শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৭

0
290

#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭

মিলানের অলিগলিতে ঘুরেফিরেই দুটো দিন যে পেরিয়ে গেছে শ্রাবণ ও আর্শির। তিন দিন থাকার কথা থাকলেও আজই ভেনিসে বেড়াতে যাচ্ছে ওরা। ট্রেণের জানালা দিয়ে ছবির মতো পিছিয়ে যাওয়া প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে আর্শি। পাশ থেকে শ্রাবণের হাত জড়িয়ে শ্রাবণের কাঁধে মাথা এলিয়ে হাস্যজ্জল চাহনিতে প্রকৃতি দেখছে। শ্রাবণ জিজ্ঞাসা করলো,

“কফি খাবে?”

আর্শি মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলে শ্রাবণ উঠে কফি আনতে যায়।

ভেনিসে বিকেলের দিকে পৌঁছায় ওরা। আদ্রিয়াটিক সাগরের উপকূলে ইতালির এই ভেনিস শহরটি জলে ভাসমান। মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টিতে শরটিতে। শহরটিতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড়ে কোলাহলিত থাকে। ভেনিসের শিল্প, সাহিত্য বেশ নজরকারা ও নান্দনিক। রং-বেরঙের কারুকার্য নিয়ে প্রাচীন প্রাসাদ গুলো নীল স্বচ্ছ জলের উপর মাথা উঁচু করে নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেনিসকে ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহরও বলা হয়। ভেনিস শহরটি গড়ে ওঠার পেছনেও রয়েছে একটা ইতিহাস। জ*লদ*স্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রবাসীরা এখানে বসতি করে তুলেছিল। এখানে বাহন বলতে নৌকা। পুরো শহরে লতার মতো লেকে বেষ্টিত।
হোটেলে উঠেই ফ্রেশ হয় লাঞ্চ করে আর্শি ও শ্রাবণ একটু হাঁটতে বেরোয়। আজ ওরা খুব একটা ঘুরবে না। শুধু আশেপাশে একটু ঘুরবে। ভেনিসের দীর্ঘ খালের পাশ দিয়ে হাঁটছে। খালটির উপর চারটি ব্রিজ আছে। তারমধ্যে রিয়াল্টো ব্রিজটি বিখ্যাত। আর্শি হাঁটছে শ্রাবণের হাত জড়িয়ে। তার চোখে-মুখে আশেপাশের পরিবেশের মুগ্ধতা। এর আগেও একবার ভেনিসে আসলেও এবারেরটা সম্পূর্ণ আলাদা। এবার তার সঙ্গী তার আপন মানুষ। যাকে সে একটু একটু করে গভীর ভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছে। যাকে দেখলে এখন তার মনে হারানোর ভয় কাজ করে। তাইতো হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।
আর্শি আশেপাশে চঞ্চল নজর বুলালেও শ্রাবণের বিরামহীন নজর আর্শিতে। এই দুইদিন যাবত মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন সে লক্ষ্য করছে। পরিবর্তনটা হচ্ছে আর্শির চোখের ভাষার। লাজুকতা, প্রেমময়ে পূর্ণ এক অদৃশ্য অধিকারবোধে আচ্ছন্ন। শ্রাবণ প্রশান্তচিত্তে হাসে। অতঃপর ভেনিসের ফুটপাতে এক ফুল বিক্রেতার থেকে আর্শির মিষ্টি রঙের জামার সাথে মিলিয়ে সেই রঙেরই একটা গোলাপ কিনতে দাঁড়ায়। আর্শি তা দেখে মুচকি হাসলো। ফুলটা শ্রাবণ আর্শির কানের কাছে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

“প্রপোজ না করে কানের পিঠেই গুঁজে দিলাম। লাল গোলাপের সামনে এই গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করলে যদি লাল গোলাপ অভিমান করে বসে আমাদের ভৎসনা দেয়?”

আর্শি এবার মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলে। ফের বলে,
“ফুলকেও ভয় পাচ্ছেন? দারুণ ভীতু তো আপনি!”

শ্রাবণ ঠাট্টার ছলে বলে,
“ভয় পাব না? ফুল পবিত্র। আর পবিত্র কিছুকে দুঃখ দিলে আমার কপালে শনির দশা পড়বে না, বলো? মাত্র মাত্রই তো বউয়ের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসার দেখা পাচ্ছি। বউ আমাকে কাঁধছাড়া করতে চাইছে না বলে বগলদাবা করে ঘুরছে! একটা ফুলের অভিশা*পে যদি এই সুখ হারিয়ে ফেলি?”

আর্শি থেমে হা করে শ্রাবণের মুখের দিকে চেয়ে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ আর্শির অবস্থা দেখে হেসে আর্শির থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দিয়ে বলে,

“মুখ বন্ধ করো। মা*ছি ঢুকতে পারে! প্রেমের শহর বলে কথা! যদি মা*ছি তোমাতে মুগ্ধ হয়ে তোমার মুখের ভেতর ঢুকে যেতে চায়? বলা তো যায় না। তখন তোমার….!”

আর্শি এবার ক্ষেপে গেলো। বলে,
“ত্যা*ড়া টাইপ ককথাবার্তা আপনাকে বলতেই হবে? কেন না বললে পেটের ভাত হজম হয় না?”

“না হয় না!”

আর্শি এবার অনবরত শ্রাবণকে কি*ল, ঘু*ষি মা*র*তে লাগলো। শ্রাবণ হাসতে হাসতে কিছু দূর দৌঁড়ে চলে গেলো।

_______

মুশফিকা নাহিদের পাশে বসে আছে। নাহিদ ফোনে কথা বলছে। অপরপাশ থেকে একজন বলছে,
“মেয়েটার সমস্ত ডিটেইলস আপনাকে ইমেইল করছি। মেয়েটা অরফেন। চার্চে বড়ো হয়েছে।”

নাহিদ বাঁকা হাসে। অতঃপর বলে,
“থ্যাংকস। ইউ উইল গেট ইউর মানি।”

ফোন কে*টে নাহিদ লম্বা করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“এটলাস্ট মেয়েটার খোঁজ পেলাম।”

মুশফিকা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“কিন্তু তুমি…”

নাহিদের চোখ চোখ পড়তেই থেমে গেল। মাথা নিচু করে বলল,
“সরি!”

নাহিদ ফিচলে হেসে বলল,
“সেদিন রেগে থাকাতে বলেছিলাম। তুমি করেই বলতে পারো।”

মুশফিকা যেন আনন্দিত হলো। ইদানীং সে নাহিদকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। নাহিদ কোনোভাবে তারউপর অসন্তোষ থাকুক তা সে চায় না। যদিও এর আগেও কিছু পুরুষের সান্নিধ্যে সে ছিল কিন্তু কথায় আছে না, ‘শ*রী*র ছুঁ*তে পারলেও মন সবাই ছুঁ-তে পারে না।’ তেমনি মুশফিকা এর আগে কারও জন্য এতোটা গভীর অনুভব করেনি। সে চায় না, এক বছর পর তাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাক কাগজের সম্পর্কের মতো। সারাজীবন সে নাহিদের সাথেই থাকতে চায়।
মুশফিকার অপলক চাহনি ও নিরব দেখে নাহিদ ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“কী হলো?”

মুশফিকা সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়। নিজেকে ধাতস্থ করে শুধায়,
“ওই মেয়েটা যদি রাজি না হয়?”

নাহিদ আয়েশ করে বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বলে,
“হবে হবে। টাকা ছাড়লেই হবে। মেয়েটা আবার অরফেন। টাকার দরকার তার হবে। নয়তো সেখানে একটা ছোটো অ্যাপার্টমেন্টে কিনে দিব। রাজি হবে।”

মুশফিকা হাসলো। নাহিদের মেয়েদের প্রতি চিন্তাভাবনা তারও খারাপ লাগে। সে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“তোমার কেন মনে হয়, ওই মেয়ে লো*ভে পড়ে তোমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে কাজটা করবে? এমনও তো হতে পারে, মেয়েটা যেহেতু এতিম। সে নিজের দ্বারা অন্যের ক্ষতি করতে চাইলো না।”

নাহিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“নিজের দিকে চেয়ে কথাটা বলো! তুমি করছো না, টাকার জন্য?”

এই বলে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মুশফিকা মলিন হেসে সেখানেই বসে রইলো। মুশফিকা নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
“দাদী বলতো আমি আমার মায়ের চরিত্র পাব। মা যেমন অন্যের সংসার ভেঙে নিজেরটা গড়েছে। আমিও তো অন্যেরটা ভেঙে নিজেকে গড়তে চাইছি। দাদী সত্যিই বলতো। আমি কারও ভালো করতে পারি না। স্বভাবত প্রচণ্ড স্বার্থপর যে।”

অতঃপর সেখানেই অনড় বসে রইল।

_______

ক্লাস টেস্টের জন্য আরিয়া ও আশিক পড়ছে। তখন আশিকের ফোন বেজে উঠলে আরিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। তার সন্দেহ, জেবিন মেয়েটা কল করেছে। ওদিকে আশিককে তার বন্ধু ক্লাস নোটের জন্য কল করেছে। আশিক ফোন কানে রেখেই আরিয়াকে বলে,

“তোমার খাতা থেকে পরশুদিনের ক্লাসের নোটটা ছবি তুলে একটু দাও তো আমাকে। জিদান চাইছে।”

আরিয়া নিজের চিন্তাকে ভুল প্রমান হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে খাতা থেকে ছবি তুলে আশিককে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
“নাহ্! এই জেবিনের একটা ব্যাবস্থা করতে হচ্ছে। কালই ওকে ধরব। কী চায় সে? আমার স্বামী, কয়দিন পর আমার বাচ্চার বাপও হবে! তার দিকে কী-না নজর দিয়ে বসে আছে! বে*হা*য়া মেয়ে! একদম গ*লার টু*টি চেপে ধরব! হুহ্!”

আশিক আরিয়াকে কলমেে নিভ দিয়ে খাতায় আ*ঘা*ত করতে দেখে সন্দিহান দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তারপর শুধায়,
“তুমি এমন করছো কেন?”

“হু?”

“খাতায় কলম দিয়ে গু*তাচ্ছ কেন? কার উপর রাগ ঝা*ড়ছো?

আরিয়া এবার থতমত খেয়ে যায়। ফের আমতা আমতা করে বলে,
“কিছুতেই মনে থাকছে না। বারবার ভুলে যাচ্ছি। তাই…”

“ওহ! মনোযোগ দিয়ে পড়ো। মনের মধ্যে অবান্তর চিন্তা বাদ দাও। পড়াতে ফোকাস করো।”

আরিয়া মাথা দুলিয়ে পড়তে আরম্ব করলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কিছুক্ষণ আগেই ফেসবুকে লগইন করতে পারলাম। ফেসবুকের প্রবলেম তারপে কোডের কারণে লগইন প্রবলেম হচ্ছিলো। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here