অভিমানে_তুমি #ফারিয়া_আফরিন_ঐশী #পর্বঃ৩

0
650

#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৩

হঠ্যাৎই একটা ফোন এলো ল্যান্ডলাইনে আমি রিসিভ করে যা শুনলাম তার জন্য প্রস্তুুত ছিলাম না।।তাড়াতাড়ি ফোন ফেলে বাইরে দৌড়ে এলাম।চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে লাগল।।বাইরে গিয়ে ড্রাইভার চাচাকে বললাম–চাচা,তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটাল চলেন।
চাচা বললেন -কার কি হইছে মা?
আমি বললাম-সাদির।আপনি জলদি চলেন।
ড্রাইভার চাচা আমাকে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
১৫ মিনিট পর হসপিটাল পৌঁছে দেখলাম রিদান দাঁড়িয়ে আছে।ওকে বললাম –কি হয়েছে ওনার??
রিদান জানালেন-স্যার,ফোন করে আমাকে ওনাদের পুরানো গোডাউনে আসতে বললেন,আমি সময়মত পৌঁছানোর পর স্যার ও আসলেন।হঠ্যাৎ কালো মাস্ক আর টুপিতে মুখ ঢাকা কয়েকজন লোক আমাদের ওপর আক্রমন করেন।সিকিউরিটি ছাড়া ছিলাম বলে আমরা কিছু করতে পারিনি।স্যার গুরতর আহত হয়েছেন তবে অবাক বিষয় হলো ম্যাম ওরা আমাকে তেমন কিছু করেনি।স্যারের ওয়ালেট, ফোন আর সাথে থাকা ফাইলটা ওরা নিয়ে গিয়েছে। স্যার যে আমায় কি বলতে চাইছিলেন তা জানা হলো না।।
রিদানের সাথে কথা কথা বলতে বলতে সাদির কেবিনের সামনে আসলাম।ডাক্তার জানালেন যে সাদির ডান পা ভেঙে গিয়েছে আর বা হাতের হাড় চটে গিয়েছে। আর তেমন কিছু হয়নি।
ফুপিকে ফোন করে জানালাম।ফুপি অসুস্থ বলে আসতে বারণ দিলাম।রিদানকে বললাম সাদির চিকিৎসার ব্যবস্হা যেন বাড়িতে করে।কারণ সাদির সিকিউরিটি দরকার।মনে মনে ঘুরতে থাকল কারা সাদিকে মারতে পারে? তিশা??
৩ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সাদির সাথে দেখা করার অনুমতি পাই।কেবিনে গিয়ে দেখি হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা অবস্হাতে শুয়ে আছেন।চোখ থেকে জল এলো।তাড়াতাড়ি মুছে তার কাছে গেলাম।চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।এর মধ্যে নার্স এসে খাবার দিয়ে গেলেন।আমি সাদির মাথায় হাত রাখতেই সাদি চোখ মেলে তাকালেন।বেড কিছুটা উঁচু করে দেওয়াতে,বালিশ পিঠে দিয়ে বসানোর ব্যবস্হা করা হলো।খাবার সামনে দিয়ে বললাম খেয়ে নিন।সাদি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যেন খুব অস্বাভাবিক কোনো কথা বলেছি আমি।
তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম–কি হলো খাচ্ছেন না কেনো?
সাদি বেশ অভিমানী স্বরে উত্তর দিলেন–একজন অসুস্থ মানুষকে নিজে হাতে খেতে বলিস কিভাবে তাই ভাবছি!!!
আমি—তো কি বলব?বা হাতে চোট পেয়েছেন, ডান হাতে না।।
সাদি–তাই বলে অসুস্থ মানুষকে একা খেতে বলবি!!!
কোনো কথা না বলে তার মুখের সামনে স্যুপ ভর্তি চামচটা ধরলাম।
সাদি আমার দিকে চোখ রেখেই খেতে লাগলেন।
খাওয়ার মাঝে সাদি বললেন–মিথি,জানি তুই ঐদিনের ব্যবহারে আমার ওপর রেগে আছিস।কিন্তুু কেন এমন অমানবিক কাজ করেছি তা জানলে তুই রেগে থাকতে পারবি না।।
আমি উত্তরে একটু ফিচেল হেসে বললাম–ও ও তেমন কিছু না!!!আপনার ৭/৮ টা বেল্টের বাড়িতে আমার তেমন কিছু হয় নি।।বিধবা হওয়ার পর এমন বহু মার মা, চাচি মেরেছেন। কতোদিন খেতেও দেন নি।।
আপনি ওসব নিয়ে ভাববেন না।খাওয়া শেষ করুন।।
সাদি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকালেন,,বললেন –কারণটা খুব জলদি জানবি মিথি।
আমি উত্তরে বললাম–ঠিক আছে।যখন জানবো তখন ভেবে দেখবো।তারপর আর কোনো কথা হয়নি আমাদের মাঝে। ওনাকে ওষুধ খাইয়ে দেওয়ার মাঝে রিদান এসে বললেন যে সাদিকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারি আমরা।
সাদিকে বাড়ি এনে ওনার ঘরে ঠিকঠাক মতো বসিয়ে দেওয়া হলো।ফুপি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন।সাদি ভাই আর ফুপি ২ জনেই কাঁদছেনআর আমি সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর সাদি ভাই চোখ মুছে আমাকে বললেন–মিথি,আমার খিদে পেয়েছে।
আমি কিছু না বলে কিচেনের পথে পা বাড়ালাম।
খাবার নিয়ে আসার পর ফুপি সাদি ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললেন–মিথি,তুই আজ থেকে আমার পাশের ঘরটাতে থাকবি।।তোর জামা কাপড় ওখানে রাখা আছে।হাসপাতাল থেকে এসেছিস,ফ্রেস হয়ে আয়।
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে প্রস্হান করলাম।
ফ্রেস হয়ে বের হয়ে কিছু খেয়ে নিলাম কারণ সেই গতদিন রাতে খেয়েছি আর খাওয়া হয়নি।
মনে মনে ভাবছি– যাক,, ভালোই হলো।।একটু স্পেস পাওয়া গেল।
খাওয়ার বেশকিছুক্ষণ পর সাদি ভাইকে দেখতে তার ঘরে গেলাম।দেখি ভাইয়া ঘুম।তাই আর বিরক্ত না করে চলে এলাম।জানালা দিয়ে বাসার বাইরে চোখ দিতেই দেখি অনেক গার্ড বাইরে।বুঝলাম সাদি ভাইয়ের সিকিউরিটির জন্যই।কিন্তুু কথা হলো সাদি ভাইকে মারতে কারা চাইছে? আর কেন??
ফুপির ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
ফুপি বললেন–কি রে!!সাদির জন্য চিন্তা করছিস??
আমি মাথা নিচু করলাম কিন্তুু উত্তর দিলাম নাহ।ফুপিকে জিজ্ঞেস করলাম আমি–আচ্ছা ফুপি,সাদি ভাইকে এমন করে কি তিশাপু আক্রমন করলো?
আমার কথায় ফুপি বললেন–এখনো জানি না তবে খোঁজ চলছে।
আমি–ও ও আচ্ছা
রাতে সাদি ভাই কে দেখতে গেলাম,গিয়ে দেখি ডাক্তার ওনার সামনে বসে আছে।
আমাকে দরজায় দেখে সাদি ভাই ডেকে বললেন–মিথি,ভেতরে আয়।।তোকে এখনি ডেকে পাঠাতাম।
আমি জিজ্ঞেস করলাম–কেন??
সাদি ভাই উত্তর না দিয়ে ডাক্তার কে বললেন-আংকেল,এই হলো মিথি।যার কথা বলেছিলাম আপনাকে।ওকেই চেকাপ করতে হবে।
তাদের কথায় আমি অবাকের চরম লেভেলে পৌঁছে গেলাম।আমার কথা ডাক্তারকে কেন বলবে।ভাবনার মাঝেই,,
ডাক্তার আংকেল আমার দিকে এগিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললেন–বাহ!!বেশ মিষ্টি মেয়ে তো সাদি।।
এই মেয়েকে দ্রুত বিয়ে করে নাও নয়তো চুরি হয়ে যাবে।।
ডাক্তারের কথায় সাদি ভাই মুচকি হেসে বললেন–করবো,খুব তাড়াতাড়ি।
তাদের কথায় আমি পুরো ব্যক্কল হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
ডাক্তার আংকেল চেকাপের জন্য বসতে বললেই আমি সাদি ভাইকে বললাম–সাদি ভাই,আমি বেশ সুস্হ আছি,আমার কিছু হয় নি।
কথা শেষ করতেই সাদি ভাই ধমকে উঠে বললেন–তোর মতামত চাইনি।যা বলছি তাই কর।
ধমক খেয়ে চুপ করে গেলাম।চেকাপ করানোর পর ডাক্তার আংকেল কিছু ওষুধ দিলেন।সাদি ওষুধ গুলো একজন মেইডকে নিয়ে আসতে বললেন।ডাক্তার আংকেল বিদায় নিলেন।আমি উঠে চলে আসতে নিলে সাদি ভাই বললেন –তোকে কি যেতে বলেছি?
আমি কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে বললাম–থাকতে ও তো বলেননি।
সাদি ভাই বিড়বিড় করে বললেন–ফাইনালি,আগের রুপে ব্যাক করছেন।
আমি কান বাড়িয়ে ও কথা শুনতে পেলাম না।
সাদি ভাই বললেন কান না বাড়িয়ে বস এখানে।
আমি বসে বললাম-বলুন,,কি বলবেন??
সাদি ভাই বললেন–বসতে বললেই কি পকপক করতে হবে নাকি!!
আমি উত্তরে বললাম–অবশ্যই তাই,বিনা কথাতে এমনে এমনে বসে থাকে নাকি কেউ বলদের মতো।।
সাদি– তারমানে পকপক করলেই স্মার্ট?
আমি–জি,,আগ্গে।।
সাদি–স্টুপিড!!
আমি–মোটেই আমি স্টুপিড না।।
সাদি –আপনি বিদিক জ্ঞানী খালাম্মা
আমি রাগী চোখে সাদি ভাইয়ের দিকে তাকালাম,দাত কটমট করে উঠে কিছু না বলেই ঘর ছেড়ে চলে যেতেই সাদি ভাই হুহা করে হেসে উঠলেন।
সাদি ভাইয়ের হাসির মাঝেই ফুপি আসলেন তার ঘরে।
ফুপি–কি রে হাসছিস কেন?
সাদি–তোমার স্টুপিড ভাইঝির কথা শুনে।
ফুপি একটু হেসে বললেন–ঐদিন মেয়েটাকে এভাবে না মারলেও পারতি।বুঝতে পারছি তুই বাধ্য হয়েছিলি কিন্তুুতাও–
সাদি–মা,, আমি জানি, ঠিক কাপুরুষের চেয়েও জঘন্য কাজ করেছি।কিন্তুু দাদুনকে আর মিথিকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় ছিল না।আমার ঘর বেডরুম বরাবর কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এ কেউ বন্দুক তাক করে ছিল।।আমি মিথির সাথে কোনো কথা বললেই মিথি আর আমার সামনে থাকতো না।
ফুপি–জানতে পারলি কে বা কারা আছে?
সাদি–তিশাকে পেলেই জেনে যাবো।বন্দুক তাক করা লোকটাকে ধরার আগেই কেউ একজন তাকে মেরে দিয়েছে।
ফুপি–হুমম।।মিথির সাথে তোর বিয়েটা হলে একটু নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।
সাদি–হবে মা।।একটু সময় দাও।ওই লোকটার সাথে মিথির বিয়েটা হওয়ার আগে তো পৌঁছাতে পারলাম না মা। তাইতো গতদিনের বিয়েটা হয়েও হলো না।।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সাদি।
ফুপি–চিন্তা করিস না।১ মাস তো কেটেই গিয়েছে।
এসব ঝামেলাতে আরো ১০ দিন প্রায় শেষ।বাকি ২ মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
সাদি–আমি চাই মা সব ঝামেলা কাটিয়ে তারপর মিথিকে আমার জীবনে আনতে।।ওকে টেনশনে রাখতে চাইনা।
ফুপি–সব মিটে যাবে।বাবা সুস্থ থাকলেই হয় এখন।।
সাদি আর কিছু বলল না।।
পরদিন সাদি ভাই নিজ ঘর থেকে গলাফাটা চিৎকার করে আমাকে ডাকছেন।
আমি দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম–কি হলো,, এমন ষাঁড়ের মত চেল্লাচ্ছেন কেন?
সাদি ভাই–কি!!!আমি ষাঁড়!!
আমি জীভ দাঁত দিয়ে কেটে বললাম–আরে না না।।আপনি ষাঁড় কেন হবেন আপনি তো হালকার ওপর ঝাপসা ভালো মানুষ।
সাদি কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
কথা এড়াতে বললাম,-বললাম বলুন কেন ডাকছিলেন??
সাদি ভাইয়া –একজন মানুষ হাত-পা ভেঙে পড়ে আছে,,খোঁজ রাখিস কোনো?
আমি মনে মনে বললাম–আয় ভাব রে!!!কিন্তুু মুখে বললাম–ভুল হয়ে গিয়েছে জনাব!!
সাদি ভাইয়া –হুমম।ঠিক আছে।ওষুধ দে,মেইড খাবার দিয়ে ওষুধ বক্স দিতে ভুলে গিয়েছে।
আমি ওষুধ এনে তাকে দিলাম,সে ওষুধ খেয়ে বলল–মিথি,একটু ছাদে নিয়ে যাবি আমায়?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম–আপনি তো অসুস্থ সাদি ভাই,হাঁটতেও পারছেন না—
কথা শেষ করার আগেই জানালার কাঁচ ভেঙে বিকট আওয়াজ হলো।আমি ভয়ে সাদি ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম।
সাদি ভাই বুঝলেন,, যে কেউ মিথিকে শুট করতে চেয়েছিলো।কিন্তুু নিশানা মিস হয়ে টেবিলের ফুলদানিতে গুলি লেগেছে বলে মিথি ঠিক আছে। এসব ভাবতেই সাদির বুক কেঁপে উঠল।
মিথি এখনো সাদির বুকের সাথে মিশে কাঁপছে।
সাদি মিথিকে কিছুটা শান্ত করতে মিথির মাথায় হাত রেখে বলে –কাম ডাউন মিথিপাখি,সব ঠিক আছে।।
কিন্তুু তাও মিথি শক্ত করে সাদিকে জড়িয়ে ধরে আছে।।

অপরদিকের বিল্ডিং এ একজন জানালা দিয়ে দূরবীন চোখে লাগিয়ে এসব দেখছিল।মিথি সাদিকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে সে মুচকি হেসে বললো–রিলেক্স,মিথি জান!!এতো ভয় পেলে চলে।।আমার সাথে বিয়ের পর তো এসব গুলাগুলির আওয়াজ শুনেই তোমায় থাকতে হবে।।জাস্ট চিল।।সাদিকে সরিয়ে দিলেই তোমার আমার রাস্তা ক্লিয়ার।তিশার ব্যবস্হা করি তারপর সাদিকে দেখছি।।ততোদিন ওকে একটু ভয় দেখাই।।
এরপর আবার ঘর কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে বলল–সাদি বোকা মানুষ, বুঝতেই পারছে না যে ইশানের নিশানা কখনো মিস হয় না।যা হয় সব তার ইচ্ছে তে।।
আবার হাসতে হাসতে ওয়াইনের গ্লাস হাতে ঘর হতে বের হয়ে গেল।
#চলবে
১৪৫৮ শব্দের পর্ব😊

বিঃদ্রঃ কমেন্টে জানাবেন কেমন লাগছে?

১ম নোটঃঃসাদি একটা রহস্যময় চরিত্র। আমি চেষ্টা করছি তথাকথিত কাহিনীর মধ্যে একটু নতুনত্ব আনার।আর সাদির বেল্ট দিয়ে মিথিকে মারার ঘটনাতে অনেকে বলেছেন এমন না লিখলে নাকি আমাদের পেটের ভাত হজম হয়না বা আরও অনেক কথা!!
আপনারা ১ম পার্ট পড়েই কনসেপ্ট কেন ডিসাইড করে নেন।।আশা করি ৩য় পার্ট পরে কিছুটা বুঝবেন😊

২য় নোটঃঃআমি জানি যে মুসলিম ধর্মে ২য় বিয়ে ৩ মাস ১০ দিন পর করতে হয়।মিথিকে জোড় করা হয়েছিল বিয়ে করতে আশা করি ৩য় পার্ট পড়ে ক্লিয়ার হবেন।।
৩য় নোটঃআমার ১ম লেখা একটু ছন্দপতন আছে বুঝতে পারছি।ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব ছন্দ আনার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here