শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩০

0
279

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০
দেখতে দেখতে প্রায় মাস খানেক সময় পেরিয়ে গেছে। আর্শির সাথে স্নিগ্ধার সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হয়েছে সেটাও শ্রাবণের বদৌলতে। নয়তো স্নিগ্ধা তো আর্শির সাথে কথা বলবে না! কিশোরী বয়সের ছোটো কিছু কথার জের যে স্নিগ্ধা মনে গেঁথে রেখেছে! সেটাও আর্শি ঘুণাক্ষরে টের পায়নি। ছোটো কিছু কথাই তো আর্শি বলেছিল,
“আপু, তোমার ভাই এতো ছ্যাঁ*চড়া কেন? আমাদের বাড়িতেই সারাক্ষণ পড়ে থাকে! আবার আমার সাথে বড়ো মুখ করে তর্ক করে! আমার যে বিরক্ত লাগে, সেটা কি তোমার ভাই বুঝে না? তোমার ভাইকে না করে দিবে। আমার এসব মোটেও পছন্দ না। ভাইয়ার অন্য ফ্রেন্ডরা তো এতো ঘন ঘন আসে না! আর যারা মাঝেমাঝে আসে, তারা আমাকে বিরক্তও করে না। যেমন সুমন ভাই, সুমন ভাইয়াও তো ভাইয়ার ছোটো বেলার বন্ধু। কই উনি তো আমাকে রাগায় না। তোমার ভাইটাই এমন কেন?”

আর্শি তখন স্কুলে পড়তো। কিশোরী বয়সে অনেক কিছুই চক্ষুশূল হয়। আর স্নিগ্ধা তখন এইচএসসি দিয়েছে। দুজনের মধ্যে তখন থেকেই সম্পর্কের অবনতির শুরু। কিন্তু এখন দুজনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই ননদ-ভাবির কথা হয়।

ইদানীং আর্শি শরীরও বেশ খারাপ করছে। ভার্সিটি থেকে ফিরে শরীর একদম নেতিয়ে যায়। ঘুমও বেড়েছে প্রচুর। খাওয়া দাওয়াতেও প্রচুর অনীহা। আর্শির এসব অসুস্থতার কথা শুনে মিসেস আশালতা ভীষণ চিন্তিত। উনি যা ভাবছেন, তা যদি হয় তবে ভীণদেশে তার মেয়েটা একা কীভাবে সামলাবে? এদিকে ছোটো মেয়েকেও নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। আর কয়েকদিন পর ছেলের বিয়ে। উনার উপরও চিন্তার শেষ নেই। মিসেস আশলতা বললেন,

“কাল একবার ডাক্তারের এপোয়েনমেন্ট নিস।”

আর্শি মায়ের সাথে ফোনে কথা বলার সাথে সাথে শসার আচার ও লিসার বানানো চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছিলো। সকালে যে একবার বমি করে ভার্সিটিতে গিয়েছে সেটা আর মাকে বলেনি। এখন মায়ের কথা জবাবে বলে,

“আরে মা, একটু প্রেশারে আছি বলে শরীর খারাপ করছে হয়তো। ঠিক হয়ে যাবে। আর এখন তো খাচ্ছি।”

“তুই বুঝতে পারছিস না। একটু চেকআপ করিয়ে নিলেই বা কী হয়? না জেনে কোনো ঔষুধ কিন্তু খাবি না। শ্রাবণকে বলেছিস?”

মায়ের কথা শুনে আর্শির হাসি পেয়ে গেলো। সে বলল,
“তোমার মেয়ে জামাই ইদানীং অনেক ব্যাস্ত থাকে। কী একটা প্রজেক্টের কাজ পেয়েছে। ৫-৬ জন মিলে সেটা করছে। আর তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমি প্রেগন্যান্ট! তুমিও না, মা! আমার রিসার্চের লেখালেখিতে কিছুদিন যাবত রাত জাগতে হচ্ছে বলেই এমন হচ্ছে। তুমি তো জানোই, আমার ঘুম কত পছন্দের।”

মিসেস আশালতা তারপরও চিন্তিত। এরকম নজরআন্দাজ করাতো ঠিক না। তারপরও তিনি মেয়েকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু আর্শির খাওয়া শেষ হতেই আর্শি রিসার্চের লেখা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে বলে বেশি কথা বলা হয় না।

______

এদিকে নাহিদকে এতোদিন পর এতো খুশি দেখে মুশফিকাও খুশি হলো। কিন্তু সে মনে মনে সন্দিহান! নাহিদ এতো খুশি মানে নাহিদের মনে কিছু তো চলছেই। মুশফিকা কফি নিয়ে নাহিদের কাছে গিয়ে বসলো। অতঃপর কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল,

“আজ তোমাকে অনেক খুশি খুশি লাগছে। কিছু কী হয়েছে?”

নাহিদ কফির মগ নিয়ে তাতে এক চুমুক দিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
“আমি নিজস্ব একটা ছোটো কম্পানি খুলেছিলাম শেয়ারে। বাবা জানে না সেটা। সেটার একটা ব্রাঞ্চ ইটালিতে নেওয়া হয়েছে। আমরা ৭ জন পার্টনার। এতোদিন ৬ জন ছিলাম। সপ্তম জনকে কিছুদিন আগে এড করলাম। সে ইটালিতে সিটিজেন প্রাপ্ত। তাই এখন ব্রাঞ্চ সেখানেও হচ্ছে।”

মুশফিকা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুমি কি শুধু তোমার কোম্পানির জন্য হ্যাপি? নাকি অন্য কোনো কারণেও?”

নাহিদ বাঁকা হেসে বলে,
“তোমার কী মনে হয়? অবিয়েসলি আমি এই কারণ সহ অন্য কারণেও হ্যাপি। তুমি তো জানোই। আর হ্যাঁ, তুমি না বলেছিলে তোমার কিছু টাকা লাগবে। আমি পঞ্চাশ হাজার তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।”

এই বলে নাহিদ উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো। মুশফিকা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে রইল।

_____

শরৎকালের আমেজ প্রকৃতিতে। মনোরোম আবহাওয়া। ক্যাম্পাসে একাকি বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর্শি। আজ পিটারের জন্মদিন। পিটার সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে এসেছে। তার আনা খাবার গুলোর মধ্যে সবই হাফ বয়েল। মাছের একটা আইটেম এনেছে হালকা তেল ও আঁচে গোলমরিচ দিয়ে রান্না করা। আর্শি কিছুদিন যাবত হাফ বয়েল কোনো মাছ-মাং*সই খেতে পারছে না। বেশি করে মশলাদি না দিলে সে খেতে পারে না। এইতো পিটার যখন আর্শিকে মাছের ওই আইটেমটা টেস্ট করতে বলল, আর্শি পিটারের মন রাখতে একটু মুখে নিতেই যেন তার মনে হচ্ছিলো, পেটের ভিতর সব উলটে আসছে। আর্শি ছুটে গিয়ে ডাস্টবিনের কাছে বমি করলো। আর্শিকে বমি করতে দেখে সবাই উদ্বিগ্ন। পিটার বার বার সরি বলেছে আর্শিকে। তারপর আর্শির জন্য ভ্যানিলা আইসক্রিম এনে দিয়েছে। আইসক্রিম খেতে খেতে আর্শি নিজেই ভাবলো একবার টেস্ট করেই দেখবে। যদি সত্যি সত্যি সে প্রেগন্যান্ট হয়? যদিও পিরিয়ড মিস করা নিয়ে সে তেমন একটা চিন্তিত ছিল না কারণ তার মাঝেমাঝেই দেরিতে হয়। কিন্তু গতকাল মায়ের বলা কথাগুলো এখন ভাবছে।

বন্ধুদের বলে নিজেই নিকটস্থ হসপিটালে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করালো। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর টেস্টের রিপোর্ট তার হাতে আসে। আর্শি এখনও খুলে দেখেনি। ভীষণ ভয় করছে তার। ইতোমধ্যে লিসা, সোহা, মোনা, হ্যারি ও পিটারও হসপিটালে চলে এসেছে। সোহা বলছে,

“রিপোর্টটা খুলে দেখ?”

সোহার সাথে বাকিরাও তাল মেলালো। আর্শি ভীত স্বরে বলল,
“ইফ দ্যা রেজাল্ট ইজ পজেটিভ, দ্যান?”

“ইফ ইট ইজ পজেটিভ, দ্যান ইট উইল বি গুড নিউজ। ডোন্ট বি স্কেয়ার্ড।”

লিসার সাথে বাকিরাও তাল মেলালো। আর্শি লম্বা শ্বাস নিয়ে রিপোর্টটা খুলল। প্রথমেই নজর গেলো, “পজেটিভ” লেখাটার উপর। সাথে সাথে আর্শি রিপোর্টটা উলটে মুখে হাত দিয়ে বসে রইল। আর্শি প্রতিক্রিয়াতে সোহা বিষয়টা বুঝতে পারলেও বাকি চারজন এখনও উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সোহা আর্শির কাঁধে হাত রেখে নরম কণ্ঠে শুধালো,

“পজেটিভ?”

আর্শি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। সোহা সাথে সাথে হইহই করে বাকিদেরও খবরটা বলে দিলো। হসপিটালের অন্যান্য রোগীরা উৎসুক হয়ে এই ছয়জন ছেলে-মেয়ের গ্রুপটাকে দেখছে।

হসপিটালের বাহিরে এসে আর্শি চিন্তিত সুরে বলল,
“শ্রাবণ, এমনিতেই কতো টেনসড থাকে আমাকে নিয়ে। এখন ওকে কীভাবে বলি?”

লিসা এখন বাংলা অনেকটাই বুঝতে পারে। সেই সাথে মোনাও। লিসা বলে,
“রিল্যাক্স। উই আর হেয়ার উইথ ইউ। নাউ ইউ হ্যাভ টু বি রিল্যাক্স এন্ড এভরিথিং উইল বি ফাইন, ডিয়ার।”

আর্শি খানিক হাসলো। রিপোর্টটার ছবি তুলে শ্রাবণকে পাঠিয়ে দিলো। যদিও জানে শ্রাবণ লাঞ্চ ব্রেকের আগে দেখবে না।

_____

বড়ো মেয়ের প্রেগনেন্সির কথা শুনে মিসেস আশালতা খুশি তো হলেন কিন্তু সেই সাথে চিন্তার অন্ত নেই। ছোটো মেয়ের খেয়াল নে নিজে কাছ থেকে রাখতে পারছেন, কিন্তু বড়ো মেয়েতো সেই সুদূর ইউরোপে থাকে। তিনি বললেন,
“সাবধানে থাক, মা। তোর তো নিজের প্রতি যত্নই থাকে না। এসময় আবার ওখানে একা।”

“আমি খেয়াল রাখব, মা। তুমি চিন্তা করো না তো। ভাইয়ার বিয়ের আর কিছুদিন বাকি। চিন্তা করে প্রেশার বাড়িয়ে ফেলো না। সন্ধ্যা থেকে আমার তিন বান্ধবী একটু পরপর এটা ওটা নিয়ে হাজির হচ্ছে! জানো, হ্যারি কী করেছে? হ্যারি তার নানির বানানো আচার আমাকে এনে দিয়ে গেছে। হ্যারির মা নাকি পাঠিয়েছে। তারপরও বলো, এখানে আমার কেউ নেই? তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। তুমি এতো চিন্তা করলে আমারও চিন্তা হবে। এদিকে তোমার মেয়ে জামাই কম? আমাকে চিন্তায় রাখতে! আর হ্যাঁ, আমার হবু ভাবি, মানে কলিকে বলবে, সে যেন তোমাকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলতে নিজেও বেবি নিয়ে বসে!”

বলেই আর্শি হাসতে শুরু করে। মিসেস আশালতাও হেসে ফেলে। পাশে বসা আরিয়া নুডুলস খাচ্ছে আর মা-মেয়ের বার্তালাপ শুনছে। সে এবার খানিক বিরক্ত হয়ে বলে,

“উফ মা! আমাকেও একটু কথা বলতে দাও! সব কথা কি তুমিই বলবে?”

“নে নে ধর। আমি তোর বাপকে মশারি টাঙিয়ে দিয়ে আসি। তোর তো এই রাতের বেলা নুডুলস খেতে মন চেয়েছে! ঘুমানোর নাম-গন্ধ নেই!

অতঃপর মেয়ের হাতে ফোন ধরিয়ে তিনি চলে গেলেন। আরিয়া ফোন কানে নিয়ে কেশে বলে,
“দেখ আপু, এবার কিন্তু কনফিউশন হয়ে গেলো!”

“কী রকম?”

“এই যে কার ছেলে হবে? যদি আমার মেয়ে হয়, আর তোর ছেলে হয়, তবে তো তোর ছেলে ছোটো হবে। তখন কেমন বেক্ষাপ্পা হবে না? যদিও তোর চলে সিক্স উইক। আর আমার টেন উইকস।”

আর্শি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“তোর মাথায় সারাক্ষণ এসবই ঘুরে?”

“হ্যাঁ!”

“ফোন রাখ! তোর এই উদ্ভট হিসাব তুই নিজে নিজে মিলা। আমার মা*থা খারাপ করিস না। ঘুমা এখন।”

অতঃপর আরিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল ডিসকানেক্ট করে দেয় আর্শি। এখন সে অপেক্ষা করছে শ্রাবণের কলের। শ্রাবণের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে ভাবতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here