শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৩

0
162

#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩

দেখতে দেখতে দুটো দিন পেরিয়ে গেলো। আরিয়া ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে সবে। আশিক গিয়েছে টিউশনিতে। আরিয়া পানি খেয়ে ফ্রেশ হতে যাবে তখনি দরজায় টোকা পড়ে। আরিয়া বসা থেকেই বলে,

“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। পরে খাব।”

তারপর আর টোকা পড়ে না। আরিয়া ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোয়। এখন বিকেল প্রায় পাঁচটা বাজতে চলল। ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে দেখে আরিয়ার পছন্দের খাবারে টেবিল ভরপুর! আরিয়া খানিক অবাক হয়। ভাবতে থাকে, সে তো মিসেস নেহাকে তার পছন্দের আইটেমের কথা বলেনি। আরিয়ার ভাবনার মাঝে মুশফিকা হাতে কাবাবের প্লেট নিয়ে হাজির। অতঃপর বলে,

“বসো বসো। কতো লেট করে এলে। ওভেনে সামান্য গরম করেছি।”

আরিয়া অবাক হয়ে মুশফিকার দিকে চেয়ে রয়। আরিয়াকে চেয়ে থাকতে দেখে মুশফিকা আরিয়ার হাত ধরে চেয়ারে বসায়। তারপর প্লেটে গরম গরম খিচুড়ি বাড়তে বাড়তে বলে,

“দুপুরে কি কিছু খেয়েছিলে? দেখে তো মনে হচ্ছে না খেয়েছ।”

আরিয়া মৌনতা ভেঙে প্রশ্ন করে,
“এগুলো আন্টি রান্না করেছেন?”

“না। আমি রান্না করলাম। মা তো বাতের ব্যাথার জন্য এতোকিছু করতে পারবে না। বুয়ার হাতের রান্নাই সবাই খায়। তাই ভাবলাম আজ আমি রান্না করি। নাউ, শুরু করো।”

আরিয়ার ভিমড়ি খাওয়া অবস্থা! তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মুশফিকা তার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে। আরিয়া কিছুটা কৌতুহলী হয়ে শুধালো,
“এগুলোই কেন রান্না করলে?”

“তোমার পছন্দের খাবার তো। খেয়ে দেখো, তোমার ভালো লাগবে।”

আরিয়ার সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন,
“তুমি কি করে জানলে, এগুলো আমার পছন্দের খাবার?”

এবার মুশফিকা চমকে যায়। থতমত খেয়ে কিছু বলতে নিয়েও সুর বদলে বলে,
“তোমার আন্টি বলেছেন। আমিও বা কিভাবে জানব, যদি মা না বলেন আমাকে এগুলো। তুমি কথা বলো না তো, খাও।”

আরিয়া বুঝতে পারলো যে মুশফিকা মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু সে আর কথা বাড়াতে চাইলো না। তার সত্যিই অনেক ক্ষুধা লেগেছে। খাওয়া-দাওয়া শেষে মুশফিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরিয়া নিজের রুমে রেস্ট নিতে চলে গেল।

আরিয়া যেতেই মুশফিকা নিজের ঘরে গিয়ে নাহিদকে কল করলো। নাহিদ কল রিসিভ করেই প্রথমে জিজ্ঞাসা করে,
“আরিয়া খেয়েছে?”

“হ্যাঁ। খুব মজা করে খেয়েছে।”

“গুড। ওর সাথে আরও বেশি বেশি করে মিশবে। ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে।”

“ঠিক আছে।”

“আর শোনো, আরিয়া কিন্তু প্রচুর প্রশ্ন করে। তাই কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে নেবে সবকিছু। তাছাড়া তুমি ইন্টেলিজেন্ট। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।”

“ওকে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর আমার একাউন্টে….”

নাহিদ মৃদু ধ*মক দিয়ে মুশফিকাকে থামিয়ে দেয়। অতঃপর বলে,
“সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। সময়মতো সব পেয়ে যাবে।”

“ওকে।”

মুশফিকা কল কে*টে এবার তার শাশুড়ির ঘরে যায়।

________

এদিকে পরেরদিন সকালে শ্রাবণকে সারপ্রাইজ করে দিয়ে ওর ভিসা হয়ে যাওয়ার খবর জানায় ইরাদের বন্ধু। শ্রাবণ যদিও মাঝে বলেছিল ভিসা লাগবে না। কিন্তু ইরাদই তার বন্ধুকে বলেছিল যাতে শ্রাবণের কথা না শুনে। কারণ শ্রাবনের হুটহাট পরিকল্পনা বদল হয়। মন ভালো থাকলে এক, মন খারাপ থাকলে এক। ভিসা পেয়ে শ্রাবণ সবার আগে ইরাদকে কল করে। ইরাদ রিসিভ করেই বলে,

“ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমি জানি আমি তোর অনেক বড়ো উপকার করেছি। এইযে তোর মন বুঝে ভিসার কাজ চালিয়ে যেতে বলেছি।”

শ্রাবণ হেসে বলে,
“তুই আর আদিব, এই দুইজন যে আমার লাইফে কী, সেটা আমি বলে বুঝাতে পারব না।”

“হইছে এবার থাম। প্যাকিং শুরু কর। পরশু ফ্লাইট। আর্শির বার্থডের আগেরদিন।”

ইরাদের কথায় শ্রাবণ বলে,
“তোকে সামনে পেলে….”

“ছিহ্ শ্রাবণ! তুই এখন বিবাহিত। আমারও গার্লফ্রেন্ড আছে। এসব নষ্ট কথাবার্তা বলবি না।”
বলেই ইরাদ নিজেই ফিক করে হেসে ফেলে। শ্রাবণ বলে,

“আমি ট্রিট দিতাম বলতাম। যাই হোক। থ্যাংকিউ দোস্ত। আমি তো মানা করেই দিয়েছিলাম। তুই যদি না বলতি তবে…”

“ওকে ওকে। এতো মাখন লাগাতে হবে না। আমার মেয়ের সাথে তোর ছেলের বিয়ে দিবি এটা যেন মনে থাকে।”

শ্রাবণ হেসে হেসে সম্মতি দিয়ে ফোন রাখে। এবার আর্শিকে কল লাগায়। আর্শি ঘুমাচ্ছে। ইতালিতে এখনও সূর্য উঠেনি। ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে সবে। শ্রাবণের কথায় আর্শি ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে না। যদিও শ্রাবণ তাকে বলেছে অসময়ে কল করবে না। তাও এই ছেলের কখন মুড সুয়িং হয় বলা যায় না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর্শি হঠাৎ ফোনের রিংটোনে ধড়ফড়িয়ে ওঠে! বুকে হাত দিয়ে কয়েকবার শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে ফোন উঠিয়ে দেখে শ্রাবণ কল করেছে। আর্শি সময় দেখে হতাশ হয়ে বিড়বিড় করে বলে,

“আমার ঘুমের সাথে এর সত্যি সত্যি শত্রুতা আছে। এটা আমার ঘুমও বুঝে গেছে! ঘুমের মাঝে ফোন বাজলেই হৃৎপিণ্ডটা যেন বের হয়ে আসার অবস্থা হয়।”

ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। দশ সেকেন্ড পর আবার কল আসে। আর্শি রিসিভ করে,
“হ্যালো।”

“গুড মর্নিং। তুমি এখনও ঘুমাচ্ছিলে? নামাজ পড়েছ?”

আর্শি চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,
“মাত্র ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে। আমার এলার্ম আরও ১৭ মিনিট পর।”

“তুমি তো তাহলে ঘুমিয়ে ছিলে।”

“হুম।”

“সরি। যেহেতু উঠেই গেছো, নামাজ পড়ে নাও। তারপর কথা বলব।”

“ওকে।”

আর্শি ফোন কেটে ওজু করতে যায়।
________

নামাজ পড়ে আর্শি ফোন নিয়ে কিচেনে যায়। চা বানাবে। মোনালিসা এখনও ঘুমাচ্ছে। পাশের রুমে সোহা ও মোনাও ঘুমাচ্ছে। আর্শি তাই রান্নাঘরেই কাজ করতে করতে শ্রাবণের সাথে কথা বলছে। চা বানিয়ে কিছু ভেজিটেবলও কে*টে রাখছে।
শ্রাবণ কথার ফাঁকে আর্শির প্রতিক্রিয়া জানতে জিজ্ঞেসা করে,

” তুমি তো এক বছর যাবত ইটালিতে আছো। তোমার গত বছরের জন্মদিনটাও ইটালিতে কে*টেছে। কেমন এন্জয় করেছিলে?”

আর্শির হাসি পেয়ে যায়। সে বলে,
“আমরা ভেনিসে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমরা মানে আমরা চারজন ও দুইজন ছেলে হ্যারি ও পিটার। সেখানে ফাউন্টেন দেখে সোহার ইচ্ছে হয় শর্ট ভিডিওতে যে দেখায় ফাউন্টেনের সাথে ছবি তুলে, তেমনটা তুলবে। তো ও পিটারকে ক্যামেরার এঙ্গেল সেট করে দিয়ে দৌঁড়ে যায়। ও যেতে যেতেই ফাউন্টেন অফ হয়ে যায়। ও যতোবার যায়, ততোবারই এমন হচ্ছিলো। এদিকে আমি মোনা, লিসা ও হ্যারি হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়েছি। পিটার প্রথমে হাসছিল কিন্তু পরে ওরও একটা জেদ চাপে যে ও ছবি তুলেই ছাড়বে। দুজনের লাগাতার ধৈর্যে একটা ছবি তুলতে পারে তবে তখন ফাউন্টেন বন্ধ হবে হবে ভাব এমন।”

শ্রাবণ কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
“তুমি তুললে না কেন?”

“সোহার মতো ধৈর্য আমার নেই। আমার তখন প্রচুর খিদে পেয়েছিল কিন্তু সোহার জন্য লেট হয়েছিল। তারপর যদি আমি আবার যেতাম তাহলে আবার লেট হতো।”

শ্রাবণ বিরস স্বরে বলে,
“তুমি এতো নিরামিষ কেন?”

আর্শি সাথে সাথে জবাব দেয়,
“নিরামিষ বেশি খাই তাই!”

“যাও! তুমি আসলেই নিরামিষ।”

“তাই ভালো। আপনি না বলেছিলেন, ছুটি ক্যান্সেল করেছেন। আপনার ফ্লাইট কবে?”

শ্রাবণ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“কালকে।”

আর্শি অবাক হয়। বলে,
“আপনি তো আমাকে জানালেন না। আপনার কথাবার্তায় তো মনে হচ্ছে না, আমি জিজ্ঞাসা না করলে আপনি আমাকে জানাতেন।”

“জানাতাম তো। তোমার কথা শুনতে শুনতেই মা*থা থেকে বেরিয়ে গেছে।”

“ভালো। ইশরাকরা কি তবে আজকে খুলনা থেকে চলে আসবে? পরশুই না গেল!”

“না। আমি মানা করেছি। পরশুই গেল। ভিডিওকলে কথা বলে নিব।”

“ওহ আচ্ছা।”

আর্শি ফোনে সময় দেখে ফের বলে,
“দেখলেন, কীভাবে কীভাবে ৫২ মিনিট হয়ে গেল। এবার রাখি। ওরা এতক্ষণে উঠে গেছে।”

“ওকে টেক কেয়ার।”

আর্শি মুচকি হাসে। বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে এতক্ষণ বানানো নাস্তা নিয়ে ছোটো টেবিলটাতে রাখে। শ্রাবণের সাথে কথা বলতে বলতে সে নিজেই আজকে নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে।

শ্রাবণ ফোন রেখে অনলাইনে আর্শির জন্য কিছু অর্ডার করে। যাতে আজকের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়া হয় সেই ব্যাবস্থা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কালকে রাতে আরেক পর্ব আসছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here