প্রেমকুঞ্জ 💓 #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) | অষ্টাবিংশ পর্ব |

0
74

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| অষ্টাবিংশ পর্ব |

আজ দাদু এসেছেন বাড়িতে। বাবা তার আথিতেয়তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। দাদু আসার পথে দু হাড়ি রসগোল্লা নিয়ে এলেন। নিলুফার এক রসগোল্লা মুখে পুড়ে খুব প্রশংসা করতে লাগল। দাদু হাসছেন তার কথা শুনে। মা আড়ালেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটিবার সামনে আসলো না। দাদু শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, “আমার মা’র মনটা কি খুব খারাপ!

“না দাদু!

“আরে মন খারাপের কিছু নাই! মামুনের লগে দেখা কইরা আইছি, ওই ভালোই আছে। এই তো আর কয়েকটা দিন এরপর সবকিছু ঠিক হইয়া যাইবো।

বাবা হেসে বলেন, “আপনি আসায় খুব খুশি হয়েছি!

“আমার মা কে দেখাবার অনেক ইচ্ছা হইতাছিলো তাই চলে এলাম ‌

নিলুফার ভ্রু কুঁচকে বলল, “তা দাদু! তোমার মা কি হুবহু ওর মতোই দেখতে।

“হ! একদম ওর মতোই ছিল।

এর মধ্যেই ঊষা গরম গরম চা নিয়ে হাজির। বাবা তাকে চা সাধছেন। নিলুফার মায়ের ঘরের দিকে তাকাতেই দেখল মা উঁকি দিয়ে তাকে দেখছে। নিলুফার উঠে দাঁড়াল। মায়ের ঘরে আসতেই মা মিনমিনয়ে বলল, “তা তিনি কি খেয়ে যাবেন! এসেছে তো ভরদুপুরে , তাহলে তো কিছু করতে হবে। ঘরে কি আছে, রান্না চাপানোর কি দরকার নেই।

নিলুফার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল, “দাদু! আমার মা সাধছে তোমাকে দুপুরে এইখানেই খেয়ে যেতে। মা তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছেন।

“এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আমি খেয়েই এসেছি!

বাবা বলে উঠেন, “তা কি করে হয়। এসেছেন তো প্রথম আমাদের বাড়িতে। খালি মুখে যাবেন তা কি করে হয়!

এদিকে মা অবাক চোখে তাকাল নিলুফারের দিকে। নিলুফার মুচকি হেসে দিল। মা মাথার ঘোমটা টেনে রান্না ঘরে ঢুকলো। আর যাই হোক বাড়িতে আসা মেহমানের উপর তিনি রাগ দেখাবেন তা হয় না।

মা রান্না বান্না চাপিয়ে দিয়েছে। বাবা কে বাজারে পাঠানো হয়েছে আবার। দাদু বার বার মানা করা সত্বেও বাবা বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হলেন। বাবা ফিরতেই মা রান্না বসিয়েছে। দাদু যেমন একজন রসিক মানুষ ঠিক তেমনি নিলুফার। তার সাথে দাদির বিয়ের কথা জুড়িয়ে দিয়েছে সে। শ্রেয়া খানিকক্ষণ তাদের সাথে বসে থাকার পর হেঁটে গেলো রান্না ঘরে। ঊষা নিচে বসে কুটনো কুটছে। মা মাছ ভাজছে। শ্রেয়া কে দেখতে পেয়ে আড়াল হয়ে চলে গেলেন ওদিকে। এদিকে শ্রেয়া এসেছে মাছ উল্টিয়ে দিতে। আজ পর্যন্ত যে মেয়ে এসবের ধারে কাছেও যায় নি সে কি আর এসব পারে। অঘটন একটা ঘটিয়ে ছাড়ল। তেল ছিটে এসে পড়ল হাতের উপর। মা দ্রুত মুখ ফিরলেন। শ্রেয়া মা গো বলে চেঁচিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি করে হাত ধরে পানিতে চুবিয়ে দিলেন। এর মধ্যেই এক ঝাঁক বকা তো শুরু। রান্না ঘরের এমন আওয়াজ শুনে দাদু খানিকটা বিভ্রান্ত। কিছু একটা কি হলো নাকি?

নিলুফার কিঞ্চিত হেসে বলল, “বাদ দাও গো দাদু! মা আর মেয়ের ভালোবাসা’র কাহিনী হচ্ছে!

দাদু কথার অর্থ বুঝলেন না। এদিকে মা হাতে ফু দিয়ে যাচ্ছে। ঊষা কে বলছে “ঔষধ টা নিয়ে আয় নাহ”!

শ্রেয়ার চোখ ঝড়ে পানি পড়ছে। পুড়ে যাবার কারণে না, মায়ের চিন্তা দেখে। তিনি এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছেন, “এসেছে কাজ দেখাতে। এখন অবদি ভাত টা ঠিকমতো খেতে পারে না এমনি নবাবের ঝি এলো মাছ উল্টাতে। কে বলেছিল আসতে তোকে। কাজে তো একদম লবডঙ্কা। বিয়ে করলেই কি কাজ শেখা হয়ে যায় নাকি!

বলেই আবার হাতে ফু দিতে লাগলেন। একটিবার তাকাল শ্রেয়ার দিকে। কাঁদতে দেখে বলে উঠল, “এখন তো জ্বলবেই, কেঁদে লাভ নেই কোন। ঔষধ লাগিয়ে দিলেই ব্যাথা কমে যাবে!

শ্রেয়া কথা না বাড়িয়ে দুই বাহু দিয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরল মা কে। ফুঁপিয়ে কান্না শুরু তার। বার বার বলে উঠল, “মা আমাকে ক্ষমা করে দাও! ক্ষমা করে দাও মা। তোমার দুটি পায়ে পড়ি ক্ষমা করে দাও!

মায়ের বুঝতে সময় লাগলো। কেন জানি হঠাৎ করেই বুক কেঁপে উঠলো তার।‌ শ্রেয়া তাকে জড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। ঊষা দৌড়ে এসে এমন চিত্র দেখে থমকে গেল। কিছু বলল না, দেখতে লাগল মা মেয়ের রাগ অভিমান!

——–

মামুন ছাড়া পেয়ে আজ সকালে! ভোরেই সামছু কে পাওয়া গেছে। ঘাপটি মেরেছিল তার গ্রামের বাড়িতে। সেখান থেকে পুলিশ এসে ধরে নিল তাকে। অতঃপর জিজ্ঞাসা বাদ করার পর সত্যি টা স্বীকার করল না সে। কিছুটা উওম মাধ্যম এর পরেই গড়গড়িয়ে সব সত্যি বলে দিল।

এদিকে মামুনের প্রাণ যেন যায় যায়। আচ্ছা খু*নির কি ফাঁসি হয় নাকি যাবজ্জীবন। সে যে নিজের ঘাড়ে দোষটা নিয়ে নিল এখন তার পরিমাণ কি হবে ? আর কি কখনো দেখতে পারবে না মা বাবা কে।‌শ্রেয়ার মুখখানি কি আর দেখা হবে না। মা আর বাবা সেদিন এসেছিল। সে কি কান্না কাটি! কেন দোষ স্বীকার করল সে, খু*ন না করেও দোষ স্বীকার। পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে তারা।‌

সেদিনের পর শ্রেয়াকে আর আসতে দেখল না মামুন। তার শরীরটা কেমন একটু বড় বড় হয়ে গেল বলে মনে হলো। মাথার চুল আবারো বেড়ে কপালে এসে ডেকেছে। কোনমতে বেঁচে আছে এই বন্দি কারাগারে। বার বার এটাই মনে হয়েছে দোষ স্বীকার করে বড্ড ভুল করেছে সে।

হঠাৎ করেই দারোগা এসে তালা খুলে বলল, “তোর ডাক পড়েছে!

মামুন মুখ তুলে তাকাল। দারোগা তাকেই ইশারা করে বলল, “তোকেই বলছি, আয় বেরিয়ে আয়!

মামুনের মুখ রক্তশূন্য। এখন কেন আবার ডাকছে তাকে। ভয়ে তার কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। হাজত থেকে বের হবার পর সেই অন্ধকার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো না তাকে। সোজা নিয়ে গেল মোজাম্মেল হোসেনের ক্যাবিনে। মোজাম্মেল হোসেন তাকে দেখতে পেয়ে বলল,
“বসো বসো!

মামুন বুঝতে পারল না কথাটা কি আদৌ তাকে বলছে। কোন আসামিকে কি এভাবে বসতে বলা হয়। মামুন তবুও দাঁড়িয়ে রইল। মোজাম্মেল হোসেন এবার তার নাম ধরে ডেকেই বসতে বলল। জিজ্ঞেস করল কিছু খাবে কি না। মামুন মাথা নেড়ে না করা সত্বেও মোজাম্মেল হোসেন চা আর বিস্কুটের ব্যবস্থা করল। হাজতের এক রকম খাবার খেতে খেতে তার মুখের রুচিও নষ্ট হয়ে গেছে। মামুন বিস্কুট চা তে ভিজিয়ে খেতে লাগল নিঃশব্দে! মোজাম্মেল হোসেন বলে উঠল,

“তোমার জন্য একটা ভালো খবর আরেকটার খারাপ খবর আছে।‌ কোনটা আগে শুনবে বলো!

মামুন অবাক হলো। এখনো কি ভালো খবর আশা করা যায় তার জন্য। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল মোজাম্মেল হোসেনের দিকে। মোজাম্মেল হোসেন হেসে বলল, “যাক ভালো খবরটাই বলি আগে শোন! সামছু ধরা পড়েছে। নিজের দোষ স্বীকার করেছে সে। তাই আর তুমি এখানে থাকছো না। বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমায়। এখান থেকে আমার গাড়ি করেই যাবে তুমি যদিও এটা কোন আসামির জন্য করা হয় না কিন্তু তোমার সাথে সে সম্পর্ক ছাড়াও আরেকটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাই এতো টুকু করছি তোমার জন্য। আর খারাপ খবর হচ্ছে, আপাতত তারেক পলাতক! তাই তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে। তোমার উপর রা*গ চেপে আছে, যে কোন সময় অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে!

এক নাগাড়ে কথা গুলো বলল মোজাম্মেল হোসেন। কথা গুলো শেষ করার পর তাকাল মামুনের দিকে। অশ্রু গাল বেয়ে পড়ছে তার। একি সত্যি নাকি তার কল্পনা ঠিক বুঝতে পারছে না সে!

আজ ১০ দিন পর সূর্যের আলো দেখতে পেল মামুন। বুক ভরে শ্বাস নিল সে‌। আকাশ টা আজ দারুন পরিষ্কার। সামনে থাকা গাড়িতে চড়ে বসল সে। প্রথম গন্তব্য হচ্ছে বাড়ি! মা বাবার সাথে দেখা করে নাপিত কে দিয়ে চুল কাটাবে। অতঃপর গোসল সেড়ে দেখা করতে যাবে শ্রেয়ার সাথে !
বাড়িতে আসার পর পরই মা হুমড়ি খেয়ে পড়ল মামুনের উপর। কান্না আর খুশি যেন একসাথেই মুখে চেপেছেন তিনি!

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে এগিয়ে এলো শ্রেয়া। দরজা খোলার আগ অবদি ধারণা ছিল না কি হতে চলল, অতঃপর মামুনের মুখ খানা দেখে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। তার চোখ দুটো স্থির! সত্যি’ই কি তবে মামুন তার সামনে দাঁড়ানো। মামুন কিঞ্চিত হেসে বলল, “কেমন আছো !

মামুনের গলার স্বর কম্পিত করল শ্রেয়ার সারা শরীর। চোখে অশ্রু জমে আসছিলো তার। কোনমতে অশ্রু আটকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল ধরল মামুন কে। এই দশদিন কে দশটা বছরের মতো লাগল তার। অপেক্ষার‌ প্রহর যে এই দশদিন কে কতোটা দুর্দশ করে তোলে এতো দিনে সেটা বুঝে গেল সে। মামুন কোন ভঙ্গিতা ছাড়াই আলতো ভাবে হাত রাখল শ্রেয়ার মাথায়। আবেগী মন এতো উষ্ণতা পেয়ে আর ধরে রাখতে পারল না অশ্রু কণা! গড় গড়িয়ে ঝরে পড়ল চোখ বেয়ে। মামুন বুঝতে পারছে শ্রেয়া কাঁদছে অথচ চুপ করতে বলছে না। সে চায় শ্রেয়া কাদুক। তাকে জড়িয়ে ধরেই কাদুক, প্রিয় মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদার মাঝেও এক ধরণের প্রাপ্তি আছে!

দরজার কড়া নাড়ার শব্দ কানে গিয়েছিল নিলুফারের। কিন্তু এখন অবদি কোন সাড়া না পেয়ে দেখতে এলো কে এসেছে। কিন্তু এসে এই কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসল সে। উহুম উহুম করে কাশল সে!

——-

মামুন নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় মা মেনে নিল তাকে। তার সাথে আরেকটা শর্ত জুড়ে দিল। শ্রেয়া কে এখনই তুলে দিবে মামুনের হাতে। মামুন কে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তখন দু পরিবার মিলেই আবার বিয়ে দেবে তাদের। ততোদিন শ্রেয়া এখানে থেকেই পড়ালেখা করবে। মায়ের সিদ্ধান্তে অমত করল না কেউ।

এতো দিনের ঝুট ঝামেলা শেষে আজ শান্তির নিল ফেলল নিলুফার। সব এখন স্বাভাবিক! ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রইল। কতো মানুষজন যাওয়া আসা করছে এখান দিয়ে। সকাল এখন ১০ টা বাজে! স্কুলের মেয়েরা ছুটি পেয়ে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে। কিঞ্চিত হেসে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। পাখিরা এক ঝাঁক বেঁধে উড়ছে আকাশে। একটা আসমানী রঙের পাঞ্জাবি পড়ে এই সকালে কোথাও বের হলো ফরহাদ সাহেব। পিছন থেকে তাকে দেখেই চিনে ফেলল নিলুফার। ডেকে বলে উঠল,

“ফরহাদ সাহেব!

ফরহাদ মুখ তুলে তাকাল। নিলুফার হেসে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাচ্ছেন!

“কোথায় না এইভাবেই হেঁটে আসছি।

“তাহলে অপেক্ষা করুন আমার জন্য; আমি আসছি!

বলেই জানালায় পর্দা টানল নিলুফার। ফরহাদ খানিকটা অবাক হলো। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর নেমে এলো নিলুফার। ফরহাদ তাকে দেখে খানিকটা চমকে উঠল। তার পরণেও আসমানী রঙের এক শাড়ি। কিঞ্চিত হাসল ফরহাদ!

#চলবে….

[ রি চেক করা হয় নি, ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here