#আমার_তুমি
#বোনাস_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা
সাদনান বাইক চালাচ্ছে। রাহান ওর পেছনে বসে আছে।
রাত এখন দশ টা ছুঁই ছুঁই করছে।
এই দশ মিনিট হবে তারা ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে।
সাদনান কে বেশ ফুরফুরে লাগছে।
আগের মতো আজ অতো টা গম্ভীর নয়।
নিজে থেকে এটা সে টা জিজ্ঞেস করছে রাহান কে।
এক পর্যায় হঠাৎ করে অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে সাদনান
-“তুই বিয়ে করবি না?”
রাহান চমকে উঠে।
কি বলবে?
নিজে তো ঠিক সতেরো ছুঁই ছুঁই একটা বাচ্চা কে বিয়ে ঠিক করে নিয়েছে।
আর এখন যদি আমি বলি তোর বোন কে করবো?
তখন নিশ্চয়ই উষ্ঠা দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দেবে।
রাহানের ভাবনার মাঝেই সাদনান আবারও জিজ্ঞেস করে উঠে
-“কি হলো বল?
না-কি কাউ কে পছন্দ করিস?”
-“হ্যাঁ, না মানে,,,,
-“হ্যাঁ, না কি তোলাচ্ছি?
এমন কিছু হলে বলে ফেল।”
-“হ্যাঁ আছে।”
-“জানা জাবে?”
-“না মানে।
আমি তোকে সময় করে দেখিয়ে দেবো ওকে।”
রাহানের কথায় সাদনান বাঁকা হেসে মনে মনে বলে উঠে
-“তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না? তবে ভুল এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া এক দেখায় মানুষের চোখ দেখে বলে দিতে পারে কে কেমন মানুষ সেখানে তুই আমার বন্ধু। রোজ রোজ তোকে দেখি আমি। ”
সাদনানের ভাবনার মাঝেই রাহান বলে উঠে
-“আমি বাড়ি চলে যাই আজ।”
-“না।
কাল সকালে একটা মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে।
আর তুই বাড়ি গেলে কাল দশটার আগে ঘুম থেকে উঠবি না আমি ভালো করে জানি।”
কথা টা বলেই সাদনান বাইক গ্যারেজে রাখার জন্য দারোয়ানের হাতে চাবি দিয়ে রাহান কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।
সালেহা বেগম ওদের খাবার দেয়।
সাদনান মায়ের রুম হতে ফ্রেশ হয়ে আসে।
আর রাহান রান্না ঘরে বেসিনে।
অতঃপর দুই জনে খেতে বসে পড়ে।
সাদনান তার মধ্যে মায়ের সাথে টুকটাক আলাপ সেড়ে নেয়।
তার পর মাকে বলে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
রাত তো অনেক হলো সাদনানের জোড়া জুড়িতে সালেহা বেগম রুমে চলে যায়।
আর রান্না ঘরে দুই জন কাজের লোক আছে।
ওদের খাবার শেষ সাদনান হাত ধুয়ে টিসু দিয়ে হাত মুছে নেয়।
রাহানও সাদনান কে অনুসরণ করে।
-“গেস্ট রুমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
সেখানে হয়তো মহিলা আছে।
তুই বরং আমার সাথে আয়।”
সাদনান কথা টা বলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
আর রাহান বিস্ময় চাহনি দিয়ে বলে উঠে
-“তুই কি তোর বাসর ঘরে আমাকে পাহাড়া দিতে,,,
-“চুপ চাপ আমার সাথে আয়।”
সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
রাহান মুখে হাত দিয়ে উপর সাদনানের পেছন পেছন যেতে লাগলো।
সাদনান সোজা সারার রুমের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে।
একটু পর এসে সারা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে।
বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে
-“কি হয়েছে ভাই?”
-“তুই মাইশার রুমে যা।
আজ রাহান থাকবে এখানে।”
সারা এতোক্ষণ চোখ কচলাচ্ছিল।
কিন্তু সাদনানের কথায় ঝট করে চোখ খোলে সাদনানের দিকে তাকিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সারা চোখ ঘুরিয়ে মিনমিন করে বলে উঠে
-“আচ্ছা।”
সারা ফের রুমে গিয়ে ওর ওর চাদর টা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে।
সাদনান রাহান কে রুমে যেতে বলে।
সারা ততক্ষণে অনেক টা এগিয়ে গিয়েছে।
রাহান এতোক্ষণ সারা দিকে তাকিয়ে ছিল।
এই মেয়ে তাকে না মারা অব্দি শান্তি হবে না না-কি?
সাদনান ওকে রুমে যেতে বলেই নিজেও রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
কিন্তু রাহান পেছন থেকে দুষ্ট হেসে বলে উঠে
-“ছোট মানুষ ভাই।
একটু,,,,
সাদনান পেছন ফিরতেই রাহান তড়িঘড়ি করে রুমে ঢোকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আর সাদনান মুচকি হাসে।
সব সময় খুঁচা না মারলে হয়তো বেডা রাহানের পেটের ভাত হজম হয় না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সাদনান রুমে আসতে থমকে গেলো।
বউ তার এখনো ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় গাপটি মেরে বসে আছে। সারা ঘর বিভিন্ন রকমের ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
রাত কয় টা বাজে?
হয়তো এগারো টার কোঠা ছাড়িয়েছ।
দরজা খোলার শব্দে প্রিয়তা একটু নড়েচড়ে বসে।
ওর ঘুম চলে আসছিল কিন্তু ওকে মাইশা রুমে দিয়ে যাওয়ার পর আম্বিয়া মির্জা পইপই করে বলে দিয়ে গিয়েছে যেনো সে না ঘুমায়।
ছোট বলে কি হয়েছে।
স্বামীর জন্য বাসর ঘরে বসে অপেক্ষা করতে হয়।
আর সেই কথা ভেবেই বসে বসে ঝিমাচ্ছিল প্রিয়তা।
তবে সাদনান কে দেখে চট করে উঠে এগিয়ে আসে।
অতঃপর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গিয়ে শাড়ীতে পা বেঁধে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। অল্পের জন্যে সাদনানের উপর পরে নি।
আর সাদনান ফিক করে হেসে ফেলে।
কিন্তু প্রিয়তা বেশ ব্যথা পেয়েছে।
সে দিকে তার খেয়াল নেই সে তো সামনে দাঁড়ানো গাঢ় নীল সার্ট পড়া সুদর্শন পুরুষ কে দেখতে ব্যস্ত।
হাসলে কি সুন্দর লাগে ওনাকে।কিন্তু এই গোমড়া মুখু সাদনান ভাই তো ভুলেও হাসে না সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকে।
-“এই মেয়ে উঠো।
নিজে কে সামলাতে পারে না।
আর সে না-কি নেবে মির্জা সাদনান শাহরিয়া সামলানোর দায়িত্ব?”
সাদনানের কথা প্রিয়তা কিছু বলে না।
মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়ায়।
সে তো এই লোকের সাথে কথাই বলবে না আজ।
কত কষ্ট পেয়েছিল কোনো ধারণা আছে ওনার?
একবার বলে দিলে কি এমন হতো?
আচ্ছা ওনি আমায় বিয়ে কেন করেছে?
-“এখনি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তা চোখ গোল গোল করে তাকায়।
মানে মনের কথ শুনে ফেলেছে নাকি?
নয়তো এই কথার মানে কি?
-“মানে?”
-“বোঝাচ্ছি।”
আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে প্রিয়তা।
যা দেখে সাদনান আরও একটু এগিয়ে আসে সার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বলে।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে গিয়ে বিছানার সাথে লেগে ধপাস করে আবারও পরে যায়।
ও সাদনান কি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে।
অনেক কথা বলেছে।
স্বপ্ন অনেক বার সাদনানের চাপদাড়ি ভর্তি গালে চুমু খেয়েছে।
তবে আর কিছু ভাবে নি।
সাদনান প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই ওর উপর উঠে বসে দুই হাত চেপে ধরে বিছানার সাথে।
সার্ট এর বোতাম খুলে ফেলার কারণে গলা হতে পেট পর্যন্ত উন্মুক্ত।
প্রিয়তা কতক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে দেখে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান তার দিকেই কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
যেখানে আছে শুধু ভালোবাসার মানুষ টাকে নিজের মতো করে আপন করে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করা।
সাদনান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা একটা ঢোক গিলে দৃষ্টি ঘুরায় এলোমেলো।
আজ তার ভালোবাসার মানুষটা তারই স্বামী ভাবতে খুশিতে চোখে অশ্রু হানা দেওয়ার জোগাড়।
তবে নিজে কে সামলে নিলো ছোট প্রিয়তা।
ধরে আসা গলায় আবার বলে উঠে
-“কি করছেন সাদনান ভ,,,
-“হুশ।
কোনো কথা না।
আজ আমার পালা কম জ্বালাও নি আমাকে।
সব সময় ধৈর্য্য ধরে থেকেছি।
তবে আজ আর কোনো কথা না।
আজ এই মির্জা সাদনান শাহরিয়া সময়।”
প্রিয়তার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই সাদনান ফিসফিস করে বলে উঠে।
কথা শেষ করে সাদনান প্রিয়তার ঘাড়ে হাল্কা করে কামড়ে ধরে।
প্রিয়তা ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে।
সাদনান সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় থেকে মুখ তুলে নিজের ওষ্ঠ দিয়ে প্রিয়তার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাদনান চোখ বন্ধ করেই তার ছোট জানের ভালোবাসায় মত্ত।
স্বামীর এমন এলোমেলো স্পর্শে ছোট প্রিয়তা সর্বাঙ্গে জুড়ে অন্য রকম ভালো লাগার সঞ্চারণ হলো।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদনানের বলিষ্ঠ দেহখানা। কিন্তু হাতের নাগালে আসে না সব টা। শারীরিক
স্পর্শ গুলো তখনি সুখের হয় যখন স্পর্শ গুলো ভালোবাসার মানুষটার হয়।
প্রিয়তার দশাও তাই।
নিজেও সাদনানের সঙ্গ দিলো।
সাদনান যেনো আরও উন্মাদ হলো।
কিন্তু তার বউ যে বড্ড ছোট সে দিকে তার নজর রইলো।
কিন্তু প্রিয়তার পাগলামি নিজের ভালোবাসা কোনো টার কাছেই আর পেরে না উঠে ডুবে গেলো ছোট প্রিয়তার মাঝে।
রাত তখন প্রায় তিন টা।
সাদনান তার ছোট চড়ুই জান কে বুকে আগলে শুয়ে আছে।
প্রিয়তা এতোক্ষণ ব্যথায় ছটফট করছিল।
কিন্তু একটা চিপস খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার পর একটু ঘুমিয়েছে।
সাদনান তখনো সজাগ।
একটু আগে শাওয়ার নেওয়ার ফলে দুজনের শরীর বেশ ঠান্ডা।
সাথে প্রিয়তার লম্বা চুল গুলো হালকা ভেজা।
সাদনান সব করিয়ে দিয়েছে বউ কে গোসল করা থেকে শুরু করে কাপড় ধুয়ে ব্যালকনিতে দেওয়া ব্যথার পিলও দিয়েছে।
সাদনান প্রিয়তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মাথার তালুতে একটা চুমু খেয়ে বিরবির করে বলে উঠে
-“সরি।
আমি চাই নি।
কিন্তু তুমি আমাকে পাগল করে দিলে আমার ছোট জান।
কবে বড় হবে তুমি?
আমি তো তোমাকে বড়ও হতে দিলাম না। ”
#চলবে…..