আমার_তুমি #পর্ব_২৬[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ] #জান্নাত_সুলতানা

0
197

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৬[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

“দুই মিনিট এর মধ্যে ছাঁদে এসো”

মেসেজ টা পড়ে সারা আরও একদফা অবাক হলো।
মানে এটা কিভাবে সম্ভব?
এই আইডির কথা একমাত্র মাইশা জানে আর কেউ না কারণ আইডি টা মাইশা নিজে খুলে দিয়েছে।
সেখানে রাহানের এমন কথায় স্পষ্ট যে রাহান সারার আইডি এটা জানে।
তাহলে কি রাহান ভাই জেনে গিয়েছে?
কিন্তু কিভাবে? মাইশা আপু?

“কি হলো আসছো না কেন?”

সারার ভাবনার মাঝেই আবারও টুং করে মেসেজ এর শব্দ হলো।
সারা শোয়া থেকে উঠে বসলো।
মাইশা পাশেই সোফায় বসে আয়ানের সাথে কথা বলছে।
সারা পা টিপে টিপে রুম হতে বেড়িয়ে যেতে নিলেই মাইশা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে

-“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?”

সারা হাল্কা চমকালো।তবে নিজে কে সামলে মনে মনে একটা মিথ্যা সাজিয়ে আমতা আমতা করে জানালো

-“আপু পানি খেতে যাচ্ছি।”

মাইশা পাশে সেন্টার টেবিলে তাকালো সত্যি জগে পানি নেই।

-“তাড়াতাড়ি আসবি যা।”

মাইশার অনুমতি পেয়ে তৎক্ষনাৎ সারা মাথা নাড়িয়ে তড়িঘড়ি করে রুম হতে বেড়িয়ে এলো।
রুম থেকে বেড়িয়ে লম্বা একটা শ্বাস টানে সারা।ভাগ্য ভালো জগে আজ পানি রাখে নি।
সারা চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
ছাঁদে আসতেই দেখা মিলে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অবয়ব এর।
রেলিং এর উপর এক পা ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সারা আলগোছে এগিয়ে এলো।
কেশে রাহানের দৃষ্টি আকর্ষণ এর চেষ্টা করে।
রাহান ফিরলো চাঁদের আবছা আলোয় চকচক করতে থাকা সারার দিকে।
হ্যাঁ চকচকই তো করছে। এই যে রাহান এর নিকট ভীষণ মায়াবী লাগছে।
রাহান এগিয়ে এলো সারা ছোট হাত টা নিজের দানবীয় হাত টার মাঝে মুঠোয় পুরো নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
চাঁদটার থালার মতো আকার। রাহান চাঁদ টা দিকে তাকিয়ে বলল

-“আমার জীবনেও একটা ব্যক্তিগত চাঁদ আছে।”

সারা’র বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কে আছে রাহান ভাইয়ের জীবনে?
তবে কি আমি আসার আগে ওনার জীবনে অন্য কেউ এসে পড়েছে?
কথা টা ভাবতেই সারা’র চোখ চিকচিক করে উঠলো।বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।
বুকে টিপটিপ শব্দ হচ্ছে।
আচ্ছা এটা জানাতেই কি আজ রাহান ভাই তাকে এখানে ডেকেছে?

-“কিছু বলবেন?”

মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে সারা।
অর অকারণেই কেন জানি কান্না পাচ্ছে।রাহান সারা দিকে তাকালো।
সম্পূর্ণ সারা দিকে ফিরে ওর মুখ টা রাহান ওর নিজের দুই হাতের আঁজলে নিলো।
সারা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল। চোখে টলমল পানি স্পষ্ট। রাহান সহসা হাসলো। এই মেয়ে নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাবছে।
রাহান সারা’র চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে শুধালো

-“আমার চাঁদের চোখে পানি?
একদম শোভনীয় নয়।”

-“মানে?”

সারা ঝটফট রাহান এর হাত গালের উপর থেকে হতে সরানোর চেষ্টা করতে করতে থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করে।
রাহান ছেড়ে দিলো সারা কে।সারা সামান্য পিছিয়ে গেলো।
রাহান নিজের পরিহিত প্যান্ট এর পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

-“রাত অনেক হয়েছে রুমে যাও।
আরও একটা কথা আমার মনে শুধু দুই জন নারী আছে।
একজন আমার মা দ্বিতীয় জন না হয় নাই বললাম।
তবে এটুকু জেনে রেখে আমরা চোখ সেই নারী ছাড়া অন্য কোনো নারী এই চোখ দেখে না।”

সারা স্তব্ধ। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপছে।

-“আর হ্যাঁ কাল রুম থেকে বেশি বেরোবে না।”

-“কেন?”

রাহানের কথা শুনে সারা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।
রাহান চরম বিরক্ত হলো।
এই মেয়ে সাইজে ছোট হলে কি হবে মনে কৌতুহলে ভরা।শুধু প্রশ্ন করবে পেঁচাবে। বলেছে যখন নিশ্চয়ই কারণ তো আছেই।
তবে বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল

-“আগে এটা চেয়ারম্যান বাড়ি ছিল।
বাট এখন এটা এমপি বাড়ি।”

-“তাতে কি হয়েছে?”

সারা আগের মতো আর নার্ভাস না।
কি সুন্দর অবলীলায় প্রশ্ন করেই যাচ্ছে এককের পর এক।
রাহান হাসলো আবারও।বাচ্চা একটা মেয়ে কিন্তু কি সুন্দর নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছে।

-“সেটা না হয় কাল সকালে দেখে নিবে।”

সারা বুঝতে পারে না।
আরও কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই রাহান গম্ভীর কণ্ঠে হুকুম এর স্বরে বলল

-“আমি যেতে বলেছি।”

ব্যাস এটাই যথেষ্ট সারার জন্য। মুখ আধার দেখা মিলে।
এই লোক টা এমন কেন?
একটু ভালো করে কথা বলে না তার সাথে। সব সময় ত্যাড়া কথা বলে।
সারা অভিমান হলো নিজে ডেকে আনলো আর এখন কেমন করছে।
কথা বলবে না লোকটার সাথে।
সারা ছাঁদের দরজা দিকে পা বাড়াতেই রাহান পেছনে থেকে ওর হাত টেনে ধরে।
সারা অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই রাহান মিহি কণ্ঠে বলে উঠলো

-“অভিমান করো না মেয়ে। বুকে তীব্র যন্ত্রণা হবে।
তবে হয়তো সারা রাত ছটফট করতে করতে কেটে যাবে।”

সারা অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইলো রাহানের দিকে।
রাহান হাত ছেড়ে দিলো।

দুই পা এগিয়ে এলো।ঠিক সারা’র বরাবর দাঁড়াল। চোখে চোখ রেখে বলল

-“আমার রোজ ঘুমের ঔষধ এর প্রয়োজন হয়।
যখন বাড়িতে থাকি তখন ভীষণ কষ্ট হয়। তাই ভাবছি পুরো ফার্মেসি টা আমার বাসায় নিয়ে যাব।”

সারা এবার হাসলো।
সারা কিছু আন্দাজ করতে পারছে হয়তো।
তাই তো নিজেও রাহানের মতো ফিসফিস করে বলল

-“আপনি ব্যবস্থা করুন ফার্মেসী আপনার বাড়ি যেতে আগ্রহী।”

কথা টা শেষ করে সারা আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না।
চট জলদি পা চালিয়ে নিচে চলে গেলো।
রাহান সে দিকে তাকিয়ে নিজের পাম হাত দ্বারা মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে মুচকি হেসে বিরবির করে বলল

-“ভালোবাসার প্রথম প্রণয় হলো তবে।”

———

সাদনান সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ কে পাশে পায় না। চোখ তার ভীষণ জ্বলছে। কয় টা বাজে তখন সকাল আটটার বেশি। কতক্ষণ ঘুমালো? এই তো হবে হয়তো ঘন্টা দুই।ঘুমিয়েছে তো একদম শেষ রাতে ভালোবাসার মূহুর্ত শেষ করে সাওয়ার নিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত তো প্রায় শেষ হলো।
ঘুমিয়ে ছিল তো বউ কে বুকে নিয়ে। তবে উঠে গেলো কখন আর সে টেরও পেলো না।
সাদনান উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে মিনিট দশ এক পর বেরিয়ে এলো।কিন্তু বউ তার রুমে আসে নি।সাদনান টাওয়াল টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো আর ঠিক তক্ষুনি দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।সাদনান বুঝতে পারে বউ তার আসে নি বউ আসলে দরজায় নক করতো না তাই গম্ভীর কণ্ঠে অনুমতি দেয় আসার জন্য।
একজন বুয়া এসছে হাতে ধুঁয়া উঠা কফির মগ।সে টা সেন্টার টেবিলে রেখে জানালো নিচে অনেক মানুষ এসছে তাকে ডাকছে সেখানে। তিনি কথা শেষ
আবার চলে গেলো সাদনান কফি টা হাতে নিলো।সেটায় একবার চুমুক দিয়ে নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
সাদনানের কাছে মনে হলো এটা কফি কম শরবত বেশি। তাই আর খেলো না রেখে দিলো সেখানে। অতঃপর নিজেকে পরিপাটি করে ফোন টা হাতে নিয়ে রুম হতে বেরোতেই দেখা মিলে রাহানের। রাহান সাদনান কে ডাকতেই আসছিল। রাহান সহ সাদনান দুইজনে টুকটাক কথা বলতে বলতে নিচে চলে আসে। সাদনান নিচে আসতেই ওর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। গেস্ট দের নিচে একটা রুম আছে সেখানে শুধু রাজনীতির বিষয়ে কোনো সমালোচনা হলে সেখানে হয়। আর তার ঠিক পাশের রুম টায় আম্বিয়া মির্জা থাকে প্রিয়তা সেই রুম হতে বেড়িয়ে আসছে আর একটা ছেলে করিডরে দাঁড়িয়ে ফোন কথা বলছিল প্রিয়তা কে দেখে ছেলে টা ফোন কানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ছেলে টা মোটামুটি মির্জা বাড়ির সদস্য নিয়ে অবগত। কিন্তু এটা কে হতে পারে বুঝতে পারছে না।
ছেলে টার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা চলে গেলো। ও না দেখেছে পেছন দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে কে আর না দেখেছে করিডরের ওপাশে থাকা সাদনান রাহান কে। ছেলে টা সাদনান কে দেখতে পেয়ে ফোন টা কেটে এগিয়ে আসে রাহান বুঝতে পারে সাদনান রেগে গিয়েছে।
তাই ছেলে টা ওদের সামনে আসার আগে ফিসফিস করে বলল

-“ঝামেলা করিস না।
এমনিতেই হাওয়া বেশ গরম আর বিয়ের খবর টা পাঁচকান হলে সমস্যা হবে।”

সাদনান রাহানের কথা শুনে বাঁকা হাসলো।রাহান বুঝতে পারে এই হাসির মানে।
নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু তার বন্ধুর মাথায় চলছে।
ওদের কথার মাঝেই ছেলে টা এগিয়ে এলো মুচকি হেসে হাত টা এগিয়ে দিয়ে বলল

-“আমি ওয়াসিফ দেওয়ান এর ছেলে ওয়াজিদ দেওয়ান।
আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। কাল রাতে ফিরেছি।”

সাদনান মুচকি হেসে নিজের হাত এগিয়ে হাত মিলায়।
সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন পুরুষ টা আবারও বলে উঠে

-“এনিওয়ে।
Congratulations new এমপি মির্জা সাদনান শাহরিয়া।”

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here