#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| নবম পর্ব |
সকাল সকাল আবরারের বাসায় এসে হাজির হুমাশা! শুধু হুমাশা না এর সাদে তিহাশ তো আছেই তবে আরো একজন আছে, সে হচ্ছে পূর্ণা! পূর্ণা হুমাশার বড় ঝা’র বোন! যার সাথে আবরারের বিয়ের কথা চলছিল। যদিও আবরার বিয়েতে না করে দিয়েছে। রোহানা বেগম পূর্ণা’র জন্য খুব হাই হুতাশ শুরু করে দিয়েছে! এই পূর্ণার জন্য এটা করছো তো এই ওটা করছে! এদিকে পূর্ণা আসার কিছুক্ষণ আগেই আবরার বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। সকাল সকাল হাঁটতে বের হওয়া আবরার’র পুরনো অভ্যাস। বাড়ি থেকে ঢুকতে যাবে তখন’ই দরজার সামনে পূর্ণা কে দেখে অবাক হলো আবরার। পূর্ণা কিঞ্চিত হেসে তাকিয়ে আছে আবরার দিকে।
“চিনতে পারছেন আমায়!
“পূর্ণা!
“বাহ! নামটাও দেখছি মনে রেখেছেন।
“তুমি এখানে?
“কেন আসতে পারি না।
“না, এই সকাল সকাল যে!
“গতকাল এসেছি। আপা জোর করে নিয়ে এলো এখানে। আমি বললাম বিকেলে যাই কিন্তু না। তিহাশ কে নাকি চেকাপ করাতে নিয়ে যাবে এজন্য সকাল সকাল এসেছে।
“হ্যাঁ তিহাশের আজ চেকাপের কথা আছে। কিন্তু আমিই তো যেতাম আপুর বাসায়।
“মনে হচ্ছে আমি এখানে আসায় আপনি এতোটা খুশি নন।
“না, বললে যে তাড়াহুড়ো করে এসেছ তাই বলছি। পরে না হয় আস্তে ধীরে আসতে।
পূর্ণা মুচকি হাসল। আবরার কথাটা তার মন কে ক্ষত বি*ক্ষত করল। আবরার হেসে বাড়ির ভিতরে গেল। পূর্ণা এলো তার পিছু পিছু। রোহানা বেগম আর হুমাশা দুজনেই রান্না ঘরে কাছ করছে। আলতাফ হোসেন ( আবরারের বাবা ) তিহাশের সাথে খেলছে। আবরার এসে বসার ঘরে বেতের চেয়ারে বসে পড়ল। এছাড়া তাদের বসার ঘরে দুটো ছোট সাইজের সোফা আছে। মেঝেতে একটা কার্পেটও আছে। কয়েকটা ছবি টাঙানো দেওয়ালে আর এছাড়া ঘরের এক কোনে একটা ল্যাম্পশেড আছে। আলতাফ হোসেন তার এই বাড়ির উপর অনেক টাকা খরচ করেছেন। খুব শখের বাড়ি তার।বাড়ির পিছনে দুটো বড় বড় আম গাছ আছে। দুতলার এই বাড়িটার নিচতলা ভাড়ায় দেওয়া। আলতাফ সাহেবের চালের আরদ ছিল। ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই সবকিছুই শেষ হয়ে গেল। ছেলে এসব ব্যবসা বোঝে না বলে ব্যবসাটা আর টিকল না!
আবরারের আসার খবর পেয়ে রোহানা বেগম ছুটে এলেন। পূর্ণার সাথে দেখা হয়েছি কি না, কথা বলেছে কি না এসব জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। আবরার হ্যাঁ বলে নিজের ঘরে চলে গেল। দু একটা কথা বলার ইচ্ছে ছিল তার কিন্তু পেছনে পূর্ণা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু বলল না।
সকালে চিঠি এসেছে। কিন্তু সেই চিঠি এখন অবদি খুলে দেখে নি আবরার। ঘরে এসে বিছানায় বসে সেই চিঠি দেখতে লাগল। একটা চিঠি তার ইন্টারভিউ দেওয়া অফিস থেকে এসেছে। অনেকটা আগ্রহ নিয়েই সেটা খুলল আবরার। চিঠি টা পড়ে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। চাকরি টা হয়ে গেছে। অবশেষে তার চাকরি হয়ে গেছে!
আবরার খুব খুশি হলো। চিঠি টা ঘরে রেখে এসে দাঁড়াল বেলকনির কাছে। এবার মনে হচ্ছে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সময় হয়ে গেছে তার পরিবার কে নিলুর কথা টা বলার!
দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। বেলকনি থেকে ঘরে উঁকি দিল আবরার। সে জানে এটা পূর্ণা কারণ এই বাড়িতে এখন সে ছাড়া আর কেউ নেই তার ঘরে নক না করে ঢুকবে না। তবুও উঁকি দিয়ে বলে, এসো!
“আপা আপনাকে ডাকছে খেতে আসার জন্য!
“আসছি!
বলেও বেলকনির কাছে দাঁড়িয়ে রইল আবরর। বিছানায় থাকা চিঠি টা দেখতে পেল পূর্ণা। কৌতুহল বসত সেটাই তুলে নিল। আবরার চাকরি হয়ে গেছে এটা শুনে খুশি হলো সে। কিন্তু অবাক হলো এটা ভেবে এই নিয়ে আবরারের কোন মাতামাতি না দেখে। নিজেই মুখ ফুটে বলল,
“আপনার চাকরি হয়ে গেছে!
“হুম!
“তবুও আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
“তো কি করবো?
“কি করবেন জিজ্ঞেস করছেন?
“হুম, কি করার আছে। চাকরি হয়ে গেছে। এখন থেকে শুধু সকাল সকাল অফিসে যাবো সারাদিন কলম ধরে বসে কাগজ দেখবো। বাসের সেই ঠ্যালাঠ্যালি পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই বাসায় ফিরব। প্রতিদিনের এক রুটিন।
“আপনি মানুষটা তো দেখি বড্ড উদাসীন!
আবরার হাসল কিছু বলল না। পূর্ণা চিঠি নিয়ে ছুটল রান্না ঘরে!
আবরার তৈরি হচ্ছে। তিহাশ কে নিয়ে এক্ষুনি বের হবে। তিহাশ তৈরি হয়ে আবরারের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, মামা!
“তৈরি হয়েছিস!
“হুম, নানু ডাকছে তোমাকে।
“কেন?
“জানি না।
“সেটাও ঠিক, তুই জানবি কিভাবে। তা তোর পেটে কি এখন ব্যাথা হয় আর।
তিহাশ মাথা নেড়ে না বলল। আবরার তিহাশ কে কোলে উঠিয়ে বলল, তাহলে তোকে আজ একটা আইসক্রিম কিনে দেবো ঠিক আছে। কিন্তু এটা তোর পেটে ব্যাথা না হবার খুশিতে না, আমার চাকরি হবার খুশিতে জানিস।
তিহাশ মাথা নাড়ল। আবরার হেসে বলল, তুই কিভাবে জানবি।
“নানু বলেছে।
“তোর নানু কিভাবে জানল? পূর্ণা বলেছে।
তিহাশ মাথা নাড়ল। আবরার তিহাশ কে নামিয়ে রোহানা বেগমের ঘরে দরজা কড়া নাড়ল,
“মা!
“আয় ভেতরে আয়।
“বলো
“চাকরি হয়ে গেল আর এখনি ভুলে গেলি।
“কি বলছো এসব।
“আর না হলে কি বলবো। নাহলে একবার এসে বলে যেতিস না, মা আমার চাকরি হয়ে গেছে।
“আমি কি তোমাদের না বলে থাকতাম।
“জানি না এতো কিছু। বাদ দে!
বলেই আবরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তবে আমি এতো টুকুতেই খুশি যে তোর চাকরি টা হয়ে গেছে। আল্লাহ আমার কথা শুনেছে। আসার সময় ভালো দেখে মিষ্টি আনিস তো। ভালো দেখে আনবি আর একটু রসমালাই আনিস। পূর্ণার খুব পছন্দ।
আবরার মুখ নিমিয়ে গেল। রোহানা বেগম আবার বলতে শুরু করলেন, দেখলি পূর্ণা মেয়েটা কতোটা লক্ষ্মী মেয়ে। বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই এতো বড় একটা সু খবর পেলাম।
আবরার কথার জবাব না দিয়ে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। তার মায়ের কথা সে বুঝতে পারছে কিন্তু এমনটা হয় না! সে নিলু কে ভালোবাসে শুধু নিলু কে!
—–
“আর এক কাপ চা কি দিতে বলবো, আপনার নাকি ঊষা’র হাতের চা অনেক পছন্দ!
ফরহাদ মাথা নিচু করে বসে রইল। নিলুফার হেসে বলল, “মা চাচিদের বাসায় গেছে শ্রেয়ার সাথে। এই তো দশ মিনিটের পথ হবে। কিন্তু সেখানে বসে আড্ডা দেবে অনেকক্ষণ।
“আমি তাহলে এখন চলে যাই!
“উঁহু, না তা হবে না। চা খান, এই বিস্কিট দিয়ে ভিজিয়ে খান। আমার খুব পছন্দের বিস্কিট এগুলো।
“আমার তৃষ্ণা পেয়েছে!
নিলুফার শব্দ করে হাসল। উঠে পানির গ্লাস নিয়ে এসে বাইরে দিলো ফরহাদের কাছে। ফরহাদ ঠক ঠক করে পুরো গ্লাস শেষ করল। নিলুফার চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,
“খুব ভয় পাচ্ছেন দেখছি।
“ভয় পাচ্ছি না। নার্ভাস হচ্ছি।
“এ দুটোর মাঝে পার্থক্য আছে বুঝি।
“হুম!
“কিন্তু ফরহাদ সাহেব একটা কথা কিন্তু বলতে হবে, আপনার সাহস কিন্তু দারুন। নাহলে কি ভালোবাসার জন্য এসে শেষ অবদি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন।
ফরহাদ চুপ হয়ে বসে রইল। নিলুফার বিস্কিটে কামড় দিয়ে বলল, “ভুল করছেন ফরহাদ সাহেব! আপনি ভুল করছেন।
ফরহাদ চোখ তুলে তাকাল নিলুর দিকে। নিলু অন্যত্রে চোখ সরিয়ে বলল, আবরার চাকরিটা এবার হয়ে যাবে। তখন বাড়িতে আমার কথা বলবে সে। অতঃপর বিয়ে তখন মাঝখান দিয়ে আপনি কষ্ট পাবেন। কেন পেতে চান এই কষ্ট। এখনো সময় আছে চলে যান।
ফরহাদ মৃদু হেসে বলল, তাহলে না হয় আপনার বিয়ে খেয়ে যাবে।
নিলুফার ফরহাদের দিকে তাকাল। খিলখিলিয়ে হেসে বলল, ফরহাদ সাহেব আপনি একটা পাগল বুঝলেন তো। শুধু পাগল না অনেক বড় পাগল!
ফরহাদের ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিত হাসির কিনারা দেখা গেল!
——
ইরার দেওয়া প্যাকেট হাতে নিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে তিতির। এই প্যাকেট নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলেই হাজারো কথা জুটবে। নিলু আপা দেখলে তো পিছেই থাকবে। কে দিলো, কেন দিলো এটা না জানা অবদি পেটের ভাত হজম হতে দেবে না আপা!
হঠাৎ করেই বাবার গলার আওয়াজ পেল তিতির। তাকিয়ে দেখল সাদা পাঞ্জাবি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে বাবা। তার মাথায় একটা সাদা টুপি। বাবা হেসে বললেন, কিরে তিতির এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
“কিছু না বাবা এভাবেই।
“চল ভেতরে চল!
অতঃপর বাবার সাথে করে বাড়ির ভেতরে ঢুকল তিতির। নিলুফার এসে দরজা খুলে দিল। প্যাকেট তার চোখের আড়াল হলো না। বলে না যেখানে বাঘের হয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। তিতির ঘরে ঢুকতেই নিলুফার দৌড়ে এসে বলল, এই কি আছে রে প্যাকেটে
“পাঞ্জাবি!
নিলুফার প্যাকেট খুলে পাঞ্জাবি বের করল। হাত দিয়ে ছুঁইয়ে বলল, বাহ বেশ তো দেখতে। কে দিল? সাদা চামড়ার মেয়েটা!
“হুম আপা!
“কেন দিল?
“আমি কিভাবে জানবো, যে দিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করো আপা!
“আহ রেগে যাচ্ছিস কেনো? কেনো দিয়েছে এটাই তো জিজ্ঞেস করলাম।
“যদি আমি জানতাম তাহলে তো বলতাম।
“ওহ আচ্ছা!
বলেই হাসতে লাগলো। তাও মুখ টিপে। তিতিরের এবার রাগ হচ্ছে, অসহ্য লাগছে। গামছা হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল সে! নিলুফার এখনো মুখ টিপে হাসছে!
——–
তিন দিনের জ্বরে ভুগল শ্রেয়া। ঘর থেকে বের হতে পারি নি জ্বরের চোটে। আজ তার মনটা ভালো তার সাথে শরীরও। মা সুন্দর করে চুলে তেল দিয়ে দুটো বেনুনী পাকিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই না, এমনকি তাকে সাথে নিয়ে এসেছে স্কুলে দিয়ে যেতে। রাস্তায় কিনারে মায়ের হাত ধরে হাঁটছে শ্রেয়া। দূরে কতো গুলো ছেলে দৌড়াদৌড়ি করছে। কি হলো এখন? মা হাত আরো শক্ত করে ধরল। শ্রেয়া উঁকি দিয়ে দেখল একটা ছেলেকে মা*রছে কয়েকজন মিলে। ছেলেটা হুমড়ে পড়ল নিচে। সেই ছেলেটাকে একজন উঠিয়ে কলার ধরে ঘুষি মারতে লাগল। যে মারছে সে হলো মামুন! মামুনের এমন বিমর্ষ রূপ দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে গেল শ্রেয়া। মা’র সাথে খুব সাবধানে সেখান থেকে চলে গেল স্কুলে।
মা তাকে স্কুলের গেটের সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন, ভালো মতো মন দিয়ে ক্লাস করবে। শরীর কি এখন খারাপ লাগছে।
“না!
“ঠিক আছে। একদম স্কুলের বাইরে যাবে না। ছুটি দিলে এইখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে আমি নিতে আসবে। দেশটা অধঃপতনে গেছে। যেখানে সেখানে এখন মারামা*রি, কাটাকা*টি। কিভাবে বেধোরে মা*রল ছেলেটাকে। তোমাকে বলছি, একা একা একদম বের হবে না।এখন বলো কিছু খাবে কিনে দেবো।
শ্রেয়া মাথা নেড়ে না করল কিন্তু তার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। ইচ্ছে করছে বলতে একটা কোক কিনে দাও খাবো। কিন্তু তখনকার ওই কান্ড দেখে ভয়ে এখনো ঘাবড়ে আছে সে। তবুও মা তাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে একটা কোক কিনে দিল। মা কি তাহলে তার মনের কথা টের পেয়েছে।
স্কুল ছুটির পর মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরছে শ্রেয়া। চায়ের দোকানের দিকে একটিবার তাকাল সে। মামুন ছুটে বের হলো দোকান থেকে। তার হাতের সিগারেট’র ধোঁয়া উড়ছে। মামুন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া তাকিয়ে দেখল মামুনের হাত বেয়ে র*ক্ত পড়ছে। এতেই সে ভয় পেয়ে গেল। মায়ের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে মুখ ঘুরে নিল সে।
মামুন সিগারেট টেনে শ্রেয়ার দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখতে লাগল! জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, এই কয়েকদিন কেন আসে নি ও। সে কি জানে, তার জন্য’ই প্রতিদিন এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকে মামুন। বোধহয় জানে না!
#চলবে….
[ ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল ]