ”

মুখরের কথায় মেহবিন একটু জোরেই হাসলো। মুখর ও হাসলো। আর বলল,,

‘মাঝে মাঝে তোমাদের দুজনকে দেখে আমার হিংসে হয়। কোন রক্ত বা আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও শুধু আত্মার সম্পর্ক এতটা গভীর ভাবে গড়ে উঠে।”

‘আপনি জানেন আজ নেত্রী এখানে কেন?”

“কেন?”

“আমি শুধু বলেছিলাম আমার ভালো লাগছে না আর আমি খাবো না। এই কারনে নেত্রী তার বাড়ি থেকে খাবার এনেছে আর আমার মুখে একটু হাঁসি ফুটানোর জন্য কতোকিছু বলেছে। আর আমার সাথে থাকতে এসেছে। যাতে আমার মন খারাপ না থাকে।”

“আল্লাহ তায়ালা যেন তোমাদের দুজনকে সারাজীবন এভাবেই রাখে।”

“আমিন।”

“সুম্মা আমিন। সেদিন কি আমি নিতে আসবো?”

“না আমিই চলে যাবো। মামা গাড়ি পাঠিয়ে দেবে আমি নিজেই ড্রাইভ করে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো।”

“কালকে তোমার ড্রেস পাঠিয়ে দেব সেটা পরেই কিন্তু যাবে।”

“ইনশাআল্লাহ!”

‘আসছি আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ!”

‘সেদিনের জন্য কিন্তু তৈরি থেকো বিহঙ্গিনী তার কাব্য কিন্তু তার কাছে কিছু আবদার করতে পারে।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘ঠিক আছে।”

মুখর যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল। মেহবিন হেঁসে রুমে গেল। তাজেল এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। মেহবিন ওকে ঠিক করে শুয়িয়ে দিল। নিজেও শুলো ও শুতেই তাজেল ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। মেহবিন ও কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

_____________

“পার্টনার এতো সকালে ফোন করেছেন কোন দরকার?

ভোরের আলো ফুটেছে কিছুক্ষণ আগেই। মেহবিন ফজরের নামাজ হাঁটাহাঁটি করছিল। তাজেল উঠে বাড়ি চলে গেছে। এমন সময় পার্টনারের এর ফোন পেয়ে মেহবিন একটু অবাকই হয়েছে। পার্টনার বললে,,

‘আপনাকে একটা কথা বলার ছিল? যা আমাকে কয়েকদিন ধরে ঘুমাতে দিচ্ছে না।

‘হুম বলুন?”

‘নিশাচর ও তার সাগরেদদের কবে তোলা হবে।’

“যতোক্ষন পর্যন্ত না তারা নতুন কোন ভুল করছে।”

‘তার মানে তাদের পরের পদক্ষেপ না ফেলা পর্যন্ত তাদের ধরবেন না।”

‘না !”

“হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত?”

‘কারন তারা না এগুলে আমরা সরাসরি ভাবে তাদের একসাথে হাতেনাতে ধরতে পারবো না।”

“আর যদি সেরকম কিছু করার আগেই তারা অন্য উপায়ে কিছু করে মানে কারো ক্ষতি করে দেয়?”

‘তাহলে সেদিনই হবে তাদের খোলামেলা ভাবে শেষ দিন।”

“আচ্ছা!’

“হুম রাখছি আশা করি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন।”

‘হুম পার্টনার নিজের খেয়াল রাখবেন।”

“আপনিও পার্টনার।”

বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল।

______________

অতঃপর কাঙ্ক্ষিত দিনটা এসেই পরেছে মুখর আর মেহবিনের জীবনে। আজকেই সেই দিন যেদিন টা আছিয়া খাতুন মেহবিনের জন্য অনুষ্ঠান রেখেছেন। গতকালকে মুখর তার বিহঙ্গিনীর জন্য সাদা গাউন আর গোল্ডেন হিজাব পাঠিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যে হয়ে আসছে আজ মুখর মেহবিনকে একটা কল ও দেয় নি। কারন ও চায় আজ সামনাসামনিই ওর বিহঙ্গিনীর সাথে দেখা হোক। শাহরিয়ার ভিলায় আজ এলাহী কান্ড আছিয়া খাতুন নিজে তদারকি করছেন সবকিছুর জন্য। আর বাড়ির সকলে অবাক হয়ে দেখছে। সকাল বেলা আছিয়া খাতুন মেহবিনকে কল দিয়েছিল বলেছে আটটায় অ্যানাউন্সমেন্ট হবে সে যেন সাতটা বা সাড়ে সাতটায় শাহরিয়ার ভিলায় পৌঁছে যায়। মেহবিন ও বলে দিয়েছে ইনশাআল্লাহ। মুখর নিজে রেডি হচ্ছে আর আয়নায় নিজেকে দেখছে। সাদা কাজ করা পাঞ্জাবিতে তাকে ভিশন স্নিগ্ধ লাগছে। এদিকে আরবাজ কে আগেই আসতে বলা হয়েছে সেই সাথে ওর পরিবারকে। সবাই সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে গেছে। আলভি মুখর কে বলল,,

‘অবশেষে আমাদের মুখরের আজ ঈদের দিন। ইশশ বেচারা বিয়ে করেও কুমার হয়েই ছিল। শান্তিতে প্রেমটাও করতে পারছিল না।”

মুখর হেঁসে বলল,,

“তোকে কে বলল রে আলভি যে আমরা শান্তিতে প্রেম করতে পারি নি। বরং আমরা শান্তিতে প্রেম ও করতে পেরেছি আর,,

মুখরের কথায় আলভি আর আরবাজ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। আরবাজ বলল,,

“আর?”

“এই আরবাজ এই তুই না সবসময় বলিশ তুই মেহবিনকে বোনের মতো দেখিস তাহলে সেগুলো শুনতে তোর লজ্জা করবে না। তাছাড়া সম্পর্কে আমি তোর বউয়ের বড় ভাই তাই রেসপেক্ট দে।”

মুখরের কথা শুনে আলভি আর আরবাজ হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। আরবাজ কিছু বলবে তার আগে নাফিয়া আর মিশু আর মারিয়া ঢুকে পড়লো। মিশু বলল,,

“মাশাআল্লাহ পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।”

“শুকরিয়া মিশুমনি!”

“আজ তো মেয়েরা তোমার থেকে চোখই সরাতে পারবে না।”

তখন নাফিয়া বলল,,

“মিশু আপু আজকের আয়োজন টা যার জন্য তাকে দেখলে ভাইয়াই চোখ সরাতে পারে না।”

“তাই বুঝি যেভাবে সেদিন ফুলের দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন জানো আমার কি মনে হচ্ছিল পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতির চোখ বলছিল আজ শহীদ হয়ে যাবো তবুও চোখ সরাবো না।”

মিশুর কথা শুনে সকলে হেঁসে ফেললো। তখন মুখর বলল,,

‘মনে হচ্ছে পুরোনো মিশুমনি ব্যাক যে আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাতোর জন্য তৈরি থাকে।”

“তোমার কোনদিন ইজ্জত ছিল বুঝি পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি। আমি তো জানি ইজ্জত মেয়েদের থাকে।”

মিশুর কথায় সবাই আরেকদফায় হেঁসে নেয়। হুট করে মুখর সিরিয়াস হয়ে বলল,,

‘হুম হাসি মজা অনেক হয়েছে। এখন শুনো মিশুমনি তোমার ফুলকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তাকে একটা ফোন লাগাও তো। দেখো সে কোন পর্যন্ত এসেছে?”

তখন নাফিয়া বলল,,

‘কেন মিশু আপু কেন দেবে তুমি দিতে পারছো না নাকি আজ পন করেছো নো ফোনকল সামনাসামনি একেবারে!”

“এই নাফি বেশি পাকনামি করবি না বলে দিলাম।”

‘তার মানে আমার কথাই সত্যি!”

‘আমি কিন্তু এখন দাদিজানকে ডাক দেব বলে দিলাম।”

“হ্যা ডাক দাও আমরা তোমার দাদিকে দেখে ভয় পাই নাকি।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ এলো,,

“আমার নাতিরে জ্বালাইতেছে কি রা? আবার ডায়লগ দিতাছে আমারে দেইহা নাকি ভয় পায় না।”

মুখর পেছনে তাকিয়ে দেখলো। আছিয়া খাতুন ওনাকে দেখেই মুখর গিয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো,,

“আরে আমার দাদিজান থাকতে কার এতোবড় স্পর্ধা যে আমায় জ্বালাবে।”

‘হ এহন খুব দাদিজান যহন বউ আইসা পরবো তখন আর দাদিজান, দাদিজান থাকবো না। পরজান হইয়া যাইবো।”

আছিয়া খাতুনের কথায় সবাই হেঁসে ফেললো। এখন মুখর ও হাসলো আজ আছিয়া খাতুন কে বেশ প্রানবন্ত লাগছে। সবাই মিলে বেশ হাসি ঠাট্টা করলো। অতঃপর সাতটা বাজে দেখে সবাই নিচে গেল। মেহমানরা আসতে শুরু করেছে। তখন মেহরব চৌধুরী ও তার পরিবার এলো। এদেরকে দেখে শেখ পরিবার বেশ অবাক হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় কেউ কারো দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না। এমনকি মিশু আরবাজ ও না। শেখ শাহরিয়ার তাদের সাথে শেখ পরিবার কে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দু পক্ষই বলল তারা আগে থেকেই একে অপরকে চেনে। কিন্তু কিভাবে চেনে এটা নিয়ে কথা হলো না। অনুষ্ঠানে আসা সবার মুখে একই কথা আজ কি উপলক্ষে অনুষ্ঠান কিন্তু শাহরিয়ার পরিবারের কেউ সে বিষয়ে বলছে না সবাইকে বলছে মুখরের বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে কিন্তু সে কে কোথায় থাকে সে সম্পর্কে কিছু বলছে না শুধু বলছে ধৈর্য্য ধারণ করতে। এদিকে প্রায় আটটা বাজতে চললো মেহবিনের দেখা নেই। শাহরিয়ার পরিবারের সাথে সাথে শেখ ও চৌধুরী পরিবারও চিন্তিত হয়ে পড়লো। আছিয়া খাতুন মুখর কে বলল মেহবিন কে কল করতে। মুখর দাদির কথা শুনে কল করলো কিন্তু মেহবিনের ফোন বন্ধ। সবাই মেহবিনের ফোনে ট্রাই করলো কিন্তু কেউ ওকে পেল না। প্রায় নয়টা বেজে গেল মেহমানদের মধ্যে গুঞ্জন উঠলো হয়তো মুখরের বউ এই বিয়েতে রাজি না তাই আসেনি। আরো নানা কিছু। সব শুনে শাহরিয়ার পরিবার লজ্জায় পরে গেল এমনকি মুখর ও । ওর ভেতর ভিশন অস্থিরতা কাজ করলো। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে মেহবিন ঠিক নেই। আছিয়া খাতুন মুখরকে মেহবিনের হাসপাতালে ফোন দিতে বলল মুখর তাই দিল সবাই একটা ঘরে গেল। লাউড স্পিকারে দিল। ওপাশ থেকে একজন বলল,,

“হ্যালো!”

“জি ডক্টর মেহবিন মুসকান কি হাসপাতালেই আছে?”

“জি উনি তো হাসপাতালেই আর আজ এখানেই থাকবে মনে হয়।”

মুখর কিছু বলবে তার আগে আছিয়া খাতুন মুখরের হাত থেকে ফোন নিয়ে কেটে দিল আর বলল,,

“মুখর তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চল?”

“দাদি?”

“না আমি জানতে চাই তোর বউ সবার সামনে আমাগো অপমান কেন করলো?”

“দাদিজান মেহু তেমন মেয়ে নয় নিশ্চয়ই কোন ইম্পোর্টেন্ট কাজে আটকে গেছে।”

‘না তোর বউ ইচ্ছে করে করলো এইসব। তোর বউরে শর্ত দিছিলাম না এর শোধ নিল।”

“মেহু এইরকম মেয়ে নয় তুমি ভালো করেই ওকে চেনো!

‘আমি কিছু শুনতে চাই না আমার জবাব চাই কেন করলো এইডা।”

তখন মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,

“মা শান্ত হও। দেখো আমরা মেহু কে সবাই চিনি ও একরম কখনো করতে তো দূর ভাবতেও পারে না।”

“আমি কিছুই জানি না আমার জবাব চাই তাও ওর থেকেই।”

আছিয়া খাতুন বাইরে বের হয়ে সবার কাছে মাফ চাইলেন আর চলে যেতে বললেন। এদিকে শেখ পরিবার আর চৌধুরী পরিবার বেশ অবাক হলো। তাদেরকেও চলে যেতে বলল আছিয়া খাতুন। শেখ শাহনাওয়াজ কিছু আঁচ করতে পারলেন। আছিয়া খাতুন মুখরকে নিয়ে বের হবে তখন পুরো শাহরিয়ার পরিবারই জানালেন তারাও যাবে। মুখর চেয়েও কিছু বলতে পারলো না। সবাই বের হলো গন্তব্য মহুয়াপুর সরকারি হাসপাতাল। এদিকে মেহরব চৌধুরী বুঝলেন কিছু তো হয়েছে তাই তারাও একবার যেতে চাইলেন তবে একজনের মেসেজ পেয়ে তারা আর গেলেন না।

রাত এগারো টা মেহবিন এক দৃষ্টিতে সামনের শুয়ে থাকা মানুষটার হাত ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেহবিন একবার নিজের দিকে তাকালো এখনো তার সাদা গাউনটায় রক্ত লেগে আছে। তখন একজন নার্স এসে বলল বাইরে তার সাথে দেখা করতে এসেছে কয়েকজন। মেহবিন মানুষটার কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

‘ডাক্তার একটু সময়ের জন্য বাইরে যাচ্ছে। তুমি কিন্তু আবার ডাক্তারকে ধোঁকা দিও না।”

বলেই বেরিয়ে এলো। এর আগে মেহবিন কে এতো বিদ্ধস্ত অবস্থায় কেউ দেখেনি। মেহবিন কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখলো বৃষ্টি পরছে। ও অস্ফুট স্বরে বলল,,

‘অসময়ি সবকিছুই ভয়ঙ্কর যন্ত্রনা দেয়।”

ও আস্তে আস্তে এগিয়ে চললো। সামনে তাকাতেই দেখলো পুরো শাহরিয়ার পরিবার দাঁড়িয়ে আছে। ও এগুবে এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। তবুও যেন মনে হলো মেহবিন সবাইকে দেখতে পাচ্ছে ও একটু একটু করে এগুলো। আছিয়া খাতুনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“দাদিজান,,”

আছিয়া খাতুন ঠাস করে মেহবিন কে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। তখনি লাইট চলে এলো। আর লাইট আসতেই মেহবিনের দিকে তাকাতেই শাহরিয়ার পরিবার চমকে উঠলো। কারন মেহবিনের সাদা গাউনটায় এমন ভাবে রক্ত লেগে আছে যেন ও গোসল করেছে রক্ত দিয়ে। মেহবিন কিছুই বললো না ও সোজা হয়ে শান্ত চোখে আছিয়া খাতুনের দিকে তাকালো। আছিয়া খাতুন কিছু বলবে তার আগে মেহবিনই বলল,,

“দেখলেন দাদিজান আপনাকে বলেছিলাম না আপনার সাথে পরের সাক্ষাতে বোধহয় থাপ্পড়ই খেতে হবে। হলোই তাই। আর যাওয়ার জন্য ইনশাআল্লাহ বলেছিলাম না। আল্লাহ বোধহয় চাইছিলেন না আমি ওখানে যাই। তাই যেতে পারি নি। তবে আমি যেতে চেয়েছিলাম এই দেখুন না আপনার নাতি এই গাউন আর হিজাব টা পাঠিয়েছিল আমি যেন এটা পরে যাই। আর দেখেন এটাও আমার গায়েই আমি তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস যেতে পারলাম না। এখন কি আমাকে আর উঠাবেন না বাড়িতে। আচ্ছা আপনি কি কাব্যকে সত্যি সত্যি আবার বিয়ে করাবেন। আচ্ছা করায়েন একজন ভালো মেয়ে দেখে যে তার অনেক খেয়াল রাখবে একদম আমার নেত্রীর মতো। আমার নেত্রী আমার যেভাবে খেয়াল রাখে সেই রকম। আচ্ছা আমার নেত্রী আমার যেভাবে খেয়াল রাখে কখনো কি আমার নেত্রীর মতো কেউ কখনো খেয়াল রাখতে পারবে। পারবে না বোধহয় তাই না। কারন নেত্রী তো একটাই আমার নেত্রী, ডাক্তারের নেত্রী!”

আজ মেহবিন কে খুব অসহায় লাগছে। ওর কন্ঠটাও কেমন যেন অসহায় লাগছে। কেউ কিছু বলবে কি মেহবিনের কথা শুনেই থেমে গেছে। মুখর সবার পেছন থেকে সামনে এগিয়ে এলো। ওর চোখদুটো ছলছল করছে। ও বুঝতে পারছে তার বিহঙ্গিনী আজ খুব ভেঙে পরেছে। মুখর এসেই মেহবিনের গালে হাত রাখলো। আর বলল,,

“বিহঙ্গিনী ঠিক আছো?”

মেহবিন মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘আমার আবার কি হবে একদম ঠিক আছি আমি। তবে জানেন কি কাব্য মানুষ বরাবরই স্বার্থপর।”

“মেহু!”

“বাড়ি চলে যান কাব্য। এখন এই বিহঙ্গিনী কোথাও যাবে না। এখন আমায় যেতে হবে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে বোধহয়।”

বলেই মেহবিন উল্টো দিকে ঘুরে যেতে লাগলো। ওকে কেউ কিছু বলবে তার আগে মুখর বলল,,

‘ওকে কেউ কিছু বোলোনা প্লিজ। ওকে আজ ওর মতো ছেড়ে দাও।”

তখন সবার সামনে দিয়ে কেউ দৌড়ে এসে মেহবিন এর পেছনে গিয়ে ডাক দিল “মুসকান”। সবাই উৎসুক হয়ে সেদিকে তাকালো। মেহবিন একবার তার দিকে ঘুরে তাকালো। সে মেহবিনকে জড়িয়ে ধরলো মেহবিন কিছুই বললো না স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ও অস্ফুট স্বরে বলল,,

“আজ সেই দিনটা খুব করে মনে পরছে। সেদিন ও আমি একা ছিলাম আজ ও একা। চারপাশে এতগুলো মানুষ ছিল অথচ মনে হচ্ছিল কেউ নেই আমার। ভেতরে ভেতরে খুব দমবন্ধ লাগছিল আর মনে হচ্ছিল সেই ছোট্টবেলায় যেভাবে মাকে হাড়িয়েছিলাম আজ আবার নতুন করে একজন কে হাড়াবো। পুরোনো ভয় গুলো খুব বাজে ভাবে আমায় তাড়া করছিল।তবে সেদিনের মতো আজ আর ঘুমানোর মতো ভুল করবো না। সেবার ঘুমিয়ে ছিলাম বলে একজন সেই সুযোগে চলে গিয়েছিল কিন্তু এইবার আমি সেই ভুল করবো না‌। তার হাত শক্ত করে ধরে থাকবো যেন সে আমায় ধোঁকা দিতে পারে।”

জড়িয়ে ধরে থাকা মানুষটা বললেন,,,

“আপনার নেত্রীর কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ। নিজেকে সামলান আপনাকে অসহায়ত্ব মানায় না। এই সময় কঠোরতা আনুন তাদের যে শাস্তি দেওয়ার সময় এসে পরেছে ।”

“আমি আপাতত কিছু জানি শুধু একটু কাঁদতে চাই, হ্যা আমি একটু কাঁদতে চাই। আমার ভিশন দমবন্ধ লাগছে, আমি একটু কাঁদতে চাই।”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আজ আমি কিছুই বলবো না। আমি নিজেই শকড আপনাদের কি বলবো। তবে আপনারা কিছু বলে যায়েন।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here