#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩
তোঁষা যেন একুল ওকুল দুই কুল হারিয়ে বসে আছে। একা একা কতক্ষণ ভালো লাগে? আরহাম সেই যে বেরুলো এখন ও ফিরে নি। যাওয়ার আগে শুধু গোমড়া মুখে তোঁষা’কে খায়িয়ে গিয়েছে। অবশ্য এটা বললেও ভুল হবে। শুধু রুটি আর ডিম ওর সামনে রেখেছে। তোঁষা নিজ হাতেই তো খেলো। ওর খাওয়া দেখা মাত্র হনহনিয়ে পকেটে ফোন আর মানি ব্যাগ ঢুকিয়েই আরহাম কোন প্রকার বাক্য ব্যায় না করে চলে গিয়েছে। তোঁষা এমন রাগের কারণ দাঁড় করাতে পারলো না। কারণ টা কি তোঁষা নিজের যত্ন করে নি এটা নাকি তোঁষা ওকে ধাক্কা মা’রলো ওটা?
ভাবলো তোঁষা, নিজের যত্ন নেয়ার মতো কাজটা কিভাবে করতো ও? গত মাস থেকে টানা দুই দিন ইচ্ছা করে ইনসুলিন নেয় নি। উদ্দেশ্য একটাই। বাবা-চাচ্চু সহ সবাইকে রাজি করানো। কিছুতেই অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি না ও। ইহকালে তোঁষা’র দেহে প্রাণ থাকতে না। বিষাদে ঘেরা মনটা তেঁতো সময়গুলো মনে করে,
~ এই তো গত মাসে। সবাই’কে বারবার বলেও রাজি করাতে পারে না তোঁষা। বাবা কথা ও বলে না ঠিকঠাক ভাবে ওর সাথে। তোঁষা বেহারায় ন্যায় যাকে পায় তাকেই বলে,
— আরহাম ভাই এর খবর জানো?
ওর এই এক প্রশ্ন যেন তুহিন’কে রাগীয়েছিলো বহুগুণ। দুটো মাত্র সন্তান তার। তুষা’র হওয়ার কত বছর পর এই তোঁষা টার আগমন এই ধরণীর বুকে। ঠিক এক শীতের রাতে তাদের গৃহ আলোকিত করে ভোরের ঊষা হয়ে এসেছিলো তাদের পুতুল। তোঁষা’র মা তো ভরসাই ছেড়ে দিয়েছিলেন আরোকটা সন্তানের। মধ্যবয়সে এসে এই তোঁষা নামক প্রাণে’র আগমন। ঠিক যেন তুঁষে’র রাণী। শেখ বাড়ীর তুঁষে’র পুতুল।
এই পুতুলটার এহেন পাগলামী কে ই বা মেনে নিবে? কেন মেনে নিবে? মানার কি কোন অবকাশ ছিলো বা আছে?
মেয়ের তখনকার পাগলামো দেখে তুহিন রেগে যান ভয়াবহ ভাবে। সেই রাগ থেকেই তেড়ে আসেন তোঁষা’র দিকে। তোঁষা মায়ের পিছু লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
— আমার ফোন দিতে বলো আম্মু। আরহাম ভাই’কে কল করব।
তোঁষা’র মা নিতান্ত ভদ্রমহিলা। স্বামী’র কাছে তিনি নিজেই প্রচুর আদরের। তুহিন স্ত্রী’কে প্রচুর ভালোবেসে আগলে রাখেন। দুই সন্তান আর এই বউ নিয়েই তো তার ছোট্ট সংসার। যৌথ সংসারে একদম রমরমা ভাব। কিন্তু তোঁষা’র এহেন আচরণ সব যেন উল্টে দিলো। তোঁষা’র শেষোক্ত কথাটা শুনে রাগে তেড়েমেড়ে তুহিন বলে উঠেন,
— তোঁষা বেশি বারাবাড়ি করবে না। আরহামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে খুব খারাপ হবে বলে রাখলাম।
তোঁষা ও যেন ফুঁসে উঠলো। তীব্র প্রতিবাদী স্বরে জানালো,
— কেন করব না? তোমরা কথা দিয়ে কথা কেন রাখছো না? আমি আরহাম ভাইকেই বিয়ে করব। ম’রে গেলেও অন্য কাউকে….
কথার মাঝেই চড়ের তীব্র শব্দ কানে আসে তোঁষা’র। চোখ বড়বড় করে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে বাবা’র পানে। তুহিন নিজেও হতভম্ব তখন। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন ওর মা। রাগ সামলাতে ব্যার্থ হয়ে স্ত্রীর গালে চড় বসিয়ে দিয়েছেন। তুহিন হতভম্ব ভাব কাটালো। ধমকের স্বরে বলার চেষ্টা করলো,
— মেয়ে সামলাও নাহলে এরচেয়ে ও খারাপ কিছু হবে।
তোঁষা কেঁদে ফেললো ততক্ষণাৎ। ওর মায়ের সাথে যে বাবা কখনো উচ্চবাক্য ব্যায় করে নি সে কিভাবে তার গায়ে হাত তুললো? দৌড়ে যেতে যেতে শুধু বললো,
— কেন আশা দিয়েছিলে? এখন কেন এসব? আমার আরহাম ভাই আসবে। তোমার ওয়াদা ভঙ্গকারী হলেও সে না।
দৌড়ে গিয়েও বেশিদূর এগোতে পারলো না তোঁষা। ইনসুলিন না নেয়াতে মাথা ঘুরে পরে যায় রুমের বাইরে। তুঁষা’র বাসায় ছিলো না। বোনকে দরজার সামনে পরে থাকতে দেখেই চিৎকার করে এগিয়ে আসে। বোনের মাথাটা কোলে তুলে একবার মা-বাবা’কে ডাকে তো পরক্ষণেই তোঁষা’র গালে চাপড় মে’রে ডাকতে থাকে,
— পুতুল? এই পুতুল? কি হয়েছে? এই!!
তোঁষা হাত পা ক্রমশ ঠান্ডা হওয়ার পথে। তুঁষা’র বোনকে নিয়ে বিছানায় শোয়াতে শোয়াতেই চাচা,চাচি, বাবা আর আদনান ও হাজির হয়। ওর চাচি কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেললো। এই চিনির পুতুলটার এই অবস্থা কেন? আরহাম’কে কোনদিন যখন মেনেই নিবে না তাহলে কেন তাকে বছরের পর বছর ছেলে ছাড়া থাকতে হলো? যেই ছেলের সুখ এই তোঁষা সেই ছেলে কি মানবে এত বড় ধোঁকা?
তুষা’র বুদ্ধিমান। ও বুঝে তোঁষা ইনসুলিন নেয় নি। তাই ঝটপট সুগার চেক করলো। যা ভেবেছিলো তাই। ইনসুলিন পুশ করে সবাই’কে রুম থেকে বের হতে বলে। সবাই বের হলো। চাচি তখনও শিয়রের কাছে বসা। তুষা’র হাটু গেড়ে বসে চাচির কাছে। হাতটা মুঠোয় পুরে শুধু বলে,
— আমার অনেক আদরের বোন চাচি। আরহাম…
— আমার ও অনেক আদরের ছেলে আরহাম তুষার। কিন্তু দেখ বছরের পর বছর সে আমার কাছে নেই। যার জন্য এতকিছু তাকে নিয়েই ছিনিমিনি?
— সব ধ্বংস হয়ে যাবে চাচি।
— সেটা এমনিও হবে ওমনিও।
— তোঁষা’কে একটু বুঝাও।
— অনেক চেষ্টা করেছি।
তুষা’র দীর্ঘ নদীর মাঝে খেই হারা মাঝির মতো লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হয়ে রইলো। চাচি উঠে গেলেন তোঁষা’র খাবার আনতে। তুষা’র তাকায় বোনটার মুখের দিকে। অনেকটা পার্থক্য ভাই-বোনের বয়সের। হাঁটুর বয়সী বোন। সময় মতো বিয়ে করলে তুষা’রের হয়তো তোঁষা থেকে বছর সাত আট ছোট্ট মেয়ে থাকত।
তুষা’রের নিকট বাচ্চা বৈ কিছুই না তোঁষা। তার কলিজার টুকরো এই বোন। বাড়ীতে তিনটা ছেলে। একটা মাত্র মেয়ে। সবার চোখের মণি অথচ সময় আর পরিস্থিতি সবটা বিগড়ে দিয়েছে। সবটা।
তুহিনের নজর যায় সোফার কিণারায়। তার স্ত্রী সেখানেই ঠান্ডা হয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ ঘন্টা খানিক হবে ওখানেই তো তাকে থাপ্পড়টা মা’রলো তুহিন। স্বামী’র দেয়া বিবাহিত জীবনের প্রথম আঘাতটা কি সে সহ্য করতে পারে নি? হয়তো। তাই তো দিকহারা হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টিতে শুধু শূন্যতা।
তুহিন এগিয়ে যান। আলতো করে হাত রাখেন স্ত্রী’র পিঠে। একসময় ধীরে জড়িয়ে নেন নিজের সাথে। ডান হাতটা বুলিয়ে দেন গালে। ফিসফিস করে শুধু ব্যাথিত গলায় শুনা যায়,
— দোষ খুঁজলাম আমার। অনেক খুঁজলাম। পেলাম না।
তুহিনের চোখ দিয়ে এক ফোটা অনুতাপ ঝড়লো। মনের ঝড় তার মন জানে। অপ্রকাশিত সকল অনুভূতি দগ্ধ করে চলছে তাদের।
.
খট করে শব্দ করে দরজাটা খুলে যায়। তোঁষা মুখ তুলে তাকায়। আরহাম এসেছে। যাওয়ার সময় ওকে রুমে রেখে দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে গিয়েছিলো। তোঁষা অশ্রু ভরা চোখে তাকালো। আরহাম ওর দিকে তাকাতেই দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তোঁষা তার বুকে। হাত থেকে আরহামের সকল ব্যাগ পরে গেলো ফ্লোরে। দুই হাতে তোঁষা’কে তুলে ধরে নিজের সাথে। তোঁষা কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলতে পারলো,
— অনেক কষ্টে আপনাকে পেয়েছি আরহাম ভাই। আপনি কেন চলে গিয়েছিলেন?
আরহাম বিষ্মিত হলেও পরক্ষণেই ঠোঁটের মাঝে খেলে উঠলো রহস্যময় এক হাসি। সন্তপর্ণে চুমু খেলো তোঁষা’র মাথায়। তোঁষা তখনও ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আরহাম’কে প্রথমে শক্ত করে ধরে রাখলেও এখন শরীর ছেড়ে দিয়েছে। আরহাম ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখলো। ওভাবেই হেঁটে গেলো বিছানার কাছে। আরহাম ডাকলো ওকে কিন্তু তোঁষা মুখ তুলে না। আরহাম দ্বিতীয় বার ডাকলো,
— তুঁষ?
— হু।
— কেন কাঁদছিস?
— কোথায় ছিলেন আপনি? রেগে কেন চলে গেলেন? আমি ভয় পেয়েছিলাম।
“ভয়” হ্যাঁ এই একটা মাত্র জিনিস ই আছে যা পারে তোঁষা। খুব ভয় পেতে পারে সে অথচ কিছু মাস ধরে সকল ভয় সে বিসর্জন দিয়েছিলো। ভালোবাসার মানুষটার জন্য গলা উঁচিয়ে কথা ও বলেছিলো।
আরহাম অভিযোগ শুনলো মনোযোগ দিয়ে। নিজের সাথে তোঁষা’কে নিয়ে বসলো বিছানায়। নিজের কালো কুচকুচে চাপ দাঁড়ি যুক্ত গালটা লাগিয়ে দিলো তোঁষা’র ফুলা গালটার সাথে। বাকি কাজটা তোঁষা নিজেই করে নিলো। ঘঁষে দিলো নিজের নাক,মুখ আরহামের গালে। টু শব্দ করলো না দু’জনের একজনও। আরহাম অনুভব করলো নিজের ভেজা গালটাকে। তুঁষে’র ফোঁটায় ফোঁটায় যেন সিক্ত তার গাল। তোঁষা আরহামের নাকটাকে ছুঁয়ে দিলো আঙুল দিয়ে। আরহাম তাকাতেই নাক টেনে টেনে বললো,
— আমার নাকটা বোঁচা অথচ আপনারটা কত খাড়া নাক আরহাম ভাই। একদম চাচ্চু’র মতো।
নিজের বাবা’র কথা শুনে হঠাৎ ই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আরহামের। তোঁষা’কে কাছে পেয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা ও হয় নি অথচ রাগ উঠেছে কয়েকবার। নিয়ন্ত্রণ করাটা বড্ড কঠিন হয়ে যাচ্ছে আরহামের। বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তি হওয়া উচিত। ভয়ংকর শাস্তি। জিহবা চোয়ালের নীচে পিঁষে আরহাম তাকায় তোঁষা’র পানে। ওভাবেই শুধু বলে,
— বিশ্বাসঘাতকদের কথা আর মনে করবি না তুঁষ।
তোঁষা ভরকে যায় কিছুটা পরক্ষণেই বলে উঠলো,
— আপনি এখনও রেগে আছেন?
— কেন মনে হলো রেগে আছি?
— তখন ধাক্কা দেয়াতে অথবা নিজের যত্ন না নেয়াতে।
— আমি কে হই তোর?
সরাসরি উত্তর তোঁষা’র,
— আরহাম ভাই।
— আর?
— আর কি?
— আর কিছু নই?
তোঁষা যেন লজ্জা পেলো মুহূর্তেই। কেন পাবে না আরহাম ভাই গত কাল থেকে ওর স্বামী। ওর একান্ত পুরুষ। তোঁষা’র প্রাণ। কত বছরের সাধের এই মানুষটা তোঁষা’র। সহাস্যে প্রকাশ করে তোঁষা,
— আমার স্বামী আপনি। আমার সবটুকু জীবনের গাঢ় রঙটা আপনি যে রাঙিয়ে দেয় আমাকে প্রতিনিয়ত। আপনি এমন এক অস্তিত্ব আমার যাকে ছাড়া বছরের পর বছর পাড়ি দিয়েছি আমি কিন্তু কখনো ভুলে থাকতে পারি নি। আমার প্রিয় প্রাণ আপনি আরহাম ভাই।
তোঁষা’র সহজ সরল স্বীকারোক্তি। আরহাম প্রলুব্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখে নিলো ওর বোকা তুঁষে’র মুখটা। নিজের খসখসে হাতের ঠান্ডা তালুর আজলায় তুলে নিলো তোঁষা’র মুখ। চোখে চোখ রেখে জানালো,
— তোর উপর রাগ করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা এই আরহাম শেখ’কে দেয় নি তুঁষ।
— তাহলে…
— তখন রাগ উঠেছে শেখ বাড়ীর সকলের প্রতি। আমার থেকে তোকে দূর করতে লোকগুলো এতটাই বেভুর ছিলো যে তাদের কলিজার টুকরো’র খেয়াল রাখতে পারলো না। তোর ডায়বেটিস এর পয়েন্ট কেন এত বেশি থাকলো তুঁষ? খালি পেটে নয়। বুঝিস কিছু?
— আপনি তো ছিলেন না তাই এমন হয়েছে।
তোঁষা’র চোখ মুখে দুষ্ট হাসি। আরহাম ও চাপা হাসলো। তোঁষা ততক্ষণে আরহাম থেকে সরে দরজার সামনে পড়ে থাকা ব্যাগগুলো তুলে। উৎসুক দৃষ্টি আরহামের দিকে। তোঁষা’র চোখে করা প্রশ্ন বুঝে আরহাম। অল্প হেসে জানায়,
— সব তোর।
তোঁষা’র খুশি আর দেখার কসুর রইলো না। একে একে ব্যাগ খুলে সব বিছানায় ছড়ালো। এত এত সুন্দর সুন্দর সব কি না তোঁষা’র সেখানে দাতা কি না ওর আরহাম ভাই! ভাবা যায়?
লাল নেটের শাড়ীটা হাতে তুলেই হাসোজ্জল চোখে তাকায় তোঁষা। আরহাম আপ্লূত চোখে তাকিয়ে রইলো। কতগুলো বছরের বিচ্ছেদ অতঃপর ই না আজ তারা এক। দুটো দেহ একটি প্রাণ।
তোঁষা হাতের শাড়ীটা উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে আনমনে প্রশ্ন করে,
— এই শাড়ীটা অনেক সুন্দর।
— সুন্দর একটা দিনের জন্যই তার আগমন।
তোঁষা বুঝে না কথার অর্থ। পুণরায় জিজ্ঞেস করতেই আরহাম বলে উঠলো,
— যেদিন আমার প্রাণে মিশতে চাইবি ঐ দিন এটা পড়বি তাহলেই আমি বুঝে নিব আমার প্রাণ ঐদিন আমার মাঝে নিহিত হবে।
কথাটা গভীর হলেও এর মর্মার্থ বুঝে তোঁষা। লজ্জায় গাল দুটো গরম হয়ে যাচ্ছে যেন। আরহাম নিজ থেকে কাছে আসে নি আজ পর্যন্ত। প্রতিটা বার তোঁষা গিয়েছে। এবারও যাবে। গতরাতের শুধু মাত্র তোঁষা’র অনুরোধে ই না আরহাম তার কাছে রইলো ফলে ই না তোঁষা প্রশান্তির ঘুম দিলো। লজ্জায় নেতিয়ে গেলেও তোঁষা মুখ নামালো না বরং এক হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো আরহাম’কে। ওর প্রিয় পুরুষটার দিকে।
#চলবে….?
[বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজবেন না তাহলে হতাশ হবেন।]
গরম চায়ের কপটা হাতে নিয়ে ছুটছে তাঁরা। চাঁদের নিশ্চিত ঘুম ছুটছে। উঠে তাঁরাকে সামনে না পেলে তুলকালাম বাঁধবে জনাব। তারাতাড়ি ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরতে নিলেই আগলে নিলো চাঁদনী বেগম। তাঁরা ঢোক গিললো। সারাক্ষণই ভয়ে ভয়ে থাকে এই মেয়ে। কারণ যে বুঝে না যে চাঁদনী বেগম তা নয়। যত আতঙ্ক তাঁরার চাঁদকে ঘিরে। চাঁদনী বেগম দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিলেন।
-“এত কিসের ভয় তোর? চাঁদ কিছু বললে আমাকে বলবি?”
তাঁরা মলিন হাসলো। এমন শাশুড়ী আজকাল কে ই বা পায়? শশুর বাড়ী একপ্রকার বিলাসিতা করে চলে তাঁরা। শুধু চাঁদ নামক স্বামী’টা জ্বালিয়ে মারছে ওকে। সারাদিন ভয়ে টটস্থ থাকে তাঁরা। যদিও চাঁদ সহজে রাগে না বিয়ের পর তবুও এতবছরের ভয়তো আর একমাসে কমবে না। কাঁপটা হাতে নিয়ে রুমের সামনে যেতেই থামলো তাঁরা। ভেরানো দরজা’টাতে চোরের মতো মাথা ডুকিয়ে তড়িঘড়ি করে আবার তা সরিয়ে নিলো। চাঁদ রুমের কোথাও নেই মানে এখনও গোসল করছে সে। ঝটপট ভেবে নিলো তাঁরা, রুমে ডুকেই চায়ের কাপটা রেখে কেটে পরবে। যেই ভাবা ঐ কাজ। কিন্তু কপাল কি তাঁরা’র এত ভালো? যেই না কাঁপটা রেখে বের হবে ওমনি ঠান্ডা চওড়া একটা পুরুষ দেহ ওকে আগলে নিলো। ছোট্ট তাঁরা’র স্থান হলো সেই বুকে। একদম লেগে গেল। হীম হলো তার দেহ পিঞ্জর। একদম চুপ করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। তখনই কানের পেছনে পেলো ভেঁজা ঠোঁটের স্পর্শ। মোচরে সরে যেতে চেয়েও পারলো না। এত শক্ত বন্ধনী এত সহজে কিভাবে ভাঙবে? বিগত এক মাস ধরে এমন স্পর্শের সাথে পরিচিত ও তবুও কেন জানি এখনও মানিয়ে উঠতে পারে নি। হঠাৎ শাড়ীর আঁচলটা সরাতেই তাঁরা শক্ত করে চাঁদের হাতটা চেপে ধরলো। মুহুর্তেই চাঁদের মুখের ভঙ্গি পালটালো। এমন রোম্যান্টিক মুহুর্তে এমন ডিসটার্ব তার মোটেও পছন্দ হলো না। সজোরে কাঁমড়ে দিলো তাঁরা’র ঘাড়ে। মুখ দিয়ে ব্যাথাকাতুর শব্দ তুলে সরে গেল। চাঁদ ও ছেড়ে দিয়েছে ওকে। তাঁরা মাথা নিচু করে ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে। ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে সে। চাঁদ বিরক্ত হলো। এই মেয়ে এক ফোঁটা ও রোম্যান্টিক না। লাভ বাইট দিলে কেউ এভাবে কাঁদে? এর আগেও তাঁরা’র এমন আচরণে চাঁদ বিরক্ত হয়েছে। ভেবেছে সময়ে’র সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না তাঁরা ঠিক হচ্ছে না। এক মাস হলো বিয়ের। আর কত সময় দিবে চাঁদ? প্রথম রাত থেকেই নিয়মিত ভালোবাসা দিয়ে আসছে সে তবুও তাঁরা’র কোন হেলদুল নেই। কেমন অনুভূতিহীন ভাবে পড়ে থাকে। এভাবে কি আর রোম্যান্স হয়?
অধর কাঁমড়ে কিছু ভাবলো চাঁদ। ছোট্ট তার বউ। অবুঝ। তাই বলে রেগে গেলে তো চলবে না। বউকে আদরে আদরে ভরিয়ে রাখতে হবে। নিজের ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে ভালোভাবে নাড়লো চাঁদ। কয়েক ফোঁটা পানি গিয়ে আছড়ে পড়লো তাঁরা’র মুখে। চোখ তুলে তাকাতেই আবারও তা নামিয়ে নিলো। চাঁদ শুধু একটা টাওয়াল পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুষ্ট হেসে তাঁরা’র হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো৷ ভেজা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ দিলো নিজের নারীর গালে। আগোছালো কয়েকটা চুল ঠিক করে বললো,
-“আমিই তো। লজ্জা’র কি আছে? তাকা আমার দিকে।”
“অমৃতাংশু নক্ষত্র” ই-বুকটির অংশ বিশেষ। সম্পূর্ণ ই-বুক পড়ার লিংক কমেন্টে। চাঁদ তাঁরা’র বিবাহিত জীবনের আগের কাহিনি জানতে পড়ুন ই-বুক “চাঁদ তাঁরা”।
যারা পড়েছেন বা পড়বেন অবশ্যই ওখানে রিভিউ দিবেন এতে আমি অনুপ্রেরণা পাই।
ভালোবাসা সবাই’কে। 💜
আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=399610012448165&id=100071975089266&mibextid=Nif5oz