আমার_তুমি #পর্ব_১২

0
224

#আমার_তুমি
#পর্ব_১২

প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে পাশে তাকিয়ে থমকে গেলো। আবার তড়িঘড়ি করে চোখ নামিয়ে মাথা নুইয়ে নেয়।
তার ঠিক ডান পাশে সাদনান বসা খুব নরমাল সাজ শুধু সাদা একটা পাঞ্জাবি পরিহিত।
প্রিয়তার ছোট মন তখন নানা প্রশ্ন আওড়াতে ব্যস্ত।
আচ্ছা তিনি কি বিয়ে করতে এসছে?
ওনার সাথে কি তবে আমার বিয়ে?

-“মা বলো কবুল।”

কাজির ডাকে সম্মতি ফিরে প্রিয়তার একবার মিতা সওদাগর একবার ভাইয়ের দিকে সবার দিকে তাকাতেই সবাই ইশারায় “কবুল” বলতে বলে।
প্রিয়তা পেছেনে দাঁড়িয়ে থাকা সারা হাত টা শক্ত করে ধরে পর পর তিনবার কবুল বলে দেয়।
সাদনানও বলে তবে খুব স্বাভাবিক ভাবে।
কোনো তারাহুরো নয় আবার দেরীও নয়।
কিন্তু রাহান পেছন থেকে ঠিক খুঁচা মেরেছে।
রাহাত আর আয়নার বিয়ে প্রথম হয়েছে। আর প্রিয়তা দেরী করছিল বলে আয়ান আনতে গিয়ে ছিল।
বিয়ে শেষ করে সব ঝামেলা নিয়ম কানুন পালন করে প্রিয়তা আর আয়না কে বিদায় দেওয়া হলো।
কিন্তু সাদনান সে গাড়ি দিয়ে যাবে না।
সে তার দলের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ছেলে কে বাইক নিয়ে আসতে বলে।
এতে আর কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।
আয়না আর রাহাত কে নিয়ে তিন টা গাড়ি সহ সব আত্মীয় স্বজনরা চলে যায়।
শুধু রাহান আর চার পাঁচ জন ছেলে রেখে দিয়েছে।
ওহ হ্যাঁ সাদনান সারা কেও সাথে রেখে দিয়েছে।
অতঃপর সারা ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে রাহানের পেছন উঠে বসে। সারা বেশ অনেক টা দূরত্ব রেখেই বসেছে বাইকে।
রাহানের মুখ হুতুমপেঁচার মতো করে রেখেছে।
ইস তারও ইচ্ছে করে সাদনানের মতো বিয়ে করে নিতে আর তারই বোন কে।
কিন্তু সাদনান জানতে পারলে কি করে আল্লাহ মালুম।
রাহান আঁড়চোখে একবার বাইকে মিররে দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে সারা কে বলে উঠে

-“আমার কোনো ছুঁয়াছুঁয়ি রোগ নেই।
ধরে বসো নয়তো ধপাস করে পরলে তোমার ভাই আমার সব হাড্ডি ভেঙ্গে মাংসতে পরিণত করবে।”

সারা ফিক করে হেসে ফেলে রাহানের কথা শুনে।
রাহান চোখ বন্ধ করে আবার ঝটপট চোখ খোলে ফেলে।
এই মেয়ে এভাবে হাসে কেন?
সে কি জানে পাশে বসা সুদর্শন যুবক টার এতে বুকের বা পাশে তীব্র যন্ত্রণা হয়?

-“হেসো না পেত্নী লাগে দেখতে।”

ব্যস মূহুর্তের মধ্যে সারার মুখ মলিন হয়।
সত্যি কি সে হাসলে বাজে দেখায়?
কিন্তু মনের কথা মনে রেখেই
মুখে ভেংচি কেটে বলে উঠে

-“হ্যাঁ, আপনার থেকে ভালো দেখায়।”

এবার রাহান নিজেও হাসে।জবাব দেয় না আর।
সে খুব করে বুঝে এই মেয়ে তাকে তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে যেমন টা সে নিজে এই মেয়ে কে বাসে।
আগের দুই টা ছেলে বাইক চালাচ্ছে।
আর মাঝে রাহান আর সবার পেছনে সাদনান প্রিয়তা।
প্রিয়তা আগের ন্যায় মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
সে রেগে আছে না খুশি না-কি অভিমান সাদনান বুঝতে পারলো না।
আর বেশি বুঝেতেও চাইলো না।
সবাই ওদের থেকে বেশ অনেক টা সামনে হওয়াতে।
সাদনান প্রিয়তা কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে

-“বিয়ে করেছি কি এভাবে আগের মতো মাঝে ভারত বাংলাদেশ বর্ডার দিয়ে রাখার জন্য?
চুপ চাপ শক্ত করে জড়িয়ে ধরো মেয়ে।
নয়তো ধাক্কা দিয়ে এখানেই ফেলে রেখে চলে যাবে।”

প্রিয়তা সাদনানের এরূপ কথায় একটু ভয় পেলো।
সত্যি ফেলে দিতে পারে বিশ্বাস নেই।
তাই নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া দিয়ে সাদনান কে শক্ত করে আলিঙ্গন করতে চাইলো।
তবে সাদনানের এমন লম্বা চওড়া পেটানো বলিষ্ঠ শরীরে প্রিয়তার হাতের বাঁধনে কিছুতেই আসে না।
তাই যতটুকু সম্ভব ততটাই আঁকড়ে ধরে।
সাদনান মুচকি হাসে।
বউ তার বড্ড ছোট।
আর এখন এটা কে লালন পালন করে বড় করতে হবে।
কিন্তু ভালোবাসা এক ফোঁটাও এদিক সে দিক হবে না। এটা আজ রাত থেকেই শুরু হবে।
সওদাগর বাড়ি পরে আগে মির্জা বাড়ি মির্জা বাড়ি থেকে সওদাগর বাড়ি হেঁটে গেলে লাগবে হয়তো দশ বারো মিনিট আর গাড়ি বা বাইকে গেলে লাগবে তিন চার মিনিট কিন্তু আজ যেনো রাস্তা ফুরচ্ছে না।
আর সাদনান সে তো সাইকেল এর গতিতে বাইক চালাচ্ছে।
প্রিয়তা ভালো লাগছে তবে মনে মনে বেশ ভয়ে আছে।
আগে যাওয়া আসা আর আজকের মাঝে ভীষণ পার্থক্য।
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই তিন টা বাইক এসে মির্জা বাড়ির গেইট -এ থামে আর ভেতর হতে গেইট খোলে দেয় দুই জন দারোয়ান।
আগে সাদনান প্রবেশ করে তার পর রাহান আর দুই টা ছেলে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

———–

আয়না, প্রিয়তা দুই বোন কেই বসিয়ে রাখা হয়েছে লিভিং রুমে।
আর চার দিক হতে মানুষ জন তাদের ভিড় জমিয়ে দেখতে এসছে।
বিয়ের দিন বউ দেখতে যাওয়া টা যেমন লোকের ভালো লাগে ঠিক তেমন যেই বউ টা কে দেখতে যাওয়া হয় সেই নতুন বউ জানে এই বিষয় টা কত টা অস্বস্তিকর।
তাই তো সালেহা বেগম আর আম্বিয়া মির্জা সারা, আর মাইশা কে বলে যাতে দুই নাত বউ কে রুমে নিয়ে যেতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা তখন সাত টার কোঠা ছাড়িয়েছ।
প্রিয়তা এসছে আধঘণ্টা হবে।
সাদনানের মা বড় ছেলে বউ কে আগেই বরণ করে বাড়ি তে তুলেছে।
তার পর প্রিয়তা সাদনান কে।
কিন্তু বরণ শেষ সাদনান এক মিনিটও অপেক্ষা করে নি।
মাকে কিছু ইশারা করে রুমে চলে গিয়েছে। তার পর ফ্রেশ হয়ে একটু আগে বেরিয়ে গেছে বাড়ি হতে।
তাই সালেহা বেগম শাশুড়ী কে বুঝিয়ে টুঝিয়ে ছেলে বউদের রুমে পাঠিয়েছে।
তিনি ছেলের ইশারা বুঝতে পেরেছে।
ছেলের বউ তার ভীষণ ছোট। আর এই বয়সে বিয়ে তার উপর এতো মানুষের ভীড়ে মেয়ে টার অস্বস্তি হওয়া টাই স্বাভাবিক।

—————

সারা, মাইশা দুজনে মিলে দুই বোন কে দুই টা শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে।
বিয়ের সাজ একদম ধুয়ে মুছে ছাফ করে দিয়েছে।
এ-র মধ্যে প্রিয়তা একবারও কারোর সঙ্গে কথা বলে নি।
সারা দুই এক বার কিছু বলতে গিয়েও বলে নি।
কি দরকার নিজের সাফাই গাওয়ার।
তার ভাই সব ঝামেলা বাধিয়েছে তার ভাইয়ে খুলে দিবে সে নিশ্চিত।
আর একবার যদি সাদনান প্রিয়তার রাগ অভিমান যাই হোক ভেঙে দিতে পারে তবে নিশ্চিত প্রিয়তা সারা কে বাসর ঘরের কাহিনি বলতেও হয়তো দ্বিধা করবে না।
না করবে হয়তো লজ্জাও পাবে।
সারার ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার চুল বেধে দিচ্ছিল।
কিন্তু দরজায় কড়া নড়ার শব্দে ভাবনার সুতু ছিঁড়ে।
মাইশা গিয়ে দরজা খোলতেই দুইজন কাজের লোক ঘরে প্রবেশ করে হাতে তাদের থালা ভর্তি খাবার।
সালেহা বেগম পাঠিয়েছে জানালো তারা।
বাড়িতে তো খেতে পারে নি আর আজ প্রথম এই বাড়িতে এক সাথে বসে সবার সমানে বসে খেতে অস্বস্তি হবে সে সব ভেবে তিনি খাবার পাঠিয়েছে। যদিও শফিক সওদাগর,আর আজ্জম মির্জা বন্ধু হাওয়ার সুবাধে আগে অনেক বার এই বাড়িতে ভিন্ন সময় ঈদ,বা নানা অনুষ্ঠানে এসছে আর এক সাথে বসে খাবার খেয়েছে। তবে আজ ভিন্ন আর সাথে আছে বাড়ি ভর্তি মেহমান।
সারা আয়নার খাবার থালাসহ ওকে রাহাতের রুমে দিয়ে আসে।
আর মাইশা প্রিয়তা কে সাদনানের রুমে।
ওরা এতোক্ষণ মাইশার রুমে ছিল।

———–

-“এই কাজ টা বোকামি হয়ে গেলো।”

-“ভালোবাসি আমি ওকে।
আর আপনার এতো আপত্তি থাকলে নমিনেশন দিতে হবে না আমাকে।”

ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথা শুনে সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।
ওয়াসিফ দেওয়ান আবারও বোঝানোর স্বরে বলে উঠে

-“আহ,রেগে যাচ্ছো কেন?
আমি বলতে চাইছি বিপক্ষ দলের লোকেরা এটা জানতে পারলে ঝামেলা করবে।
তাই বিয়ে টা গোপন রাখাই মঙ্গল।”

-“তাই হবে।আর এমনিতেও আজ বিয়ে শুধু একটাই হয়েছে বলে জানে সবাই।
আমাদের বিয়ের কথা দুই পরিবার আর খুব কাছের কয়েকজন তার মধ্যে আপনি একজন।”

#চলবে……..

[কথা না রাখতে পারার জন্য দুঃখিত। সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে রাতে বোনাস পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।এখন এটা পড়ো আপাতত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here