প্রেমকুঞ্জ 💓 #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) | চতুর্দশ পর্ব |

0
160

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| চতুর্দশ পর্ব |

সময় পেরিয়ে গেলো। শ্রেয়ার মেট্রিক পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল। পরিক্ষায় অবশ্য ভালো নম্বর পেয়েই পাশ করলো সে। এখন খোঁজ চালাচ্ছে কলেজের ব্যাপারে। তিতির এবার ভার্সিটিতে ভর্তি’র জন্য তোড়জোড় করছে। তিতিরের কাছে মনে হচ্ছে সময় সত্যি অনেকখানিই পেরিয়ে গেছে। ইরার সাথে দেখা হলো না আজ বেশ কয়েকদিন। ভেবেছিল যত’ই কম দেখা ততোই ভালো। ভুলে যেতে পারবে তাকে। কিন্তু না তা তো সম্ভব হচ্ছে না। আরো তাকে না দেখবার অস্থিরতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। আজ বহু দিন পর ইরার দেওয়া সেই পাঞ্জাবি টা বের করল তিতির। যেই ভাঁজে রাখা ছিল এখনো সেই ভাজেই আছে। ইরা আর আসে নি এটা নিতে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাঞ্জাবি তে হাত বুলিয়ে আবারো রেখে দিল তিতির! কয়েকটা টিউশনি পড়ায় এখন। দিন বেশ চলে যাচ্ছে। বাবা’র ব্যবসা টাও এখন অনেক এগিয়েছে। তিতির ভাবছে বাবার ব্যবসায় হাত দিয়েই তা আরো বড় করবে। ক্ষতি কি ব্যবসা করতে। ভালোই তো হবে, অন্যের দ্বারস্থ করা লাগবে না।

তিতির বাসা থেকে বের হতেই খানিকক্ষণ পর ঘরে ফিরল নিলুফার। দিন ভালোই যাচ্ছে তার। তাকে দেখে কেউ বলতে পারবে না তার মনের ভিতর আদৌও কতোটা কষ্ট। ফরহাদ হয়তো জানে তবুও বার বার নিলুফার কে দেখে অবাক হয়। কতোটা শান্ত ভাবেই থাকে এই মেয়েটা। ফরহাদের মনে হয় আল্লাহ তায়ালা তাকে আরেকটা সু্যোগ দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত তার। তবুও নিলুফার কে আরো সময় দিতে চায়। এতো তড়িখড়ি’র কিছু নেই। নিলুফার কে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতর থেকে সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয় এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারে ফরহাদ!

——-

ইরা দরজা ধাক্কাল! শ্রেয়া দরজা খুলে তাকিয়ে রইল ইরার দিকে। মেয়েটা কে কেন জানি চেনা চেনা লাগছে তার কাছে। কোথাও হয়তো আগে দেখেছে তবে মনে করে উঠতে পারছে না। ইরা ক্লান্ত গলায় বলল, তিতির আছে!

পরক্ষণেই মনে পড়ল এই মেয়েটা তিতির ভাইয়ের বান্ধবী। শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে না করল।‌ ভেতর থেকে নিলুফার উঁকি মেরে ইরা কে দেখে বলল,

“আরে ইরা যে ভেতরে আসো। অনেকদিন পর এলে যে। তোমার তো কোন দেখাই নেই!

ইরা ভেতরে পা রেখে বলল,
“ভালো আছো আপা!

“হুম ভালোই আছি! তোমার খবর বলো। শ্রেয়া ঊষা কে বল তো চা বানাতে।

“আপা একটু পানি খাওয়াবে আমাকে, খুব তৃষ্ণা পেয়েছে!

“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব দৌড়াদৌড়ি করে এসেছ। কিছু কি হয়েছে?

“না আপা কিছু হয় নি। এটা বুঝি শ্রেয়া। বাহ অনেক বড় হয়ে গেছো তো আমি তো ওকে চিনতেই পারি নি। খুব সুন্দরীও হয়েছে দেখছি!

নিলুফার হাসল। শ্রেয়ার কেমন লজ্জা লজ্জা পেতে লাগলা। সে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। ঊষা’র হাতে পানির গ্লাস পাঠালো!

নিলুফার প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই গল্প করল ইরার সাথে। ইরা কে বেশ চিন্তিত লাগছিল তার কাছে। কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করতে পারছে কিন্তু সেটা কি? ইরার কোন কথাই বলছে না। একটু পর পর’ই দরজার দিকে তাকাচ্ছে।‌ হয়তো তিতিরের অপেক্ষা করছে সে। নিলুফার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল,

“তিতিরের আসতে সময় লাগবে ইরা! কিছু বলার থাকলে আমাকে বলে যেতে পারো। আমি বলে দেবো!

ইরা প্রথমে বেশ বিচলিত হলো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে নিলুফারের হাতে দিয়ে বলে,

“আপা দয়া করে এটা একটু তিতিরের হাতে পৌঁছে দেবেন। খুব জরুরী।

“মনে হচ্ছে জীবন মরণের প্রশ্ন!

ইরা চমকে উঠে। নিলুফার হেসে উঠে বলে, না এমন ভাবে বলছো তাই বললাম!

“আপনি ঠিক ধরেছেন আপা। আমি আজ আসছি!

বলেই উঠে চলে যায় ইরা। নিলুফারের হাতে ইরার চিঠি খানা। লোভ হচ্ছে পড়ে দেখার কিন্তু এটা তো সম্ভব না। চিঠিপত্র টা বইয়ের ভাজে রেখে দিল নিলুফার!

——-

শ্রেয়া হুট করেই এখন শাড়ি পড়ে। ইদানিং তার হাব ভাব ও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। কেমন জানি মনে হয় মেয়েটা হুট করেই অনেকটা বড় হয়ে গেছে। নিলুফার প্রায়’ই আড়াল থেকে দেখে শ্রেয়াকে। অনেকক্ষণ ধরেই আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মিটিমিটি হাসতে থাকে সে।

শ্রেয়ার শাড়ি পড়ে বের হতে যাচ্ছিল বাসা থেকে। তখন’ই পেছন থেকে মা ডেকে উঠে বলে,

“কোথায় যাচ্ছিস?

“বান্ধবীর বাসায়।

“বান্ধবীর বাসায় এখন কি তোর!

“মা এতো কথা বলো না তো! কাজ আছে তাই যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো!

বলেই বের হয়ে যায় শ্রেয়া! মা কতোক্ষণ তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। তার মনে হচ্ছে ছেলে মেয়েরা বড় হয়েই গেলে আর মা বাবার কথা শুনতে চায় না। তারা চায় শুধু স্বাধীনতা!

—–

বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়া। মামুন কি আজ আসবে এখানে! হতে পারে আসবে। প্রতিদিন’ই তো বন্ধুদের আসে এখানে। ব্যতীক্রম হলো না আজ! মামুন আজও বন্ধুদের নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাবার পথে থেমে গেল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শ্রেয়ার দিকে। হাতের সিগারেট কখন যে শেষ হয়ে তার হাতের কাছে চলে এলো সেই খেয়াল নেই তার। হুট করেই আগুনের ছ্যাঁকা খেয়ে লাফিয়ে উঠল সে। সাথে বন্ধু বান্ধব সব হেসে উঠল। বিরক্তি মুখে শ্রেয়া চলে এলো সেখান থেকে!

মামুন দৌড়ে শ্রেয়ার পিছন পিছন যেতে থাকল। শ্রেয়া বুঝতে পেরে পিছন ফিরার সাথে সাথেই থেমে গেল মামুন।‌ চোয়াল শক্ত করে খুব জোরে বলে উঠল,
“আমার পিছন পিছন কেন আসছেন!

মামুন থতমত খেয়ে গেল। কিছু না বলে শ্রেয়ার পাশ দিয়ে চলে গেলো সে। শ্রেয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ভিতু একটা লোক কোথাকার!

——

সন্ধ্যে বেলায় ছাদে এসে দাঁড়াল ফরহাদ। নিলুফার আগে থেকেই ছিল সেখানে। ফরহাদ কে দেখে বলে উঠল,

*ফরসাদ সাহেব যে!

ফরহাদ হেঁটে এক পাশে এসে দাঁড়াল। নিলুফার হেসে বলল, কি সিগারেট খেতে এসেছেন নাকি আমায় দেখতে!

ফরহাদ কিছু বলতে পারল না। মাথা নিচু করে নিল। নিলুফার হেসে বলল, তাহলে দ্বিতীয় টাই কি ধরে নেবো আমি!

ফরহাদ হাসল। নিলুফার বলে উঠল,
“তা ফরহাদ সাহেব আপনি এতো অলস কেন?

“মানে!

“আচ্ছা এই ধরুন না, আমায় বিয়ে করতে চান। তা এখনো কি চান!

ফরহাদের মুখে কথা আটকে গেল। নিলুফার খিলখিলিয়ে হাসল। বলে উঠল,

“হ্যাঁ বিয়ে তো করতেই চান। তা না হলে কি আমাকে দেখতে আসতেন। তা আমাকে বিয়ে করতে হলে তো আমার মা বাবার কাছে প্রস্তাব দিতে হবে। তখন কি আমার মা বাবা একটা বেকার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেবে বলুন তো। একটা চাকরি কেন যোগাড় করছেন না আপনি!

ফরহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার এসব ভালো না নিলুফার!

নিলুফার ভ্রু কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আপনার মুখে আমার নাম শুনে অনেকটাই চমকে উঠলাম। তা একা একা প্র্যাকটিস করতেন নাকি।

ফরহাদ হাসল। নিলুফার এসে ফরহাদের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে বলল, তবে আমি এই কথা নিশ্চিত বলছি না আপনার চাকরি হয়ে গেলেই আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে। কারণ সত্যি এমনটা হয় না। চাকরি হয়ে গেলেই প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যায়। আপনি কি তাহলে সেই ভয়েই চাকরি করতে চান না ফরহাদ সাহেব!

বলেই নিলুফার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ফরহাদের দিকে। ফরহাদ ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল। হুমায়ূন আহমেদের একটা কথা বেশ মনে পড়ছে আজ!

“জীবন গল্প – উপন্যাস নয়। জীবনে কুৎসিত সব ব্যাপারগুলি সহজভাবে ঘটে যায়। অপরূপ রূপবতী একটি মেয়ে হাসতে – হাসতে কঠিন – কঠিন কথা বলে।

এই রূপবতী মেয়ে হচ্ছে নিলুফার, যে কঠিন কঠিন কথা গুলোও হাসতে হাসতে বলে ফেলে। এই ক্ষমতা কেবল তাদেরই থাকে!

——-

তিতির বাসায় ফিরল অনেক রাত করেই! নিলুফার তখন’ই এসে হাজির হলো তার ঘরে। তিতির খানিকটা বিরক্ত হয়েই বলল,

“কি হয়েছে আপা!

“ইরা এসেছিল আজ!

“ওহ!

“তোকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে!

“ভালো!

“আমি রেখে গেলাম টেবিলের উপর। পড়ে দেখিস! এটা নাকি তার জীবন মরণের প্রশ্ন!

কথাটা শুনেই থমকে গেল তিতির! কি আছে তাহলে চিঠিতে! নিলুফার ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই চিঠির পাতা খুলে বসল তিতির। অতঃপর…

#চলবে….

[ রি চেক করা হয়নি ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here