প্রিয়_রাগান্বিতা🩷 #লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷 পর্ব-১১

0
99

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১১
________________
পাত্রপক্ষের সামনে শাড়ি গহনাগাটি পড়ে বসে আছে রাগান্বিতা। চুপচাপ আর লাজুক লাজুক ভাবটা মুখে থাকলেও ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রকমের রেগে আছে রাগান্বিতা। তবে সে বুঝতে পেরেছে কালকে রাগের চোটে করা পাগলামিটা আর বাবাকে প্রেমপত্রখানা দেখানোর জন্যই আজ এমনটা হয়েছে। রাগান্বিতা চুপটি করে বসে আছে, তাকে দেখতে আসার মতো তেমন কিছু নেই সবাই জানে তালুকদার বাড়ির দুই রূপবতী কন্যার কথা। তারা তো এসেছে সোজা পাকাকথা বলার জন্য খুব শীঘ্রই বিয়ে পড়িয়ে তারা তাদের বউমাকে ঘরে উঠাতে চাইছেন। পাত্রের নাম মাহাদ। পড়াশুনায় বিএ পাস বর্তমানে বাবার বিশাল ব্যবসা সামলায়। দেখতে শুনতে মোটামুটি। মাহাদের বাবা কাদের ব্যাপারী টেবিলের ওপর থাকা মিষ্টির বাটি থেকে একটা মিষ্টি মুখে পুড়ে বললো,
“তালুকদার সাহেব তাইলে সামনের একখান ভালো দিন দেইখাই রাগান্বিতা আর আমার পোলা মাহাদের চাইরহাত এক কইরা দেই।”

রাগান্বিতার বাবা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে।”

রাগান্বিতার বাবার কথা শুনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ উচ্চারণ করলো মাহাদের বাবা। পকেট থেকে একটা সুন্দর সোনার আংটি বের করে পড়িয়ে দিল রাগান্বিতার হাতে। রাগান্বিতা নীরবে হজম করে নিলো পুরো বিষয়টা।
—–

প্রকৃতিতে বিকেলের লগ্ন চলছিল। বর্ষণ হচ্ছিল সারাগ্রাম জুড়ে। রাগান্বিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ বর্ষণের খানিক ফোঁটা ফোঁটা এসে লাগছে তার মুখে শরীরও ভিজাচ্ছে অল্পস্বল্প। রাগান্বিতার মন ভালো নেই। তার বিয়ে হতে চলেছে সাতদিনের মধ্যে এত দ্রুত সবটা হয়ে যাবে এ যেন কল্পনাও করতে পারে নি রাগান্বিতা। রাগান্বিতার মন খারাপটা ঠিক কোন জায়গায় তাই বুঝচ্ছে না বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এটার জন্য দুঃখ হচ্ছে নাকি অন্যকোনো কারণ এটাই ধরতে পারছে না সে। তবে তার জানামতে পরিবারকে ছেড়ে যেতে হবে এই জন্য খারাপ লাগতে পারে এছাড়া আর তো কোনো কারণ দেখছে না। সাইকেলের বেল বাজলো রাগান্বিতা চমকে উঠলো তবে ভাবলো না চরম রাগ হচ্ছে। এই চিঠির জন্যই আজ তার এভাবে বিয়ে হতে চলেছে। রাগান্বিতার ভাবনার মাঝেই ওর মাথায় হাত বুলালো দাদিমা। রাগান্বিতা পাশ ফিরে তাকালো বললো,
“আচ্ছা দাদিমা বাবা কি এভাবে হুট করে আমার বিয়ে ঠিক করে কাজটা ঠিক করলো। আমার তো সামনে এসএসসি এক্সাম ছিল বাবার তো স্বপ্ন ছিল অনেক আমায় নিয়ে। তাহলে এমনটা কেন করলো?”

দাদিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“ভয়ে!’

দাদিমার কথা শুনে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো রাগান্বিতা,
“ভয়ে! কিসের ভয়ে?”
“ঠিক ভয়ও কওন যাইবো না দুশ্চিন্তাও হইতে পারে।”

দাদিমার কথা শুনে আর একটু অবাক হলো রাগান্বিতা। বললো,
“আমায় একটু বুঝিয়ে বলবে কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে বাবা?”
“মাইয়া মানুষদের বেশি স্বপ্ন দেখতে নাই। বিয়া কইরা স্বামী সংসার এসব নিয়াই থাকতে হয়। বিয়ার সময় বিয়া না করলে পরে ঝামেলা হয় তুমি বুঝবা না।”

রাগান্বিতা কি বলবে বুঝচ্ছে না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে আচমকাই বলে উঠল,
“বুবু কিভাবে মারা গেল তুমি তা জানো?”

সঙ্গে সঙ্গে চোখে মুখে ভয়ের আতংক ফুটে উঠলো দাদিমার। দাদিমার রিয়েকশন দেখে আবারও বললো রাগান্বিতা,
“কি হলো দাদিমা বলো আমায় সেদিন সকালে বুবুর রুমে তুমি তো আগে গিয়েছিলে বুবু কি সত্যি আত্মহত্যা করেছিল নাকি,

রাগান্বিতা আরো কিছু বলবে এরই মাঝে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধমকের স্বরে বললো রাগান্বিতার বাবা,
“রাগান্বিতা।”

বাবার চিৎকার শুনে রাগান্বিতা থমকে গেল এর আগে কখনোই তার বাবা তার সাথে এতটা উচ্চস্বরে কথা বলেনি। রাগান্বিতা তাকিয়ে রইলো তার বাবার মুখের দিকে। রাগান্বিতার বাবা এগিয়ে আসলেন কড়া কণ্ঠে বললেন,
“এক সপ্তাহ পর বিয়ে কে কি করলো কিভাবে মরলো সেটা নিয়ে না ভেবে তোমার আগামী জীবনটা কিভাবে হবে তা নিয়ে ভাবো। কুহুর বিষয়টা নিয়ে আমি আর কোনোদিন তোমার মুখে কিছু শুনতে চাই না।”
“কিন্তু বাবা,,

রাগান্বিতার বাবা হাত দেখিয়ে রাগান্বিতাকে থামিয়ে বললো,
“চুপ করো কোনো কিন্তু নেই এক সপ্তাহ পর তোমার বিয়ে তুমি সেই বিয়ে নিয়েই থাকবে। বিয়ের পর মাহাদ চাইলে তুমি পড়াশোনা করবে নয়তো করবে না এটাই আমার শেষ কথা।”

বাবার কথা শুনে অনেক বড় আঘাত পেল রাগান্বিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই হবে।”

রাগান্বিতা চলে গেল। দাদিমা ছলছল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ রাগান্বিতার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনিও চলে গেলেন। আর রাগান্বিতার বাবা আকাশ পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কি যে শুরু হলো তার সংসারে?’
——-

চুংগা দিয়ে নিভে যাওয়া মাটির চুলায় ফুঁ দিচ্ছে ইমতিয়াজ। বাহিরে ঝিরিঝির করে অল্প বৃষ্টি পড়ছে। আগের চেয়ে রেশ অনেক কম। বর্ষার মৌসুমে খিচুড়ি খাওয়ার দারুণ স্বাদ। তাই ইমতিয়াজ খিচুড়ি রান্না করছে। ফুঁ দেওয়ার পর চুলা জ্বলতেই ইমতিয়াজ শুঁকনো ডাল দিলো চুলার মুখে সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। এমন সময় তার বাড়ি ছুটে আসলো মোকলেস হতভম্ব গলায় বললো,
“জানো ইমতিয়াজ ভাই কি হইছে?”

ইমতিয়াজ খিচুড়ি নাড়তে নাড়তে বললো,
“কি হয়েছে?”
“আইজগো রাগান্বিতা আফারে দেখবার আইছিল ওনার নাকি বিয়া হইবো কয়দিন পর।”

মোকলেসের কথা শুনে একটুও চমকালো না ইমতিয়াজ। উল্টো বললো,
“ভালো তো। সুন্দরী মেয়েদের বেশিদিন বাপের বাড়ি রাখতে নাই বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠানো উচিত নাইলে কার নজর লেগে যায় বলা যায়।”
“তাই বইল্লা এতো হয়ালে বিয়া দিয়া দিবো।”
“ভালো ছেলে পেলে দিবো না। তা নাম কি ছেলের?”
“মাহাদ।”
“নিশ্চয়ই জমিদারের ছেলে?”
“হ।”
“ভালো। আচ্ছা শোন খিচুড়ি রান্না করছি তোর চেনাজানা যত ছেলেপেলে আছে নিয়া আয় আজ সবাই একসাথে খিচুড়ি খাবো।”

মোকলেস খুশি হলো। বললো,
“আচ্ছা ভাই।”

ইমতিয়াজ আর কিছু বললো না জোরে জোরে খিচুড়ি নাড়তে লাগলো। চোখ মুখের ভঙ্গি খুবই স্বাভাবিক তার।
——

পরেরদিন সকাল ৭টা,,
চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নদীর পাড়ে হাঁটতে গেল রাগান্বিতা। তার কিছু ভালো লাগে না, বার বার মনে হচ্ছে দাদিমা আর বাবা বুঝি তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু কেন কিছু লুকাচ্ছে। রাগান্বিতার হাঁটতে হাঁটতেই নজরে আসলো নদীর এক কোনায় নৌকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইমতিয়াজের দিকে তবে আজ আর লুঙ্গি ফতুয়া পড়ে নি। শহুরে পোশাক পড়েছে চোখে চশমা গায়ে পাতলা চাদর।রাগান্বিতার এই ছেলেটাকে বড্ড ভালো লাগে, কেন লাগে জানা নেই। ওই যে কথায় বলে না ‘নিষিদ্ধ জিনিসের উপরই মানুষের ঝোঁক বেশি’! রাগান্বিতা চুপচাপ চলে যাচ্ছিল হঠাৎই ইমতিয়াজ বলে উঠল,
“কথা না বলেই চলে যাচ্ছেন যে?”

রাগান্বিতার পা আঁটকে গেল। সে বুঝে না এই ছেলেটা তাকে না দেখেও তার উপস্থিতি টের পায় কি করে? রাগান্বিতা পিছন ঘুরলো। বললো,
“না বাড়িতে বলে আসি নি বাবা জানলে রাগ করবে।”
“ওহ আচ্ছা। শুনলাম বিয়ে নাকি ঠিক হয়ে গেছে।”
“হুম দাওয়াত রইলো আসবেন কিন্তু।”
“জি অবশ্যই সময় থাকলে আপনার বিয়ে খেয়েই আমি গ্রাম ছাড়বো মানে চলে যাবো।”

খানিকটা খারাপ লাগলো রাগান্বিতা। নিশ্চুপ স্বরে বললো,
“চলে যাবেন গ্রাম দেখা হয়ে গেছে?’
“হুম আর কত থাকবো ওদিকে শহরে আমার ব্যবসা লাটে উঠছে।”

ইমতিয়াজের কথা শুনে রাগান্বিতা হেঁসে ফেললো। বললো,
“তাইলে তো আপনায় দ্রুতই যেতে হয়।”
“হুম সপ্তাহ খানেকের মতো আছি তার মধ্যে আপনার বিয়েটা হলে খেতে পারবো নয়তো আমায় যেতে হবে।”

ইমতিয়াজের কথা শুনে রাগান্বিতার হাসি থেমে গেল। গম্ভীর এক আওয়াজে বললো,
“চিন্তা নেই সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে সেটা আপনি খেয়েই যেতে পারবেন।”
“ওহ আচ্ছা তাইলে তো দারুণই খবর।”
“নৌকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
“কোথাও যাচ্ছি না এখানেই দাঁড়িয়ে আছি চুপচাপ।”
“ওহ। আচ্ছা যাই এখন বাবা জেনে গেলে সমস্যা হবে।”
“ঠিক আছে যান।”

রাগান্বিতা আর দাঁড়ালো না দ্রুত চলে আসতে নিলো নদীর পাড় থেকে। হঠাৎই ইমতিয়াজ ডেকে উঠলো। মধুর কণ্ঠে শুধালো,
“রাগান্বিতা শুনছেন একটা কথা ছিল?”

#চলবে…..

[ভুল-ক্রটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here