প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২০

0
420

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২০

তোঁষা আরহামে’র বুকেই কেঁদে যাচ্ছে। কেন আরহাম ম’রার কথা বললো? আরহাম নিজেও বুঝে নি তোঁষা এতটা অস্থির হবে। বুকে প্রশান্তি অনুভব করে আরহাম। ওর তুঁষের ভালোবাসা কতটা গাঢ় তা আরহামে’র জানা। তোঁষা’র মাথাটা বুক থেকে সরাতে চাইলেই কান্নার বেগ বাড়লো। আরহাম থাকতে দিলো বুকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কোমল স্বরে বললো,

— কাঁদে না তুঁষ।

তোঁষা শুনলো না। সে কেঁদেই যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,

— কেন বললেন ম’রে যাবেন? কার জন্য আমি এত কষ্ট সহ্য করলাম। আমাকে আপনি ভালোবাসেন না। একটুও না।

শেষের কথাটা শুনতেই আরহামে’র বুকে জ্বালা ধরলো যেন। ও নাকি ওর তুঁষ’কে ভালোবাসে না? এটা কি ইহকালে সম্ভব?
তোঁষা’র দেহটাকে শক্ত করে নিজের মাঝে জড়িয়ে ধরে আরহাম। কানে আলতো চুমু খেয়ে জানায়,

— এই পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব যতটা সত্যি ঠিক ততটা সত্যি আমার ভালোবাসা তুঁষ। আমার ভালোবাসায় প্রশ্ন তুলিস না প্রাণ।

— আর বলবে?

— উহু।
___________________

সবে মাত্র টিম মেম্বারদের সাথে মিটিং শেষ করলো তুষা’র। আফ্রিকা’তে এই সপ্তাহেই ফোর্স পাঠানো হবে। দায়িত্ব অনেকটা তুষা’রের উপর পরাতে কিছুটা ব্যাস্ত সময় পার করছে ও। আপাতত ফ্রী নেই সে। তথ্য গত দুই দিন ধরে যদিও বারকয়েক এসেছিলো তবে তুষারের সময় হয় নি তার সাথে কথা বলার। গতকাল কর্নেল তাহের এসেছিলেন৷ তার সাথে কথা বলতে বলতে রাত দুটো বাজলো। তুষার বিরক্ত ছিলো বটে। আর্মি ম্যানরা সবাই যথেষ্ট সময়নিষ্ঠ সেখানে কর্নেল তাহের পুরোট উলটো। রাত দিনের কোন খেয়াল থাকে না তার। হৈ চৈ লাগিয়ে রাখেন ফোর্সের। দেখলে বুঝা দায় যে এই মধ্যবয়স্ক পুরুষটার বয়স বায়ান্ন। তারমাধ্যে তুষারের সাথে যেন ভাব তার জমে দই। তুষার আবার অতটা আড্ডা প্রেমী মানুষ না। এরমধ্যে এখনে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে ও। আজ রাতে তার ব্যাঘাত ঘটলো। বিরক্তি ধরে গিয়েছে তুষা’রের। রাতের খাবার এখন কপালে জুটে নি। নিশ্চিত এতক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।
টেন্ট ছেড়ে নিজের কামরায় যেতেই গরম ইলিশের ঘ্রাণ পায় তুষার। সরিষা ইলিশ? আনমনেই ভাবলো তুষার। এই আধ রাতে গরম ইলিশ তাও কি না সরিষার কোথা থেকে আসবে?
তুষার অতশত পাত্তা না দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হওয়া দরকার।

এদিকে কিচেনে তথ্য তুষা’রের খাবার গরম করে সার্ভ করেছে টেবিলে। আজ কথা বলেই যাবে। বাবা আজ ধমকেছে তথ্য’কে। বিয়ে করিয়েই দম নিবেন তিনি। বাবা হিসেবে নিজের জায়গায় সে ঠিক তা জানে তথ্য কিন্তু অনিশ্চিত তুষার আর ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ই বা জানাবে বাবা’কে?

তুষা’র টেবিলের সামনে অন্যমনস্ক তথ্য’কে দেখে চমকালো না। এই মেয়ের ঠিক ঠিকানা নেই। একদিন ধমক দেয়া দরকার। ভাবলো তুষার। তবে কেমন ভাবে ধমকটা সেটা ভাবতে পারলো না। গরম ভাত আর ইলিশ তাকে টানছে। সেই টানের মায়ায় পড়ে তথ্য’কে অগ্রাহ্য করে সোজা টেবিলে খেতে বসে ও। মুখে বড় বড় দুটো লোকমা পুরে একপলক তথ্য’কে দেখলো। মেয়েটা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ওর দিকে। কিছু কি বলতে চায় তাহলে? এতটা শান্ত থাকার মেয়ে আবার তথ্য না। তবুও তুষার আগে খাওয়া শেষ করলো। অতঃপর হাত মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু কি বলবে?

— জ্বি।

চোখে চোখ রেখে বললো তথ্য। সোজা হয়ে দাঁড়ালো তুষার। এত গম্ভীর মুখে কেন মেয়েটা?

— বলো? আচ্ছা আগে বসো। কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছো। আর হ্যাঁ খাবার গরম করার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে তবে এসব আর করতে যেও না তথ্য অভ্যাস নষ্ট হয় আমার।

কথা বলতে বলতে তুষার সোফায় বসে। তথ্য ও এগিয়ে এলো তবে বসলো না বরং সম্মুখে দাঁড়িয়ে জানালো,

— বাবা ছেলে দেখেছে?

ভ্রু কুঁচকায় তুষার। ছেলে দেখেছে মানে? ওর বাবা ছেলে দেখুক বা মেয়ে দেখুক তাতে তুষারের কি? তবুও প্রশ্ন করলো,

— ছেলে দেখেছে বলতে?

— বিয়ের জন্য।

— হোয়াট!!!

আচমকা তুষা’রের চিৎকারে ছিটলে সরলো তথ্য। তুষার হতভম্ব মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। তথ্য ভাবলো তাহলে কি তুষা’রের মন গললো? সে ও কি ভালোবাসে তথ্য’কে? বাসেই তো নাহলে এভাবে রিএক্ট কেন করলো?
তবে এই ভাবনা বেশিক্ষণ টিকলো না তুষা’রের প্রশ্নে,

— তোমার বাবা ছেলে বিয়ে করবে?

— কিহ!!!

তথ্য ও এবার চিৎকার করে উঠলো। এত মাথামোটা কবে থেকে হলো তুষার? তথ্য চওড়া গলায় জানালো,

— পাগল হলেন? কি সব বলেন?

তুষার হেসে ফেললো ফিক করে। সোফাতে গা এলিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললো,

— ছেলে কি করে?

— পাইটল।

— হু বেশ মানাবে। পাইলটের বউ আর্মি৷ নট ব্যাড তথ্য। গো এহেইড।

তথ্য টলমলে চোখে তাকিয়ে রইলো। এতটা নির্বিকার কেন তুষার?

__________________

— আমার কলেজ ড্রেস কবে আনবেন?

আরহাম তোঁষা’র ইনসুলিনটা পেটের চামড়ায় পুশ করে উঠে দাঁড়ালে তোঁষা প্রশ্নটা আবার করলো। শ্বাস ফেলে আরহাম জানালো,

— আজ এনে দিব।

— কাল সকালে পরিক্ষা শুরু অথচ এখনও ড্রেস আনছেন না কেন? কবে থেকে বলছি আরহাম ভাই?

আরহাম তোঁষা’কে টেনে নিলো নিজের কাছে। ফোলা ফোলা গাল দুটো নিজের আজলায় নিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

— আর কত আরহাম ভাই ডাকবি? কাজিন থেকে প্রেমিক হলাম। বর হলাম এরপর তো….

তোঁষা ডান হাত চেপে ধরে আরহামে’র ঠোঁটে। মুহুর্তে লজ্জায় রাঙা হলো ওর মুখটা। আরহাম হাসলো। লজ্জায় পড়া তুঁষটা তার পছন্দের।
.
খাওয়া শেষ হতে যেই না তোঁষা বই হাত তুলবে ওমনি আরহাম তোঁষা’র কাঁধে মাথা রাখলো। শুধু মাথা রেখেই ক্ষ্যান্ত হলো না তোঁষা’র চুলগুলো নিজের মতো নাড়াচাড়া করতে ব্যাস্ত হলো। তোঁষা অসহায় চোখ করে তাকায়। এমন করলে ওর সুরসুরি লাগে পড়বে কিভাবে? রিভাইস দেয়া তো বাকি। চাইলেও তোঁষা আটকাতে পারলো না আরহাম’কে। নিজের প্রাণ’কে কিভাবে আটকাবে তার প্রেম জাহির করা থেকে?
দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলো তোঁষা অথচ পারলো না। হার মানলো আরহামে’র কাছে। তার প্রেমের কাছে। নিজের অবাধ্য অনুভূতির কাছে। এসময় পুরোটা হারালো তোঁষা।
তার প্রেমিক পুরুষ তাকে মাতিয়ে নিলো নিজের মাঝে। বইটা অবহেলার রইলো বিছানার কিণারে যেটা বা হাতে নিচে ফেললো আরহাম।
অবহেলায় তা স্থান নিলো ফ্লোরে আর তোঁষা স্থান পেলো তার প্রাণে’র মাঝে অথচ মেয়েটার আগামী কাল সকালে এইচএসসি পরীক্ষা।

#চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here