যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_১৩ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
176

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_১৩
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

” সমুদ্র কখন ফিরবি বাসায়? ”
মায়ের কন্ঠে ব্যাকুলতা বুঝতে পেরে সমুদ্র ফোনের ওপাশ থেকে দ্রুত প্রত্যুত্তরে বলে,
” এইতো মা পাড়ার মোড়ে আছি। পাঁচ মিনিটে ফিরছি।”
শায়লা মল্লিক কল কেটে বিনার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। মেয়েটা কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে শ্বাশুড়ির দিকে।
” পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতেছে। তুমি বরং ঘরে যাও এখন। সমুদ্র ফিরলে ওর কিছু লাগলে দিও।”
” ঠিক আছে আম্মা। ”
বিনা ঘরে গিয়ে সমুদ্রর ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলো। এমনিতে এতটা চিন্তা হয় না কিন্তু আজকে এতো চিন্তা হলো কেনো বুঝতে পারছে না বিনা। লোকটা সেদিন মজা করে বলেছিল অন্য মেয়ের কাছে যাবে সেই জন্য মনটা এমন আকুপাকু করছে আজ।
” কী ব্যাপার এমন মুখ গোমড়া করে বসে আছো কেনো?”
ঘরে ঢুকে হাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বিনার দিকে তাকিয়ে বললো সমুদ্র। বিনা চুপচাপ বিছানার মাঝখানে বসে আছে।
” আপনি কোথায় ছিলেন সারাদিন? ”
” সেটা দিয়ে তোমার কোনো কাজ নেই। ক্ষিদে লেগেছে। খাবার দাও আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে যাচ্ছি। ”
সমুদ্র বিনাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাথরুমে তোয়ালে নিয়ে ঢুকে। বিনার দু-চোখ ছলছল করছে। আগে তো সমুদ্র সাহেব কখনো এমন করে কথা বলতেন না! তাহলে আজ কেনো বললেন? বিয়ে বাড়িতে গেলে তো ক্ষুধা লাগার কথা না এতো জলদি। বিনার মনটা ভীষণ খচখচ করছে। নানা-নানির সাথে যখন গ্রামে ছিলো,তখন পাশের বাড়ির এক ভাবিকে রেখে তার স্বামী বাইরে সময় কাটাতো। ভীষণ কষ্ট পেতো ভাবিটা। পরে যখন শালিসি হলো উনার স্বামী বলেছিলেন,স্ত্রী’র থেকে তার চাহিদামতো সময় পায় না বলেই বাইরে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল সে। কিন্তু বিনা এটা মানতে পারেনি। সময় দিতে না পারলেই পরকীয়া করতে হবে? স্ত্রী কিংবা স্বামীকে রেখে কীভাবে মানুষ অন্য কারো কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? এসব ভাবতে ভাবতে ডাইনিং রুমে গিয়ে সমুদ্রর জন্য খাবার পরিবেশন করে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ন’টা বাজে। বিনাও খায়নি কিন্তু সব সময় সমুদ্র বিনা খেয়েছে কি-না জিজ্ঞেস করলেও আজকে করেনি। এরমধ্যে সমুদ্রর মা এলেন ডাইনিং টেবিলের কাছে। ইফতি হয়তো কন্ঠদের বাসায় খেয়ে ফিরবে আজ। এই ভেবে ইফতির খাবারটা ফ্রিজে তুলে রাখতেই উনার আসা। কিন্তু বিনার ভাবুকতা দেখে শায়লা মল্লিক বলেন,
” বিনা কিছু হয়েছে? তোমার খাবার কই? প্লেট তো একটা! ”
” আম্মা আমার ক্ষিদে নেই। ক্ষিদে লাগলে খেয়ে নিবো। আপনার কি কিছু লাগবে? ”
” হ্যাঁ ইফতির খাবারটা ফ্রিজে রাখবো।”
” আমি রেখে দিচ্ছি আম্মা। আপনি যান। আব্বা তো আজ ফিরবেন না বাসায়? ”
” না ফিরবে না। আমি খেয়ে নিয়েছি। ঔষধ খাওয়ার জন্য ঘুম পেয়েছে। আমি শুতে গেলাম। ইফতি এলে দরজা খুলে দিও।”
” আচ্ছা আম্মা।”
বিনা ইফতির জন্য রাখা প্লেটের খাবারগুলো প্লেটসহ ফ্রিজে রেখে দেওয়ার জন্য রান্নাঘরে এসেছে। এরমধ্যে সমুদ্র ডাইনিং টেবিলে বসলো। বিনা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দেখে সমুদ্র বসে আছে।
” বসে আছেন কেনো খাবার তো সামনেই রাখা।”
” হ্যাঁ খাবো। সবাই খেয়েছে? মা, ভাইয়া?”
” ইফতি ভাইয়া বাসায় আসেননি। আম্মা খেয়ে ঘুমোতে গেলেন মাত্র। ”
” ওহ আচ্ছা। তুমি খাবে না? বসো খেতে। রুমের লাইট তাড়াতাড়ি নিভিয়ে ঘুমাবো। তাই এখুনি খেয়ে নাও।”
সমুদ্রর গম্ভীর আচরণের সাথে পরিচিত না বিনা। তাই কোনো প্রকার দ্বিমত পোষণ না করে বিনাও খেতে বসে। চুপচাপ দু’জন খাবার খাচ্ছে। এরমধ্যে কলিংবেলের শব্দে নড়েচড়ে উঠলো বিনা। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো সে। ইফতি কোনো কথাবার্তা না বলে নিজের ঘরে চলে যায়। বিনা আবারও খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসে।

গভীর রাত। শুনশান নীরবতা চারদিকে। চাঁদের আলোতে চারদিকে বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনিতে কন্ঠ তেমন ছাদে আসে না। কিন্তু আজকে কেনো জানি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলো। তাই রাত দুটোর সময় গুটি গুটি পায়ে ছাদে এসে উপস্থিত হলো কন্ঠ। কিন্তু এতরাতে ছাদে অন্য কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে উঠে। ইফতিও কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায়।
” এতরাতে ছাদে এসেছিস কেনো? ”
কন্ঠর দিকে এগিয়ে গিয়ে শুধালো ইফতি। কন্ঠ ইফতিকে ছাড়িয়ে ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে চাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
” চাঁদ দেখতে এলাম। ”
” ঘুম আসছে না তোর?”
” না।”
” ঘরে গিয়ে একটু সরিষার তেল মাথার তালুতে লাগিয়ে অল্প পানি দিয়ে শুয়ে পড়। ঘুম আসবে আস্তে আস্তে। ”
” তাহলে সেই থেরাপি তোমার উপর কাজ করলো না কেনো ইফতি ভাইয়া? তোমার শরীর থেকে সরিষার সুবাস আসছে। ”
” তুই বুঝবি না। একটা কথা শোন,বিয়ের পরে ভাইয়া ডাকিস না কখনো। বিষয়টা মোটেও শ্রুতিমধুর নয়।”
” ঠিক আছে। ”
কন্ঠর ভাবলেসহীন উত্তর। ইফতিও চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবেই বেশকিছু সময় কেটে গেলো। ঠিক দু’দিন পরে দুজনের বিয়ে অথচ কোনো কথা নেই দু’জনার মধ্যে। প্রহরের বিয়ে হয়ে গেছে কন্ঠর মনটা আজ বেশি খারাপ লাগছিল। প্রহর না হয় ভালোবাসেনি,কিন্তু কন্ঠর ভালোবাসায় খুঁত ছিলো না। প্রিয় মানুষটা অন্য কারো হয়ে যাওয়া কোন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাই সহ্য করতে পারে না।
” কন্ঠ! ”
” হুম। ”
” এভাবে বুকে কষ্ট পুষিয়ে রাখিস না। কাছে আয়,জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্না কর। মনটা হালকা লাগবে। ”
ইফতির দিকে তাকালো কন্ঠ। কীভাবে বুঝলো মানুষটা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার? কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। কন্ঠর যার জন্য এতো কষ্ট, যন্ত্রণা এই মুহুর্তে ঠিক তার বুকে মাথা রেখেই অশ্রুপাত করতে ইচ্ছে করে তার। কী অন্যায় ইচ্ছে তাই না? ব্যথা যে দেয় তার বুকেই মানুষ ব্যথার ঔষধ খুঁজতে যায়। কন্ঠর নীরবতা দেখে ইফতি এগোলো। কন্ঠর দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ। ইফতি আর ভাবলো না। কন্ঠকে বক্ষে জড়িয়ে নিলো। কন্ঠর যেনো কী হলো! মুহুর্তেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মেয়েটা। ইফতি আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দূরে কোথাও থেকে গানের সুর ভেসে আসছে।

❝আমার অজানায় হলো কি
তোমাকে তা কখনো বুঝতে দেবো না
দৃষ্টির পানে আকাশে চেয়ে
তোমাকে আমি খুঁজবো না।
আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে ভালোবাসি,
তা বলবো না।
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু ভালোবাসবে না?
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু কাছে ডাকবে না?
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু ভালোবাসবে না?
তুমিও কি আমার মতো করে
একটু কাছে ডাকবে না?❞

সারারাত মানুষ কীভাবে কাঁদতে পারে ইফতির জানা ছিলো না। থেমে থেমে কতবার কন্ঠ কাঁদল হিসাব নেই। শুধু কান্না করেনি কন্ঠ। পাগলের মতো বুকে আঁচড়ে দিয়েছে ইফতির। কন্ঠর জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছিল ইফতির। মেয়েটা কতটা কষ্ট বুকে চেপে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে। মনে মনে ইফতি দূঢ় প্রতীক্ষা করে একজীবনে কন্ঠকে তার সর্বোচ্চ দিয়ে সুখী করবে।

ভোরের আলো ফুটতেই মল্লিক বাড়িতে বিয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছু কিছু আত্মীয়স্বজনের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। ইফতির বাবা একবার চেয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বিয়েটা দিতে। কিন্তু কিছু সমস্যার জন্য সেটা আর সম্ভব হবে না। অগত্যা এখানেই বিয়ের তোরজোর শুরু করেছে সবাই। সারারাত না ঘুমানোর জন্য অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে আছে ইফতি। কিন্তু ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোনের সময় প্রদশর্নের জায়গায় তাকিয়ে দেখে বেলা এগারোটা বেজেছে। কিন্তু এই সময় তো আদিত্যর কল দেওয়ার কথা নয়! ইফতি কল ব্যাক করে।
” হ্যালো আদিত্য কী খবর? তোমাদের না এক সপ্তাহ পরে পরীক্ষা!”
” স্যার আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি কলেজে আসুন। ”
” কেনো? ”
” অথৈ আপনার বিয়ের সংবাদ শুনে অনেকগুলো স্লিপিং ঔষধ খেয়ে ফেলেছে। ”
” হোয়াট! ওয়েট ওয়েট আমি আসছি।”
ইফতি দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে ফ্রেশ হয়। নাস্তা না করেই কলেজের উদ্দেশ্যে ছুটে। অথৈ যে তার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকাতো সব সময় সেটা ইফতি বুঝতো। কিন্তু সেই নিয়ে সরাসরি কখনো কিছু বলা হয়নি। কিন্তু এখন ইফতি বুঝতে পারছে আগেই মেয়েটার সাথে স্পষ্ট কথা বললে ভালো হতো।
চলবে,

আমি অসুস্থ। এতটুকু লিখতে পেরেছি এটাই অনেক। দোয়া করবেন আমার জন্য। আর প্লিজ গল্পে রেসপন্স করুন।
আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=392568766757408&id=100080128645410&mibextid=2JQ9oc
পরের পর্বের লিংক https://www.facebook.com/100080128645410/posts/394488813232070/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here