যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_১৭ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
298

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_১৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

ইফতি ও কন্ঠর বিয়ের বেশকিছু দিন কেটে গেছে। মজিদ মল্লিকের শোকও কিছুটা কমেছে প্রিয়জনদের হৃদয় থেকে। আসলে সময় সবকিছু সারিয়ে তোলে। একজন মানুষ মারা গেলে প্রথম দিন ঠিক যতটা কষ্ট হয় দশম দিনে সেই পরিমাণ কষ্ট হয় না। ধীরে ধীরে বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখি আমরা। মল্লিক বাড়িতেও তেমনটাই হয়েছে। ইদানীং বিনার শরীরটা একটু খারাপ থাকে। সেই নিয়ে সমুদ্রর মহা চিন্তা। যদিও সামান্য মাথা ব্যথা কিন্তু সমুদ্র সেজন্য বউয়ের সাথে সাথে থাকে সব সময়। বিনা তো এতো করে মানা করে প্রয়োজন ছাড়া বাড়িতে না থাকতে। এতে ঘরের মানুষের সামনে লজ্জিত হতে হয় বিনাকে। মনে মনে নিশ্চয়ই সবাই সমুদ্রকে সেই লেভেলের বউ পাগল বলে!

” সমস্যা কী তোমার? খাওয়াদাওয়া তো শেষ! এখনও ঘরে এলে না কেনো?”
ডাইনিং রুমে এসে দাঁড়িয়ে বললো সমুদ্র। বিনা টেবিল পরিষ্কার করলো মাত্র। রাতে সবার খাওয়াদাওয়া শেষে টেবিল ও থালাবাসন পরিষ্কার করে তবেই ঘরে যায় বিনা। অন্য কেউ কাজ করতে চাইলেও তাকে এসব কাজ করতে দেয় না বিনা।
” আপনার এতো তাড়া কীসের? ”
” বোঝো না কীসের তাড়া?”
বিনা থমকাল, লজ্জা পেলো। লোকটা দিন দিন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
” আপনি দয়া করে ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করুন। কেউ এসে পড়লে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে আমার। ”
” এতো কীসের লজ্জা তোমার! বুঝি না আমি। আমি গেলাম ঘরে। তুমি কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবা।”
বিনা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সমুদ্র স্বীয় হাতের তালুতে চুম্বন আঁকে। বিনার দিকে উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে এগোয়। বিনা মুচকি হাসে। আজকাল নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী স্ত্রী হিসেবে মনে হয় বিনার। গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত আছে, মানুষের এককাল না-কি সুখে কাটলে অপর কাল কাটে দুঃখে। তেমনই বিনাও এটাই বিশ্বাস করে, তার দুঃখের কাল ফুরিয়েছে।

” তুমি ঘরে যাও আমি বাকিগুলো ধুয়ে রাখছি বিনা।”
আনমনে কাজ করার ফলে কন্ঠর উপস্থিতিতে আঁতকে উঠলো বিনা। থতমত খেয়ে বললো,
” কন্ঠ আপা তুমি যাও। আমি সবগুলো প্লেট পরিষ্কার করে তবেই যাবো।”
” হিসাব মতো আমি এ বাড়ির বড়ো বউ। তাই তোমার আগে এসব কাজ আমার করার কথা। সুতরাং আর টুঁশব্দ না করে নিজ কক্ষে চলে যাও।”
কন্ঠর গুরুগম্ভীর কথায় বিনা আর জবাব দেওয়ার সাহস পেলো না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হাত ধুয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো বিনা। কন্ঠ খোলাচুল খোঁপা করে কাজে হাত দিলো।

” এতক্ষণ লাগলো তোমার ঘরে আসতে? ”
বিনাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই সমুদ্র বলে উঠলো। বিনা বিনাবাক্যে ঘরের দরজা আঁটকে বিছানায় গিয়ে বসলো। সমুদ্র বিনার কোলে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।
” আমি কি তোমার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে যাচ্ছি বিনা?”
বিনা সমুদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলো।
” সেটা কখন বললাম আমি? ”
” সব কথা কি মুখে বলতে হয়?”
” তো?”
” এই যে ঘরে ঢুকে কোনো কথা বললে না!”
” আমি অন্য কথা ভাবছিলাম। কন্ঠ আপা এসে আমাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলো। বললো বড়ো বউ হিসেবে এগুলো তারও কাজ।”
সমুদ্র চমকাল। হুট করে শোয়া থেকে উঠে বসে বিনার চক্ষুদ্বয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
” সত্যি? কন্ঠ আর ভাইয়ার সম্পর্কে কী তাহলে ভালোবাসা এসেছে! ”
” উঁহু সেটা মনে হলোনা। আমাকে তোমার কাছে পাঠানোর জন্যই হয়তো ওরকম করে বললো। সত্যি সত্যি যদি ভাইয়ার সাথে আপার সম্পর্কে উন্নতি আসতো!”
” শোনো, বিয়ে হলো একটা পবিত্র সম্পর্ক। দেখবে একসাথে থাকতে থাকতে দুজনের মধ্যে ঠিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। ”
” তাই যেনো হয়। এখন শুয়ে পড়ুন। রাত এগারোটা বাজলো। ”
বিনা বিছানায় শুতে যাবে এমন সময় সমুদ্র বিনার বালিশের ওপর শুয়ে পড়লো। ঠোঁট উলটে বললো,
” আগে আদর করে একটা কিস করো তারপর ঘুম। ”
” আদর করে আবার কিস করে কীভাবে? ”
” প্রথমে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে তারপর সময় নিয়ে আস্তে করে মাথায় একটা কিস করবে।”
বিনা ভ্রু কুঞ্চন করলো। এই ছেলের কতশত বাহানা কাছাকাছি আসার।
” ঠিক আছে। এরপর জানি অন্য কিছু লাগবে শুনি না।”
সমুদ্র হাসলো। বিনা সমুদ্রর কথামতো মাথায় ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো।

” তুমি? তুমি আবার হাত লাগালে কেনো? এগুলো তোমার কাজ নয়।”
কন্ঠ কিছুটা চমকে উঠে বললো। ইফতি হুট করে এসেই প্লেটগুলো ধুতে শুরু করলো। মোটে কয়েকটা বাসনকোসন কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করায় অযথা দেরি হলো কন্ঠর।
” তুই সব সময় এমন করিস কেনো? জানিস না দশের লাঠি একের বোঝা?”
কন্ঠর খুব হাসি পেলো ইফতির কথায়। সামান্য কাজে এমন একটা উদাহরণ না দিলেই হতো।
” এমন করি কারণ আমি এমনই। ”
এরমধ্যে সবগুলো প্লেট,বাসন ধোয়া হয়ে গেছে। কন্ঠ ওড়নায় হাত মুছলো। ইফতি একবার চাইল সে-ও ওড়নায় হাত মুছবে। কিন্তু কন্ঠর কেমন লাগবে ভেবে নিজের লুঙ্গিতেই মুছলো।
” ভালো। এখন চল ঘুমুতে ।”
” হ্যাঁ তা তো এমনিতেই যাবো।”
কন্ঠ বিরস মুখে বললো। মাঝে মধ্যে ইফতির ভীষণ কষ্ট হয়। এতদিনেও মেয়েটা একটু স্বাভাবিক হয়ে কথা বলে না। ইফতির প্রহরকে গিয়ে মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে কীভাবে ভালোবাসলে কন্ঠর ভালোবাসা পাওয়া যাবে। কিন্তু এরকম আবোলতাবোল চিন্তা মস্তিষ্কে আসাতে নিজেই নিজেকে কড়া শাসনও করে। কন্ঠ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ঘরের দিকে এগোলো।
ইদানীং শারমিন সুলতানার শরীরটা খারাপ যাচ্ছে। স্বামী হারানোর শোক ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে ভদ্রমহিলাকে। কন্ঠর জন্যই এখন বেঁচে থাকা। কন্ঠ দিনের অধিকাংশ সময় উনার সাথে থাকতে চাইলেও শারমিন সুলতানা মেয়েকে বলেকয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠান। যতই হোক সারাদিন নিজের সংসার রেখে মায়ের কাছে বসা থাকা মানায় না। ইফতির জন্য শারমিন সুলতানার মায়া হয়। ছেলেটা কতকিছুই না করে কন্ঠর মন পাওয়ার জন্য। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কন্ঠর জন্য চা তৈরি করে ইফতি। কন্ঠ বারংবার বারন করা সত্ত্বেও একই কাজ করে সে। প্রতিদিন কন্ঠর মা খেয়েছে কি-না খোঁজ নেয় ইফতি। কন্ঠর প্রিয় চকলেট, ফুল প্রতিদিন বাসায় ফেরার আগে নিয়ে কিনে নিয়ে আসে। কন্ঠ অবাক হয় ইফতির পাগলামিতে। এই মানুষটা এরকম আগে তো বুঝতে পারেনি। ইফতির প্রতি যে কন্ঠর কোনো অনুভূতি নেই তেমন টাও নয়। কন্ঠর মুভ অন করতে সময় লাগছে – এটা বলেই ইফতিকে সান্ত্বনা দেয় শারমিন সুলতানা।

আজ ছুটির দিন, শুক্রবার। মেঘলা আকাশ। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে সারা শহর। মাঝে মধ্যে টিপ টিপ বৃষ্টির ফোঁটাও পড়ছে ধরনীর বুকে। সকাল সকাল মল্লিক বাড়ির হেঁসেল থেকে গরম গরম খিচুড়ির সুভাস ভেসে আসছে। জাহাঙ্গীর মল্লিক ও সমুদ্র বসে আছে ডাইনিং টেবিলে। বিনা ও শায়লা মল্লিক রান্নাঘরে কাজ করছে। ঘুম ভেঙে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো কন্ঠ। সকাল সাড়ে আটটা বেজে গেছে! এমনিতে সাতটার মধ্যে জেগে ওঠে কন্ঠ। ইফতির দিকে তাকাতে দেখলো কন্ঠর হাতে হাত রেখে আরামসে ঘুমাচ্ছে সে। বিয়ের দশদিন পরে থেকেই কন্ঠকে না ছুঁয়ে ঘুমায় না ইফতি। যদি হাত ধরতে না পারে তাহলে ওড়নার এক অংশ হাতে পেঁচিয়ে ঘুমায়। কন্ঠ আস্তে আস্তে নিজের হাতের উপর থেকে ইফতির হাত সরিয়ে ফেললো। ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোয়।
” তোমাদের কতদূর হলো? খিচুড়ি কি পাবো না!”
ইফতির বাবা আয়েসি কন্ঠে বললেন। শায়লা মল্লিক হাতে খিচুড়ির প্লেট নিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে বললেন,
” এই যে তোমাদের খিচুড়ি। গরম আছে কিন্তু। জিহ্বা পুড়িয়ে ফেলো না আবার। ”
” আহা! এসব আস্তে বলো না। ছেলের বউ ভাববে শ্বশুর কতো বড়ো ছুঁচো। ”
ইফতির মা ঠোঁট টিপে হাসছেন। সমুদ্র বাবা-মায়ের কথা শুনেও শুনছে না এমন একটা ভাবসাব করছে। এরমধ্যে কন্ঠ ডাইনিং রুমে ঢুকে।
” কন্ঠ ইফতিকে ডেকে নিয়ে আয়। একসাথে সবাই খাবো আজ।”
” ভাই..না মানে উনি তো ঘুমোচ্ছে। ”
” আর ঘুমাতে হবে না। তুই যা গিয়ে বল খিচুড়ি রান্না হয়েছে। ”
” ঠিক আছে যাচ্ছি। ”
কন্ঠ আবারও শোয়ার ঘরের দিকে গেলো। শায়লা অন্য একটা প্লেটে খিচুড়ি বেড়ে সমুদ্রর দিকে এগিয়ে ধরে বললো,
” তোর বড়ো মাকে দিয়ে আয়।”
” একা একা খেতে কি ভালো লাগে? তারচে তুই বরং গিয়ে ভাবিকে বল,বাবা তোমাকে ডেকেছে। তাহলেই আসবে। ”
জাহাঙ্গীর মল্লিকের কথায় সমুদ্র কন্ঠর বাসায় গিয়ে শারমিন সুলতানাকে বললো,
” বাবা তোমাকে ডাকছে বড়ো মা। ”
চলবে,
কালকে আমার পরীক্ষা! আজকে আমি গল্প লেখি। যাইহোক গল্পটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। লিখে শান্তি পাচ্ছি না। কী করা যায় পরামর্শ দিবেন প্লিজ।

আগের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=399214116092873&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=400902762590675&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here