একটি_সাঁঝরঙা_গল্প #তানিয়া_মাহি #পর্ব_০৮

0
80

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_০৮

“সব বইপ্রেমীই কি বইয়ের মাঝে টাকা লুকিয়ে রাখে? তাদের ওয়ালেট থাকে না? নাকি ওয়ালেটে টাকা রাখতে ইচ্ছে করে না? নাকি বইয়ের পৃষ্ঠাকেই ওয়ালেট ভাবে,কোনটা?”

ফালাকের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিশো। সন্ধ্যায় ফালাকের সাথে দেখা হওয়া আর প্রয়োজনীয় বইগুলো ফালাক নিয়ে নেওয়ার পর থেকে নিশোর ভেতরে ভেতরে মন খারাপ ছিল। কিছু পেয়ে যাওয়ার পর সেটা আবার হারিয়ে ফেললে বা আশার আলো দেখতে পাওয়ার পর দপ করে নিভে গেলে যেমন অনুভূতি হয় ঠিক সেরকম অনুভূত হচ্ছে নিশোর। ফালাককে পড়াতে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। পড়ানো প্রায় শেষের দিকে। মন খারাপ নিয়েই পড়াচ্ছিল ফালাককে আর বারবার টেবিলের একপাশে রাখা বইয়ের দিকে আড়চোখে দেখছিল।মনে মনে ভাবছিল লজ্জার মাথা খেয়ে ফালাককে সে বলবে- বইগুলো বিক্রি করার জন্য নিয়ে এসেছিল সে। টাকার খুব প্রয়োজন। সে ভাবছিল বইগুলো ফেরত চাইবে। প্রয়োজনে এখান থেকে একটা বই ফালাককে দেবে সে। তার আগেই ফালাকের ওমন ধারা কথায় কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পড়ল। সে চাপা গলায় শুধালো,

“কী বললে?”
“বললাম টাকা কি বইয়ের মাঝে রাখার জিনিস?”
“সবসময় সবকিছু সঠিক জায়গায় থাকে না। বেঠিক জায়গাতেও কিছু কিছু জিনিস ভালো থাকে।”
“টাকা বইয়ের মাঝে রেখে শান্তিতে থাকেন কীভাবে? পরে খুঁজলে পান সহজে?”
“বুঝতে পারছি না। ”

ফালাক হাতের ডান পাশে থাকা বইগুলো থেকে চারটে বই নিশোর দিকে এগিয়ে দিল। নিশোর সামনে বইগুলো রেখে বলল,“আমি যদি এতগুলো টাকা মে*রে দিতাম তাহলে কী হতো? বইপ্রেমীরা বুঝি এরকমই বড়লোক হয়?”

নিশো ফালাকের দিকে মুহূর্ত কয়েক স্থিরচোখে চেয়ে রইল। ফালাকের কথা সে এখনো বুঝতে পারছে না। দূর্বচিত্তে শুধালো,

“কীসের টাকা মে*রে দিবে তুমি? আমার চেয়ে ভিখারি এই দুনিয়ায় আর কেউ আছে নাকি?”

ইশারায় বইগুলো দেখিয়ে বলল,“বইয়ের মধ্যে এতগুলো টাকা লুকিয়ে রেখেছেন আর বলছেন আপনার চেয়ে ভিখারি কেউ নেই? আজব!”

নিশো এবার বইগুলোর দিকে তাকিয়ে ফালাকের দিকে আবার সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,“ বইয়ের মাঝে টাকা? আমার আনা বইয়ে?”

ফালাক স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,“এত টাকা বইয়ের মাঝে রেখে আবার আমাকে প্রশ্ন করছেন? নিজেই দেখুন না।”

নিশো দুই হাত দিয়ে বইগুলো নিজের আরও কাছে টেনে নিল। একটা বই হাতে নিয়ে, সমস্ত পৃষ্ঠা আঙুলে ঠেঁকিয়ে ছেড়ে দিতে থাকলে বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠায় নোট দেখে নিঃশ্বাস থেমে থেমে যায়। একে একে সবগুলো বই চেক করতে থাকে সে। নিশোর মুখে এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস, উৎসাহ দেখে ফালাক মৃদু হাসলো। আ*গুনের ফুলকির মতো নিশোর মুখে যেন এবার হাসি যেন প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। যেখানে কোন জিনিস আশা করা বোকামি কিন্তু আশা করলে যতটুকু আশা করা যায় তার চেয়েও ঢের বেশি পেলে মানুষ যেমন আনন্দিত হয় নিশো এখন সেরকম আনন্দ উপভোগ করছে। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছে সে। ফালাক এক পলকে নিশোর হাসিমাখা মুখটা দেখছে আর আনমনে একটা একটা করে বই এগিয়ে দিচ্ছে।

নিশোর এমন খুশি দেখে বিড়বিড় করে বলল,“আপনার মুখের এই হাসিটার মূল্য পুষিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি নাহয় মূল্য দিয়ে হাসি না দেখে আপনার হাসির কারণ হওয়ার চেষ্টা করব।”

নিশো বইগুলো গুছিয়ে রেখে টাকাগুলো নিজের হাতে নিয়ে ফালাকের দিকে তাকাতেই ফালাক তড়িঘড়ি করে চোখ নামিয়ে নিল। নিশো বলল,

“কিছু বললি?”
“ন না না তো। কী বলব? বললে তো শুনতেই পেতেন।”
“বইয়ের মাঝে এতগুলো টাকা আমি কবে রেখেছি আমার মনে পড়ছে না।”
“বইয়ের মাঝে টাকা রেখে কার মনে থাকে বলুন তো?”
“তবে আমি তো এত টাকাও হাতখরচ পেতাম না যে বইয়ের মাঝে এত টাকা রাখব। মনে হয় তোয়া কিছু টাকা দিয়েছে সাথে।”

ফালাক মৃদু হেসে বলল,“হতে পারে। তবে আপুকে এসব বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো৷ হয়তো ভালোবেসে দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে এখন কী করতে চাইছেন?”
“বই কিনব।”

ফালাক জেনেও না জানার অভিনয় করে বলল,“বই! কীসের বই?”
“আমার মাথায় তো আগে বিসিএস এর কথা আসেইনি। তুই মানে স্যরি তুমি বলার পর ভেবে দেখলাম এটা একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারি।”

ফালাক উচ্ছ্বসিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,“আপনি সত্যি বলছেন?”
“হ্যাঁ। ”
“আমার পরিক্ষার পরপরই তাহলে আপনার পরিক্ষা। ভালোই হবে। ফর্ম বের হলে তাড়াতাড়ি ফিল-আপ করে ফেলবেন।”
“টাকাগুলো পেয়ে কী যে উপকার হলো!”
“ধন্যবাদ দিলেন না?”

নিশো ফালাকের দিকে সরোষ দৃষ্টি ফেলে শুধালো,“কাকে?”

ফালাক শাহাদাত আঙুল ওপরের দিকে ইশারা করে বলল,“আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করলেন৷ কারও মাধ্যমে সাহায্য আপনার কাছে পৌঁছে দিলেন, এতগুলো টাকার ব্যবস্থা করে দিলেন শুকরিয়া আদায় করুন।”

নিশো ওপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল,“তা তো অবশ্যই৷ উনি ছাড়া আর কে আছে আমার!”

নিশো টাকাগুলো গুনে দেখলো সেখানে সব মিলিয়ে সাত হাজার চারশো ছত্রিশ টাকা আছে। এতগুলো টাকা নিজের হাতে পেয়ে বেজায় খুশি সে। মুচকি হেসে সে বলল,

“তুমি বই রাখতে চেয়েছিলে না? এই বইগুলো আজ থেকে তোমার।”

ফালাক অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,“সব আমার?”
“হ্যাঁ তোমার। একদম তোমার। আর ফিরিয়ে দিতে হবে না।”
“ফিরিয়েও দিতে হবে না?”
“না। ফিরিয়ে দিতে হবে না।”
“এতগুলো টাকা পেলেন তার খুশিতে?”
“হ্যাঁ। কিছু খাবে?”

ফালাক ভ্রু কুঁচকে বলল,“ট্রিট?”
“উমম হ্যাঁ ট্রিট। বাজেট এক হাজার টাকা।”

ফালাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর মৃদু গলায় বলল,“ আমার জন্মদিনে উপহার চাই।”

নিশো শুধালো,“কী চাই?”

ফালাক আঙুল গুনে গুনে বলতে শুরু করল,“ সামনে আমার বিশেষ দিন। পালন তো কখনোই করি না। তবে এবার উপহার পেতে ইচ্ছে করছে। আপনি আমাকে বড় একটা নাকের নথ, এক জোড়া নুপুর, এন্টিকের মোটা ভারি যে নুপুর পাওয়া যায় সেগুলো, সাদা শাড়ি, দু’ডজন লালচুড়ি, একটা কাজল আর একটা আলতা উপহার দিবেন। আমি আপনাকে শাড়ির ছবি পাঠিয়ে দেব।”

নিশো ফালাককে থামিয়ে দিয়ে বলল,“ওয়েট ওয়েট, আবার বল আমি নোটপ্যাডে লিখে নিই। পরে মনে থাকবে না।”

ফালাক সহজ সরল মনে হেসে হেসে একমনে আবার বলতে থাকলো। নজর নিশোর চোখে, মুখে সীমাবদ্ধ।

দরজায় কারো গলা শুনে নিশো আর ফালাক দুজনই একসাথে সেদিকে তাকালো। দরজায় বারিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফালাকের চোখ যেন কপালে উঠলো। বারিশ সবসময় বেশি বেশি করে তাই বলে টিউটর কে সেটা জানতে সোজা বাড়িতে চলে আসবে সেটা কল্পনা করতে পারেনি ফালাক।

বারিশকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফালাক। দাঁতে দাঁত চেপে হাসির ভান করে বলল,“দোস্ত, তুই বাসায়? কী মনে করে?”

বারিশ নিশোর দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। বারিশকে তাকিয়ে থাকা দেখে যেন ফালাকের বুকটা জ্ব*লেপু*ড়ে যাচ্ছে।

“মামাতো বোনের বিয়ে। ভাবলাম আজ তোর কাছে থেকে মেহেদি নিব। আড্ডা দিব, তাই আসলাম। উনি কে? তোর টিউটর?”

ফালাক নিশোকে বলল,“ভাইয়া, আপনি যান।”

নিশো ফালাকের খাতায় লেখাগুলো দেখিয়ে বলল,“পড়া কমপ্লিট করে রেখো।”

নিশো বারিশের দিকে তাকিয়ে আন্তরিকতার হাসি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ফালাক দরজার বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখে ভেতরে এসে বারিশের বাহু ধরে টেনে বিছানায় বসালো।

কঠোরস্বরে বলল,“তুই বাড়াবাড়িটা কেন করলি?”
“কী করলাম?”
“তোকে ভাইয়ার কথা বলিনি বলে দেখতে এসেছিস?”
“আরে নাহ। এই দেখ মেহেদি নিয়ে এসেছি।”
“সত্যি তো?”
“হ্যাঁ সত্যি৷ ভয় পাস না তোর টিচারকে আমি কেড়ে নিব না।”
“মনে রাখিস। তুই উনার কাছে পড়তে চাইলে আমি পড়তে তো দিবোই না উল্টো আমাদের ফ্রেন্ডশিপ আমি নষ্ট করে দিব। উনি কোন টিচার না। মা আমাকে পড়াতে বলেছে বলেই আমাকে পড়ানো শুরু করেছে দুদিন হলো।”

বারিশ ফালাককে জড়িয়ে ধরে হেসে বলল,“ভয় নেই বান্ধবী। তোর এগিয়ে যাওয়া একধাপ আমি কিছুতেই পিছিয়ে আসতে দেব না।”

ফালাক মৃদু হেসে বারিশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,“আই লাভ হিম, দোস্ত। আই জাস্ট লাভ হিম।”

#চলবে…….

রেসপন্স করবেন সবাই ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন ।।

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করুন ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here