আমার_তুমি #পর্ব_২৭[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ] #জান্নাত_সুলতানা

0
377

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৭[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সকাল থেকে বাড়িতে এককের পর এক বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে দলের সব ছেলেপেলেরা সবাই শুভেচ্ছা জানাতে আসছে।
সাদনান সবার সাথে কম বেশ কথা বলে বাকি দায়িত্ব দাদার আর বাবার উপর দিয়ে রাহান আর আর সিকিউরিটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়বে মিটিং এর উদ্দেশে।আজকে দিন টা শুধু হাতে আছে।কাল আবার অনেক কাজ। শপথ বাক্য পাঠ করতে যেতে হবে।
অনেক কিছু করা বাকি এখনো এমপি হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।জায়গায় না আসলে জায়গার কদর বোঝা যায় না। এটা হচ্ছে ঠিক তেমন আগে আসতে পারার জন্য কষ্ট করতে হয়েছে জণগণ তাকে ভরসা করে এই স্থানে বসিয়েছে এখন সেই বিশ্বাস ভরসার ভালোবাসার দাম রাখার জন্য কষ্ট করতে হবে। শুনেছে বিপরীত দলের প্রাক্তন এমপি নাকি কাল রাতেই দেশ ছেড়েছে।না ছেড়ে উপায় আছে। জণগণ যা ক্ষেপে আছে হয়তো আগে থেকে আন্দাজ করতে পেড়ে ছিল হেরে যাবে তাই তো আগে থেকে পথ মেপে রেখে ছিল। সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে রেডি হয়ে নিলো।
গায়ে সফেদা পাঞ্জাবি জড়িয়ে আয়নায় দেখে নিলো। চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে নিয়ে দামী ঘড়ি টা হাতে বাঁধতে বাঁধতে দেখে নিলো ক’টা বাজে।
বেলা এখন সাড়ে নয় টার বেশি বাজে।সে নিচ থেকে নাস্তা করে আসার সময় বলে এসছে প্রিয়তা যেনো রুমে আসে।কিন্তু এই মেয়ের তো কোনো খবর নেই। অবশ্য একটু আগে যা জারিজুরি দিয়েছে না আসাটাই গ্রহনযোগ্য। সাদনান বিছানা হতে নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে সেটা পাঞ্জাবির পকেটে পুরে নিলো।সাদনান এর ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ঠিক তক্ষুনি দরজা ঠেলে কেউ ভেতরে এলো।
সাদনান বুঝতে পারে বউ তার রুমে এসছে।
প্রিয়তা সোজা এসে সাদনান এর সোফায় ফেলে রাখা ভেজা টাওয়াল টা নিয়ে ব্যালকনিতে দিয়ে এলো।ফিরে রুমে আসার সাথে সাথে সাদনান প্রিয়তা কে নিজের কাছে টেনে নিলো।আদুরে স্পর্শে করে মাথায় গলায় মুখে। প্রিয়তা তখন দেখছে সাদনান কে।
এই লোক টা আধঘন্টা আগেও কত টা রাশভারী কণ্ঠে তাকে শাঁসালো। একটু তো শুনতে পারতো তার কথা।না শুনেই তো নিজের মতো করে মন্তব্য করে গিয়েছে।
সে কি ইচ্ছে করে নিচে গিয়েছে।
দাদি তো তাকে ডেকে ছিল ওনার নাকি সকাল সকাল পায়ে ব্যাথা করছিল।কাজের লোক সবাই কাজে ছিল বলে তাকে দিয়ে পা মালিশ করাতে।

-“সাবধানে থাকবে।”

সাদনান প্রিয়তার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে উঠলো। প্রিয়তা অভিমান হলেও তা প্রকাশ করে না। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো

-“কখন ফিরবেন?”

-“তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো।
তবে কখন ফিরতে পারবো সময় বলতে পারছি না।”

সাদনান প্রিয়তার পেট হতে কুর্তি সরিয়ে নিজের হাত দু’টো চেপে ধরে শক্ত করে সেখানে।
প্রিয়তার সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।নিজে কে সামলাতে সাদনান এর পাঞ্জাবি বুকের কাছের অংশ খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
সাদনান সহসা হাসলো।
সেই হাসি ঠোঁটে রেখেই বলল

-“সময় থাকলে অবশ্যই সুযোগ টা কাজে লাগাতাম।
এখন বেঁচে গেলে।”

সাদনান ছেড়ে দিলো প্রিয়তা কে। প্রিয়তাও সড়ে দাঁড়ায়।
সাদনান প্রিয়তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকিয়ে আলগোছে কুঁচকানো পাঞ্জাবি টা ঠিক ঠাক করে গম্ভীর মুখ করে বেড়িয়ে গেলো।

———–

তিন্নি মির্জা বাড়ি থেকে এসেই রান্না ঘরে চলে গেলো। আর কবির ফ্রেশ হতে। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ এই নির্বাচন এর জন্য অবশ্য কাল থেকে আবার খোলা। কালাম খাঁন অফিস চলে গিয়েছে মির্জা বাড়ি থেকে। নিজের কোম্পানি সেখানে এসব নির্বাচন নিয়ে থাকলে তো আর হবে না।এখন বাড়িতে দুই জন কাজের বুয়া আছে যারা এখন তিন্নি কে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। তিন্নি এই বাড়িতে এসছে পরে রান্না টা নিজেই করে।অবশ্য এটা কবিরের আবদার তার সাতাইশ বছর বয়স ধরে কাজের লোকের রান্না খেতে খেতে সে অতিষ্ঠ। যদিও মাঝে মধ্যে দুই বাপ ছেলে মিলে ছুটির দিনে নিজেরা রান্না করতো তবুও কেমন একটা খালি খালি লাগতো তৃপ্তি হতো না।
তিন্নি তরকারি গুলো রান্না করে ভাত বসিয়ে কাজের লোক কে বলে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।গা টা কেমন মেজমেজ করছে কাল সকালে এই বাড়ি থেকে শাওয়ার নিয়ে ওবাড়ি গিয়েছে আর এখন দুপুর হতে চলল।তবুও কাজ
এক্কেবারে সব কমপ্লিট করে যেতে কিন্তু এর মধ্যে কবির চার বার এসে এই একটু সময়ের মধ্যে নিচে ঘুরঘুর করে গিয়েছে। তিন্নি দেখেও না দেখার মতো থেকেছে। কবির নিজের লজ্জা সড়িয়ে তিন্নি কে ডাকতে পারে নি। কিন্তু তিন্নি খুব করে চাইছিল কবির তাকে ডাকুক অধিকার নিয়ে বলুক “তিন্নি এখুনি রুমে এসো” কিন্তু কবির তো এসব কিছু বলে নি তাই তিন্নি ইচ্ছে করে রুমে যায় নি।
তিন্নি রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়।
বুঝতে পারছে না ভেতরে যাবে কি না।যদি কবির ধমক দেয়?
ইশ কেন যে তখন এতো সব অধিকার খুঁজতে গেলো ও তো জানে কবির ওর জন্যই নিচে আসছিল।

-“দুই সেকেন্ড এর মধ্যে ভেতরে এসো।”

হঠাৎ কবির রুম থেকে বলে উঠলো।
তিন্নি চট করে রুমে ঢুকে গেলো।কবির সোফায় বসে ফোনে স্ক্রল করছে।
তিন্নি ভ্রু কুঁচকে নিলো।ওনি তো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে বোঝলেন কি করে আমি এসছে?

-“তুমি যেমন করে বুঝতে পারো।”

তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির কথা টা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো তিন্নির নিকট।
অতঃপর নাক মুখ কুঁচকে বলল

-“তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিতে যাও।”

তিন্নি নিজেও ঘামের গন্ধ পাচ্ছে তবে কবির এভাবে বলাতে একটু লজ্জা পেলো।
তাই কিছু না বলে তড়িঘড়ি করে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
কবির হাসলো।
এই মেয়ে তো কিছু না নিয়েই চলে গিয়েছে সেটা কি খেয়াল করেছে?
অবশ্য ভালোই হলো এই ফাঁকে একটু মজা করা যাবে।

কবির আয়েশ করে আবারও আগের স্থানে বসে গেলো।
নিশ্চিন্তে ফোনে স্ক্রল করতে লাগলো তার ঠিক সাত আট মিনিট এর মাথায় তিন্নির কণ্ঠ ভেসে এলো

-“আপনি একটু বাহিরে যান।”

-“কেন?”

কবির সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
তিন্নির ভেজা চুল আর গলার কিছু টা অংশ দৃশ্যমান। এতেই কবির এর হার্ট টিপটিপ শব্দ করতে লাগলো।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
অতঃপর আলগোছে এগিয়ে গেলো।ওয়ারড্রব এর দিকে।সেখান থেকে একটা শাড়ী আর তার সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এগিয়ে এলো তিন্নির নিকট।
তিন্নি নিজের হাত টা কনুই পর্যন্ত বেড় করে কাপড় হাতেই নিয়ে ভ্রুকুঁচকে নিলো।

-“কুর্তি দিন না।
শাড়ী কেন?”

-“যা দিছি পড়ো নয়তো যেভাবে আছো সেভাবেই এসে নিজের পছন্দ মতো ড্রেস নাও।
তবে হ্যাঁ আমি রুম থেকে কোথাও যাচ্ছি না।”

তিন্নি অসহায় মুখ করে ওয়াশ রুমের দরজা টা বন্ধ করে দিলো।কবির মুচকি হেঁসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো।
কয় দিন পর পরীক্ষা অনেক কাজ।
কবির কাজ করছে এক মনে। এদিকে তিন্নি কোনো রকম শাড়ী টা গায়ে পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো। ওয়াশ রুম কি শাড়ী পড়া সম্ভব? মোটেও না এমনিতেই হঠাৎ হঠাৎ পড়ে তার মধ্যে বারো হাত একটা শাড়ী চিকনা এই শরীর টায় সামলাতে বেশ কসরত করে হয়।
তিন্নি শাড়ী টা কোনো রকম ধরে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে কবির এক সামনে দাঁড়াল। মিনমিন করে অনুরোধের স্বরে বলল

-“প্লিজ এখন তো যান।”

কবির শুনলো তবে আমলে নিয়েছে বলে মনে হলো না। সে ল্যাপটপ কোলে হতে নামিয়ে সাইডে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো তিন্নির কাছে অতঃপর তিন্নির শরীরের রেখেই শাড়ীর আঁচল টা ঠিক করে দিলো আলগোছে।
তিন্নি তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিয়ে। সারা শরীর যেনো তার অবস হয়ে গেলো। যদিও কবিরের হাতের স্পর্শ ওর শরীর পড়ে নি তবুও কেমন একটা লাগছে ওর।কবির ধীরস্থিরে শাড়ী কুঁচি গুলো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে সে গুলো তিন্নির হাতে দিয়ে ইশারায় গুঁজে নিতে বলে।
তিন্নি আলতো হাতে কুঁচি গুলো গুঁজে নিলো।কবির এর মধ্যে গিয়ে আবার নিজের স্থানে বসে পড়ে।
তিন্নি শাড়ী টা ঠিক ঠাক করে মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে ব্যালকনিতে চলে এলো।

আর ঠিক তক্ষুনি রুম থেকে কবির বলল

-“শুনো।
আজ বিকেলে আমরা বেরবো।”

-“কোথায়?”

তিন্নি রুমে আসতে আসতে জিগ্যেস করে।
কবির ল্যাপটপ এর ডিসপ্লের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠলো।

-“গেলই দেখতে পাবে।”

————-

-“শুনলাম মাইশার বিয়ে কথা চলছে।”

-“হ্যাঁ,ঠিক শুনেছেন।

ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথায় জাফর মির্জা চওড়া হেঁসে জানালো।
ওয়াসিফ দেওয়ান নিজেও হাসলো জাফর মির্জা সাথে তাল মিলিয়ে বলল

-“আমার ছেলে কে তো দেখেছেন?”
কাল রাতেই ইতালি থেকে ফিরেছে।”

-“হুম। আগের চায় দেখতে কিন্তু অনেক টা বদলে গেছে।
আমি তো প্রথমে চিনতে পারছিলাম না।”

-“আমার একটা আবদার আছে।”

-“কি যে বলেন আপনি।
একবার শুধু বলে দেখুন আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সেই আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবো।”

-“আমি আপনার ছোট নাতনি কে আমার ছেলের জন্য চাইছি।”

জাফর মির্জা কথা টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো। কিন্তু বুঝতে পেরে মুখের হাসি আরও কয়েক গুণ বাড়লো।

#চলবে….

[ছোট ছোট করবা না😐 রাতে আবার এক পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here