প্রেমকুঞ্জ 💓 #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) #পর্ব_৫

0
145

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫

আমাকে অবাক করে দিয়ে ফরহাদ পরদিন এসে ঠিক’ই উপস্থিত হলো। কিন্তু আজ মনে হয় অনেক আগেই চলে এসেছে। ভার্সিটিতে যাবার পথে দেখা পেলাম তার। মুখের হাল দেখে বোঝা যাচ্ছে সারা রাত বেচারার ঘুম হয় নি। হবে কি করে, কাল যা বললাম এতে মনে হয় এরপর আর কখনো শান্তিতে ঘুমাতে পারবে বেচারা! ফরহাদ ঠিক আমার সামনে দাঁড়ানো। গতকালের পাঞ্জাবি এখনো তার পরণে! তার থেকে সিগারেটের বিশ্রি গন্ধ ভেসে আসছে। সারারাত কি তবে সিগারেট খেয়ে কাটিয়ে দিল নাকি। কে জানে?

“আপনি এখন যে?

“…

“কথা বলছেন না কেন?

“পত্র টা কি পড়েছিলেন!

“প্রেমপত্র!

ফরহাদ মাথা নিচু করে নিল। নিলুফার মুখ টিপে হাসল। বলে উঠল, “বলছি, তার আগে বাসায় গিয়ে গোসল করে আসুন!

“কেন?

“আপনার গা থেকে সিগারেটের বিশ্রি গন্ধ আসছে। সিগারেট’র গন্ধ আমার একদম সহ্য হয় না। দয়া করে আপনি আমার থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ান। আমার মাথা ঘুরছে!

ফরহাদ দ্রুত সরে দাঁড়াল। ইশ! এতোটা বোকামি কিভাবে করল সে। নিলুফার পাশ দিয়ে চলে যেতে নিল। অতঃপর পিছন ফিরে বলল, ক্লাস শেষ করে এসে কথা বলছি। আপনি বাসায় গিয়ে ততোক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসুন।

নিলুফার যেতেই ফরহাদ নিজের গা নিজে শুকল! ছিঃ কি বিচ্ছিরি গন্ধ। এতোদিন তো এটা খেয়াল করে নি। নাকি নিলুফার বলায় আজ প্রথম বার তার কাছে এটা বিচ্ছিরি গন্ধ বলে মনে হল!

——-

ফরহাদের আসতে আসতে অনেক সময় লাগল। চুল গুলো শ্যাম্পুও করায় বোধহয় দেরি হয়ে গেল। বাইক নিয়ে কাছে আসতেই দেখল নিলুফার সেই গাছটার নিচে দাঁড়ানো। ক্ষণিকের জন্য তার মনে হলো এটা কল্পনা! নাকি সত্যি নিলুফার অপেক্ষা করছে তার জন্য। সত্যি কি তাই!

ফরহাদ এসে বাইক থামাল। আমি তার দিকে ফিরলাম। হুম এখন অনেকটাই পরিপাটি লাগছে দেখতে!

“বাইক এখানে রেখেই আমার সাথে চলুন!

“কোথায়?

“হাঁটতে, হাঁটতে ইচ্ছে করছে অনেক! যাবেন।

ফরহাদ বাইক সেই গাছের নিচে রেখেই আমার সাথে পা বাড়াল। টিএসসি রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দুজন এসে পৌঁছালাম শহিদ মিনারের কাছে। আমি বসে পড়ি সিঁড়ির কাছে। ফরহাদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় ভাবছে, বসবে কি বসবে না।

“শুনুন!

ফরহাদ কেঁপে উঠে। কেমন এক শিহরণ বয়ে গেল তার শরীর দিয়ে। ঢোক গিলে তাকাল নিলুফারের দিকে!

“হুম!

“পানির তৃষ্ণা পেয়েছে, একটু পানি আনবেন!

“আনছি!

অতঃপর ফরহাদ চলে গেল। খানিকক্ষণ পর ফিরেও এলো। সাথে নিয়ে এলো পানির বোতল আর কাঁটা শসা। রাস্তায় বিক্রি হচ্ছিল বোধহয়। এসেই আমার কাছে বাড়িয়ে দেয়। একটু দূরত্ব রেখে বসে পড়ে আমার পাশে। আমি বসে একা একাই শসা খেতে থাকি। একটিবারের জন্যও তাকে জিজ্ঞাসা করলাম না। করি নি বেশ করেছি! পানি খেয়ে ফরহাদের দিকে ফিরে বলি,

“বুঝলেন আমি কিন্তু খুব স্বার্থপর!

“কেন?

“এই যে আপনাকে একটিবার জিজ্ঞাসা না করে একা একা খেয়ে ফেললাম সব!

“কিন্তু আমি আপনার জন্য’ই এনেছিলাম।

আমি হাসলাম। খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠি,
“তবুও আমি স্বার্থপর! নিজের স্বার্থের জন্য আরেকটা কাজ করেছি আমি।

ফরহাদ অবাক চোখে তাকাল আমার দিকে। আমি বলি,
“আজ কি বার বলুন তো!

“বুধবার!

“প্রতি সপ্তাহে আমি আর ও এই একটা দিনে দেখা করি। আজও সেইদিন! আমি ভেবেছিলাম আজ ও আসবে কিন্তু এলো না দেখলেন। ভেবেছিলাম যদি আসে তাহলে আপনাকে আর আমাকে একসাথে বসে থাকতে দেখে ও কষ্ট পাবে। তাই আপনাকে এখানে এনে বসিয়ে রেখেছি! বুঝলেন তো!

ফরহাদ হাসল। আমি একটু অবাক হলাম। ফরহাদ নিজ থেকে বলল, আপনি কষ্ট পেতেন না!

“তা না হয় পেতাম। কেন? আমি কষ্ট পেলে বুঝি আপনি কষ্ট পেতেন!

“চা খাবেন!

পাল্টা প্রশ্ন করলাম না। মাথা নাড়িয়ে বললাম, হুম!

ফরহাদ উঠে দাঁড়াল। আমার দিকে ফিরে বলল, উঠুন। এখানে বসে চা খেয়ে মজা নেই। টং এ বসে চা খেলে চায়ের আসল স্বাদ পাওয়া যায়!

আমি উঠে দাঁড়ালাম‌। আবারো হাঁটতে লাগলাম দুজন। চা খেলাম। ফরহাদ কথা বলল অনেক কথা কিন্তু তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। শুধু মজার কিছু কথা, বন্ধুদের সাথে কাটানো কথা। যা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবার মতো। অতঃপর দুজনে আবারো পা বাড়ালাম। এবার ফিরার সময়। আমি সামনের দিকে ফিরে বলি,
“আমি ভেবেছিলাম আপনি বোধহয় আজ আসবেন না!

ফরহাদের দিকে ফিরে দেখি তিনি হাসছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“কেন এলেন?

“জানি না।

চুপ হয়ে গেলাম। দুজনে রাস্তার মোড় পেরিয়ে গলি তে ঢুকলাম। বাইকের কাছাকাছি আসতেই ফরহাদ বলল, আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু আমি জানি এই সাজ টা আমার জন্য না। তবুও কোন ভাবে এর ভাগ টুকু পেলাম আমি!

চাপা শ্বাস ফেললাম। ফরহাদের দিকে ফিরে বলি, দুঃখিত!

“পত্র টা কি ফেলে দিয়েছিলেন!

“বিশ্বাস করুন হারিয়ে ফেলেছি। কিভাবে যে হারিয়ে ফেললাম জানি না।

“থাক কোন ব্যাপার না!

“আপনি দয়া করে আরেকটা পত্র লিখে দেবেন আমায়, আমি কথা দিচ্ছি সেটা আমি পড়ব!

“চেষ্টা করব কথা গুলো মুখে বলার!

আমি তাকে বিদায় দিয়ে চলে এলাম। পেছন ফিরে তাকালাম না আর। কিন্তু আমি জানি ফরহাদ নিশ্চিত অপেক্ষা করছে আমার। তার কোনভাবে মনে হচ্ছে আমি পেছন ফিরে চাইবো!

——-

টেলিফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আচ্ছা সে কি আজও ফোন করবে না। একটিবারের জন্য ফোন করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে তার। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। শ্রেয়ার ঘরের দিক পা বাড়িয়েছি। মেয়েটা কাঁদছে! মা আজও বকেছে অনেক। তার টিচার নাকি আজ মা কে ডেকে শ্রেয়ার পড়াশোনার কথা বলেছে। এরপর ঘরে কুরুক্ষেত্র লেগে গেল!

গত তিন দিন হলো ঘর থেকে বের হওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ইচ্ছে করে না ঘর থেকে বের থেকে। বাড়ির পরিবেশ অবশ্য তেমন একটা ভালো না। বাবা’র ব্যবসায় লোকসান টা আবারো হয়েছে। আবহাওয়া কেমন গরম গরম লাগছে। মা এবার ঠিক’ই করে ফেলল বাড়ির নিচতলা ভাড়া দিবে। ও হ্যাঁ বলা হয় নি, আমার মা বাড়ি ভাড়া দেবার কারণ খানা। মা’র মনে হয় বাড়ি ভাড়া দিলে কিছু ফূর্তি বাজ ছেলেদের আড্ডা খানা হয়ে যাবে। তার মধ্যে ঘরে দুটো শেয়ানা মেয়ে আর একটা ছেলে‌। এই নিয়ে তার ভয়ের চিন্তা নেই। যদি ভাড়াটিয়া ভালো না হয় তাহলে আরেক সমস্যা! এযুগে তেমন ভালো মানুষ পাওয়ায় যাচ্ছে না।

এই তো সেদিন একটা ভাড়াটিয়া এলো। তার সাথে এলো তার একটা মেয়ে। আমার মা’র তো মেয়ে দেখেই মাথায় হাত! সুন্দরী বলে তা না মেয়ের হাবভাব মোটেও তার কাছে ভালো লাগে নি। তিতির যতবার বসার ঘরে মেয়ে টা ঢ্যাবঢ্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে রইল। এর মাঝেই সবার সামনে তিতির কে জিজ্ঞেস করে বসল, আপনার নাম কি?

ব্যস যা হবার হয়ে গেল। আমার মা তো ভুলেও এই এদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিবে না। বাড়ি ভাড়ার নোটিশ ঝোলানোর পর কয়েকটা ছেলে এসেও খোঁজ নিয়ে গেল। এরপর আর মা’র অবস্থা, মানে করুণ অবস্থা!

রাত ৮ টা বাজে, বাবা নামাজে গেছে অনেকক্ষণ! এখন হয়তো বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। শ্রেয়ার ঘর থেকে পড়ার আওয়াজ আসছে। তিতির পড়াচ্ছে তাকে, খুব জোরে জোরে শব্দ করে পড়ছে। কি একটা বাংলা পড়া মুখস্থ করছে সে। আমি দাঁড়িয়ে আছি ঊষা’র সামনে। মেয়েটা চায়ের কাপ হাতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঊষা’র উচিত পড়াশোনা করা। আমার বাবা চেষ্টা কম করে নি। কিন্তু ঊষা’র নিজের’ই এতে মত নেই। ঊষা’র চেহারায় একটা মায়া মায়া ভাব আছে। তাকিয়ে থাকলে দেখতেই ইচ্ছে করে। ঘন বড় চুল গুলো দুটো বেনী করে ঝুলিয়ে রাখে সে!

“কি হইলো আফা, চা লন!

“নিচ্ছি, তোর খবর কি বলতো?

“আমার আবার কিসের খবর?

ওর কথা শুনলে কেন জানি আমার খুব হাসি পায়! চায়ের কাপটা নিয়ে মুখে দিলাম। চা টা খুব ভালো বানায় ঊষা। একদম পারফেক্ট! হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠলো। ঊষা কে বললাম, যা ফোন টা ধর তো!

ঊষা দৌড়ে এসে ফোন ধরে বলল, হ্যালো কেডা, কারে চান?

আমি মুখ টিপে হাসছি! ওপাশ থেকে কি কথা হলো জানি না। ঊষা শুধু আমার দিকে ঘুরে বলল, আফা আপনার কথা কয়?

আমি কাছে এসে ওর হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলি, যা নিয়ে যা এটা!

কোন কথা না বলে ঊষা চায়ের কাপ নিয়ে গেল। ফোন কানের কাছে ধরে চুপ হয়ে আছি। ওপাশ থেকে নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি। আমি আবার আবরারের নিশ্বাস খুব ভালো চিনি। নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,

“কেমন আছো?

“ভালো, তোমার খবর বলো!

“আমার আবার খবর?

“রেগে আছো?

“না আমি রাগ করার কে বলোতো!

“দেখা করো না কাল!

“কেন?

“খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়!

“আচ্ছা যাও দেখা করবো!

“জানো আমি..

“কোন কথা বলো না দয়া করে একটু চুপ থাকো!

“কেন?

“জানি না, শুধু ফোন কানে গুঁজে চুপ থাকো। আমি তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনবো।

“নিলু আই’ম সরি, প্লিজ কেঁদো না!

“আরেকটা কথা বললে আমি ফোন রেখে দেবো বলে দিলাম।

“কাল নীল রঙের শাড়ি টা পড়ে এসো। আর কোন কথা বলবো না কথা দিলাম! একদম চুপ আমি।

আমি চুপ হয়ে গেলাম। দুই হাত দিয়ে ফোন কানে গুঁজে আছি। নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছি। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু পারছি না। খানিকক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোন কথা না বলে শুধু তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছি। বোঝাতে পারব না আমি তাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি। আবরার বোঝে না আমার ভালোবাসা। সবসময় সে উদাসীন। সবকিছুতে। কিভাবে পারে এতোটা শান্ত থাকতে। ওপাশ থেকে আবরার বলে উঠল, আর কেঁদো না এবার থামো!

সাথে সাথেই ফোন রেখে দিলাম‌। বললাম তো কথা বলতে না, কেন বললো। রেখে দিলাম ফোন। শান্তি হয়েছে তো এখন। দৌড়ে এসে নিজের ঘরে চলে এলাম। দরজা বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। মনের ক্ষতটা এখন কিছুটা হলেও কম বলে মনে হচ্ছে!

—–

ফরহাদ আজ দাঁড়িয়ে আছে নিলুফারের বাড়ির সামনে। আগে কখনো এই বাড়ির এতোটা ধারে কাছে আসে নি। বাড়িটা অবশ্য চিনতো! কিন্তু কয়েকদিন ধরে নিলুফারের দেখা না পেয়ে চিন্তিত সে। সুস্থ আছো তো নিলু! কিছু হয়নি তো আবার! চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু সাহস হচ্ছে না কিছু করার। কি’ই বা করবে সে। তবে নিলুফারের কাটানো দিন টা আজীবন মনে থাকবে। এই মধুর মুহুর্ত গুলো নিয়ে সারাজীবন থাকতে পারবে সে…

#চলবে….

( রি চেক করা হয়নি ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here