কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৫৮ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
520

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“যেই স্থানে অপমান হয় সেই স্থান ত্যাগ করাই উত্তম। এটা আমি আমার জীবনের ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিয়েছি। আমি অন্য কারো মতো সতী সাবিত্রী নই কাব্য। আমার কাছে আমার আত্মসম্মান সবার আগে। আর আমি সুখের লোভী নই যে একটু স্বামীর সাথে সুখী থাকার জন্য সব অপমান সহ্য করবো।

আত্মসম্মানবোধ মানে, অহংকারপূর্ণ নাকউঁচু স্বভাব নয়, আত্মসম্মানবোধ মানে যা কিছু আমাকে ছোট করে, তা থেকে দূরে থাকা!

~আতিক উল্লাহ (হাফি.)

মেহবিনের কথায় মুখর ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি সেসব কিছুই বলতাম না তোমায়।”

মেহবিন শান্ত স্বরে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তাহলে কি বলতেন আপনি আমায়?’

“যেখানে আমার স্ত্রীর অপমান হয় আমিই চাইনা সেখানে আমার স্ত্রীকে রাখতে। আমি জানিনা দাদিজানের কি হয়েছে যার কারনে উনি এসব বললেন। তবে আমি এইটুকু জানি দাদিজান তোমায় ভিশন স্নেহ করতেন আর এইটুকুও বুঝতে পারছি আজ আমার স্ত্রীর অপমান হয়েছে।”

“আপনি ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন বলুন তো!”

“তেমন কিছু না এই মুহূর্তে তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তোমার সাথে আছি। মনে রেখো বিহঙ্গিনী এই কাব্য তার বিহঙ্গিনীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।তাই যাই হোক না সে সবকিছু মেনে নেবে তবুও বিহঙ্গিনীকে ছাড়বে না।”

মেহবিন শান্ত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমাদের সাময়িক বিচ্ছেদ এর সময় হয়ে এসেছে কাব্য । এই বাড়িতে আমি সেদিনই পা রাখবো যেদিন নাফিয়া আপুর বিয়ে হয়ে যাবে আর আমাকে সসম্মানে গ্ৰহন করা হবে। এখন আর বাঁধা দেবেন না । আসছি আমি।

বলেই মেহবিন চলে গেল। মুখর ভাবলো এখন ওকে একটু একা ছেড়ে দেবে। যাতে ও সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মেহবিন শান্ত ভাবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলো। সবশেষে ও এটাই পেল ও বলল,,

“তুমি তোমার মামার কথামতো নিজের টাকার ভাগ থেকে খরচ করে বিদেশ চলে যাও মেহবিন মুসকান। যদিও এটা তোমার নয় তোমার মায়ের সুত্রে পেয়েছো। কিন্তু এর হকদার তো তুমি তাহলে তো তোমার কারো সাহায্য লাগছে না। এটা তোমার মামার টাকা নয় এটা তোমার মায়ের টাকা। আর মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে এবার তোমাকে তোমার মায়ের টাকা থেকেই তোমার সাহায্য নিতে হবে ‌। এর মাধ্যমেই তুমি নিজের পড়াশোনা কম্পিলিট করো আর নিজের পায়ে দাঁড়াও মাথা উঁচু করে। এতে দাদিজান কে উচিত জবাব দেওয়া হবে। তবে একটা জিনিস খুব খারাপ হলো এই প্রথম মেহবিন মুসকান একজন মানুষ কে চিনতে ভুল করলো। আচ্ছা সত্যিই কি ভুল করলো যদি সে ভুল করেই থাকে তাহলে আছিয়া খাতুনের চোখ ছলছল কেন করছিল তখন। উনি কি সত্যিই আমাকে এরকম ভাবেন নাকি অন্য কোন কিছু আছে। এই মুহূর্তে এসব ভাবার সময় নেই সে তোমার আত্মসম্মান এ আঘাত করেছে এর উচিৎ জবাব তো দিতেই হবে।”

মেহবিন আর বেশি কিছু চিন্তা করলো না। মনোযোগ পুরো পরীক্ষায় দিলো। এদিকে মুখর শুধু এইটুকুই জানালো মেহবিন ওর থেকে টাকা পয়সা এখনো অব্দি নেয় নি। আর কিছু বলেনি। দাদির সাথে কথাও বলেনি।দেখতে দেখতে মেহবিনের পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেল। এর মাঝে মেহবিন শাহরিয়ার পরিবারের কারো সাথেই কথা বলে নি। মেহবিনের পরীক্ষার শেষের দিন। মেহবিন পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই দেখলো মুখর পাঞ্জাবি মাস্ক আর ক্যাপ পরে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। মেহবিন মুচকি হেঁসে সেদিকে গেল।ও এই মানুষটাকে খুব যত্ন করে কারন এই মানুষটা ওকে বিশ্বাস করে আর ভালোবাসে। মেহবিন যেতেই মুখর বলল,,

‘মিসেস বিহঙ্গিনী আজকের দিনটা কি আপনি আপনার কাব্যের নামে করতে পারবেন?”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘কেন নয়!”

মেহবিন আর মুখর সারাদিন একসাথে ঘুরলো। ফুচকা খেল মেহবিনের ফুল অনেক পছন্দ তাই ফুল কিনে দিল। বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে যাওয়ার দিন মেহবিন বলেছিল,,

‘আপনার কাছে বেশি কিছু চাইনা শুধু এইটুকু চাই। কথা দিন আমাদের প্রতিটা সাক্ষাতে আপনি আমার জন্য ফুল আনবেন?”

মুখর সেদিন মুচকি হেসে কথা দিয়েছিল। এরপর থেকে যতোবার দেখা হতো মুখর ওর জন্য ফুল আনতো। মেহবিন মুখর কে ওর বিদেশ যাওয়ার কথাটা বলল। প্রথমে কথাটা শুনে মুখর থমকে গিয়েছিল তবে মুচকি হেসে বলেছিল,,

‘আমি জানি তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে বুঝে শুনেই নেবে। সমস্যা নেই আমি তোমার সাথে আছি। কবে যাবে আমাকে বোলো আমি এয়ারপোর্ট এ যাবো তোমাকে ছাড়তে। তবে হ্যা যাওয়ার আগে তোমার কাছে পুরোদিন আর রাতটা কিন্তু আমার চাই।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“ঠিক আছে।”

এরপর কয়েকদিন পর মেহবিনের যাওয়ার সময় হয়ে এলো। মেহবিন আর মুখর দু’জনে মিলে প্ল্যান করলো সারাদিন পাঞ্জাবি আর শাড়ি পড়ে দুজনে কাটাবে। হলোও তাই মুখর আর মেহবিন সারাটা দিন তাদের নিজের মতো কাটালো। রাতটাও মুখরের আবদারে ভালোবাসাময় ভাবেই কাটলো।

অতঃপর মেহবিনের বিদেশ যাওয়ার দিন। মুখর মেহবিন কে ছাড়তে এসেছে এয়ারপোর্টে। মেহবিন মুখরের পরিবারের বাকি সবাইকে ফোন করে বলেছে সে বিদেশ যাচ্ছে পড়াশোনার জন্য। বিষয়টা আছিয়া খাতুনের কানেও গেছে তবে মেহবিন তার সাথে কোন কথা বলেনি। চৌধুরী পরিবার তাকে এয়ারপোর্টৈ ছাড়তে চাইছিল কিন্তু মেহবিন তাকে সাফ মানা করে দেয়। ওর মানা করার জন্য তারা চেয়েও আসতে পারেনি। মুখর গাড়ি থেকে নেমে মেহবিন কে হাত ধরে নামালো। মুখর আজ কালো পাঞ্জাবি পরে এসেছে মুখে অবশ্য মাস্ক ও আছে। সারাটা রাস্তা মুখর একটা কথাও বলেনি ড্রাইভ এর পাশাপাশি কালো বোরকা আর হিজাব পরিহিতা মেহবিন নামক মেয়েটাকে দেখে গেছে। মুখর চুপচাপ দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,

“আজ আপনি শোক দিবস পালন করছেন নাকি কাব্য? যে আমাকে বিদায় দিতে কালো পাঞ্জাবি পরে এসেছেন।”

মুখর মেহবিনের কথায় ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,

বিহঙ্গিনী বাঁধিছে বাসা
আমার গাছের প্রান্তরে,
খাই দাই ঘুড়ে বেড়াই
মনের সুখে গান করে।

আচমকা এক কালবৈশাখী ঝড়ে
ভাঙ্গিয়া গিয়াছে বাসা
উড়িয়া গিয়াছে বহু দূরে
আমায় করিয়া নিরাশা।

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“এর জন্য কি আমি দায়ী কাব্য?”

মুখর মাথা দিয়ে না করলো। তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে আবার বলল,,

“আল্লাহ তায়ালা বলেন,,

” আমি তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য পরীক্ষার মাধ্যম বানিয়েছি। তোমরা কি সবর করবে? তোমাদের রব সব কিছু দেখেন। ”
( আল ফুরকানঃ২০ )
ধৈর্য্য ধারন করুন ইনশাআল্লাহ শেষটা সুন্দর হবে। লেখক খায়রুজ্জামান খান সানি এর একটা উক্তি আছে,,
❝ভালোবাসা সুন্দর। ভয়ংকর রকমের সুন্দর।কেউ পেয়ে ভালোবাসতে জানে না।কেউ হারিয়ে ভালোবাসতে জানে।আবার অপূর্ণতাই যেনো ভালোবাসার পূর্ণতা এনে দেয়।❞

কিন্তু আমাদের মাঝে পূর্ণতা তো আছে তবে সাময়িক অপূর্নতার মধ্যে দিয়ে।”

মুখর মেহবিনের গালে হাত রেখে বলল,,

‘আমি জানিনা তোমার ভেতরে কি চলছে তবে আমি জানি তুমি নিজ ইচ্ছায় যাচ্ছো না। যাই হোক ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে। নিজের খেয়াল রেখো আর হ্যা অবসর সময়ে যদি আমায় মনে পড়ে তাহলে না হয় আমাকে একটা কল করে নিও। আর হ্যা এটা ভুলে যেও না আবার ভালোবাসি বিহঙ্গিনী।

মুখরের চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো। মুখর দুই পা পিছিয়ে এলো। আবার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহবিন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও এগিয়ে এসে মেহবিন কে টাইট করে জড়িয়ে ধরল। মেহবিন এবার ও কোন রিয়াক্ট করলো না তবে ও নিজেও জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর মেহবিন কাঁধে ভেজা অনুভব করলো ও বুঝতে পারল মুখর কাঁদছে। মেহবিন মনে মনে বলল,,

“তার সাময়িক বিচ্ছেদেই এতো অশ্রু না জানি তার একেবারে বিচ্ছেদ এ কি হতো? তার ভালোবাসা এতোটা গভীর যে তার সাথে আমায় সবসময় আঁটকে রাখে। তার যত্ন আমায় বারবার মুগ্ধ করে। তার সাক্ষাৎ আমায় বারংবার আনন্দ দেয়। তার বিচ্ছেদ ও আমাকে ততটাই পীড়া দিচ্ছে। আর তার অশ্রু গুলো আমায় ভয়ঙ্করভাবে পীড়া দিচ্ছে।

আমি প্রকাশ করি না তাই বলে এমন নয় যে আমি ভালোবাসি না। আমি কাঁদি না তার মানে এই নয় আমাদের বিচ্ছেদ এ আমার কিছু যায় আসে না।’

মনে মনে বললেও মুখ ফুটে বলা হলো না। কিছুক্ষণ পর মুখর মেহবিন কে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো। মেহবিন হেঁসে বলল,,

“বিহঙ্গিনীর কাব্যকে অশ্রুতে মানায় না মিস্টার মুখর শাহরিয়ার। তাকে সর্বদা হাসিমুখেই মানায়।”

মুখর চোখের পানি মুছে হাঁসি ফুটিয়ে বলল,,

“মুখর শাহরিয়ার তো অবুঝ বালক। তাই না চাইতেও কেঁদে ফেলে। বুঝোই তো বাচ্চা মানুষ।”

মুখরের কথায় মেহবিনের হাঁসিটা প্রসারিত হলো। আর বলল,,

“আমার এই হাঁসি খুশি বাচ্চা মানুষটাকেই ভালো লাগে। আর শুনুন যখন কোন কারনে আপনি অনেক খুশি হবেন তখন আমায় ফোন দেবেন আপনার গানবাজনা ছাড়া নাচ দেখবো। আর হ্যা আলুওয়ালা কাচ্চি খেতে গেলে দুই প্লেট নেবেন। একটা আমার আরেকটা আপনার। আপনি আমার প্লেট থেকে সব আলু নিয়ে নিবেন ঠিক আছে।”

মুখর হেঁসে বলল,,

“ঠিক আছে।”

মেহবিন কে এখন যেতে হবে। তাই মুখর ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

‘নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ!

মেহবিন কয়েকপা এগিয়ে গেল আবার পেছনে তাকালো দেখলো মুখর নিচু হয়ে চোখ মুচছে। ও মুখরকে ডাক দিল,,

‘কাব্য?”

ও মেহবিনের দিকে তাকালো। মেহবিন হাত দিয়ে দেখাতে লাগলো,,

‘যদি কখনো আমায় মনে পড়ে তখন একটা চিঠি লিখিয়েন। আর হ্যা তাতে তার সাথে ফুল রাখতে ভুলবেন না কিন্তু। আমি যখন ফিরে আসবো তখন গুনে গুনে সব চিঠি নেব আর মনোযোগ সহকারে পড়বো। তখন দেখবো আপনার ভালোবাসা।”

মেহবিনের হাত দিয়ে দেখানো লিঠি লেখার দৃশ্য মুখরের মন কাড়লো। ওর মুখে না চাইতেও হাঁসি ফুটে এলো। তখন মুখর চিৎকার করে বলল,,

“ভালোবাসি বিহঙ্গিনী।”

মেহবিন হেঁসে ভেতরে ঢুকে গেল। মুখর সেদিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল। অতঃপর বাড়ি চলে এলো। সোজা নিজের রুমে চলে গেল। ওকে আজ কেউ ডিস্টার্ব করলো না। রাত হতেই মেহবিন কে ভিশন মনে পরতে লাগলো। ও ছাদে গেল চাদ উঠেছে আজ। মুখর কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল। মুখর আনমনে বলে উঠলো,,

রাতের আকাশ রাতের শহর
চাঁদের আলো নির্জন প্রহর।
ঘুমন্ত জাগরণী মন আমার
দূরন্ত স্ফুলিঙ্গ প্রেম তোমার।

ভোরের আলো ভোরের আকাশ
নির্জল নিষ্ফলা শীতলা বাতাস।
চাইলেই ধরা যায় না ভালোবাসা
নির্বাস নিষ্পেষীত কাছে আসা।

উত্তপ্ত বেলা উত্তপ্ত এই শহর
ক্লান্ত মন অলস এই দুপুর।
বলতে গিয়েও কথারা যায় থেমে
জমা হয়ে যায় উড়ন্ত চিঠির খামে।

বলতে পারো কিসের এতো জ্বালা
তোমার ভালোবাসা না প্রেমের খেলা।
ফেরারী মন খুঁজে বেড়ায় ঠিকানা
তোমার কথা ভেবেই একা দিন গোনা।
~শাকিল হোসেন (কাব্যের বিহঙ্গিনীর পাঠক বিহঙ্গিনীর জন্য লিখে পাঠিয়েছেন)

_____________

বর্তমান,,,

মুখর মেহবিন কে বাড়ি এনে অন্যরুমে ঢুকলো। আর বলল,,

‘মিসেস বিহঙ্গিনী আজ আপনার কাব্য আপনাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে দেবে।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“অতঃপর সে চাদর আমায় ঢেকে দিক।”

____________

‘এই যে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি কাইল রাইতে এতো দেরি কইরা ঘুমাইছো ক্যা? রাইতে কি চুরি করবার গেছিলা?

মুখর সবে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় আসতেই তাজেলের কথায় ও ভ্যাবলার মতো ওর দিকে তাকালো। ও উঁকি দিয়ে রান্নাঘরে তাকালো মেহবিন মুচকি হাসছে। মুখর বলল,,

“কেন নেত্রী তোমার কেন মনে হলো আমি চুরি করতে গিয়েছিলাম?”

‘সকাল হইছে কুনশুম আর তুমি উঠলা এহন। রাইতে কি করছো তুমি?”

“আরে তেমন কিছু না নেত্রী। কোথাও যাই নি রাতে তেমন ঘুম হয়নি তো তাই।”

“কেন ঘুম হয় নাই?”

মেহবিন এবার জোরেই হেঁসে ফেলল মেহবিনের হাঁসি দেখে মুখর বলল,,

“এই যে তোমার ডাক্তারের জন্য?”

তাজেল ছোট ছোট করে চোখ করে বলল,,

“কেন ডাক্তার কি করছে? ডাক্তার তুমি কি করছাও পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালারে?”

“এবার নেত্রীর জবাব দাও নেত্রীর ডাক্তার?”

মেহবিনের হাঁসি মুখটা মুখর আর নেত্রীর কথা শুনে নিভে গেল। মেহবিন বলল,,

“আমি কিছু করি নি নেত্রী। নতুন জায়গা দেখে তোমার পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা ঘুমাতে পারেনি। এখন তুমি চুপ করে বসো আমি ডিম নিয়ে আসছি।”

মুখর বিরবির করে বলল,,

‘এরকম কথাটা আমার মাথায় কেন এলো না। আর বিহঙ্গিনী কি সুন্দর করে নেত্রীকে বুঝিয়ে দিল। এই না হলে মুখর শাহরিয়ার এর বউ।”

ডিমের কথা শুনে তাজেল বলল,,

“আমার ডিম ভাল্লাগে না।”

“ভালো না লাগলেও খেতে হবে।”

“ধরু আমার পাওডা খালি ঠিক না। তাইলে তুমি ক্যা তোমার চৌদ্দ গুষ্টি আমারে ডিম খাওয়াইতে পারতো না। কারন আমি পলাই যাইতাম।”

মেহবিন হেঁসে ডিমটা এগিয়ে দিয়ে বলল,,

‘খুব তাড়াতাড়ি তোমার পা ঠিক হয়ে যাবে। আপাতত ডিম খাও যখন তোমার পা ঠিক হবে তখন পালিয়ে যেও।”

মেহবিন তাজেলের হাতে ডিমটা ধরিয়ে দিল। মেহবিন ভোরে উঠেই গোসল সেড়ে নামাজ পরে রান্না করতে লেগে গেছে। এতো কিছুর মধ্যে মুখর কে তোলা হয়নি। তাজেল ভোরেই উঠেছে। মুখর কে না দেখতে পেয়ে ওর কথা জিজ্ঞেস করতে মেহবিন বলেছে কাল রাতে দেরি করেছে ঘুমাতে তাই উঠে নি। এই জন্যই মুখর কে দেখে তাজেল প্রশ্ন করলো। মেহবিন ঘরে গিয়ে গোসলের জামাকাপড় এনে মুখরের হাতে দিয়ে বলল,,

“নিন ফরজ গোসল শেষ করে আসুন তারপর ফজরের কাযা নামাজটা পরে নিন।”

মুখর বলল,,

“আমাকে ডাকলে না কেন?”

“এমনি এখন যান।”

বলেই মেহবিন রান্না ঘরে চলে গেল। তাজেল হুইলচেয়ার এ বসে আছে। আর সে রান্নাঘরে মেহবিনের সাথে আছে। মুখর গোসল শেষ করে নামাজ পরে নিল। রান্না শেষ তাই মেহবিন মুখরকে খেতে ডাকলো। তিনজন মিলে একসাথে খাবার খেয়ে নিল। তাজেল আর মুখর মেহবিনকে নিয়ে ঝগড়া করতে লাগলো। মেহবিন হেঁসে তা ইনজয় করতে লাগলো। হুট করে মেহবিন বলল,,

“এই যে পুলিশ পাঞ্জাবি ওয়ালা আর নেত্রী আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

মেহবিনের কথায় দুজনেই ওর দিকে তাকালো। মুখর বলল,,

“কি কথা?”

“আপনারা কি আজীবন আমাকে নিয়েই ঝগড়া করবেন?”

“হ্যা করবো তাতে তোমার কি সমস্যা!”

“কোন সমস্যা নেই। ”

‘আজ কিন্তু তোমায় ঘুরতে যাওয়ার কথা আমার সাথে। আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি এবার তোমার পালা।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“ঠিক আছে যাবো।”

তখন তাজেল বলল,,

“আমারে থুইয়া পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালার সাতে যাইবা ডাক্তার?”

তখন মুখর বলল,,

“না আজ নেত্রী তার ডাক্তার আর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা একসাথে যাবে।”

“সত্যি?”

‘হুম সত্যিকারের সত্যি।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে মুখরের দিকে তাকিয়ে রইল। তাজেল এর হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ এই জন্য বেশি ঘুরাঘুরি করলো না। বিকেলে মুখরের একটা ইমার্জেন্সি করে কল আসতেই ও চলে গেল। আর এভাবেই আরো পনেরো দিন চলে গেল। এতো দিনেও মুখরের সময় হয়নি কাব্যের বিহঙ্গিনী কে জানার। এদিকে মেহবিনের কাছে শেখ শাহনাওয়াজ ফোন করে আরবাজ মিশু আর ওর বিয়ের কথা বললেন। এদিকে আছিয়া খাতুন ও বললেন। ওদের বিয়ে দশদিন বাদে। মেহবিন কিছু্ই বললো না শুধু বলল ঠিক আছে। তাজেলের হাত পায়ের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। সে এখন আস্তে আস্তে হাঁটতে পারে। মেহবিন মুখর কে বলল ওর সাথে দেখা করতে চায়। মুখর সেদিন রাতে মেহবিনের বাড়িতে আসলো। তাজেল তো সেই খুশি। তিনজন এ একসাথে খাবার খেলো। তাজেল ঘুমিয়ে পরলো। মেহবিন মুখরকে নিয়ে পেছনের বারান্দায় গেল। মুখর বলল,,

“আজ কি রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনীর গল্প বলার জন্য এখানে ডাকলে?”

“না।”

‘কিন্তু আজ যে আমার ভিশন জানতে ইচ্ছে করছে কাব্যের বিহঙ্গিনী কে?”

“তাহলে অপেক্ষা করতে হবে আরো দশদিন। কারন বিহঙ্গিনী মুক্ত পাখির মতো কাটাবে দশটা দিন। সে নিজের মতো ঘুরতে চায়। যেখানে থাকবে না কোন ইন্টারনেট কানেকশন না থাকবে কোন সম্পর্ক। বিহঙ্গিনী থাকবে একা। সে নিজেই তার সেরা সঙ্গী হিসেবে থাকবে।এটাই জানাতে আপনাকে এখানে ডাকা।

“মানে?”

‘মানে হলো কাব্যের বিহঙ্গিনী খুব তাড়াতাড়ি দায়িত্বের আর কাব্যের ভালোবাসায় আটকে যাবে। তাই সে কারো সাথে আটকানোর আগে নিজের সাথে কাটাতে চায়।”

‘আর নেত্রী?”

‘তার দায়িত্ব আমি আপনাকে দিলাম কাব্য। দশদিন পর আমাদের আবার বিয়ে হবে। আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন বরবেশে আর আমি আসবো বধু বেশে লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পরে একদম আপনার মনের মতো সেজে। কি থাকবেন তো অপেক্ষা করে?”

মুখর মুচকি হেসে বলল,,

“তোমার জন্য দশদিন নয় বিহঙ্গিনী, দশ যুগ অপেক্ষা করতে পারবো।”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ জানি দেরি ও ছোট হয়েছে তবে আমার কিছু করার নেই। সারাটা দিন ভিশন ব্যস্ততায় কেটেছে। রমজান আসছে বুঝতেই পারছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো দিতেই পারবো না। তবে আমি চাইছিলাম ছোট করে হলেও দেওয়ার। তাই ছোট করে হলেও দিলাম। তবে পর্ব ছোট হলেও আপনারা বড় করে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু। ওদের অতীত কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here