প্রেমকুঞ্জ #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে) ০২

0
366

#প্রেমকুঞ্জ
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)

০২

বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। টাইম মতো আজ আসায় বাস টা পেয়ে গেলাম। ঠ্যালাঠ্যালি করে উঠতে হলো। বেশ গরম পড়েছে ইদানিং ধরে। ঘেমে একাকার আমি। চারদিক বুলিয়ে দেখছি সিট খালি আছে কি না। পেছনের সিট খালি পেয়ে গেলাম। এসে বসলাম সেখানে। বাস চলতে শুরু করল। আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে স্থির হয়ে বসলাম। জানালার কাছে বসাতেই বাইরের আবহাওয়া টের পাচ্ছি। বাস চলতে শুরু করেছে। সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে। আজ তার আশার কথা ছিলো। আমি অপেক্ষা করছিলাম তার জন্যে। গতরাতে দু”পৃষ্ঠার একটা চিঠিও লিখেছিলাম ! প্রতি সপ্তাহে এই একটা দিন দেখা হয় আমাদের। হ্যাঁ আজও সেই দিন ছিল! বুধবার! আমি শাড়ি পড়ে এসেছিলাম আবরার জন্য। আবরার বলেছিল শাড়ি পড়লে নাকি আমাকে অনেক সুন্দর লাগে।

বেশ কয়েকদিন ধরেই আবরার চিন্তিত আছে। পুরো নাম আবরার আহমেদ। আমাদের সম্পর্কটা আজ প্রায় ৩ বছরের। অর্নাস শেষ করে এখন চাকরির খোঁজ করছে সে। ২ দিন আগে টেলিফোনে কথা বলেছিলাম। কয়েক জায়গায় নাকি ইন্টারভিউ দিয়েছে তবে এখন অবদি কোন খবর আসে নি। আবরার মা রোহানা বেগমের খুব শখ ছেলে সরকারি চাকরি করবে! তবে তার বাবা এক টাকা ঘুস দিতে রাজি না। এখন তাদের কে বুঝাবে আজকালকার যুগে টাকা পয়সা খরচ না করলে কিছুই হয় না। লোকে বলে টাকা থাকলে বাঘের গলায় মালা দেওয়া যায় আর এতো সামান্য চাকরি। যদিও আবরারের আর্থিক অবস্থা ভালো। আবরারের একটা বড় বোন আছে। বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে। বেশ সুন্দরী ছিল সে। নামটাও সুন্দর, হুমাশা! অনার্স কমপ্লিট করতেই বিয়ে হয়ে গেল। একটা পাঁচ বছরের ছেলেও নাকি আছে কিন্তু ছেলেটা নাকি সম্পুর্ণ দেখতে হয়েছে তার বাপের মতো। এতো আলোচনার বিষয় ছিল সে আবরার দুলাভাই এতো সুদর্শন ছিল না শুধু সরকারি চাকরি’র কারণেই তার মা বিয়েটা দিল। তখন হাসি পেলো আমার। এখন সমাজে এটাই চলছে। সরকারি চাকরির ছেলে পাচ্ছে তো সব মেয়ের মা বাবারা উঠে পড়ে লাগছে বিয়ে দেবার জন্য। আমি বুঝেছি না কেন? শুনলাম বিয়ের সময় নাকি আবরার মা খুব মোটা অংকের টাকা উপহার দিয়েছিল তার দুলাভাই কে। দুলাভাইয়ের নামটা অবশ্য মনে নেই। আবরার এমন একটা ছেলে যার পেটে কোন কথা সয় না। সবকিছুই বলে দেয় আমাকে!

তবে আমি ভাবছি এখন সেই টাকা ফেরত পাবার লোভেই ছেলেকে সরকারি চাকরি খুঁজতে বলছে তার মা। কে জানে? আচ্ছা আবরার দুলাভাই কি কিছু করতে পারছে না নাকি! সেও তো সরকারি চাকরি করে, এখন তো শুনলাম টাকার পাশাপাশি বাপ চাচাদের হাত লাগে। সেখানে দুলাভাইয়ের হাত হলে কি খুব বেশি সমস্যা হবে নাকি!

গত সপ্তাহে পার্কে আমার পাশে আবরার বলল, যদি আমি সরকারি চাকরি না পাই তাহলে কি তুমি আমায় বিয়ে করবে না নিলু!

আমি কিঞ্চিত হেসে বলেছিলাম, না!

বেচারার মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল। মুখটা ছোট করে নিল সে। আমি হেসে তার ঘাড়ে মাথা রেখে বললাম, রাগ করলে নাকি!

“সবার মতো তুমিও আমার উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছ। জানো বাড়িতে ঢুকতে এখন আর ইচ্ছে করে না। কানের কাছে সবাই শুধু ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকে।

“আমার বাড়ি এসে থেকো। তোমার ঘুমানোর জায়গা হয়ে যাবে চিন্তা নেই।

“তখন তোমার মা জিজ্ঞেস করলে কি জবাব দিবে!

“বলবো তোমার মেয়ের জামাই এসেছে। বরণ করে ঘরে তুলে!

“বাংলা সিনেমার ডায়লগ ছাড়ছো!

ফিক করে হেসে দিলাম। আবরার আমার দিকে ফিরে বলল, তোমার হয়তো বেশ মজা লাগছে কিন্তু তুমি বুঝছো না আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে। মানসিক ভাবে বেশ অসুস্থ আমি।

“আমার মতো শান্তশিষ্ট থাকলেই তো পারো, এতো ভাবনা চিন্তার কি আছে বলো।

“না নেই কিছু নেই!

“আহ রাগ করো না গো! তোমাকে রাগ করলে বড়ই কুৎসিত লাগে। বর বাবু বলছি কি শোন, খুব তৃষ্ণা পেয়েছে একটু পানি খাওয়াতে পারবে।

“বসো আমি নিয়ে আসছি।

“না চলো আমিও যাই তোমার সাথে। অনেক দিন হলো তোমার হাতে হাত রেখে হাটি না।

আবরার কিঞ্চিত হেসে উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে দিল আমার কাছে। তার হাতের সাহায্য নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। হাতে হাত রেখে হাঁটতে রাখলাম। পার্কের আশেপাশে আরো অনেক প্রেমিক প্রেমিকা! একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে রাজ্যের কথা বলছে তো অন্যজন প্রেমিকার মাথার চুল কানে গুঁজে দিয়েছে। চারদিকেই বুঝি প্রেমের ছড়াছড়ি! হালকা সবুজ রঙের একটা শাড়ি পড়েছিলাম আমি। আর আবরার একটা খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি। এই নিয়ে তিন তিনবার এই একই রঙের পাঞ্জাবি পড়ে এলো সে। প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গেলে অন্য প্রেমিকরা সেজেগুজে অস্থির আর এখানে আমার প্রেমিক ঠিক ততোটাই উদাসীন!

খুব মনে পড়ছে আবরার কথা, আজ পর্যন্ত কখনো এমন হয় নি। সবসময় দেখা হতো আমাদের! প্রতিবার দেরি করে যেতাম আমি। কিন্তু আজ! টানা দুঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরও তার দেখা পেলাম না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসের জানালা খুলে দেলাম। এই কাঠ ফাটা রোদেও বাতাসের ছোঁয়া পেলাম। ভালো লাগ্য তবে মন এখনো বিচলিত। এই সাপ্তাহে আর আবরার দেখা পাবো না বলে ধরে নিলাম!

মাথা ধরেছে, তার সাথে এই গরমের উৎপাত। কিছুই ভালো লাগছে না। অসহ্যের মধ্যে আরো অসহ্য। ইচ্ছে করছে ঘন্টা খানিক পানির নিচে বসে থাকতে। তবে যদি এই মাথা ধরা কমে!

———-

বেশ অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলাম। পুরো শরীর এখন ঠান্ডা লাগছে। আমার ঘর টা আলাদা! আলাদা হবার কোন কারণ ছিল না, দুই বোন একসাথেই ঘুমাতে পারতাম কিন্তু সমস্যা শ্রেয়ার’ই ছিল। আলাদা ঘর তার দরকার। এই নিয়েই ঘরে তুলকালাম কান্ড। শেষে মা সহ্য করতে না পেরে চিলেকোঠার ঘরটা তার জন্য দিয়েছে। বাড়িটা অবশ্য আমাদের নিজেদের। দোতলায় আমরা থাকি আর নিচ তলা খালি পড়ে আছে। খালি থাকার একটা মজার বিষয় আছে সেটা পড়ে বলছি। কারণ বসার ঘর থেকে তিতিরের গলার স্বর পাচ্ছি। শ্রেয়া কে বকছে। খুব জোরে জোরে গলা ফাটিয়ে বকছে! কারণ একটাই শ্রেয়া এবারও পরিক্ষায় আন্ডাগুল মেরেছে। তিতির খুব ধৈর্য্য ধরে পড়ায় তাকে কিভাবে বেচারি কেন জানি সব পড়েও পারে না। নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আমাদের অবস্থা এতোটা ভালো না। মোটামুটি কোন ভাবে চলে যায়। আমার বাবা সারাজীবন ব্যবসা করতে করতে সব সম্পত্তি শেষ করে ফেলেছে। খুব কম ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেছে সে। নাহলে লোকসান হতেই দাদার বাড়ি গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে এখানকার ধারদেনা শোধ করেছে। দাদা’র এক মেয়ে আর এক ছেলে ছিল। মেয়ে মানে আমার ফুফু কে বিয়ে দেবার পর তার সম্পত্তি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল। সে সব সম্পত্তি বিক্রি করে ফুফু এখন ফুফার সাথে দেশের বাইরে। আর বাবা যা পেলো তা দিয়ে ব্যবসা করতে করতে শেষ। শেষে গ্রামে দাদা’র বাড়ি বিক্রি করে যা পেলো মা বুদ্ধি করে তা দিয়েই এই বাড়ি বানাল। থাক থাকার জন্য এখন আর পয়সা খরচ করতে হয় না। বাবার ব্যবসাও এখন চলছে টুকটাক। মা তার বাপের বাড়ী থেকে যা পেল তা দিয়ে মার্কেটে একটা কাপড়ের দোকান ভাড়া দিল। সেই ভাড়ার টাকা আর বাবার ব্যবসা থেকে টুকটাক যা আসে তা দিয়েই চলে আমাদের!

বাইরের পরিবেশ ঠান্ডা হয়েছে। মা থামিয়েছে তিতির কে। তবে তিতির শুধু শুধুই তার শক্তি অপচয় করেছে। তার বকাবকির খুব একটা প্রভাব শ্রেয়ার উপর পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছি। শ্রেয়ার পড়ালেখার অবস্থা দিন দিন বাজে হয়ে যাচ্ছে। মা কে এবার বলতে শ্রেয়ার জন্য একটা টিউটর রাখার জন্য। মেয়েটা বড্ড জেদি ! আমাদের কাছে পড়তে চায় না। যদি বাইরের একজনের কাছে তবুও ভয়ে পড়তে বসে।

ঊষা কে এক কাপ চা দিতে বলে ঘরে এসে বসলাম। এই গরমের মাঝেও চা খেতে ইচ্ছে করছে সত্যি অদ্ভুদ! কাগজ কলম নিয়ে টেবিলে বসে আছি। লিখতে ইচ্ছে করছে কিছু। একটা চিঠি লেখাই শুরু করা যাক। তারিখ: ৪ – ৪ – ২০০৩, সম্বোধন দিলাম..
প্রিয়তম,

হয়তো তুমি জানো না, আজ আমি অনেকক্ষন টিএসসি রোডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই খা খা রোডে তোমার আসবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তোমাকে বলার জন্য অনেক কথা জমা ছিল। তৃষ্ণার্ত পীড়িত ব্যক্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমাকে একটিবার দেখার আশায় তবুও তুমি এলে না। কেন এলে না জিজ্ঞেস করছি না! কিছু একটা হয়েছে এটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। জানো শ্রেয়া আবারো পরিক্ষায় ডাব্বা মেরেছে। তিতির খুব রাগ ঝেরেছে ওর উপর। বেশ চিন্তা হচ্ছে তাকে নিয়ে। এমন ভাবে পড়লে কি করে হবে বলোতো। সামনেই তো এসএসসি! এখন ভালো ভাবে না পড়লে কোন ভালো কলেজে কি চান্স পাবে সে। বুঝিয়ে হাঁপিয়ে উঠলাম আমি। জানো একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। আমি জানি তোমাকে বললে তুমি কখনোই বলবে না ব্যাপারটা মজার। ভ্রু জোড়া কুঁচকে মুখ ভার করে বলবে , এখানে মজার কি দেখলে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি খুব মজা পেয়েছি। ঘটনা ঘটেছে গতকাল! একটা ছেলের কথা বলেছিলাম তোমায় মনে আছে তো। জানি তুমি মনে রাখবে না কারণ এটা গুরুত্বর কোন বিষয় না। যাই হোক আজ ছেলেটার নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে বলল তার নাম ফরহাদ! কিন্তু কথা এটা না, কথা হলো গতকাল এই ছেলে তার বন্ধুদের আমি পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছি। কি ভয়াবহ অবস্থা হলো! কিন্তু আমার কাছে মোটেও তেমন লাগল না ব্যাপারটা। প্রতিদিনের মতো গতকালও সেই রাস্তা দিয়ে যেতেই ছেলেটাকে দেখলাম সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তবে আজ শুধু সে একা না, সাথে কয়েকটা বন্ধুও জুটিয়েছে। আমি তাদের কাছাকাছি আসতেই হুমড়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করল তার। আমি পুরোপুরি ভাবে এড়িয়ে যেতে নিলে আকস্মিক ভাবে ছেলে গুলো এসে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ভড়কে উঠলাম আমি। চোখ ফিরিয়ে দেখলাম ফরহাদ নামের ছেলেটা গাছের কাছে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দেখে মনে হলো আমার থেকেও সে অনেক বেশি আতংকিত।

যাই হোক তবুও পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে ছেলে গুলো অভদ্র ভাষায় কথা বলতে শুরু করল। আমি ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছিল। কি সব যে কথা তা তোমাকে নাই বললাম। ফরহাদ এসে তাদের আটকানোর চেষ্টা করলো। ছেলেগুলোর চেঁচামেচি যেন আরো বেড়ে গেল। তুমি জানলে হয়তো অবাক হবে একজন তো এসে আমাকে ধাক্কা’ই দিয়ে দিল। এক পা পিছিয়ে গেলাম আমি। দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষোভ জমিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ল মেইন রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দেখেছিলাম আমি। দেরি না করে আবারো হাঁটা ধরলাম সেখানে। ছেলে গুলো পেছন থেকে রীতিমতো চেঁচাচ্ছিল!

খুব বুড়ো বয়সের একজন কে দেখলাম। চাচা বলে তাকে ডাকলাম। লোকটা আসলেই বিনয়ী ছিল। আমার কথা বুঝতে পেরে সাথে আরো দুজন কে নিয়ে সেখানে গেল। ছেলে গুলো পুলিশ কে দেখে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করল তবে শেষ রক্ষা হলো না। বেশ মজা পেলাম তখন আমি!

হয়তো এখনকার কথা গুলোয় তুমি মজা পাও নি তাহলে এখন যা বলছি তা শোন! ফরহাদ আজ আবার এসেছিল। এবার একাই এসেছিল। হাত মুখে ব্যান্ডেজ করা, পুলিশ তাকে খুব মেরেছে। কিন্তু তার কোন বন্ধু কেই মারতে পারে নি। কারণ কি জানো, সে নাকি টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়েছে। আরো কিছু টাকার অভাবে নিজেকে ছাড়াতে পারে নি। সে যাই’ই হোক, ফরহাদ কেন এসেছিল জানো। আমার সেই প্রিয় কলমটা ফেরত দেবার জন্য। আসলেই অদ্ভুত তাই না বলো। আমি তো সোজাসুজি বলে দিলাম এটা আপনার অজুহাত ছিল। ফরহাদ কি বললো জানো, কলমটা অজুহাত না, আজ নাকি সে এভাবেও আসতো।

অতঃপর দাড়ি টানলাম। দরজার ওপাশ থেকে আপা ডাকটা শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠলাম। ঊষা চা নিয়ে এসেছে। মা ওকে এনেছে তার গ্রামের বাড়ি থেকে। এখানে মায়ের সাথে টুকটাক কাজ করে সে। মেয়েটার মুখে মায়া মায়া একটা ভাব আছে। বয়সী হবে শ্রেয়ার চেয়ে একটু বড়। খুব সুশীল!

চায়ের কাপ নিয়ে এসে আবারো বসলাম। চিঠি টা পুরোটা পড়লাম। অতঃপর ভাজ করে বইয়ের মাঝে রেখে দিলাম। চায়েতে চুমুক দিয়ে ভাবছি এখনো আগের দু পৃষ্ঠার চিঠিটা দেওয়া হয় নি। কবে যে সেটা দেবো তার’ই ঠিক নেই আর কি লেখলাম এখন। সবকিছুই যেন অগোছালো!

——

ফরহাদের বন্ধু আয়াত আর আতিফ চুপচাপ তার পাশে বসে আছে। ফরহাদ আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট’র ধোঁয়া ছাড়ছে। আতিফ সরি বলে ঢোক গিলল। ফরহাদ কিছুই বললো না। শুধু ভাবতে লাগল নিলুফারের কথা। আগামীকাল আবারো দেখতে যাবে তাকে। আচ্ছা নিলুফার কি আবারো শাড়ি পড়ে আসবে। বোধহয় আসবে না, গুনে গুনে শুধু বুধবার’ই শাড়ি পড়ে সে। তবুও কেন জানি ফরহাদের মন বলছে কাল সে শাড়ি পড়ে আসবে। তবে সত্যিই কি তাই হবে!

এদিকে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আবরার! ভোর হতেই ছুটে এসেছিল এখানে। হুমাশা’র ছেলে তিহাশের হুট করেই ভোর থেকে পেট ব‌্যাথা। দুলাভাই গ্রামের বাড়ি থাকায় তাকেই ছুটে আসতে হয়েছে এখানে। যদিও ডাক্তাররা এখন অবদি রোগ ধরতে পারে নি তবে তাদের ধারণা ঠিকমতো খাবার না খাওয়ার কারণে এই হাল। যদিও ব্যাথা এখন কমেছে কিন্তু হুমাশা এখনো ঠিক হয় নি। কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে এখন ছেলের পাশে ঘুমাচ্ছে। তাদের দেখবার দায়িত্ব এখন আবরার। মনটা খারাপ লাগছে, নিলুর সাথে আজ দেখা করবার কথা ছিল। কিন্তু হলো না। মেয়েটা নিশ্চিত অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। শাড়ি পড়ে এসেছিল। কপালে একটা টিপও দিয়েছিল বোধহয়। কিন্তু তার যাওয়া হলো না। ইচ্ছে করছে এখন তাকে টেলিফোন করতে। রোডের পাশে একটা দোকানে টেলিফোন দেখেছে সে। কিন্তু এতো রাতে ফোন করলে কি নিলু ধরবে। তাকে কল করে বলতে হবে, নিলু কে একটু দেওয়া যাবে। আমি ওর বন্ধু, কিছু কথা ছিল নিলুর সাথে..

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here