#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৩
রানওয়েতে ট্রেনিং চলছে নতুনদের। উচ্চপদস্থ অফিসার হিসেবে তত্বাবধানে তুঁষা’র এসেছে ভিজিটিং এ। ওকে দেখা মাত্রই অন্যান্য সৈনিক’রা অভ্যর্থনা জানালেন। তুঁষা’র তাদের সাথে বেশ কিছু সময় আলাপ করে লাঞ্চের জন্য সামনের দিকে হাটা দিলো। ওকে দেখা মাত্র ই তথ্য নিজের স্লটে’র কাজ থেকে বিরতি দিয়ে ছুটলো তুঁষা’রের পিছু। ও জানে এত মানুষের সামনে তুঁষা’রকে ডাক দেয়াটা ঠিক হবে না তাই দৌড়ে গিয়ে একদম সটান হয়ে ওর সম্মুখে দাঁড়ায়। তুঁষা’র ভ্রু কুঁচকায়। তথ্য এক পা সজোরে মাটিতে হিট করে স্যালুট জানাতেই অল্প হাসলো তুঁষা’র। বিনিময়ে জানালো,
— লাঞ্চ ব্রেকে কথা বলব।
তথ্য’র মুখে খুশির উজ্জ্বলতা দেখা মিললো। তুঁষা’র কথাটা বলেই পা বাড়ায় সামনে। পিছনে রয়ে যায় তথ্য’র তৃপ্তিময় শ্যামলা মুখটা যা রোদের তপ্ততায় এ রং ধারণ করেছে।
.
লাঞ্চ শেষ হতেই দরজায় নক হলো। তুঁষা’র অনুমতি দিতেই তথ্য দুটো কফি হাতে ভেতরে ঢুকে। হাসি মুখে এককাপ তুঁষা’রের কাছে দিতেই তুঁষা’র অভ্যাসবশত ধন্যবাদ জানায়। তথ্য ও বিনিময়ে হাসি দিয়ে আশেপাশে তাকালো। তুঁষা’র সময় নিয়ে দুই এক বার চুমুক বসিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,
— ঐ দিনের ব্যাবহারের জন্য দুঃখীত তথ্য।
— আরে ইটস ওকে স্যার?
— স্যার?
— আপনি না বললেন।
— তখন রেগে ছিলাম।
— এখন?
— নেই।
— আমি কি রাগ নামক এই টেনশন’টার কারণ জানতে পারি তুঁষা’র?
তুঁষা’র ভাবলো। গুমরে ম’রা থেকে শেয়ার করা উত্তম তবে বলার বা অভিযোগ কার বিরুদ্ধে থাকবে তার কথার মাঝে সেখানটাতে আটকে যায় তুঁষা’র। চাইলেও মুখ ফুটে প্রকাশ করতে ব্যার্থ হয় নিজের ভেতরে থাকা জ্বলন্ত আগুনের পিন্ডটা’কে। তুঁষা’রকে চুপ থাকতে দেখে তথ্য বুঝলো কিছু। প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো,
— তোঁষা কেমন আছে?
— পুতুল….
আনমনে তুঁষা’র কথা বলতে গিয়ে সামলে নিলো নিজেকে। কফি’র মগে চুমুক দিয়ে বললো,
— দুটো ভালোবাসা একসাথে আছে তথ্য।
______________________
লাল নেটে’র শাড়ীটা গায়ে জড়িয়েছে তোঁষা। কাজটা সহজ ছিলো না তার জন্য। বহু কষ্টে শাড়ী পড়ে এখন বসেছে সাজুগুজু করতে। ড্রেসিং টেবিলে’র ড্রয়ারে যাবতীয় সব রাখা। তোঁষা সাজ বলতে শুধু লাল টকটকা রং’টা ঠোঁটে লাগালো। কোমড় সমান চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে মাঝ বরাবর সিঁথি করতেই সজল চোখে আয়নাতে নিজে দেখলো। সলজ্জ ভঙ্গিতে নিজেকে দেখে হাসে তোঁষা। আজ আরহাম ভাই’কে পাগল বানিয়ে ছাড়বে ও। মনে মনে দীর্ঘ সংকল্প এটেছে তোঁষা। অপেক্ষা শুধু আরহামে’র।
রাত এখন প্রায় আটটা’র কাছাকাছি। ঘড়ি’র কাটা প্রায় রাত আট’টা ছুঁই ছুঁই। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তোঁষা’র বুকের ধুকপুকানি। যেটা একদম শিথিল হয়ে এলো যখন দরজা খোলার শব্দ কানে এলো। আরহাম এসেছে। তোঁষা এখন যেন সব উল্টেপাল্টে ফেললো। একবার ভাবলো দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে সব খুলে ফেলবে কিন্তু পরক্ষণেই কিছু মনে করে যেই না দরজা লাগাতে যাবে ওমনিই আরহামে’র আগমন ঘটলো।
লাল রঙা শাড়ীতে মোড়ানো এক অপসরী দাঁড়িয়ে আরহামে’র সম্মুখে। যার ওষ্ঠাধর লালে লালে লেপ্টে। কোমড় সমান চুলগুলো হেলেদুলে যেন বাতাসে মিশতে চাইছে। তোঁষা’র এই লাস্যময়ী রুপ দেখে আরহামে’র জানপ্রাণ উড়ে যাওয়ার উপক্রম যেন। কন্ঠনালী রোধ হলো। শ্বাস প্রশ্বাস হলো ধীমি। চক্ষু ভরা তৃষ্ণা নিয়ে আরহাম ভীতু ঢোক গিললো।
প্রাণঘাতী, প্রাণনাশী এই রুপে কাকে বলি দিবে তোঁষা? এই আরহামকে ই তো। ভয় পাওয়াটা নিশ্চিত স্বাভাবিক। তবে আরহামের হঠাৎ কিছু হলো। একটানে তোঁষা’কে রুমে থেকে বের করে দরজা আটকে জোরে শ্বাস টানলো। না আর সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।
এদিকে তোঁষা বাকরুদ্ধ, হতভম্ব। কি হলো হঠাৎ? আরহাম কি তবে তাকে প্রত্যাখ্যান করলো? কিন্তু কেন? বিয়ের প্রথম রাতে আরহাম ই তো বলেছিলো যেদিন তোঁষা নিজেকে সমর্পণ করবে ঐ দিন যাতে এই লাল শাড়ী পড়ে। তবে আজ কেন এই প্রত্যাখ্যান? তোঁষা চোখ জ্বলে উঠে। তিরতির করে কাঁপন ধরে তার ঠোঁটে। একসময় ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেলে তোঁষা। তার মস্তিষ্ক তাকে বারংবার দংশিত করছে আরহাম থেকে পাওয়া প্রত্যাখ্যানের বিরহে।
#চলবে……
[পর্ব ছোট বলে রাগ করবেন না কেউ। বর্ধিতাংশ আসবে ইনশা আল্লাহ। 💜]