যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_৪ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
56

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(প্রাপ্ত বয়স্কদের ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

” তাহলে তো লেখাপড়ার খুব চাপ তোমার। তুমি বরং অফলাইনে থাকো এখন। মন দিয়ে পড়াশোনা করো। ”
কফি দিয়ে গিয়েছে ওয়েটার। কন্ঠ কফির কাপ হাতে নিয়ে বসে আছে। প্রহর কফিতে চুমুক দেওয়ায় ব্যস্ত।
” তারমানে একেবারে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বলছো?”
” কন্ঠ! আমি বললাম তোমার ভালোর জন্য আর তুমি আবারও সেই ঘ্যানঘ্যান শুরু করলে?”
” আমার কথায় তোমার এতো বিরক্তি? কই আমি তো তোমার উপর কখনো বিরক্ত হইনা!”
” আমি তো তোমার মতো সব সময় অভিযোগ করিনা। করি কি?”
কন্ঠ থামলো। কফিতে চুমুক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রহরের হাতে হাত রেখে কন্ঠ বললো,
” মা আজকে বিয়ের কথা বললেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগেই হয়তো বিয়ে দিবেন।”
” এট কেমন কথা? মেয়েদের কি বিয়ে করে সংসার করা ছাড়া কোনো গতি নেই? নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে করলে সমস্যা কী!”
প্রহর কন্ঠর হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে। কন্ঠ বোঝার চেষ্টা করছে প্রহরের মতিগতি। এরকম কথা শুনেও কি প্রহর কিছু বলবে না?
” সবার চিন্তা ভাবনা তো এক না প্রহর।”
” তুমি বাসায় বলো তুমি এখন বিয়ে করবে না। মিনিমাম আর এক বছর সময় নাও। সামনের বছর আমরা বিয়ে করে নিবো। অফিসে প্রমোশন হোক তারপর। ”
কন্ঠ হাফ ছেড়ে বাঁচল। প্রহর তাহলে তাকে নিয়ে সিরিয়াস।
” ঠিক আছে বলবো। কিন্তু যদি তারপরও বিয়ের জন্য বলে?”
” সমস্যা নেই। আমি বাসায় গিয়ে কথা বলবো তোমার। ভয় পেও না। হয়তো সময় হয় না কিংবা আমি তোমার মতো আবেগি নই। কিন্তু তাই বলে যে তোমাকে ভালোবাসি না তেমনটা নয়।”
কন্ঠর চোখ চিকচিক করছে নোনাজলে। টুপ করে কয়েক ফোঁটা মুক্তোর দানা ঝড়ে পড়লো আঁখি যুগল থেকে। প্রহর আলতো করে চোখ মুছিয়ে দিলো। কিছু বলার মতো অবস্থা কন্ঠর নেই এই মুহুর্তে। অতিরিক্ত খুশিতে ভীষণ আবেগি হয়ে গেছে সে। কফিশপ থেকে বেরিয়ে গাড়ি রেখে রিকশা নিলো দুজন। রিকশায় বসে হাতে হাত রেখে ঘুরলো বেশ কিছুক্ষণ।
” প্রহর! কতবার বলেছি তোমাকে পাবলিক প্লেসে এভাবে কোমর চেপে বসবে না।”
প্রহর কন্ঠর কথায় কর্নপাত না করে আরও শক্ত করে ধরলো। রিকশায় বসলেই এরকম দুষ্টমি করে প্রহর।
” রিকশায় বসবো আর তোমাকে জড়িয়ে বসবো না সেটা আমি ভাবতেই পারি না কন্ঠ।”
কন্ঠ হুট করে প্রহরকে সুড়সুড়ি দিতে শুরু করে। প্রহর টাল সামলাতে না পেরে ছেড়ে দেয় কন্ঠকে।
” আরও ধরো কোমর!”
কন্ঠ হাসছে সাথে প্রহরও। প্রহরের এই এক দূর্বলতা,সুড়সুড়ি!

” এজন্য! ঠিক এজন্যই আমি এসব ঘোরাঘুরি অপছন্দ করি মা। সমুদ্র বান্দরবন গেছে অলরেডি পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। কথা ছিলো তিন দিন পর ফিরবে। অথচ যাওয়ার দুদিনের মধ্যে সে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলো!”
বসার ঘরে বসে আছে ইফতি,শায়লা মল্লিক ও জাহাঙ্গীর মল্লিক। সমুদ্রকে নিয়ে সবাই ভীষণ চিন্তিত। ইফতির হাঁকডাক শুনে কন্ঠ আর শারমিন সুলতানাও এরমধ্যে দরজার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে।
” ইফতি মাথা ঠান্ডা কর বাবা। সমুদ্র তো ছোটো না একেবারে। ও যদি কোথাও যেতে চায় তাহলে তো আমরা আঁটকে রাখতে পারিনা!”
জাহাঙ্গীর মল্লিক বড়ো ছেলেকে শান্ত করতে বললেন। কিন্তু ইফতি যেনো আগুনের লেলিহান শিখা! আরও তেজি গলায় বলে সে,
” ভালো তো। এখন সবাই মিলে চিন্তা করে মরো। ওই যে কলিংবেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ”
” মনে হয় সমুদ্র ফিরেছে। ”
ইফতির মা তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু না সমুদ্র ফেরেনি। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ ও কন্ঠর মা।
” কী হয়েছে? ইফতি এরকম চিল্লাচিল্লি করছে কেনো শায়লা? ”
” ভেতরে আসো ভাবি। ”
শারমিন সুলতানা ও কন্ঠ ভেতরে ঢুকলো। শায়লা দরজা আঁটকে ওদেরকে বসতে বললো সোফায়। ইফতির চোখমুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলো কন্ঠ। শ্যামবর্ণ চেহারায় লাল চোখগুলো জলন্ত লাভার মতো লাগলো কন্ঠর।
” বড়ো মা তুমি কিছু বলো মা’কে। তুমি যেমন কন্ঠকে শাষণে রাখো, মা যদি তেমন করে সমুদ্রকে শাষণে রাখতো আজ এভাবে বসে বসে চিন্তায় ঝিমতে হতোনা। ”
” সমুদ্র ফেরেনি? ”
” না বড়ো মা। ফোনেও পাচ্ছি না। ”
যেমন এই লোকটা তেমন কন্ঠর মা! কন্ঠর তো মনে হয় ইফতি তার মায়ের সন্তান। আর কন্ঠ হচ্ছে সমুদ্রের আপন বোন। কোনোভাবে হয়তো অদলবদল হয়ে গেছে তারা।
” পাহাড়ি অঞ্চলে তো নেটওয়ার্ক থাকে না ভাইয়া। হয়তো সেইজন্যই… ”
” তুই চুপ কর। আমাকে শেখাতে হবে এমন কোথায় কতক্ষণ আর কেমন নেটওয়ার্ক থাকে। ”
এই ইফতিকে যদি পারতো কন্ঠ কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো এখন। ভালো কথা বললেও এমন করে। আচ্ছা প্রহরের কথা শুনলে ইফতি ঠিক কীরকম আচরণ করবে? নিশ্চিত প্রহরকে মারধর করে বোনের জীবন থেকে সরাতে চাইবে! ভাবতেই আঁতকে উঠলো কন্ঠ।
” আহা কন্ঠকে বকাবকি করছিস কেনো? ও তো ঠিক বলেছে। ”
বাহ! কত সুন্দর বাবা। কিন্তু তার ছেলেটা এমন? জাহাঙ্গীর মল্লিক আবারও কয়েকবার কল করে সমুদ্রকে। কিন্তু নাহ বরাবরের মতোই নট রিচেবেল বলছে।
” পেলে? ”
” নাহ শায়লা। আল্লাহকে ডাকো।”
কন্ঠর ইচ্ছে করছে কিছু বলতে কিন্তু ধমক খাওয়ার ভয়ে বলার ইচ্ছে নেই। সমুদ্রর বন্ধুদের মধ্যে থেকে কাউকে কল দিলেই তো জানা যায়। চার্জ শেষ হলে একজনের হবে কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকলে তো সবারই এক অবস্থা হবে। কন্ঠর আকাশপাতাল চিন্তার মধ্যে কলিংবেলের শব্দ কর্ণকুহরে পৌঁছলো সবার। আবারও শায়লা মল্লিক গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। হ্যাঁ সমুদ্র ফিরেছে। সমুদ্রকে দেখে সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
” সমুদ্র! বাবা তুই ঠিক আছিস?”
শায়লা মল্লিক ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। সমুদ্রও জড়ালো মা’কে। চোখ ছলছল করছে সমুদ্রর। চোখমুখ কেমন বসে গেছে। মায়ের চোখ থেকে কিচ্ছু এড়ায়নি।
” আমি ঠিক নেই মা।”
এরমধ্যে দরজার কাছে সবাই এসে দাঁড়িয়েছে। ইফতি এমনিতে যতই কঠিন মানুষ হোক সমুদ্রর চেহারার এরকম অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেছে সে-ও। কন্ঠ এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অষ্টাদশী মেয়েটিকে শুধালো,
” তুমি কে? ”
সবাই এবার অপরিচিত মেয়েটির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। পাহাড়ি অঞ্চলের মেয়ে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে এরমধ্যেই। পরনে তার নিজস্ব পোষাক। কিন্তু সমুদ্রর সাথে তার বাড়ি ফেরার হেতু এখনও পরিষ্কার না। কন্ঠর প্রশ্নের উত্তর দিলো না মেয়েটি। কিন্তু মেয়েটির হাবেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে ভীষণ ভয় পেয়ে আছে সে।
” কন্ঠ ভেতরে গিয়ে আমি সব বলছি।”
সমুদ্র মা’কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো। সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমুদ্র আর অপরিচিত মেয়েটির দিকে। জাহাঙ্গীর মল্লিকের কথায় সমুদ্র মেয়েটিকে নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকলো। সোফায় বসলো সমুদ্র। কন্ঠ রান্নাঘর থেকে পানি এনে দিলো ওদের দুজনকে। মিনিট পাঁচেক পরে সমুদ্র মুখ খুললো।
বান্দরবন যাওয়ার পরেই স্থানীয় মানুষদের সাথে বেশ ভালোই জমেছিল সবার। সারাদিন ঘোরাঘুরি আর রাতে সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে ভালোই কেটেছিল দুই দিন। স্থানীয়দের সাথে এতটাই সখ্যতা গড়ে উঠেছিল যে পরের দিন তাদের বসতিতে একরাত থাকার সিন্ধান্ত নেয় সমুদ্র ও শাওন। এরমধ্যে বিনার সাথে আলাপ হয় সমুদ্রর। বিনার বাবা-মা নেই। নানা-নানির সাথে থেকেছে ছোটো থেকেই। সেদিন সমুদ্রর পেট খারাপ হওয়ার জন্য সন্ধ্যায় একাই ছিলো ঘরে। এরমধ্যে বিনা আসে চা নিয়ে। আর তখনই স্থানীয় কিছু লোকজন ঘরে এসে ঝামেলা করে। ঘটনা এতটাই অনুকূলে চলে যায় যে শেষ পর্যন্ত বিনাকে বিয়ে করতে হয়েছে সমুদ্রর। শুনতে সিরিয়ালের মতো লাগলেও বাস্তবে ঘটে গেছে এই ঘটনা!
ঘরের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে। বিনা অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে ঘরের এককোনায়। কন্ঠ আস্তে আস্তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বিনার পাশেই। ইফতির প্রচুর রাগ হচ্ছে সমুদ্রর উপর। ঘুরতে যাওয়াটা ছিল শনি। কিন্তু রাগ করার মতো পরিস্থিতি এখন নেই।

” সর্বশেষ কথা হলো এই মেয়েটি এখন তোর স্ত্রী? ”

বাবার প্রশ্নে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমুদ্র। সে তো নিজেও চায়নি এই বিয়ে। পথে দেখা হওয়া সেই মেয়েটিকে নিয়ে এরমধ্যেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল সে। কোথা থেকে কী হয়ে গেলো তার জীবনে?
” সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না বাবা। বিয়ে যেভাবেই হোক হয়ে গেছে। এখন সামাজিকভাবে তোমরা আবারও বিয়েটা করাও।”
ইফতি ঠান্ডা মাথায়ই বললো কথাগুলো। কন্ঠ চমকালো ইফতির কথায়। এই প্রথম কোনো ভালো কথা বললো লোকটা। মাঝে মধ্যে কন্ঠর ইচ্ছে করে কাকিকে জিজ্ঞেস করতে, জন্মের সময় কি ইফতির মুখে মধু দেননি?
” ভাইয়া,বাবা আমি ইচ্ছে করে বিয়েটা করিনি।”
সমুদ্র অপরাধীর মতো বললো কথাটা। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ জিনিস আমাদের জীবনে। এই পরিস্থিতির জন্যই কতকিছু ঘটে যায়।
” বিয়ে তো করতে হতোই একদিন তাই এটা নিয়ে অযথা ঝামেলা করে লাভ নেই। কন্ঠ বিনাকে নিয়ে সমুদ্রর ঘরে যা। আর সমুদ্র তুইও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। এতদিন মনে হয় ঠিকমতো নাওয়াখাওয়া হয়নি তোর।”
শায়লা মল্লিক ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন। সমুদ্র হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বড়ো ভাইকে নিয়ে তার মনে যে সংশয় ছিলো তা দূর হলো। কন্ঠ বিনাকে নিয়ে ঘরে গেলো। সমুদ্রও গেলো পেছন পেছন। কিন্তু সমস্যা হলো বিনার সাথে কোনো জামাকাপড় আনেনি। আর আনার মতো জামাকাপড় ছিলো না তার।
” বিনা আমার পোশাক পরতে কোনো অসুবিধা আছে তোমার? ”
বিনা কোন কথা বলে না। শুধু মাথা নেড়ে “না” বোধক ইশারা করে। কন্ঠ আর কথা বাড়ায় না। নতুন জায়গা, এরকম একটা অপ্রীতিকর ঘটনায় হয়তো চুপ হয়ে গেছে বিনা। এসব ভেবে কন্ঠ আর কোনো প্রশ্ন না করে, নিজের বাড়ি গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে আবারও সমুদ্রদের বাসায় ফেরে। সমুদ্র এরমধ্যে গোসল সেড়ে নিয়েছে। গোসল করার পর শরীরটা বেশ ফুরফুরে লাগছে তার।

চলবে,

বইমলা সামনেই। আমার দ্বিতীয় বই “নীরবে রাত্রি নামে “পাওয়া যাবে ২০৭-২০৮ নং বাংলার প্রকাশনার স্টলে। আমার পরীক্ষা সামনের মাসে এজন্য গল্প এরচেয়ে বড়ো লেখা সম্ভব হচ্ছে না।
আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=386602897353995&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=388345530513065&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here