শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২২

0
242

#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২

হোটেল থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাঁটতেই আরিয়ার মন ভালো হয়ে গেলো। হোটেলে ঢোকার সময় আশিকের সাথে তর্ক করতে করতে ঢুকেছিল। বেচারা আশিক তর্কে হার মেনে নিয়েছিল যদিও। দুজনে এখন হালকা ভেজা সবুজ ঘাস সম্বলিত রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। একটা দোকানে বসে চা খেয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। এখন একটু উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখার অভিলাষে যাচ্ছে। তাদের রিসোর্টটাও সুন্দর। রাতে সেখানে বসে দুজনে তারা দেখবে। পড়ন্ত বিকেল। দুজনে একে অপরের হাত ধরে নিরবে হাঁটছে। কোলাহোলও বেশ কম। আরিয়া নিরবতা ছিন্ন করে বলে,

“আশিক, আমাদের বিয়ে হলো দুই সপ্তাহ হলো। তাই না?”

“আকদের দুই সপ্তাহ।”

“ওই একই। এই দুই সপ্তাহে আমি তোমার সাথে বেশিরভাগ সময় ঝগড়াই করেছি। তাই না?”

আশিক নিরবে হাসে। আরিয়া হালকা ঝুঁকে আশিককে হাসতে দেখে নিজেও হাসে। অতঃপর বলে,
“বিয়ের আগে আমাকে দেখে তোমার মনে হতো, আমি এত ঝ*গড়ুটে?”

আশিক জবাবে বলে,
“মোটেও না। তুমি সবসময় শান্ত থাকতে।”

আরিয়ার পালটা প্রশ্ন,
“তাহলে এখন কি তোমার মনে হচ্ছে না, যে মেয়ের প্রেমে পড়েছিলে, এই মেয়েটা সেই মেয়েটা না!”

“না। আমি এন্জয় করি এসব। খালুজান আমাকে একটা কথা বলেছিল, ‘মেয়ে জাতি ইচ্ছে করে পুরুষকে রাগায় যাতে তাদের ধৈর্য দেখতে পারে। কারণ পুরুষের রাগ ভয়ানক। আবার ভালোবাসাও। রাগটা নারীকে না দেখানোই শ্রেয়।’ তাও অনেক অনেক সময় পারিপার্শ্বিক কারণে রাগটা দেখিয়ে ফেলি।”

আরিয়া লাজুক ও নিরব হাসলো। অতঃপর আশিকের হাত ছেড়ে বাহু জড়িয়ে সামনের দিকে চেয়ে প্রশস্ত হেসে নির্বিকারে হাঁটতে লাগলো। যেন আশিক কিছু বললেও তার কিছু যায় আসে না। আশিকও চো*রা হাসে। আজ সূর্যাস্তটা বুঝি আরও রাঙাবে!

________

পরদিন রাতে আর্শি শ্রাবণের সাথে কথা বলছে। তখন শ্রাবণ বলে,
“তোমার কাছে কোনো নীল শাড়ি আছে?”

“না। কেন?”

শ্রাবণ অবাক হয়ে শুধায়,
“সত্যি নেই? মেয়েরা তো নীল শাড়ির প্রতি দিওয়ানা থাকে। ওরা নিজেদের আকাশের রঙে সাঁজাতে চায়।”

আর্শি গালে হাত দিয়ে বলে,
“আমি তো শাড়িই পড়ি না। আমার নিজস্ব শাড়ি বলতে এখন দুটো। একটা হালকা টিয়া রঙের। আরেকটা আকদেরটা। শাড়ি সামলানো সো টাফ।”

শ্রাবণ মৃদু ধ*মকে বলল,
“কীসের টাফ! কোনো টাফ না। তুমি শাড়ি পড়বে।”

আর্শিও মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“পড়ব না। আমার ভাল্লাগে না। আরুর বিয়ের দিন মায়ের অনেক বলার পর পড়েছি। এখন আপনি এসব বলবেন না তো!”

“আমি তোমাকে শাড়িতে দেখতে চাই। তাই চিন্তা করছি…”

আর্শি শ্রাবণকে কথাে মাঝপথেই থামিয়ে বলে,
“আপনার চিন্তা আপনি আপনার কাছেই রাখেন! আমি শাড়ি পড়ছি না। বায়!”

বলে কল কেটে দিলো। পাশে সোহা গালে হাত দিয়ে বসা। সোহা বলল,
“এমন করিস কেন? তোর শাড়ি পড়া যে কয়েকটা ছবি দেখেছি, তোকে কিন্তু শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে।”

“লাগুক। আমার ঝামেলা লাগে। আর তুই এই লোককে চিনিস না। আমার তো ভয় হচ্ছে, এ না আমার জন্য খালি শাড়িই আনে! অনেক জেদি সে।”

সোহা উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলে,
“তোর কি জেদ কম নাকি! কথায় আছে না, যেমনটার সাথে তেমনটা মিলে!”

“কী বললি তুই?”
আর্শি ক্ষেপে গেলো। তেড়ে যেতেই সোহা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আর্শি মুখ গোমড়া করে কিছুক্ষণ বসে থেকে বই নিয়ে বসে।

________

দুইদিন পর আরিয়া ও আশিক ঢাকায় ফিরে এসেছে। ওরা একদিন আরও বেশি থেকেছে। সাজেক দুই রাত থেকে পরদিন নীলগিরিতে গিয়েছিল। ভেবেছিল সাজেকে একরাত থাকবে কিন্তু আরিয়ার কারণে বেশি থাকতে হলো। এসেই দেখে নাহিদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসা! নাহিদের পাশে একটা মেয়ে লাল শাড়ি পড়ে বসা। অপরপাশের সোফায় মিসেস নেহা ও হাসান আহমেদ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। কাজের মেয়েটি আরিয়া ও আশিকের জন্য দরজা খুলে দিয়ে বলে,

“ছোটো ভাই, ভাবি, বড়ো ভাইয়ে তো বিয়া কইরা লইয়া আইছে। ওইযে দেহেন পাতলা শাড়ি পইড়া বইসা আছে মাইয়াটা, বারবার ঘোমটা ঠিক করার নামে কী যে করতাছে! চাচায় তো বহুত রাইগ্গা আছে।”

আশিক বলে,
“খালামণিও মানছে না?”

কাজের মেয়েটি জবাব দেয়,
“আফনে কোনোদিন চাচিআম্মারে দেখছেন, বড়ো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু কইছে? আইজও কিছু কয় না। চাচাজানরে মানানোর চেষ্টা করতাছে।”

আরিয়া বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখন যাও।”

কাজের মেয়েটি চলে যেতেই আরিয়া আশিককে বলে,
“তুমি ড্রয়িং রুমে উনাদের কাছে গিয়ে বসো না হয়। আমি ব্যাগ পত্র নিয়ে রুমে যাচ্ছি। আর শোনো, ছেলের বউ মানবে কি মানবে না। এটা উনাদের ব্যাপার। তুমি কিছু বলতে যেও না।”

“হুম। ভাইয়া এমনিতেই আমার উপর ক্ষ্যাপা।”

আরিয়া ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে গেলো। আশিক ড্রয়িংরুমে যেতেই মিসেস নেহা উঠে এসে ধিমি স্বরে বলেন,
“তোর খালুকে একটু রাজি করা না, বাপ। তোর খালু মানবে না বলে দম ধরে বসে আছে। তোর ভাইও জেদ ধরে বসে আছে। আমি কী করব?”

“ভাইয়ার বিয়ে তো তোমরা একসময় না একসময় দিতেই। আর তোমরা এও জানো ভাইয়ার পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়ে দিতে হতো। তাহলে এখন মানছে না কেন?”

“মেয়েটা তোর খালুর সিলেটের অফিসের।”

“এজন্যই মানছে না? দাঁড়াও কথা বলি। তুমি খালুকে একটু উনার রুমে আসতে বলো।”

“আচ্ছা।”

ওদিকে নাহিদ আশিককে দেখে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। আশিককে এখন তার সহ্য হয় না। কিন্তু তারই বাবা-মা আশিককে মাথায় তুলে রাখে।
মিস্টার হাসান স্ত্রীর কথা শুনে নিজের রুমে যান। সেখানে আশিক জিজ্ঞাসা করে,

“খালু, ভাইয়া যখন বিয়েটা করেই ফেলেছে তাহলে….”

“থাম তুই। জানিস তুই মেয়েটার ব্যাপারে কিছু? আমার অফিসে রিসেপশনে বসে মেয়েটা। সেটা আসলে সমস্যার কথা না। তোর কী মনে হয়, অফিসের কানাঘুষা আমি কিছু জানি না? মেয়েটার সম্পর্কে ভালো কোনো কথা আমার কাছে আসেনি। আমি মেয়েটাকে কয়েকবার সাবধান করেছিলাম। অফিস কাজের জায়গা এখানে এসে রং-তামাশা করার না। আর তোর ভাই সেই মেয়েকেই বিয়ে করে এনেছে।”

“কিন্তু খালু, এখন তো কিছু করার নেই। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। আর ভাইয়ার জেদ তো তুমি জানোই। এখন যদি তুমি কিছু না মানো তাহলে হিতে বিপরীত হবে।”

“কিন্তু এই মেয়েকে ঘরে তুললে অশান্তি আরও বাড়বে।”

“কিন্তু ঘরে যদি না তোলো, ভাইয়া তো এই মেয়েকে নিয়েই অন্য কোথাও থাকবে। এখন যদি এই মেয়েটার ভাইয়াকে কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে বাহিরে থাকলে আরও বেশি করতে পারবে। ঘরে থাকলে কিছু তো ভয়ে থাকবে।”

“তুই আর তোর খালা, দুজনেই নরম মনের। তোর ভাইয়ের কোনো ক্ষতি এই মেয়ে করবে না। তোর ভাই এই মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে আমাদের উপর শো*ধ তুলতে।”

“কী আর শো*ধ তুলবে? আমাকে ও আরিয়াকে বাড়ি ছাড়া করবে তো? ভাইয়া যদি বলে তাহলে আমি আজকেই আরিয়াকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব।”

“খবরদার! তোর মাকে তোর খালা কথা দিয়েছে, তোকে কখনো নিজের ছেলের থেকে নিচু নজরে দেখবে না।”

মিস্টার হাসান কষ্ট থেকেই কথাটা বললেন। আশিক মলিন হেসে তার খালুর কাঁধে হাত রেখে বলে,
“মেনে নাও। যার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। ভাইয়া এমনিতেই তোমাদের উপর রাগ। এখন যদি তোমরা মেনে না নেও, তাহলে সেই রাগের আগু*নে আরো ঘি পড়বে।”

মিস্টার হাসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হতাশ কণ্ঠে বলেন,
“এই ছেলেই আমার নাম ডুবাবে!”

অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে যান। আশিকও পিছু যায়। তিনি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বলেন,
“তোমাদের মেনে নিলাম কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। মুশফিকা(নাহিদের বউ) আর অফিসে যাবে না। যদি মানতে পারো তবেই মুশফিকা এই বাড়িতে থাকবে। নয়তো না।”

নাহিদের জবাব দেওয়ার আগে, মুশফিকাই জবাব দেয়,
“আমি রাজি, বাবা। আপনি যে আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছেন এটাই তো অনেক।”

মুশফিকার কণ্ঠে এত নম্রতার ছাঁপও মিস্টার হাসানের মন গলাতে পারেনি। তিনি বলেন,
“নাহিদ, তুমি তোমার বউকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। অনেক রাত হয়েছে।”

নাহিদ কিছু না বলে মুশফিকার হাত ধরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

চলবে
ও শ্রাবণকে নিয়ে কম লেখা হচ্ছে সেটার কারণ তো বুঝতেই পারছেন। লং ডিস্টেন্স। তবে শিঘ্রই দূরত্ব মিটবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।
গ্রুপ লিংক: Tithy’s StOrY fIcTiOn ♡[চন্দ্রকুটির]♡

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here