যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_১৭_বর্ধিত_অংশ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
150

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_১৭_বর্ধিত_অংশ
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

জাহাঙ্গীর মল্লিকের কথায় সমুদ্র কন্ঠর বাসায় গিয়ে শারমিন সুলতানাকে বললো,
” বাবা তোমাকে ডাকছে বড়ো মা। ”
শারমিন সুলতানা উদাসভাবে বললেন,
” তুই যা সমুদ্র আমি আসছি।”
” এখুনি চলো।”
সমুদ্রর জোড়াজুড়িতে সঙ্গে গেলেন শারমিন সুলতানা। জাহাঙ্গীর মল্লিক শারমিন সুলতানাকে দেখা মাত্র বলেন,
” ভাবি বসো। খেতে খেতে কথা বলবো।”
কন্ঠর মা একটু ভাবুক হয়ে গেলেন জাহাঙ্গীর মল্লিকের কথায়। কন্ঠ কিছু করলোনা তো? যতই আপন মানুষ হোক এটা তো কন্ঠর শ্বশুর বাড়ি। এজন্য কন্ঠর মা বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে পড়লো ডাইনিং টেবিলে।
” কন্ঠ কোথায় শায়লা?”
মেয়েকে আশেপাশে না দেখতে পেয়ে শুধালেন শারমিন। শায়লা শারমিনকে খিচুড়ি দিতে দিতে বললেন,
” ইফতিকে ডাকতে গেলো। এসে যাবে এখুনি। তুমি খাওয়া শুরু করো বরং ততক্ষণে। ”
” আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। তোমরা খাও আমি বসি।”
” তুমি না খেলে কি আমরা খেতে পারি বড়ো মা? ”
ইফতির কথায় সবাই সেদিকে তাকাল। কন্ঠ মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ইফতিও একটা চেয়ার টেনে বসলো। খাবারগুলো সব টেবিলে এনে বিনা ও শায়লাও বসেছে।
” কেনো যে এমন করো তোমরা! আমার আর খাওয়াদাওয়া ভালো লাগে না। ”
” আমিও বসলাম তোমার পাশে। দেখি তুমি কীভাবে না খেয়ে থাকো।”
কন্ঠর কথায় মুচকি হেসে উঠলো ইফতি। মেয়ে, মেয়ের জামাই ও বাকিদের পাল্লায় পড়ে একসাথেই খাবার খেতে হলো শারমিনকে।

ভরসন্ধ্যা। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। ফাল্গুনীর বৃষ্টি যেনো ধরনীর বুকে অন্য রকম সৌন্দর্য। ক’দিন আগেই বসন্ত গেলো সাথে গেলো ভালোবাসা দিবস। মনে করবে না করবে না ভেবে থাকলেও কিছুতেই প্রহরের কথা মাথা থেকে বাদ দিতে পারে না কন্ঠ। ভালোবাসায় না থাক,ঘৃণায় প্রহর দৃশ্যমান। কিন্তু কন্ঠ তার জীবনের কোথাও প্রহরকে রাখতে ইচ্ছুক নয়। হোক সেটা ভালোবাসায় কিংবা ঘৃণায়!
” বৃষ্টিতে ভিজবে? ”
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবছিল কন্ঠ। ইফতির কথায় পেছনে ফিরে তাকায়।
” না। ”
কন্ঠর বিরস উত্তর। ইফতি গুটি গুটি পায়ে কন্ঠর পাশে এসে দাঁড়ালো। বিদ্যুৎ নেই। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে। চার্জার লাইট ছিল কিন্তু তবুও ইফতি মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎতের মনে হয় শত্রুতা আছে। নইলে বৃষ্টি কিংবা ঝড় এলেই বিদ্যুৎ কেনো নাই হবে?
” মন খারাপ? ”
” না।”
” শরীর খারাপ? ”
” না।”
” হাত ধরবো?”
কন্ঠ চমকাল। ইফতির মায়াভরা দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতেই কেমন মনটা হুহু করে উঠলো কন্ঠর। নিজের স্ত্রী’র হাত ধরতে কেউ অনুমতি নেয়? যদি সম্পর্কে সেই অধিকারবোধ না থাকে তাহলে হয়তো নিতে হয় অনুমতি।
” ধরো।”
ইফতি মৃদু হেসে কন্ঠর হাতে হাত রাখলো। অন্য হাত জানালার বাইরে দিয়ে বৃষ্টি ছুঁইয়ে দিলো। কন্ঠ বিস্ময় নয়নে ইফতির কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছে। পুরুষ মানুষ এরকম বৃষ্টি পাগল হয়? অবশ্য হয় বলেই তো দেখছে কন্ঠ। ইফতির খুব করে ইচ্ছে করছে প্রিয়তমার কাঁধে মুখ গুঁজে কোমরে হাত রেখে আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো দেখতে। কিন্তু কন্ঠর সাথে তেমন সম্পর্ক না থাকায় এই অন্যায় আবদার সে করতে পারলোনা।
” আলমারিতে নতুন শাড়ি রাখা আছে। বসন্ত উপলক্ষে কিনেছিলাম। তোমার কাছে একটা চিরকুট লিখে টেবিলের উপর রেখেছিলাম। কিন্তু তুমি দেখোনি। ”
অভিমানী সুরে বললো ইফতি। কন্ঠ চকিতে বলে উঠে,
” সরাসরি বললেই তো হতো। তাহলে দেখতে পেতাম। ”
” আলমারি যখন খোলো তখনও যে তোমার নজর নতুন শাড়ির উপর পড়বে না সেটা আমি বুঝিনি। ”
” আচ্ছা দেখে নিবো কাল।”
” কাল থেকে ভার্সিটিতে ক্লাস করতে যাও। অনেক দিন তো হলো!”
” হ্যাঁ যাবো ভাবছি। ”
ইফতি মাথা নেড়ে “হু” বলে। মানুষ কতটা বেখেয়ালি হলে চোখের সামনের জিনিসও খেয়াল করে না সেটাই ভাবতে লাগলো ইফতি। কন্ঠ কি কখনো আগের মতো স্বাভাবিক হবে? ভালোবাসার মানুষের প্রতারণা আর বাবাকে হারানোর শোক মেয়েটাকে একেবারে এলোমেলো করে দিয়েছে। মানুষ হারানোর শোক পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো শোক।

” এই বিনা! খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? আরেকটু মাথা টিপে দেই? ”
পাশাপাশি শুয়ে আছে বিনা ও সমুদ্র। বিকেল থেকেই মাথা ব্যথা করছিল বিনার। সন্ধ্যা হতে যেনো ব্যথার মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে।
” না থাক। ঔষধ খেলাম তো ঠিক হয়ে যাবে। ”
বিনা মলিন কন্ঠে বললো। সমুদ্র শোয়া থেকে উঠে বিনার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চুলগুলো আস্তে আস্তে টেনে দিচ্ছে এখন। চুলগুলো এমন করে টানলে নাকি আরাম লাগে। মায়ের কাছে শুনেছে সে কথা সমুদ্র।
” চোখ বন্ধ করে থাকো। জোরে লাগলে বলবে।”
” আপনাকে কষ্ট করতে হবে না সমুদ্র সাহেব। আমি ঘুমিয়ে গেলেই ব্যথা কমে যাবে। ”
” সবে আটটা বেজেছে! এরমধ্যে কি তোমার ঘুম আসবে পাগলি? তারচেয়ে যতক্ষণ ঘুম না আসছে আমি আমার বউয়ের সেবাযত্ন করি। ”
বিনা আর কথা বাড়ালো না। সমুদ্র এখন কিছুতেই তার কথা শুনবে না সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে বিনা। মানুষটা কীভাবে যে তাকে এতটা ভালোবাসলো বুঝে আসে না বিনার।

ঝলমলে রৌদ্রময় দিন। ঘড়িতে সময় সকাল দশটা ছুঁইছুঁই। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে কন্ঠ,অনিমা,অর্ষা। অনেকদিন পড়ে দেখা হলো দু’জনের। বাকিরা আজ আসেনি। অনেকগুলো মাস কেটে গেছে মাঝখানে। কন্ঠর বাবার চলে যাওয়ার কথা সবাই জানে। সেই সাথে প্রহরের প্রতারণার কথাও। সবমিলিয়ে কীভাবে কন্ঠকে সান্ত্বনা দেওয়া যায় সেটাই অনেকক্ষণ ধরে ভেবে যাচ্ছে দু’জন।
” তোরা এভাবে মুখ আটকে বসে আছিস কেনো?”
কন্ঠর প্রশ্নে অনিমা ও অর্ষা দু’জনেই নড়েচড়ে উঠলো।
” আরে ভাবছিলাম কবে আমরা তোর বাসায় যাবো।”
অর্ষা মেকি হেসে বললো। সাথে তাল মেলাতে শুরু করলো অনিমাও।
” হ্যাঁ হ্যাঁ অর্ষা ঠিক বলেছে। দুলাভাইকে বলিস আমরা তোদের বাসায় যাবো।”
” তাতে উনাকে বলার কী আছে! তোরা এমনি যাবি। আর আমার শ্বশুর বাড়ি তো আমাদের ঘরেই! যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকতো তাহলে বিষয়টা দারুণ উপভোগ হতো তাই না? বাবার আর শ্বশুর বাড়ি এতো কাছাকাছি! ”
” সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা কর না কন্ঠ। ইফতি ভাইয়া তো তোকে ভালোবাসেন।”
” আমি চেষ্টা করছি অর্ষা। কিন্তু কী জানিস তো এভাবে চাইলেই কাউকে ভালোবাসা যায়। হ্যাঁ শরীরের টানে শরীর দিলেও মন দেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ”
” তাহলে কি তোদের সম্পর্ক মোটামুটি…. ”
অনিমা যা বলতে চেয়েছে কন্ঠ সেটা বুঝতে পেরে মাথা নেড়ে “না” বলে। হতাশাগ্রস্ত হলে যেমন লাগে অনিমাকেও এতে তেমনই লাগলো। অর্ষার কল এসেছে। কিন্তু বান্ধবীদের সাথে কথা বলার জন্য কল কেটে দিলো সে। বিষয়টা কন্ঠ খেয়াল করে বললো,
” কল ব্যাক করে কথা বল। ”
” সমস্যা নেই। পরে কথা বলে নিবো।”
” না এখুনি কল দিয়ে দেখ। শোন আমরা অনেককিছুই ভেবে রাখি পরে করবো। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা না-ও হতে পারে। তাই পরে বলতে কিছু রাখবি না। এখন মানে এখুনি। ”
অর্ষা কন্ঠর কথামতো কল দিলো আবরিশামকে। কল ঢুকতেই রিসিভ করলো সে।
” কতক্ষণ হলো কল দিচ্ছি? কল ধরে তো জাস্ট বলতে পারো বিজি তুমি। ”
” কেটেই যখন দিচ্ছি সেটা তো তোমারও বোঝা উচিত।”
” যাগগে শোনো,কালকে কিন্তু আমার বাসা থেকে সবাই তোমার বাসায় যাবে। ঘটক বললো মাত্রই।”
” সত্যি! ”
” ইয়েস মহারাণী। আপনি কি একবার গেটের সামনে আসবেন? আপনাকে একটিবার দেখার জন্য এই অধম অপেক্ষারত। ”
অর্ষা মুচকি হেসে বললো, ” আসছি।”
কল কেটে বান্ধবীদের সবকিছু শর্টকাটে বলে গেটের দিকে এগোলো অর্ষা। ক’দিন ধরে ঘটকের সাহায্য অর্ষার বাসায় বিয়ের কথা বলায় আবরিশাম। আবরিশামের বাসার সবাই যদিও জানে অর্ষার কথা। কিন্তু অর্ষার পরিবার একটু অন্য রকম। প্রেম,ভালোবাসা তাদের অপছন্দ। তাই আবরিশামও একেবারে সামাজিকভাবেই বিয়ের ব্যবস্থা করবে বলে ঠিক করে। অর্ষার পরিবার আবরিশামের ছবি দেখে পছন্দ করেছিল। খোঁজ খবর নিয়ে সবকিছু ভালো লাগায় এখন ছেলে পক্ষকে বাড়িতে আসতে বলেন অর্ষার পরিবার। অথচ উনারা জানেন না অর্ষার সাথে আবরিশামের পূর্ব পরিচয় আছে।

চলবে,
রিচেক দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা দিয়ে এসে মাথা ব্যথা ছিল। তবুও এতটুকু লিখলাম। সবাই রেসপন্স করবেন আশা করি।
আগের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=400246445989640&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্ব https://www.facebook.com/100080128645410/posts/401326492548302/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here