প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ১৩(বর্ধিতাংশ)

0
324

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৩(বর্ধিতাংশ)

রুমে’র দরজার বাইরে ঠাই দাঁড়িয়ে তোঁষা। ঠিক তেমনটাই যেমনটা আরহাম তাকে বের করার সময় ছিলো। শুধু পরিবর্তন এসেছে তার মুখের। চেহারায় ভাঙা এক অবস্থা। তার কান্নার কারণ দাঁড় করানো গেলো না। সবসময়ে জেদ ও রাগে কান্না করা মেয়ে’টা আজ কাঁদছে আরহামে’র জন্য। আরহাম থেকে ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান পাওয়ার জন্য। ফর্সা মুখটা নিমিষেই লাল দেখালো। ঘন্টা দেড় এক হবে তোঁষা দাঁড়িয়ে এখানে। নড়ে নি ও। নড়বেও না। হঠাৎ ই খট করে দরজাটা খুলে গেলো। বেরিয়ে এলো আরহাম। তোঁষা’র মুখের দিকে তাকাতেই চমকালো সে। ভরকালো তোঁষা’র দশা দেখে। দ্রুত ভাবে এসে তোঁষা’র মুখটা নিজের হাতের আজলায় নিতেই ঝামটা মে’রে তা ফেলে দিলো তোঁষা। আরহামে’র বুকটা যেন ছ্যাঁত করে উঠলো। ঠিক যেন জলন্ত আগুনে পানি’র ছিটে দিলো। তবে আরহাম গায়ে মাখলো না। পুণরায় তোঁষা’র মুখ’টা আজলায় তুলে অস্থির কন্ঠে বললো,

— তুঁষ? এই? কি হয়েছে? আমার প্রাণ কাঁদছে কেন?

তোঁষা এবারেও একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটালো। ঝামটা মে’রে আরহামে’র হাত সরালো নিজের গাল থেকে। এই মুহূর্তে যেন আরহামে’র মাঝে কিছু হলো। তার নিউরনে চিড়বিড় অনুভূতি হচ্ছে। ঘাড় কাত করে দেখে আরহাম। চোখের দুই পাশে লাল দাগ ফুটে উঠে। বহু কষ্টে জিহ্বা পিঁষলো দাঁতের নিচে। নিজেকে মিনিটের মধ্যে ই নিয়ন্ত্রণ করলো এক অনিয়ন্ত্রিত পুরুষ। সবটা আড়ালে রইলো তোঁষা’র। সে দেখে নি। আরহাম’কে পাশ কাটিয়ে সোফায় বসে ফুঁপাচ্ছে। আরহাম পা ফেলে ঝটপট ওর কাছে এলো। হাঁটু ভেঙে বসলো নিচে। তোঁষা’র হাত’টা ধরতেই তোঁষা ছাড়াতে চাইলো। বিশেষ লাভ দেখা গেলো না। আরহাম শক্ত করে ধরেছে। কাতর গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— আমার দোষ’টা বল। কেন কাঁদছিস?

তোঁষা কথা বললো না। আরহামে’র ও সহ্য হচ্ছে না এই কান্না। মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করতেই তার যেন কিছু মনে পরলো। মুহূর্তেই বুঝলো তোঁষা’র কান্নার কারণ। সাথে সাথে অধর কোন ঠেসে হাসি উপড়ালো তার। হাঁটু উঁচু করে হাত বাড়ালো। ছুঁয়ে দিলো তোঁষা’র গাল। জোর করে চোখ মুছে ফিসফিস করে বললো,

— আজ তোকে সারারাত কাঁদাব প্রাণ।

তোঁষা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। বুঝে নি এই কথার মানে। আরহাম তোঁষা’র বোকা চাহনি দেখেই বুঝলো তোঁষা বুঝে নি তার কথার গভীরতা। আজ গভীর হবে আরহাম। ঠিক ততটা গভীর যতটা গভীর ছিলো ভালোবাসা। আছে তার প্রাণের প্রতি।

সময় ঘুরলো বলে। ঝট করে তোঁষা’কে পাঁজা কোলে তুলে আরহাম। তোঁষা নামতে চাইলেই আরহাম ওকে কোলে নিয়েই একটা ঘুরান দিয়ে বললো,

— বুঁচি কান্না করার আগে দেখবি তো আদৌ কান্নার মতো কিছু হয়েছে কি না।

— আমাকে কে বের করলো?

— কেউ না।

— মিথ্যা।

— তুমি বের করো নি টেনে?

— কারণ দেখবি না?

তোঁষা এবারেও কিছু বুঝলো না। আরহাম ইশারায় কিছু বললো তাকে। তোঁষা খেয়াল করলো আরহামে’র চুল ভেজা। পরণে থাকা কাপড় ভিন্ন। সুন্দর এক পুরুষ দাঁড়িয়ে যার কোলে তোঁষা। আরহামে’র পরণে সাদা ধবধবে এক শার্ট যা খুবই ফিনফিনে সাথে সাদা প্যান্ট। ভেজা চুলগুলো আজ গোছালো না। বুকের দিকের দুটো বোতাম খোলা থাকার দরুন কিছুটা অংশ ফর্সা বুক দেখা যাচ্ছে। তোঁষা কি চুমু টুমু খাবে সেখানে? ভাবলো। তবে বিশেষ লাভ হলো না। ভাবতেই তার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আরহাম তোঁষা’কে নিয়ে দরজার কাছে এলো। তোঁষা’র চোখ মুখে ভর্তি প্রশ্ন। আরহাম উত্তর মুখে না দিয়ে করে দেখালো। এক পলিথিন ভর্তি গোলাপের পাপড়ি থেকে দুই হাত ভর্তি করে ছিটালো তোঁষা’র উপর। হঠাৎ এমন ঘন পাপড়িগুলো তোঁষা’কে পুলকিত করতে সক্ষম হলো। উপচে পড়া খুশি ওর মুখে। দুই হাতে মুখ ঢেকে উপভোগ করছে মুহুর্তটাকে। আরহাম এখানেই থামলো না তাজা টকটকে এক বড় গোলাপ হাতে হাঁটু গেড়ে বসলো তোঁষা’র সামনে যা তোঁষা’কে আরো অবাক করে দিয়ে আরহাম বললো,

— আজ আমার হবি প্রাণ?

তোঁষা নিজেও বসে পরলো আরহামে’র হাঁটু’র ভাঁজের উপর। দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে উচ্চারণ করলো,

— হু।

— কাঁদছিস?

— উহু।

অথচ তোঁষা কাঁদছে। এত বছরের কষ্ট, ক্লেশ যাতনাকে ভুলে আজ তাদের ভালোবাসা কি না পূর্ণ হতে চলছে। কমতো সহ্য করলো না। আজ যখন সব পেতে চলছে তখন কি আর চোখ বাঁধ মানে? উহু। মোটেও মানে না। তোঁষা’র ও মানলো না। আরহামে’র গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুধু বললো,

— সমর্পণ করলাম আজ।

ব্যাস আর কিছু বলা বা শুনার অপেক্ষা করলো না আরহাম। ওভাবেই কোলে তুললো তোঁষা’কে। তোঁষা তখনও ওর গলা জড়িয়ে। আরহাম পা বাড়ালো তাদের রুমের দিকে। তোঁষা যেন আরেকদফা চমকালো। ওদের রুম সাজানো কাঁচা ফুলে। বিছানায় ছড়ানো গোলাপের পাপড়ি। আরহাম তোঁষা’র অবাক হওয়া মুখটা দেখে হাসি মুখে বললো,

— ফুল ছাড়া কিভাবে বাসর হবে প্রাণ?

— আপনি কিভাবে জানলেন আজ….

তোঁষা’কে অতঃপর আর কথা বলার সুযোগ দিলো না আরহাম। আসার সময় ই আরহাম ফুল এনেছিলো। লজ্জায় নত করা মুখ থাকায় তোঁষা তখন দেখে নি। তবে আরহাম কিভাবে জানলো তা এখনও প্রশ্ন। নিজের প্রাণ’কে নিশ্চিত আরহাম এমন একা ফ্ল্যাটে রেখে যাবে না। না কোন ফোন বা যোগাযোগ মাধ্যম অথচ প্রতি মিনিট আরহাম নজর রাখছে ওর তুঁষে’র উপর। প্রতিটা খনের খবর জানা আরহামে’র। এই যে আজ তোঁষা এসব যা করেছে তা আগেই আরহাম দেখেছে। বুঝেছে। শুধু দেখে নি তোঁষা’র এই লাস্যময়ী রুপটাকে। যা সরাসরি দেখামাত্র থমকে গিয়েছে।
এই ঘন্টা খানিক সময় লাগিয়ে এসব ই করতো। বারান্দায় ছোট্ট করে একটা ক্যান্ডল লাইট করা। আজকের খাবারটাও বাইরে থেকে এনেছে আরহাম।
তবে আপাতত অতসব দেখার বা মনে করার সময় হলো না। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমময়ী যুগল ভুলে গেলো তাদের ক্ষুধা’র চাহিদা। তাদের বর্তমান চাহিদা’টা নিজেদের মাঝে। আরহাম তোঁষা’কে বুকে নিয়েই বিছানায় বসলো। এই প্রথমবারের মতো খুবই আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো তোঁষা’কে। তোঁষা বুঝি এতেই নেতিয়ে গেলো। আরহামে’র পুরুষ হাতের স্পর্শ কাঁপিয়ে তুললো তার বদন। মাতাল হলো তোঁষা। মাতাল করলো আরহাম। দেহ জুড়ে যখন তাদের প্রেম বইছে তখনই আরহামে’র প্রথম চুম্বনের আবেশে তোঁষা যেন ঘায়েল হলো। মৃত্যুশয্যা’য় যেতেও যেন রাজি এখন সে। আরহাম নিজেও নিয়ন্ত্রণ হারালো। এত বছরের ভালোবাসা সব ঢেলে দিলো তাদের প্রাণের মাঝে। তোঁষা বোধশক্তি হারালো সাথে হারালো আরহাম। দু’টি প্রাণে’র নাশ ঘটলো বুঝি এই রাতে।
.
আকাশে আজ সুতা’র ন্যায় চাঁদ। এমন লাল চাঁদের দেখা মিলে না সহসা। তবে আজ দেখা মিলছে। নতুন চাঁদে’র এই রুপটা আজ ভয়ংকর সুন্দর। যে কোন প্রেমোদগম বীজ বুননের সর্বোত্তম সময়। তোঁষা আরহামে’র ও তাই হলো। তারা নিজেদের আবিষ্কার করলো নতুন ভাবে। আরহামে’র উন্মাদনায় তোঁষা আজ দিকহারা হলেও তোঁষা’র নরম ছোঁয়ায় আরহাম পাগল হয়েছে। তোঁষা’কে সবটা দিয়ে আজ আরহাম নিজের করলো।
এই লাল চাঁদ’টা সাক্ষী তাদের মিলনের। এ কি সুখ বয়ে আনবে নাকি ধ্বংস তা জানে না কেউ। তবে কেউ কেউ তো বলে লাল রঙা চাঁদ ভয়াবহ দুঃখ বয়ে আনে? তবে কি তোঁষা আরহামে’র জীবনের ধ্বংসের অধ্যায় শুরুর পথে?
________________

সূর্যের দেখা মিলে নি এখনও। এই তো সুবহে সাদিক হতে চলছে। শেখ বাড়ীর সকলেই জাগ্রত। পুরুষ তিনজন নামাজে। আরহামে’র মা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে তোঁষা’র মায়ে’র কাছে এলেন। শরীর খারাপ ঐ যে হলো আর ঠিক হওয়ার নাম নেই তার। হবেই না কিভাবে? যার ঘরে’র কন্যা, বুকের মানিক তার কাছে নেই সে মা কিভাবে ঠিক থাকবে? অথচ বছরের পর বছর উনি ঠিক আছে। এই যে যার মাধ্যমে প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পেলো। যে ছেলেটা জন্ম থেকে মায়ের ন্যাওটা সে এখন মা’কে দেখে না। চাইলেও কন্ঠ শুনা যায় না আরহামে’র। স্বামী’কে বললেই আগে বলতো,

— আদনান’কে দেখো। একই তো সুরত।

— বাবা কোনদিন মা হয় না। আমার চৌদ্দটা সন্তানের চেহারা এক হলেও তাদের মধ্যের ভিন্নতা আমি বুঝতাম।

বিনিময়ে তুরাগ কথা বাড়াতো না অথচ দিনে দিনে তিনি আদনান দিয়ে আরহামে’র স্বাদ মিটাচ্ছে।
আঁচলে চোখ মুছে রুমে ঢুকলেন তিনি। তোঁষা’র মা কাত হয়ে শুয়ে আছে। মাথায় হাত রাখতেই চোখ মেললেন। আরহামে’র মা’কে দেখেই ম’রা স্বরে বললেন,

— ভাবি আমার পুতুলটা…

এই কথা ছাড়া ইদানীং বিশেষ কিছু বলতেও পারেননা তিনি। কান্না পায় সারাটাদিন। টেনেটুনে তাকে উঠালো আরহামে’র মা। ধমকের স্বরে বললো,

— উঠ। একা রান্না করতে পারব না আমি। চল সাথে।

ঠেলেঠুলে উঠলেন তিনি। মেয়ের শোকে শোকে সংসার ত্যাগের উপক্রম যেন।
সেদিনের সিদ্ধান্ত’টা কতই না ভুল ছিলো। তারা ভেবেছিলো তোঁষা’কে আদনানে’র সাথে বিয়ে দিলে হয়তো আরহাম লজ্জা পাবে ভাইয়ের বউয়ের দিকে নজর দিতে। আর একবার বাচ্চাকাচ্চা হলে হয়তো ফিরেও তাকাবে না। অথচ এক সকালে আরহাম কল দিয়ে শুধু বলেছিলো,

— তোঁষা’র যদি চৌদ্দ বার ও বিয়ে হয় আর একশত বাচ্চা’র মা ও হয় তখনও আমার ওকেই লাগবে। ওর নেতানো, অন্য পুরুষের ছোঁয়া শরীরটাকেই নিব আমি। ওর লা*শ হলেও নিব আমি। ঐ লা*শ বিয়ে করে সংসার ও করব আমি।

কথাগুলো ভাবতেই যেন গায়ে কাটা দেয় তাদের। তোঁষা’টা কি বেঁচে আছে নাকি মে’রে ফেললো আরহাম?

#চলবে…..

[১২০০+ শব্দ লিখা। ছোট বলেবেন না ভাই।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here