#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| ঊনবিংশ পর্ব |
পরণে আকাশী রঙের একটা পাঞ্জাবি! হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ! আজকের আকাশ অনেকটা মেঘলা , মেঘের দল এসে ভিড় করছে আকাশজুড়ে। গলির মোড়ে দাঁড়ানো মামুন। এছাড়া রাস্তায় দু একটা মানুষ দেখা যাচ্ছে। মামুনের দৃষ্টি স্থির। লোকজন আসতে দেখলেই তার বুকের ধড়পড়ানি বেড়ে যায়। ইচ্ছে করছে একটা সিগারেট খেয়ে এই ধরপড়ানি কমানোর কিন্তু করছে না। আজ অনেকটা পরিপাটি সে। নাপিতের কাছে গিয়ে চুল কেটে এসেছে। মনটা আজ বেশ ঝড়ঝড়ে লাগছে কিন্তু ভয় একটাই শ্রেয়া আসবে তো!
বিকেল পেড়িয়ে যাচ্ছে, আকাশের মেঘ গুলোও সরে গেলো। মনে হচ্ছে না আজ আর বৃষ্টি হবে। দু একটা মানুষের যে আনাগোনা ছিল এখন তাও আর নেই। মামুন অস্থিরতা ঘেমে একাকার। পাঞ্জাবির সামনের বোতাম দুটো খুলে রেখেছে সে। যেই চুল পরিপাটি করে আঁচড়ে এসেছিল তাও এখন অগোছালো। বালির বস্তার যে স্তূপ ছিল এক কোনে সেখানে বসে আছে সে। অপেক্ষা করছে শ্রেয়ার!
সন্ধ্যা নামছে, আকাশের কোনো এখন লাল আভা। সেই দুপুরে ছুটে এসেছিল মামুন আর এখন সন্ধ্যা নেমে রাত হয়ে যাবে। শ্রেয়া কি তবে আসবেনা। হ্যাঁ সে বলেছিল আসবে তাহলে তবুও কেন এলো সে। তার আসা একদম উচিত হয় নি! অনেক দেখেশুনে ফুটন্ত তাজা গোলাপ নিয়ে এসেছিল সে। তাও এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। মামুন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখন খুব ইচ্ছে করছে সিগারেট খেতে। পকেটে এক প্যাকেট সিগারেট আর ম্যাচের বক্স টা তো আছেই। এতো ভাবনা কিসের। ফুল গুলো পাশে রেখে সিগারেট মুখে পুড়ল মামুন।
মাথা নিচু করে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে মামুন। হঠাৎ তার চোঁখের সামনে শাড়ি পড়া কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখল শ্রেয়া দাঁড়ানো। মামুন হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শ্রেয়া কি তবে সত্যি এলো নাকি এটা তার ভ্রম!
ঝাঁঝালো সেই কন্ঠ আবারো এসে কানে ভিড় করল,
“আপনার তো দেখছি একটু ধৈর্য্য নেই!
উওরে মামুন কি না বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সেই দুপুর থেকে এই সন্ধ্যা অবদি অপেক্ষা করলো সে। এটাতে কি তার ধৈর্য্য প্রমাণ হয় না। শ্রেয়া তাকে অধৈর্য্য বলছে কোন যুক্তিতে। মামুন উঠে দাঁড়াল। শ্রেয়ার দৃষ্টি মামুনের জলন্ত সিগারেট’র দিকে। ধোঁয়া উড়ছে তা থেকে। মামুনের বোধ হতেই সিগারেট হাত থেকে ফেলে দিল সে। অন্যহাত দিয়ে ফুল গুলো আড়াল করল সে। শ্রেয়া বলে উঠল,
“তা কখন এসেছেন!
“দুপুরের দিকে!
“এতোক্ষণ কি এইখানেই ছিলেন।
“হুম।
“কি ভেবেছিলেন আসবো আমি।
“হুম।
“এখন তো এসে পড়েছি কিন্তু যদি না আসতাম তখন..
“অপেক্ষা করতাম!
“কতোক্ষণ? সারা রাত।
“রাত বেশ গভীর হলে তোমার আসার সম্ভাবনা থাকতো না, তখন আমি চলে যেতাম।
“আবার কাল আসতেন।
“হুম!
“কেন আসতেন?
“তোমার জন্য!
“কেন? আমার জন্য কেন? আর কোন মেয়ে ছিল না নাকি।
মামুন হাসল। শ্রেয়ার গলার স্বর এখন অনেকটা অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে কোন বাচ্চা অভিমান স্বরে কথা বলছে। শ্রেয়া আবারো বলে উঠল,
“কি হলো বলুন?
“কারণ তুমি সেই মেয়ে যাকে আমি প্রথমবার ফুল দিয়েছিলাম আর তুমি তা যত্নে রেখেছিলে। কয়েক মাস আগেও আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে তুমি আর এখন আমার কতোটা কাছে এসে কথা বলা বলছো। সেই মেয়ে তুমি কারণ যার সাথে একসময় দু দন্ড কথা বলার জন্য আমি ছুটে আসতাম আর সে পালিয়ে যেত কিন্তু এখন সেইই আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে।
“বাড়ি থেকে কথা গুলো তো ভালোই মুখস্থ করে এসেছেন দেখছি
ফিক করে হেসে দিল মামুন। শ্রেয়া আসাতে যে সে কতোটা খুশি বলে বোঝানো সম্ভব না। শ্রেয়া আবারো ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, “হাসছেন কেন? হাসির কোন কথা বলেছি।
“কই না তো হাসি নি।
*মিথ্যে বলছেন আবার, আপনি জানেন আমি মিথ্যে সহ্য করতে পারি না।
“কিন্তু তুমি তো মিথ্যে বলেছো।
*কি?
“হুম। তুমি বলেছিলে আজ আসবে না কিন্তু তুমি এসেছ?
“এসে বোধহয় ভুল করেছি। চলে যাওয়া উচিত আমার।
বলেই শ্রেয়া যেই না যেতে নিবে তখনই হুট করে শ্রেয়ার হাত ধরে বসল মামুন। শ্রেয়া হতচকিয়ে গেল। তার পুরো শরীর কাঁপছে মামুনের ছোঁয়ায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“আপ…. আপনার সাহস তো কম না। আমার হাত ধরেছেন আপনি।
“তুমি কি এটা আশা করো নি।
শ্রেয়া চুপসে গেল। হ্যাঁ সে আশা করেছিল কিন্তু এর অনুভূতি এতো ভয়ংকর হবে এটা আশা করতে পারে নি।
শ্রেয়া হাত ছাড়িয়ে নিল। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
“ফুল এনেছেন!
“হাফাচ্ছো কেন তুমি, কি হয়েছে?
বলেই শ্রেয়ার গালে হাত রাখল মামুন। তার মন চিন্তিত! শ্রেয়া দ্রুত সরে গিয়ে বলল, “আহ ছুঁবেন না আমায়!
“পানি খাবে তুমি, দাঁড়াও এখানে আমি নিয়ে আসছি।
“না কিছু খাবো না। ফুল এনেছেন কি না বলুন।
মামুন ফুল বের করলো। ফুল গুলো শুকিয়ে গেছে। শ্রেয়ার সাথে কথা কথা বলতে রাতও নেমে গেছে। আগে যেখানে শ্রেয়ার মুখটা দেখা যেত এখন আর তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। গলির এই মোড়ে কোন আলো নেই। আলো আছে ওই শেষ মাথায়। মামুন বলে উঠল,
“আসলে যখন আরেকটু আগেই আসতে। ফুল গুলো তো এখন শুকিয়ে গেছে।
“আমার শুকিয়ে যাওয়া ফুল’ই ভালো লাগে!
“কেন?
“বইয়ের পাতায় রাখা যায় বলে। দিন ফুল গুলো দিন!
বলেই হাত বাড়াল শ্রেয়া। মামুন হেসে ফুল গুলো তার হাতের উপর দিল। শ্রেয়া হাত সরিয়ে নিতে যাবে বোধ হলো মামুন আবারো তার হাত ধরে আছে। হাত ছাড়াতে পারছে না সে। শ্রেয়া বলে উঠল, “এ কি রকম অসভ্যতামি! হাত ছাড়ুন আমার!
মামুন দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠল, “আর একটু অসভ্যতামি করলে কি খুব বড় অপরাধ হবে।
“মা…মানে!
মামুন একটু এগিয়ে এলো শ্রেয়ার কাছে। আঁধারে ঠিক’ই তার উপস্থিতি টের পাচ্ছে শ্রেয়া। হুট করেই শ্রেয়ার কপালে ঠোঁট দুটো বসিয়ে দেয় মামুন। শ্রেয়া চোখ বড় বড় করে দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। মন চাচ্ছে এখান থেকে ছুটে চলে যেতে। মামুন এসে আবারো নিজের জায়গায় দাঁড়াল। হাত ছেড়ে দিল শ্রেয়ার। পাথরের মূর্তির মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল শ্রেয়া। মামুন হালকা কেশে বলল,
“রাত হয়ে গেছে, আর আঁধারও। আমি বরং তোমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি। এসো আমার সাথে।
বলেই মামুন সামনে আগাল। শ্রেয়া মুখ ঘুরিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে রইল। মামুন বলে উঠল, “কি হলো আসছো না কেন?
শ্রেয়া এবার পা বাড়িয়ে হাঁটা ধরল। দুজনেই হাঁটছে তবে দূরত্ব রেখে। আলোর কাছে এসে মামুন শ্রেয়ার মুখ দেখল। লজ্জায় পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে শ্রেয়ার। তার ওষ্ঠাজোড়া কাঁপছে। মামুন ঢোক গিলে চোখ ফিরিয়ে নিল। তা এতো লোভ করা ঠিক না। শ্রেয়ার বাড়ির কাছে গলি অবদি এলো সে।
শ্রেয়া নিশ্চুপ ভাবেই নিজের ঘরে ঢুকল। ফুল গুলো টেবিলের কোণে রেখে আয়নায় নিজেকে দেখল সে। অতঃপর বিছনার কোণে শুয়ে পড়ল। কেন জানি তার হৃৎস্পন্দন এখনো খুব জোরে বাজছে। তা শুনতে পারছে সে। দুচোখের পাতা এক করে নিল। রাতেই ধুমচে জ্বর এলো শ্রেয়ার। হাড় কাঁপানো জ্বর! নিলুফার তার গায়ে খ্যাতা জরিয়ে দিয়ে পাশে বসে রইল। টেবিলের কোণে থাকা ফুল গুলো চোখে পড়ল তার। শুকিয়ে যাওয়া ফুল! মা মাথায় বালতি এনে পানি ঢালছে। শ্রেয়ার তেমন একটা জ্ঞান নেই। তিতির গেছে ডাক্তার আনতে। বাবা পাশে বসে বলছে, “শ্রেয়া মা কেমন লাগছে এখন। খুব কি কষ্ট লাগছে তোর। কিছু খাবি মা, ক্ষিদে পেয়েছে তোর।
#চলবে….
[ রি চেক করা হয়নি! ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! ]