শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৮

0
184

#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮

সময় কতো দ্রুত পেরিয়ে যায়। যেন চোখের পলকেই দিন পেরিয়ে সপ্তাহ কেটে যায়। সময়ের সাথে সাথে ব্যাস্ততাও যেন বাড়তে থাকে। তখন মনে হয়, ২৪ ঘণ্টার বদলে যদি দিনে ২৭ ঘণ্টা পাওয়া যেত! আর্শির বর্তমান অবস্থাও তেমনি। আগামীকাল কোর্সের মিড পরীক্ষা। তাই নাকেমুখে পড়ছে অবস্থা। কয়েকদিন ঘুরাফেরার কারণে অনেক পড়া জমে গিয়েছিল। তাইতো তিন-চার দিন যাবত শ্রাবণ আর্শিকে কল করেও পাচ্ছে না। পেলেও দশ-পনেরো মিনিটের বেশি আর্শি কথা বলতে পারে না। তারউপর কানাডা ইটালির থেকে ছয় ঘণ্টা পেছনে। সময়ের গ্যাপে দুজনের কথাবলার টাইমটেবিলও পরিবর্তন হয়েছে। আর্শি ভেনিস থেকে মিলানে ফিরেছে দুই সপ্তাহ হয়েছে। শ্রাবণও সেখান থেকে কানাডার ফ্লাইটে চলে গেছে।

আর্শি ও লিসা নিজেদের রুমে পড়ছে, তখন পাশের রুম থেকে সোহার চিৎকার শুনে দুজনেই হকচকিয়ে তাকায়। লিসা বলে,

“হোয়াই ইজ সি স্ক্রিমিং?”

“ডোন্ট নো।”

বলে আর্শি উঠে গেলো। পিছু পিছু লিসাও গেল। সোহার রুমে গিয়ে দেখলো সোহা ফোন নিয়ে এক প্রকার নাচছে! মোনাও অবাক হয়ে দেখছে। আর্শি ও লিসা, মোনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড টু হার?”

মোনা জবাবে বলে,
“ডোন্ট নো। সাডেনলি সি স্টার্টেড বিহেভিং লাইক দিস।”

অতঃপর তিনজনেই কিছুক্ষণ সোহার পা*গলামো দেখতে থাকে। সোহা ওদেরকে এভাবে নিজের দিকে বিরক্তি ও কৌতুহলের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে শান্ত হয়ে বসে। ফের এক্সাইটমেন্ট নিয়ে বলে,

“রিক, জাস্ট সেন্ড মি এ মেসেজ, টুমোরো হি উইল কাম টু মিট উইথ মি! ইটস জাস্ট আনবিলিভেবল!”

ওরা তিনজন একে অপরের দিকে চেয়ে থেকে কোনো প্রত্যুত্তর না করে যে যার কাজে চলে যায়। সোহা তার বন্ধুদের এতো নির্বিকার দেখে আশাহত হয়ে যায়। তখন তার হঠাৎ খেয়াল হয়, কাল তার পরীক্ষা! আর সন্ধ্যা থেকে এক ঘণ্টা সে পড়তে বসেনি। রিকের সাথে কথা বলেছে!

_____

পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আর্শি শ্রাবণকে কল করে। ক্যাম্পাসের একটা নিরব স্থানে বসেছে সে। সোহা গেছে রিকের সাথে দেখা করতে। সাথে করে লিসাকেও নিয়ে গেছে। মোনার পরীক্ষা সবেই শুরু হবে। কানাডায় এখন সকাল নয়টা। শ্রাবণ অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো। এমন সময় কল আসে। সে কোট পড়তে পড়তে স্ক্রিণে আর্শির নাম দেখে রিসিভ করে বলে,

“পাঁচ মিনিট পর কল করছি। একটু ওয়েট করো।”

অতঃপর কল কেটে দেয়। আর্শি বুঝলো যে শ্রাবণ এখন অফিসের জন্য বেরোবে। ক্যাব হয়তো চলে এসেছে। আর্শি বসে বসে ফোনের গ্যালারিতে ভেনিসে ঘুরাঘুরির শেষ দিনের ছবিগুলো দেখছে। দুজনে একসাথে নৌকার এক সাইডে আগেপাছে করে বসে দুই হাত ছড়িয়ে তোলা ছবি। শ্রাবণ আর্শিকে নৌকাতেই লাল গোলাপের তোড়া দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করার ছবি। ক্যান্ডেল নাইট ডিনারের ছবি। আরও কিছু সুন্দর মূহুর্তের ছবি। মূহুর্তগুলো আর্শির দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। অজান্তেই আর্শি লাজুক হাসে। আজ তার পরীক্ষা শেষ হলো। তিনটা সাবজেক্টের পরীক্ষা পরপর তিন দিনে দিয়েছে। এখন আগামীকাল ক্লাস নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রাবণ কল করে। আর্শি রিসিভ করে বলে,

“সরি, কালকে ইন্টারনেটে ছিলাম না। আপনি কল করেছিলেন।”

“পরীক্ষা কেমন হলো তাই বলো।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“দুপুরে খেয়েছ?”

“না। খাব। আচ্ছা শুনুন না, আপনি তো বলেছিলেন স্নিগ্ধা আপুর সাথে কথা বলতে। আমি মাকে কল করলে আপুর সাথে কথা বলতে পারব? আসলে সরাসরি আপুকে কল করতে ভয় করছে। যদি রিসিভ না করে?”

শ্রাবণ খানিক ভাবলো। ফের বলল,
“করতে পারো। আপুতো মায়ের কাছেই আছে। ঝামেলা মিটিয়ে নিও।”

“হুম।”

“এখন অ্যাপার্টমেন্টে যাও। আমি অফিস থেকে ফিরে কল দিব। তারপর…”

বলতে বলতে শ্রাবণ ফোন কান থেকে নামিয়ে ক্যাব ড্রাইভারকে বলে,
“স্টপ স্টপ।”

ড্রাইভার গাড়ি থামালে শ্রাবণ অর্ধনমিত গাড়ির কাঁচ পুরোটা নামিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো এক তরুণীকে ডাকে,
“হেই ইরিনা,”

মেয়েটি বারবার হাতঘড়িতে সময় দেখছিল। হঠাৎ নিজের নাম শুনতে পেয়ে সেটা অনুসরণ করে তাকায়। অতঃপর পরিচিত চেহারা দেখে এগিয়ে আসে। শ্রাবণ তাকে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়াই আর ইউ স্ট্যান্ডিং হেয়ার?”

মেয়েটি জবাবে বলল,
“একচুয়ালি, আই বুকড এ ক্যাব বাট আনফরচুনেটলি ক্যাব ড্রাইভার সাডেনলি গট সিক।”

“ওহ। সো ইউ আর গেটিং লেট। ইউ ক্যান কাম উইথ মি। উই আর ইন দ্যা সেম অফিস!”

ইরিনা খানিক বিব্রত হলো। তা দেখে শ্রাবণ বলল,
“কাম। ডোন্ট ফিল হেজিটেটিং।”

ইরিনা কৃতঙ্গতা স্বরূপ হেসে গাড়িতে শ্রাবণের পাশে উঠে বসলো। অতঃপর ধন্যবাদ জানালো।
এদিকে আর্শি এখনও কলে। সে দুই পক্ষের কথোপকথনই শুনেছে। শ্রাবণ ফোন কানে নিয়ে বলল,

“রাতে কল করছি। বায়।”

আর্শি মৃদু স্বরে ‘বায়’ বলে কল রেখে দিলো। অতঃপর ভাবতে লাগলো। শ্রাবণ তাকে ইরিনা নামের একটি মেয়ের গল্প বলেছিল। শ্রাবণ তাকে বলেছিল, মাস্টার্স করাকালীন ইরিনা নামের এক মেয়ে শ্রাবণকে একবার প্রপোজ করেছিল। মেয়েটি শ্রাবণের এক ইয়ারের জুনিয়র ছিল। তাহলে কি এই সেই ইরিনা? নাকি অন্য ইরিনা? কিন্তু ইরিনা যে শ্রাবণের কলিগ, এটা তো বলেনি! প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে আর্শির মস্তিষ্কে। নিজেকে শান্ত করতে নিজে নিজেই বলে,

“হোয়াটেবার! শ্রাবন তো বলেছেই, মেয়েটি তাকে প্রপোজ করার পর সে সাথে সাথে না করে দিয়েছিল। তারপর মেয়েটি আর কখনো তার কাছে প্রপোজাল নিয়ে আসেনি। তাহলে আমি অযথাই ভাবছি। ধুর!”

উঠে দাঁড়ালো আর্শি। লিসা ও সোহাকে খুঁজতে লিসার ফোনে কল করলো। লিসা জানালো তারা একটা ক্যাফেতে আছে। সেখানেই যেন সে আসে। আর্শিও সেই পথে যেতে লাগলো।

________

রাত প্রায় সাড়ে আটটা। আরিয়া ভয়ে ভয়ে চুপসে মুখ লুকিয়ে বিছানায় বসে আছে। আশিক টিউশনি থেকে এখনও ফেরেনি। ভার্সিটির থেকে ফেরার পর তার শরীর খুব খারাপ করেছিল। বমিও হয়েছে। তারপর কাজের মেয়েটা তাকে এমন এক কথা বলল, যা শুনে সে সত্যি ঘাবড়ে গিয়েছিল। তারপর নিজেরও কিছু মনে হওয়াতে কাজের মেয়েটাকে দিয়েই ফার্মেসি থেকে প্রেগন্যান্সি কিট কি*নিয়ে আনে। অতঃপর টেস্ট করে রেজাল্ট দেখে এখন দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কাজের মেয়েটা রেজাল্ট জানতে কয়েকবার ডেকেও গেছে কিন্তু আরিয়া সাড়া দেয়নি। আরিয়া নিজেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত। যদিও তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই মাস। কিন্তু এতো জলদি বেবি নেওয়ার ইচ্ছে তো তার ছিলো না। এখনও গ্রাজুয়েশনের কিছু মাস বাকি।

ঘড়ির কাঁটায় নয়টা বাজতেই দরজায় নক হলো। আরিয়ক জানে এখন আশিক এসেছে। সে দ্রুত উঠে এক প্রকার ছুটে গিয়ে দরজা খুলল। তার ধারনা সত্যি করে দরজার অপরপাশে আশিকই ছিল। আরিয়া দরজা খুলেই কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই আশিকের বুকে একপ্রকার ঝাঁ*পিয়ে পড়লো। আচমকা এমন হওয়াতে আশিক এক পা পিছিয়ে গিয়ে আরিয়াকে আগলে ধরে। আশিক বুঝতে পারলো না আরিয়ার এমন করার কারণ। এদিকে সিঁড়ি দিয়ে নাহিদ উঠছিল। দুই ভাই একসাথেই বাড়িতে ফিরেছে। নাহিদের নজর না চাইতেই আশিকের রুমের দরজার দিকে যেতেই সে পরিবেশ দেখে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ায়। তার রাগ হচ্ছে। সিঁড়ির হাতলে মুষ্টিমেয় আ-ঘা*ত করার পর উঠে যেতে নিলেই একদম উপরের সিঁড়িতে দাঁড়ানো মুশফিকার সাথে নজরবন্দি হয়। অতঃপর নাহিদ মুশফিকাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

মুশফিকা কলিংবেলের শব্দে নিচে নামছিল। তার আগেই কাজের মেয়েটা দরজন খুলে দেওয়াতে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পথিমধ্যে আরিয়ার আচমকা কাণ্ডও তার নজর কেড়েছে। সেই সাথে নাহিদের রাগের বহিঃপ্রকাশও। মুশফিকা কিছুটা সন্দেহ করে। আরিয়ার শরীর খারাপের ব্যাপারে সে জানে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে জানতে পারে, আরিয়া প্রেগন্যান্সি কিট আনিয়েছে। তাই আরিয়ার আচরণে ধারণা করে নিয়েছে, মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। মুশফিকা মৃদু হাসলো। কিন্তু পরক্ষণেই মুখ জুড়ে নেমে এলো কালোমেঘের ছায়া! ভয় হচ্ছে তার, নাহিদ ওদের কোনো ক্ষতি করবে না তো?

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কাল আরেক পর্ব আসছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here