মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১৩| #কে_এ_শিমলা ®

0
249

#মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১৩|
#কে_এ_শিমলা ®

সুন্দর একটি পরিবেশ বিরাজমান ইমাম মঞ্জিলে। চারিদিক আগরবাতি এবং গোলাপ জলের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেন পুড়ো বাড়িতে। প্রত্যেকর দেহে আলাদা আতরের গন্ধ। মৃত জনাব দেলোয়ার হক ইমামের অনেক বন্ধু পরিচিতজন আসছেন পালায় পালায়। দুর্জয়ের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। অতঃপর গিয়ে বসছেন যেখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একটি তাসবিহ হাতে সবকিছু তদারকি করছে দুর্জয়। তাঁর সাথে আছে বোন জামাই! জুমায়রার স্বামী নাহিয়ান। দুজনে অবশ্য ভোরে গিয়েই কবর জিয়ারত করে এসেছে‌। সাথে ছিলেন এমদাদ হোসেন এবং আবু সাঈদ।”
অনেক মহিলা ও আসছেন। পরিচিতজন! আত্মীয়-স্বজন অনেকেই। জাহানারা ইমামের সঙ্গে কথা বলছেন। দেখা সাক্ষাৎ করছেন। অফিসে অনেকেই ইতিমধ্যে চলে এসেছেন। ছেলেরা তাদের জায়গায়। এবং মেয়েরা তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসেছেন। সবার পড়নে শুভ্র কাপড়! ভালো লাগছে। শুভ্র পবিত্রতার প্রতীক। নিজ নিজ জায়গায় বসে দুরূদ পাঠ করেছেন সবাই‌।”

দুর্জয় একটি শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি পড়েছে। মাথায় টুপি। ঘাড়ে ঝুলানো ত্বকিনূর। নাহিয়ানের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেল সে যেখানে রান্না বান্নার কাজ চলছে। শিন্যির আয়োজন। এমদাদ সাহেবের ডাক এলো‌। তিনির পিছু পিছু অবশ্য এগিয়ে আসছে আবু সাঈদ। এমদাদ হোসেন এসে বললেন,’বাবা! হাফেজ সবাই এসে গেছেন।”

দুর্জয় এগিয়ে গেল গেইটের দিকে। তাদের সম্মান জানিয়ে ভেতরে নিয়ে এলো। মার্চ মাসের ছয় তারিখ। দেলোয়ার হক ইমাম সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে প্রতি বছরেই দুর্জয় এরকম মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। পরিচিতজনরা আসেন। দোয়ায় শরীক হোন। খাস দিলে দোয়া দিয়ে যান। খতম পড়েন চার থেকে পাঁচজন কোরআনে হাফেজ মিলে। শিন্যির আয়োজন তাকে। মেহমানদের জন্যে, এতিমখানায় পাঠানো হয়। পথশিশুদের ও বাড়িতে ডেকে এনে খাওয়ানো হয়।”
হাফেজ রা মিলে উনাদের কুরআন তেলাওয়াত শুরু করে দিলেন। দুর্জয় বেশ খানিকটা সময় বসে রইলো তাহাদের পাশে‌। চোখ বন্ধ করে শ্রবণ করলো সুন্দর স্বরের পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত। বাবার মুখটা ভাসলো চোখের পাতায়। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন। অন্তর দিয়ে দোয়া করলো দুর্জয় বাবার জন্য। আল্লাহ যেন তিনিকে বেহেস্তবাসী করেন।”

তাসবিহ পাঠ করতে করতে সবকিছু দেখছে দুর্জয়। মায়ের কাছে গিয়েও বসে আসলো কিছুক্ষণ। তিনি কুরআন তেলাওয়াত করছেন এবং কাঁদছেন। এই দিনটায় দুর্জয় বাঁধা দেয় না মা কে। মায়ের কান্নায় প্রমাণ পায়! বাবা নামক মানুষটা কত প্রিয় ছিলেন তিনার। আর যে পুরুষ প্রিয়তমা স্বীয় স্ত্রীর কাছে প্রিয় পুরুষ। প্রিয় স্বামী! তিনি তো মহান আল্লাহ তায়ালার নিকটে ও প্রিয়।”
বাবার মতো প্রিয় হতে পারলো দুর্জয়ের নিজের জীবনটাও ধন্য হবে তবে। মায়ের পাশে বসা অবস্থাতেই বোন বের হলো ওপাশের কক্ষ থেকে। শুভ্র ওড়না মাথায় জড়িয়ে মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসছে জুমায়ারা। মায়ের পাশে আসার পূর্বেই তাকে নামিয়ে দিল কোল থেকে‌। ছাড়া পেতেই মেয়ে জুনায়না বসে পড়লো ফ্লোরে। দুর্জয় উঠে গিয়ে বসলো তার কাছে। জুমায়রা কে বললো, ‘কী হয়েছে আমার মামা কাঁদছে কেন?”

‘দেখো তো! এখন নাকি তাকে আমি তাঁর বাবার কাছে দিয়ে আসবো। এতো এতো মানুষের মাঝে কোথায় গিয়ে খোঁজবো ওকে। আমাদের পড়া ওতো বাকি আছে।”

দুর্জয় হাত বাড়ালেই ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁর বুকে জুনায়না। দুর্জয় দাঁড়িয়ে বের হতে হতে বোনের উদ্দেশ্যে বললো, ‘ও আর তোমাকে আজ বিরক্ত করবে না। নিয়ে যাচ্ছি আমি আমার মামাই কে।”

জুমায়রা হেসে মায়ের দিকে তাকালে তিনি মুখ মুছে তাকে আস্বস্ত করলেন। সে আবার চলে গেল মহিলা সদস্যদের নিকট। মা প্রত্যেকবার একা একা বসে তেলাওয়াত করেন। আর আগতদের মধ্যে যারা তেলাওয়াত করেন। তাদের সাথে জুমায়রা নিজে বসে। মা মেয়ে দুজনের একজন কে তো সাথে থাকতে হয় তাদের। ইমাম মঞ্জিলের চার রুম জুড়ে কুরআন তেলাওয়াত এবং দুরুদ পাঠ করা হচ্ছে।”

রণয়ী তৈরি হয়ে গেল রাবিয়া খানমের ঘরে। তিনি বোরকা পড়ে মাথায় হিজাব পড়লেন। রণয়ীর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। আজ কতটা বছর পর আন্টির সাথে দেখা হবে। নিশ্চয় তিনি ভাববেন নিটুর মেয়ে। দুইটা বছর হতে চললো ঢাকায় এসেছে। এক বছরের সময় নিয়ে তাদের অফিসে কাজ করছে‌। অথচ একটা দিনও উনাকে দেখতো গেল না। গতকাল ফেরার পথে দুর্জয় বলেছিল,
‘মিস রণয়ী রহিম। আমি আশাবাদী কাল আমার আব্বার দোয়া মাহফিলে আপনি আসবেন।”

‘জ্বী স্যার! আমি পুরো চেষ্টা করবো।”

‘একটু ভালো হয় যদি সাথে আন্টি কে নিয়ে আসেন। উনাকে দেখার ইচ্ছে পোষণ করেন আম্মু প্রায়শই। আপনাদের খোঁজে বছর দুয়েক আগে গিয়েছিলেন কিন্তু পাননি। আপনি আমাদের অফিসে কাজ করেন এখনো বলা হয়নি। সময়ে হবে কী না আপনার। যেতে পারেবন কী না সেজন্য।”

রণয়ীর অনুশোচনা হয়। কেন যেন খারাপ লাগে। একে অপরকে উনারা বোন ডাকতেন। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন নিজেও একা। কোনো ভাই বোন নেই উনার। রাবিয়া খানমের ও কোনো আপন বোন নেই‌। তাই একে অপরকে বোন বানিয়েছিলেন। তিন বছর একসাথে ছিলেন উনারা। এই ফ্লাট আর সেই ফ্লাট। কতরাত উনার সাথে ঘুমিয়েছিল রণয়ী। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিনের পিতৃ নিবাস অবশ্য রাজশাহীতে। এক কালে পড়ানোর খুব ইচ্ছে ছিল উনার। টানা তিন বছর তিনি রাজশাহীতে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। মায়ের অসুস্থতার জন্যেও ছিল অবশ্য। অতঃপর তাদের সাথে পরিচয়‌। আপনজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি।”
সেই মানুষটা ওদের খুঁজেছেন। অথচ ও জেনে বুঝেও একদিন যায়নি দেখা করতে‌। অবশ্য খানিকটা লজ্জা ছিল রণয়ীর। কোনো একদিন সে শুনেছিল সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন এবং উনার মায়ের কথা। পূত্রবধূ নিয়ে কথা বলছিলেন। তখনো রক্তিম ওর জীবনে আসেনি। রণয়ী সবে নবম শ্রেণীর ছাত্রী তখন। লজ্জা পেয়েছিল বেশ। তবে সিরিয়াসলি নেয়নি। এসব এর মাঝে খুব একটা প্রভাব ও ফেলেনি। পরিবারের কারো মুখেও এমন কথা শুনেনি।উনারা কত বড়লোক! ওকে কী মেনে নিবেন? এটা শুধু কথার কথা। এতোটা পাত্তা দেয়নি সে। অতঃপর রক্তিম জীবনে এলো। নিশ্চয় তিনি মায়ের থেকে জেনেছেন রণয়ী নিজ পছন্দে বিবাহ করেছে। লজ্জার বিষয় নয়! তবুও লজ্জা ছিল রণয়ীর।”

দুর্জয়ের কথা গুলো মনে রেখে রণয়ী ভাবে রাতে। অতঃপর মা কে জানাতে তিনিও প্রথমে অবাক হোন। রণয়ী এতো দিনে উনাকে বলছে? তিনি নিজেও রাজি হোন। তিনির জীবনে দেখা সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন একজন চমৎকার মানুষ। বিত্তশালী অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে রাবিয়া খানমের। তবে সবার থেকে সব দিক দিয়ে অন্যরকম ছিলেন সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন। আগামীকাল উনার স্বামীর মৃত্যুবার্ষিকী। এই প্রথম শুনলেন তিনি। অথচ তিন বছর আগেই দেলোয়ার ভাইও মারা গিয়েছেন। মেয়ের উপর প্রথমে অভিমান করেন তিনি। অতঃপর রাজি হোন যাবেন রণয়ীর সাথে। রণয়ী যাবে কী না দ্বিধায় ছিল‌‌। মায়ের সম্মতি দেখে সেও নিশ্চিত হলো যাবে।”

গেইটের কাছে আসতেই গাড়ি দাঁড়ানো দেখলো রণয়ী। বুঝলো এটা ভাইয়ের কাজ। মা মেয়ে উঠে বসলেন। রিদিমা বিদায় জানালো তাদের। তাকে নিতে চেয়েছিলেন রাবিয়া খানম। কিন্তু পরে আর মন সায় দিল না। কতদিন পর দেখা! বাসায় এসে দেখবেন। রিদিমা নিজেও গেল না। তাছাড়া ছেলে মেয়ে স্কুলে। স্বামী বাসায় তাদের রেখে সে যাবে কীভাবে?”

ইমাম মঞ্জিলের গেইটের পাশে এসে গাড়ি থামলো। রণয়ী নামলো গাড়ি থেকে। হাত ধরে নামালো রাবিয়া খানম কেও। রাবিয়া খানম দেখলেন পুরো বাড়ি। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর। রণয়ী দুরুদুরু বুক নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো বাড়ির ভেতরে।”

প্রথমেই সম্মুখে পড়লো দুর্জয়। রণয়ী তাকে সালাম করলো‌। সে সালামের জবাব দিয়ে রাবিয়া খানম কে সালাম করলো‌। মিস রণয়ী রহিম কথা রেখেছেন তবে! সে খানিকটা হেসে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেমন আছেন আন্টি?”

রাবিয়া খানম সন্তুষ্ট হেসে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ বাবা! ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?”

‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ভেতরে যান। আম্মু আপনাকে দেখলে অনেক খুশি হবেন। প্রায়শই আপনাকে দেখার কথা বলেন।”

রাবিয়া খানম কে নিয়ে ভেতরে গেল দুর্জয় নিজেই। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন কে জানানো হলে তিনি দ্রুত নিচে আসতে চাইলেন। তাঁর আগেই দুর্জয় রাবিয়া খানম কে নিয়ে উপরে উঠে এলো। রণয়ী আশেপাশে খুঁজলো পরিচিত মুখদের। তাদের দেখা গেল না। কেউ কী আসেনি? প্রশ্ন জাগলো মনে।”
সেও মায়ের সাথে গেল উপরে। রাবিয়া খানম কে দেখতেই এসে জড়িয়ে ধরলেন সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন। চোখে জল চলে এলো দুজনের। উনাদের কথাবার্তা শেষ হতেই রণয়ী মৃদু কন্ঠে সালাম দিল। পাশ ফিরে তাকালেন সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন। সেই মায়াবী মুখ! পরিবর্তন হয়েছে তবে।”

সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন সালামের জবাব দিলেন। অভিমানী কন্ঠে বললেন, ‘রাবিয়া কে এই মেয়ে?”

রাবিয়া খানম খানিকটা হেসে বললেন, ‘আপা! দেখো চিনো কী না?”

রণয়ী হুট করে এসেই জড়িয়ে ধরলো উনাকে। মিনমিনে কন্ঠে বললো, ‘দুঃখিত আন্টি। আর অভিমান করবেন না। আজ তো এসেই গিয়েছি।”

সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন দুহাতে আকড়ে ধরলেন তাকে। বললেন, ‘ছেলেও বললো না। মেয়েও বললো না। বলি তোমরা একজন আরেকজন কে চিনোনি? আব্বা! আপনিও বললেন না একবার?”

দুর্জয় মাথা চুলকে বললো, ‘আসলে আম্মা। ওই!”

‘হয়েছে আর বলতে হবে না আপনাকে? ভাইবোনই এক। তিনজনে এক কাজ করলেন।”

জুমায়রা কাছে আসতে আসতে বললো,’কী কাজ করলাম আম্মা? তিনজন।”

রণয়ী জুমায়রা কে সালাম করলো। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন পরিচয় করিয়ে দিলেন রাবিয়া খানমের সাথে। উনারা দুর্জয় কে দেখলেও জুমায়রা কে দেখেননি। সে রাজশাহীতে তিন বছরে যায়ইনি। তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা! কোচিং এটা সেটা। অতঃপর এডমিনশের সময়‌। এসবের জন্য আর যাওয়া হয়নি তাঁর। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন চলে আসতেন দেখে প্রয়োজন ও পড়তো না যাওয়ার। দুর্জয় দেশে এসেছিল দুই সপ্তাহের জন্য‌। নানিকে দেখতে গিয়েছিল। সেখান থেকেই দেখা উনাদের সাথে।”

জুমায়রা নিজেও রণয়ীর কথা শুনেছিল মায়ের মুখে। অফিসে তাঁর নাম দেখে ভাবছিল ও সেই রণয়ী কী না। তাঁর সাথেও কথা বলা হয়নি। আর মা কেও বলা হয়নি।”

রণয়ী কে নিয়ে গেল জুমায়রা। এই কক্ষে আসতেই দেখা পেল বাকিদের। রোজা! অনুরিমা এসেছে। ওরাও কুরআন তেলাওয়াত করছে। পাশেই অনেকখানা কুরআন শরীফ দেখে ভাবলো পড়া যায়। জুমায়রা কে বললে সে বারণ করলো না। তেলাওয়াত করতে বারণ করার কিছু নেই ও। ওযু করতে গেলে দেখা গেল আগে থেকেই কেউ একজন ওয়াশরুমে। কক্ষ ছেড়ে বের হলে রণয়ী। বোরকা খুলে নিয়েছে। শুভ্র একটি থ্রি-পিস পড়নে। ছোট ছোট হালকা পাতলা পাথর বসানো আছে।”

কাছের একটি কক্ষ দেখে সেখানে প্রবেশ করলো‌।‌ হয়তো বা জুমায়রার হবে। সে কোনোদিক না দেখে ওয়াশরুমে চলে গেল। অযু করে এসে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিল। সামনে একটি দর্পণে দৃষ্টি পড়তে নিজেকে দেখে নিল একপলক। চোখ ফিরিয়ে যখন অগ্রসর হবে দরজার দিকে। তখনই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো দুর্জয়। নিজের ঘরে হঠাৎ রণয়ী কে দেখে অবাক হলো সে। তবে তাঁর হাত মুখ ভেজা দেখে বুঝা গেল সে অযু করেছে। ভেজা মুখশ্রী ও যে কত সুশ্রী! মাথায় জড়ানো ওড়না‌‌। দেখার মতো নয় কী! রণয়ী দুর্জয় কে দেখে বুঝলো সে ভুল মানুষের ঘরে প্রবেশ করেছে।”

খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বললো, ‘স্যরি স্যার। আমি ভেবেছিলাম এটা আপুর ঘর।”

‘ইটস্ ওকেই মিস।”

রণয়ী বের হয়ে এলো দ্রুত পায়ে। বাহিরে পা রেখে একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। অতঃপর সবার সাথে এসে তেলাওয়াতে মন দিল। জুমায়রা বেশ কয়েকবার দেখলো রণয়ী কে। মায়ের পছন্দ সুন্দর বরাবরই। ভাইয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করাও সুন্দরই ছিল। কিন্তু শেষ অব্দি সে অন্য কাউকে ভালোবেসে আজ ডিভোর্সী। হয়তো মা আর এখন চাইবেন না পুত্রবধু হিসেবে তাকে। তবে মেয়েটা সুন্দর! চোখে লাগার মতোই।”

সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন রাবিয়া খানমের সাথে জমানো কথাবার্তা শেষ করলেন। রাবিয়া খানম নিজেও বললেন সবকিছু। এই প্রথম বোধহয় সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন কারো সাথে বসে পড়লেন। নয়তো কাউকেই তো তিনি পাশে নিয়ে বসেন না এই দিনে।”
সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন রণয়ীর কথা জিজ্ঞেস করতেই রাবিয়া খানম মলিন মুখে সব খুলে বললেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। লুকোনোর কিছুই নেই। সত্য বলতে আবার লজ্জা কিসের। সব শুনে সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিনের খারাপ লাগলো। মেয়েটার সাথে এমনটা না হলেও পারতো। পছন্দ করা, ভালোবাসা তো দোষের কিছু নয়। হয়তো ভাগ্যে নেই তাই এমনটা হলো‌।”

তবে তিনি কিছু একটা ভাবলেন। নিজের ভাবনার কথা এখনই রাবিয়া খানম কে বলবেন নাকি সময় নিবেন দ্বিধায় পড়লেন তিনি। নাকি আগে ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলবেন। হতেও তো পারে এমনটি নির্দিষ্ট মানুষটার ভালো নাও লাগতে পারে। অতীত আছে জেনেও ক’জন চায়। তবুও আশা ছাড়লেন না সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন।”
কুরাআনে খতম শেষ হলো‌। মিলাদ মাহফিল শেষ হলো। সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো‌। এতিমখানায় পাঠানো হলো শিন্যি। পথ শিশুদের কেও এনে খাওয়ানো হলো‌। বেলা ঘনিয়ে বিকেল এলো‌। বিদায় নিলেন অনেকেই। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন যেতে দিলেন না রাবিয়া খানম এবং রণয়ী কে এতো জলদি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রণয়ী মা কে রেডি হতে বললে, বাঁধ সাধলেন সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন।”

আজ তিনি যেতে দিচ্ছেন না। রণয়ী হতভম্ব। বলেন কী? অবশেষে রাবিয়া খানম কে রাখা গেলেও তাকে রাখা গেল না। সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন নিজেও বেশি একটা জোর করলেন না। তিনি বুঝতে পারছেন তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে। এমাদাদ সাহেবের উপর দায়িত্ব অর্পিত হলো রণয়ী কে দিয়ে আসার জন্য। দেখা গেল দুর্জয় নিজেও বের হবে। তাই দুজনেই একসাথে গেল।”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here