যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_১৩_বর্ধিত_অংশ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
350

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_১৩_বর্ধিত_অংশ
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

অথৈ যে ইফতির দিকে সব সময় অন্য দৃষ্টিতে তাকাতো সেটা ইফতি ভালো করেই বুঝতো। কিন্তু সেই নিয়ে সরাসরি কখনো কিছু বলা হয়নি। ভেবেছিল অল্পবয়সী মেয়ে আবেগের বশে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এখন ইফতি বুঝতে পারছে আগেই মেয়েটার সাথে স্পষ্ট কথা বললে ভালো হতো। তাহলে হয়তো এরকম একটা দূর্ঘটনা ঘটতো না। বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। তবে বিপদের সময় কাছের পথও যেনো দূরে মনে হয়। ইফতিরও হয়েছে তেমন দশা। আধঘন্টার মধ্যে ইফতি কলেজের ভিতর প্রবেশ করলো। ক্যাম্পাসে এসে দাঁড়াতেই দেখলো অথৈকে নিয়ে ওর বন্ধুরা কোলে করে কলেজ গেটের দিকে নিয়ে আসছে। সাথে অথৈর বাবা-মাও আছেন।
” আদিত্য এখনও কলেজে কেনো তোমরা? আরও আগে হসপিটালে নিলে না কেনো? ”
ইফতি অথৈর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ফর্সা চেহারা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। অথৈর মা অনবরত কেঁদে যাচ্ছে।
” স্যার অথৈ এরকম একটা কান্ড ঘটাবে আমরা ভুলেও ভাবিনি। আমাদের মেয়েটা বাঁচবে তো!”
অথৈর বাবা আরাফাত সানি চিন্তাযুক্ত গলায় বললেন। ইফতি কিছু বলার আগেই অন্য দিক থেকে কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার এসে চাপা স্বরে বললেন,
” ইফতি বিষয়টা খুব সেনসিটিভ। খুব সাবধানে সামলাতে হবে আমাদের। কলেজের মধ্যে এরকম একটা ঘটনা জানাজানি হলে কলেজের রেপুটেশন খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া তোমার ক্যারিয়ারের বিষয় তো আছেই।”
ইফতির মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে। কী বিপদ এলো! ইফতি প্রিন্সিপালের কথায় মাথা নেড়ে অথৈর বাবার হাত ধরে ভরসা দিয়ে বললেন,
” কিছু হবে না অথৈর। আমরা সবাই আছি।”
ইফতি আর কালক্ষেপণ না করে অথৈকে নিয়ে সবার সাথে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটলো।

রান্নাঘরে কাজ করছে বিনা। শায়লা মল্লিক কন্ঠর কাছে গেলো যেনো কী কাজে। বিনা তা জানে না। বাড়িতে অনেক লোকজন। সমুদ্র সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে। সমুদ্রর এই হঠাৎ পরিবর্তন বিনার সহ্য হচ্ছে না। সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না বিনা।
” এই বিনা! মাছ তো পুড়ে গেলো!”
মামী শাশুড়ী মারিয়ার কথায় আঁতকে উঠলো বিনা। অন্যমনস্ক থাকার ফলে কখন যে মাছ ভাজতে গিয়ে পুড়ে গেলো খেয়াল করেনি মেয়েটা। বিনা গ্যাসের চুলো বন্ধ করে দিয়ে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
” দুঃখিত মামী। ”
মারিয়া হাসানের বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই। মেদযুক্ত শরীর, মুখশ্রী বেশ সুশ্রী।
” সমস্যা নেই। তুমি সরো আমি পোড়া মাছগুলো সরিয়ে ফেলি। তুমি বরং ইনায়ার সাথে গিয়ে গল্প করো।”
” না মামী আমি এখানেই আছি। আপনি বরং বিশ্রাম নিন। আর বেখেয়ালি হয়ে কাজ করবো না।”
মারিয়া মুচকি হেসে বললেন,
” সমুদ্রর সাথে কি মনোমালিন্য হয়েছে? ”
” না মানে আসলে তেমন কিছু হয়নি। ”
বিনা ইতস্ততভাবে বললো। বিনার লজ্জা পাওয়া দেখে মারিয়া প্রসঙ্গ বদলে ফেললেন।
” ঠিক আছে তুমি কাজ করো। আমি এখানেই আছি। ”
বিনা কিছু বলে না আর। পোড়া মাছগুলো সরাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। মাথাটা কেমন ভারী ভারী লাগছে বিনার। ইদানীং মাথা ব্যথা বেড়েছে। ইফতির একটাই মামা আফতাব হাসান। বিয়ে উপলক্ষে তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। বড়ো মেয়ে ইনায়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে গতবছর। আর ছোটো মেয়ে পরী দশম শ্রেণিতে পড়ে। সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা তার। মাত্র তিন দিনের জন্য এসেছে বিয়ে উপলক্ষে।
” মা কী রান্না করছো তোমরা?”
ষোড়শী পরী একগাল হেসে মায়ের উদ্দেশ্যে শুধালো। বিনা পরীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। পরী বিনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
” মাছ রান্না হবে তিন রকমের, সাথে মুগের ডাল, মাংস, বাঁধাকপি ভাজা আর পোলাও। ”
” ভাত রান্না হচ্ছে না?”
পরী ভাত পাগল মেয়ে। ভাত না খেলে তার শরীর কেমন হাসফাস করে। বিনা পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
” ভাত তো থাকবেই পরী। তোমরা ঘরে গিয়ে বসো। আমি লম্বা লম্বা খাবার নিয়ে আসছি।”
” লম্বা লম্বা খাবারটা আবার কী ভাবি? ”
মারিয়া হাসান নিঃশব্দে হেসে বললেন,
” নুডলসের কথা বলছে বিনা। যা তুই এখান থেকে এখন। এতো বকিস না। ”
” আচ্ছা আচ্ছা গেলাম। বাব্বাহ! রান্নাঘরে এসে একটু কথা বললাম তাতেও বকা হয়েছে হুহ্। ”
পরী নিজে নিজে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো রান্নাঘর থেকে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। হসপিটাল থেকে বাড়ি ফেরার সময় হয়নি ইফতির। অথৈ এখন মোটামুটি সুস্থ। ডাক্তার যাবতীয় চিকিৎসা করেছেন। খুব বেশি দেরি হয়নি বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে মেয়েটা। অথৈর বাবা-মা আর ইফতির দুপুরে খাওয়া হয়নি। বাকিরা অনেকবার বললেও কেউ খায়নি। নেহাৎ অথৈর বাবা-মা অন্য রকমের ভালো মানুষ, নইলে এই বিষয় নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো কলেজ ও ইফতিকে।
” স্যার আপনি এখন বাসায় যান বরং। বিকেলও তো শেষের পথে। একটু পর সূর্য অস্ত যাবে। ”
অথৈর মায়ের কথায় পেছন ফিরে তাকালো ইফতি। করিডরে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ।
” হ্যাঁ যাবো। আশা করি অথৈ এখন ঠিক হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ পারলে ওকে বোঝাবেন। আমি আবার আগামীকাল এসে দেখে যাবো।”
” বোঝবো অবশ্যই। আমরা আসলে লজ্জিত স্যার। মেয়েটা আমাদের লজ্জায় ফেলে দিলো।”
” আরে ইট’স ওকে। বয়স কম একটা ভুল সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আশা করি এবার থেকে ভেবেচিন্তে সিন্ধান্ত নিবে। আসছি।”
ইফতি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেলো। বাড়িতে তো কিছু না জানিয়ে চলে এসেছিল ইফতি। নিশ্চয়ই মায়ের চিন্তা হচ্ছে ভেবে আরও তাড়াহুড়ো করে বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো সে। অথৈর মা কেবিনের সামনে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে মেয়ের মুখখানা একবার দেখে নিলো।

বাড়ি ভর্তি লোকজন। সবাই কতটা হাসিখুশি! শুধু কন্ঠর মনে শান্তি নেই। সবকিছু থাকতেও কী যেনো নেই নেই লাগে। আর সেদিন রাতের পর থেকে ইফতির সামনাসামনি হয়নি কন্ঠ। তখন হুঁশে ছিল না বলেই ওরকম বুকে আছড়েছিল।
” কন্ঠ ভাবি কী করো?”
হঠাৎ ইনায়ার ডাকে ভাবনার ছেদ ঘটে কন্ঠর। কিন্তু এরকম ভাবি সম্মোধনে বেশ অস্বস্তি লাগছে কন্ঠর।
” বসে আছি ইনায়া। কেউ তো কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না আমাকে। ”
” তুমি এখন বিয়ের কণে। তোমাকে কেনো কাজ করতে দিবে শুনি?”
” তা তোমার পড়ালেখার খবর কী? ”
” এইতো ভর্তি হয়ে বসে আছি। ক্লাস শুরু হয়নি এখনো। তোমাদের বিয়েটা তেরো তারিখ হয়ে ভালো হয়েছে বুঝলে। চৌদ্দ তারিখ আমাদের কলেজের সব বন্ধুদের নিয়ে একটা পার্টি আছে। সিঙ্গেলদের মিলনমেলা আরকি।”
” বাহ ভালো তো। ”
” হুম। তুমি এরকম শর্টকাটে কথা বলো কেনো? এসে থেকেই দেখছি এমন কম কথা বলো। আগে তো এমন ছিলে না!”
কন্ঠর বুকের বামপাশের ব্যথাটা চিনচিন করে উঠলো। যতদিন এ ব্যথা না কমবে ততদিন কন্ঠ স্বাভাবিক হতে পারবে না।
” আরে তেমন কিছু না। এমনি।”
” বললেই হলো? যাইহোক আস্তে আস্তে জেনে নিবো সব। চলো রাতের খাওয়াদাওয়া করে আসবে ওই বাসা থেকে। ”
” না তুমি যাও। আমি আমাদের বাসায় খেয়ে নিবো। ”
” বেশ যেওনা। একদিন পর তো এমনিতেই ওই বাড়িতে যাবে। আমি বরং এলাম। ”
” আচ্ছা আবারও এসো ইনায়া।”
ইনায়া মাথা নেড়ে হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কন্ঠ আবারও ধ্যানে মগ্ন হলো। আসলে আমরা নিজেদের মনকে নিজেরাই কষ্ট দেই। সামান্য একটা বিস্কিটের প্যাকেটও সারাদিন হাতে ধরে রাখলে কিন্তু হাত ব্যথা হবে নচেৎ অসহ্য লাগবেই। তেমনি মন খারাপের চিন্তাগুলো যদি বারবার ভাবতেই থাকি তাহলে মনের উপরও চাপ পড়ে। ফলশ্রুতিতে আমাদের কষ্ট বাড়ে। কথাগুলো যেনো কোথায় শুনেছিলাম তবে সঠিক খেয়াল নেই।

” সারাদিন কোথায় ছিলি ইফতি?”
মায়ের প্রশ্নে নড়েচড়ে বসে ইফতি। সবার রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে খেতে বসেছিল ঠিক এই কারণেই ইফতি। এই মুহুর্তে এরকম ঝামেলার কথা কন্ঠর কানে পৌঁছাক সেটা চায়নি ইফতি।
” মা কলেজের একটা মেয়ে সুইসাইড করতে গিয়েছিল। তা-ও আবার আমার কাছে পড়ে। ”
” কী! এখন কেমন আছে মেয়েটা?”
” এখন ঠিক আছে। ঔষধ চলবে, বিশ্রাম নিতে বলেছে। ”
” যাক আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম ভয়ে পেয়েছিলাম! ”
” এসব কথা কাউকে বলার দরকার নেই বুঝলে?”
” না, না। বিয়ে বাড়ির মধ্যে এসব কথাবার্তা বলবো কেনো! ”
” সেটাই। তুমি খেয়েছো? ”
” হ্যাঁ। কিন্তু সমুদ্র এখনও ফিরলো না। এজন্য বিনাও না খেয়ে ঘরে বসে আছে। ”
ইফতি হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে দশটা ছুঁইছুঁই।
” এখনো বাইরে কী কাজ সমুদ্রর? লেখাপড়ার অবস্থা তো ঘোড়ার ডিম।”
” আমাকে তো বলে যায়নি। আর বিনা তো ওরকম মেয়ে না যে জিজ্ঞেস করবে বের হওয়ার আগে।”
” মেয়েটা বড্ড ভালো। ”
” হ্যাঁ। কপাল গুণে এমন ছেলের বউ পাওয়া যায়। আমার ভাগ্য বেশ ভালো বলতেই হয়। কন্ঠ আর বিনার মতো মেয়েকে ছেলেদের বউ হিসেবে পেয়েছি। ”
ইফতি মুচকি হেসে খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলো। কন্ঠকে দেখেনি কতক্ষণ হলো। মনটা কেমন আকুপাকু করছে ইফতির। খাওয়াদাওয়া শেষে একবার ছাদে গিয়ে কল দিবে কন্ঠকে। কাজের কথার ছুতোয় না হয় ডাকবে।
চলবে,

জানি না কী লিখলাম! শরীর ভীষণ খারাপ। সবাই দোয়া করবেন প্লিজ। আর হ্যাঁ রিচেক দেওয়া হয়নি। টাইপিং মিসটিক থাকতে পারে।
আগের পর্বের লিংক https://www.facebook.com/100080128645410/posts/393836883297263/
পরের পর্বের লিংক https://www.facebook.com/100080128645410/posts/395053143175637/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here