#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| বিংশ পর্ব | ( প্রথমাংশ )
“সকালে আজ একটা কান্ড ঘটালো তবে। শ্রেয়া পালিয়েছে! কার সাথে পালিয়েছে তাও এর মধ্যেই জানা গেছে। এলাকার সেই মাস্তান, বখাটে ছেলে মামুন! যদিও লোকজনের মুখে শুনলাম মামুন নাকি এখন খু*নের আসামি! তার উপর খু*নের মামলা আছে। কিন্তু শ্রেয়া তার চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় লিখলো মামুন নাকি খু*ন করেনি। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল নীলুফার! শ্রেয়া আজ ভোরে পালিয়েছে। কখন গেলো কারো জানা নেই। বোধহয় বাবা সকালের ফজরের নামাজ পড়তে যখন বের হলেন ঠিক তখন বাবার পর পর’ই বের হয়ে গেছে সে। হাতে শ্রেয়ার চিঠি মুষ্টিবদ্ধ করে নিল নিলু। ছাদে এই একা দাঁড়ানো সে। দুপুর গড়িয়ে গেছে। মা কিছুক্ষণ আগেও চেঁচামেচি করেছিলেন। হাই হুতাশ করে কাঁদছিলেন এখন তিনি বেহুঁশ। চাচি সামলাচ্ছেন তাকে। এতোক্ষণ মা’র পাশেই বসে ছিল নিলুফার। এখন উঠে ছাদে এসে একটু দম নিচ্ছে। নাহলে সেখানে দম ফেলার ফুরসত কোথায়?
“বাবা সবে নামাজ পড়ে ঘরে ঢুকছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না তার মেয়ে আজ ভোরেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এখনো কতোটা শান্ত তিনি। আমার বেশ মনে হচ্ছে শ্রেয়া পালানোর আগে নির্ঘাত বাবা’র সাথে দেখা করেছে। সত্যি কি তাই হতে পারে।
তিতির প্রায় এলাকা ও এলাকা, বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে রেললাইন অবদি খুঁজে এসেছে। কোন হদিস মিলে নি। এমনকি ইরার বড় ভাই অবদি খোঁজার বন্দোবস্ত করছে। এক্ষেত্রে তিনি খুব সাহায্য করছেন। ঘন্টা খানিক আগে ইরার সাথে এসে গেলেন। এক কাপ চা খেয়ে বললেন, “এই বয়সের মেয়েরা এমন একটু হয়। চিন্তার কিছু নেই। আমি খোঁজ লাগিয়েছে। মনে হচ্ছে ছেলেটাই ফুসলে নিয়ে গেছে। আপনারা চিন্তা করবেন আমি চেষ্টা করছি। আল্লাহ কে ডাকুন, ভয় তো একটাই ছেলের মতলব যেন খারাপ না হয়। এভাবেই তার উপর খু*নের মামলা চলছে। ভয় তো শুধু এখানেই!
এছাড়াও আরো ভালো ভালো কথা বলে গেলেন বাবা কে। তাকে দেখে একজন ভালো মস্তিষ্কের মানুষ বলে ধরে নেওয়া যায়। কথাবার্তা, আচার আচরণ সবখানেই একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখা যায় তাকে। মনে হচ্ছে তিতির আর ইরার জন্য’ই সবটা করার। বোনের যে বাড়িতে বিয়ে হবে সেই বাড়ির মানসম্মান মানে তারও মান সম্মান!
খুব খাটাখাটুনি করছে ফরহাদ সাহেব। এই পর্যন্ত পাঁচ বার বাসায় এসে ফিরতি গেছেন। ভোর থেকেই খুঁজে যাচ্ছেন তিনি। খাওয়া দাওয়া কিছু করেছেন বলে মনে হচ্ছে না। তার গায়ের পাঞ্জাবি টা ভিজে একাকার। বেশ ক্লান্ত লাগছিল তাকে। তিতিরের সাথে মিলে সমান ভাবে খুঁজে গেছে। শুধু কি তাই! তার যত বন্ধুবান্ধব ছিল তারা অবদি এসে বাড়ি অবদি ঘুরে গেল। একে একে সবাই পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে শ্রেয়া।
নিলুফার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার তখন’ই বোঝা উচিত ছিল। কয়েকমাস আগে টেবিলের কাছে ফুল গুলো দেখে যখন শ্রেয়া কে জিজ্ঞেস করল তখনই মুখের রং বদলে গেল তার। নিলুফার তখন সবটা আন্দাজ করল কিন্তু দ্বিতীয় বার আর জিজ্ঞেস করল না।
এরপর কয়েক মাস পর তিতির দেখল শ্রেয়া কে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোন ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে। সন্দেহ তখন ঠিক বলেই মনে হলো। যেই ভুলটা এই বয়সে সবাই করে শ্রেয়াও সেটাই করল। প্রেমে পড়ল, কিন্তু পড়ল তো কার এই রাস্তায় বটাখে আর মাস্তান ছেলের উপর। বাড়িতে ফিরেই তিতিরের বকাঝকা আর মায়ের ধমকানি শুনতে হলো শ্রেয়ার। ইচ্ছে মতো সবাই বকল তাকে। চুপ থাকার মধ্যে আমি আর বাবা ছিলাম। ঘরের সবাই একসাথে বকলে তো আর চলে না।
রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল মেয়েটা। গোটা একটা দিন নিজেকে আটকে রাখলো ঘরের মাঝে। তিতিরের রাগ শ্রেয়ার উপর থেকে কমলো মামুন কে ছেড়ে দিল না। ভালো মতোই বলল, যেন শ্রেয়ার সাথে আর কোন কথাবার্তা না বলে। মা’র বিলাপ তো দিনরাত’ই চলতে থাকল। শেষমেষ আমি গিয়ে খাবারের থালা হাতে নিয়ে দরজা ধাক্কালাম। দুটোদিন খায় নি মেয়েটা। এখনো কি না খেয়ে থাকবে নাকি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। হাল ছেড়ে বসার টেবিলে খাবার রেখে ঘরে গেলাম। খানিকক্ষণ বাদে এসে দেখি শ্রেয়ার ঘরের দরজা খোলা। আড়াল থেকে দেখলাম বাবা খাইয়ে দিচ্ছে শ্রেয়া কে। বাবা আর মেয়ের মাঝে আর ঢুকলাম না।
অতঃপর একসময় সব কিছু মোটামুটি ঠিক হলো। ফরহাদ সাহেব ও হুট করে একটা চাকরি জোগাড় করে নিলেন। হয়তো আমার খোঁচা আর ভালো লাগছিল না তার। কিন্তু ভুল এইখানেই হলো। আমরা হয়তো ভেবেছিলাম সব শেষ কিন্তু আসলে কিছুই শেষ হলো না!
——-
শ্রেয়া আর মামুনের দেখা সাক্ষাৎ তবুও চলতো চিঠির মাধ্যমে। শ্রেয়া কে রোজ কলেজে দিয়ে আসতো মা আর নিয়েও আসতো মা। তবুও এর মাঝে তাদের চিঠির আদান প্রদান ঠিক’ই হতো। রাস্তায় আর কখনো কথা বলতে দেখা যায় নি তাদের। মামুন ইন্টার অবদি পড়াশোনা করেছে। এরপর ছেড়ে দিয়েছে, ছেড়ে দিয়েছে বলতে এর আগেও পড়াশোনা করতে চাইতো না। কোনোমতে মা বাবার ঠেলাঠেলিতে পাশ করলো। খুব ভালো নাম্বার পেয়েই পাশ করলো বটে। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে এরপর বাইরে পাঠাবে পড়াশোনার জন্য কিছু খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সবটাই গোল্লায় গেলো। কাজের কাজ কিছুই হলো না। বলতে গেলে মামুনের আর্থিক অবস্থা দারুন ভালো ছিল। পরিবারের সে ছিল তৃতীয় সন্তান। বড় দু বোনের পরেই সে। কিন্তু তবুও মানুষের মতো মানুষ কেউই করতে পারল না।
এলাকার মাস্তান নামেই মামুনের ডাক দিল বেশ। কিন্তু এই এলাকার মাঝেই তারেক ভাইয়ের সাথে তার দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। আগে সবকিছুই তারেক ভাইয়ের হাতে ছিল। কিন্তু মামুন আসার পর সব যেন হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। যদিও তারেক ভাই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মামুনের কাছে, মিলেমিশে কাজ করার। মানে হাত মেলানোর ব্যাপার আর কি। কিন্তু মামুন তাঁতে রাজি হয় নি। কারণ তারেক ভাইয়ের কাজ খুব ভয়াবহ। নোংরা সকল ধরনের কাজ টাকার বিনিময়ে করতে রাজি সে।
ঝামেলা তো ছিল পুরনো দিনের। এর মাঝেই আরো একজন এসে জুটল এক চোখ কানা নান্দু’র সাথে ঝামেলা লেগে গেলো মামুনের। এক চোখ কানার কারণ ছিল একবার কোন এক ঝামেলায় পড়ে তার একটা চোখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই লোকটার নাম হলো এক চোখ কানা নান্দু! কিন্তু মামুন আর এক চোখ কানা নান্দু’র এই ঝামেলার সুযোগটা তখন হাতছাড়া করলো না তারেক ভাই। উঠে পড়ে লাগলো মামুন কে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য। সেদিন রাতে তারেক ভাই নিজেই এলো কার্য হাসিল করতে। মামুন কে মাঝরাতে ফোন করে ডেকে নিয়ে চোখ কানা নান্দু কে ছুরি দিয়ে আঘাত করে খু*ন করল তারেক ভাই! আর সেই সময়ে মামুন সেখানে গিয়েই ফেঁসে গেল। নান্দু কে মরে পড়ে থাকতে দেখে পালাতে গিয়ে লোকেরা দেখে ফেলল মামুন কে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেল ঘটনা। শ্রেয়ার পরিবারের কানেও কথাটা যেতে দেরি হলো না। সবাই তো কথা বলাবলি করতে লাগলো কিন্তু শ্রেয়ার মন মানলো না।
সেই এক সন্ধ্যে রাস্তা দিয়ে যাবার পথে হঠাৎ করেই দেখা হলো মামুনের সাথে। আড়াল থেকে মামুন ডাকল শ্রেয়া কে। প্রথমে মামুন কে চিনতে পারল না শ্রেয়া। মুখের ধরণ যেন বদলে গেছে তার। মামুন আজ ১৫ দিন হলো গা ঢাকা দিল। পুলিশ খুঁজছে তাকে। শ্রেয়া অবাক চোখে তাকিয়ে রইল মামুনের দিকে। বলে উঠল,
“আপনি এখানে?
#চলবে….
[ এই পর্বের শেষাংশ রাতে পাবেন। রি চেক করা হয়নি , ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল ]