প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ১৪(বর্ধিতাংশ) [পর্বটা একটু রোম্যান্টিক]

0
640

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৪(বর্ধিতাংশ)
[পর্বটা একটু রোম্যান্টিক]

সবে মাত্র চোখ খুললো তোঁষা। আরহাম হয়তো মাত্রই ক্লান্ত দেহে চোখ বুজলো। মৃদুমন্দ ব্যাথা’য় চোখ বুজলো পুণরায়। কন্ঠ ভেদ করে বেরিয়ে এলো ব্যাথাকাতুর শব্দ। আরহামে’র চোখটা নড়লো বোধহয়। যথেষ্ট কানখাড়া পুরুষ সে। তবে আজ তার ক্লান্ত চোখদ্বয় খুললো না। তোঁষা উঠতে চাইলো। নিজের দেহটা’কে টেনে সরালো আরহামে’র উপর থেকে। আচ্ছা আরহাম ভাই কি এতক্ষণ ব্যাথা পায় নি? আস্ত একটা তোঁষা ছিলো তার উপর। তোঁষা আপাতত উঠতে চাইলো। আরহামে’র থেকে নিজেকে সরাতেই বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। যেই না শরীর থেকে কাঁথা’টা সরালে ওমনিই লজ্জায় মাথা নত হয়ে এলো তোঁষা’র। অক্ষিপটে ভেসে উঠে রাতের তাদের একান্ত ব্যাক্তিগত মুহুর্তগুলো যা ছিলো তোঁষা’র কাছে আদরের। ভালোবাসা’র। এই নতুন ভাবে পাওয়া আদরে’র ছাপ ছড়িয়ে তোঁষা’র সর্বাঙ্গে। নিজের পরণে থাকা আরহামে’র শার্ট’টার দিকে তাকিয়ে রয় তোঁষা। মাথাটা কাত করে ঘ্রাণ নিতে চায়। পুরাতন অভ্যাস বলে কথা। অথচ বোকা তোঁষা ভুলেই গিয়েছে যেখানে আস্ত আরহাম ভাই তার এত নিকটে, যার ঘ্রাণে এখন মাতোয়ারা এখন খোদ তোঁষা সেখানে আরহাম ভাই এর এই শার্টের ঘ্রাণ নিছক তুচ্ছ বৈ কিছুই না। তোঁষা কথাগুলো মনে করে নিজের হাসলো। ফোলা ফোলা গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। শরীরে’র সকল পীরা ভুলে তোঁষা পা রাখলো নীচে। ওমনিই যেন ওর সারা শরীর চিরিক করে উঠলো। মুখে এবার একটু জোরেই শব্দ করে ব্যাথাটা প্রকাশ হলো যেন৷ আরহামে’র সজাগ কান তা শুনলো। নিজেকে একা আবিষ্কার করেই তার ঘুমন্ত মস্তিষ্ক জাগ্রত হলো নিমিষেই। তুঁষ’টা কাছে নেই। চোখ খুলে কিছু বুঝে উঠার আগেই ধপ করে শব্দ হলো। অর্ধ জাগ্রত মস্তিষ্ক’টা এবার পুরোটা জেগে উঠলো। তড়িৎ বেগে বিছানা ছাড়তেই এলোমেলো তোঁষা’কে ফ্লোরে আবিষ্কার করে আরহাম। আরহাম আতঙ্কগ্রস্থ ডেকে উঠলো,

— তুঁষ!

তোঁষা মুখ নাড়লো। বলতে চাইলো কিছু তবে সম্ভব হলো না। আরহাম তাড়াতাড়ি তোঁষা’র মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে আতঙ্কিত ভাবেই ডাকতে লাগলো,

— তু..তুঁষ? এই তুঁষ? পরে গেলি কিভাবে প্রাণ? উঠ। উঠ না। তাকা আমার দিকে।

তোঁষা’র চোখ বেয়ে শুধু পানি পরলো। মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ তার হলো না। চাইলেও বলতে পারলো না। আরহাম অস্থির হয়ে উঠলো যেন। বাড়লো তার উন্মাদনা। তোঁষা’র মুখ দিয়ে লালা জাতীয় কিছু গড়িয়ে পরতেই আরহাম হুস হারিয়ে ফেললো। সহজ বিষয়’টা তার কাছে জটিল হয়ে এলো। সাধারণ ভাবেই স্যালিভারী গ্লান্ড থেকে স্যালিভা ক্ষরণ হয়ে থাকে। যা বেশি হলে মুখ থেকে গড়িয়ে বের হয়। অর্ধ চেতন তোঁষা’র ও তাই হলো। আরহাম পাজা কোলে তুলে ওকে বিছানায় রাখতেই পুরোপুরি জ্ঞান হারালো তোঁষা।
একা এক বাড়ীতে তোঁষা’কে নিয়ে এহেন অবস্থায় বড্ড অসহায় হলো আরহাম। চোখে মুখে পানি’র ছিটে দিয়ে ডাকতে লাগলো ব্যাকুল কন্ঠে,

— তুঁষ… এই তুঁষ? একটা বার তাকা না প্রাণ। আমার ভয় লাগছে তুঁষ। প্লিজ তাকা না।

অনবরত তোঁষা’র গালে আলতো চাপড় মে’রে আরহাম ডাকতে লাগলো। তোঁষা’র ঠোঁটদ্বয় যখন ফ্যাকাসে হলো তখনই আরহামের টনক নড়লো। পাশ থেকে ছোট যন্ত্রটা নিয়ে তোঁষা’র ডায়াবেটিস চেক করতেই চোখ চড়কগাছ। ডায়াবেটিস নীল হয়ে আছে। আরহামে’র হঠাৎ ই মনে পরলো গতরাত আর সকাল তোঁষা’কে ইনসুলিন পুশ করা হয় নি। ভয়ংকর কিছুর টের পেতেই আরহাম এক দৌড়ে ফ্রিজ থেকে জুস এনে খাওয়ালো ওকে। তোঁষা’র লেগে থাকা দুই দাঁতের মাঝে নিজের অনামিকা আঙুল ঢুকিয়ে দাঁতের পাটি আলাদা করতে চাইলো। প্রচুর বেগ পেতে হলো আরহাম’কে এই কাজ করতে। অতঃপর যখন তোঁষা’র চোখের পাতা কিছুটা নড়লো তখন আরহাম ধীর কন্ঠে তাকে ডাকতে লাগলো,

— তুঁষ উঠবি না। প্রাণ আমার তাকা এদিকে।

তোঁষা কি পারে তার প্রাণে’র ডাক উপেক্ষা করতে? উহু। মোটেও না। তাই তো ঠেলেঠুলে চোখ মেলার চেষ্টা করলো। বদ্ধ চোখদ্বয় খুলতেই গড়াতে লাগলো অশ্রু কণা। আরহাম বুঝি আটকে রাখা শ্বাসটুকু ছাড়লো? হ্যাঁ। ছাড়লোই তো। জোড়ালো গলায় ঢোক গিললো একটা। ভয় পেয়েছে সে। তোঁষা আরহাম’কে দেখেই ফিকড়ে কেঁদে ফেলে। তার চোখ মুখের মলিনতা আরহামে’র কায়া নাড়াতে সক্ষম। কেন কাঁদে তার তুঁষ? ব্যাথা পাচ্ছে বলে? ব্যাথার কারণটা তো আরহাম নিজেই। তোঁষা’র উপর অল্প ঝুঁকে আরহাম। গালে হাত রেখে পানিটুকু মুছে দিতে দিতে বলে,

— অনেক কষ্ট হচ্ছে?

— হু।

আরহাম ধীরে তোঁষা’র নরম দেহটা নিজের মাঝে তুলে নিলো। তোঁষা শরীর ছেড়ে দিলো আরহামে’র উপর। ওকে কোলে তুলেই আরহাম ওয়াসরুমে হাটা দিলো। ওকে ফ্রেশ করাতে গিয়ে শুনা গেলো আরেকজন কান্নার আওয়াজ। নরম কোমল তুষকন্যা’র কান্নায় ভারী হলো চারপাশ। বাতাসে যেন মিলিয়ে সুদূর প্রসারিত হচ্ছে। যার সাক্ষী হচ্ছে এই সকালের মলিন বাতাস।

আরহাম যথেষ্ট সাবধানে তোঁষা’কে কোলে নিয়ে বের হয়। তোঁষা এখন একদম চুপ। নাক, মুখ ফুলিয়ে কেঁদেকেটে অস্থির তোঁষা এখন লজ্জায় লাল হয়ে আছে। কে জানতো এত সুখ লিখা ছিলো এত বছরের কষ্টে’র পর?
আরহাম চটজলদি পা বাড়ালো রুমে’র বাইরে। তোঁষাটা’কে খাওয়াতে হবে। খুব জলদি করে যতটুকু পারলো বানালো আরহাম৷ এর মধ্যে দুই চারবার “তুঁষ তুঁষ” করে ডাকও দিলো তবে সাড়া এলো না। যেহেতু কান্নার শব্দ ও আসে নি তাই ঝটপট হাতের কাজ শেষ করে রুমে পা বাড়ায়।

রুমে ঢুকা মাত্র নজরে এলো উবুড় হয়ে শুয়ে থাকা তোঁষা’র দিকে। সুদর্শন মুখটাতে হাসির দেখা মিললো। বলিষ্ঠ দেহটা টেনেটুনে এগিয়ে এলো আরহাম। হাতের ট্রে’টা সাইডে রেখে তোঁষা’র পাশে বসে মাথায় হাত রাখতেই ইটের ন্যায় শক্ত হয়ে গেলো তোঁষা। আরহামে’র চাপা হাসিটা এবার ছিটকে বের হলো বুঝি। শব্দ হলো সেই হাসির। তোঁষা’র লজ্জা বাড়লো এবার হুরমুর করে। পাশ হাতড়ে বালিশ নিতে চাইলেও পারলো না। আরহাম ওর হাত আটকে দিয়েছে। তোঁষা ছাড়াতে চাইলেই আরহাম দুষ্ট কন্ঠে বললো,

— রাতভর এত কষ্ট করে কার লজ্জা ভাঙালাম?

এই কথার দরুন কি হলো? তোঁষা মূর্ছা গেলো লজ্জায়। আবারও কান্না পাচ্ছে ওর তবে লজ্জায়। আরহাম ওকে সোজা করে উঠালো। তোঁষা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আরহাম হাসতে হাসতেই বললো,

— তুঁষরাণী’র কি হয়েছে হু? গতরাতে সে আমাকে পাগল বানালো, এখন নিজেই লজ্জায়…..

তোঁষা হুট করেই আরহামে’র বুকে আছড়ে পড়লো। আরহাম বুঝলো। লজ্জা না দিয়ে এবার ওকে জোর করেই খাওয়ালো। তবে বেশি খেতে পারলো না তোঁষা। বমি পাচ্ছে তার। আরহাম আজ জোর করে নি।
তোঁষা’কে খায়িয়ে হাতে ইনসুলিন নিয়ে আসতেই ভ্রু কুঁচকায় তোঁষা। দূর্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

— খাওয়ার পর?

— হ্যাঁ। দিতে হবে প্রাণ।

তোঁষা বিশ্বাস করে তার আরহাম ভাই’কে। তাই তো দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো না। আরহাম তোঁষা’কে ইনসুলিন ওর জ্ঞানহারা অবস্থাতেই পুশ করেছিলো এখন পুণরায় ইনজেকশন পুশ করতে উদ্ধত হলো।
আরহাম ওকে ইনজেকশন’টা পুশ করেই বুকে নিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। তোঁষা তখনও চুপচাপ। একসময় মেয়েটা ঘুমালো বটে। আরহাম ঘাড়কাত করে দেখে তার প্রাণ’কে। মৃদু শব্দে জানায়,

“প্রাণ আমার, তোকে আজীবন আমার প্রাণকুঠুরিতে আটকে রাখব। তোর দিনও আমি, রাতও আমি। তোর ধ্যান ও আমি,জ্ঞান ও আমি। তোর শুরু ও আমি, তোর শেষটা ও আমিই হব।”

#চলবে…….

[ আজ রাতে দিতে চাচ্ছিলাম না বলে তারাহুরোয় লিখলাম। সুন্দর আজকের রজনী টাকে কাজে লাগান সবাই। যা যা চাওয়ার আছে চেয়ে নিন৷ নিজের ভুলগুলোর জন্য মাফ চেয়ে নিন। ইবাদতে মশগুল হন। সাথে আপনাদের ছোট লেখিকার জন্য দোয়া করবেন। আমিও দোয়া করব সবার জন্য। 💜]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here