অভিমানে_তুমি #ফারিয়া_আফরিন_ঐশী #পর্বঃ৪

0
177

#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৪
ইশান ওয়াইনের গ্লাস হাতে একটা বন্ধ ঘরের দরজা খুলল।ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ইশান আলো জ্বালাতেই নিচে পড়ে থাকা হাতে পায়ে শিকল বাধা একটা মেয়ে হঠ্যাৎ আলোতে নিজের চোখকে হাত দিয়ে আড়াল করে নিল।ইশান গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে বলল–হ্যালো,ডিয়ার ওয়াইফি!!!কেমন আছো???
মেয়েটি ছলছল চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল–প্লিজ ইশান,আমাকে আমার ছেলের কাছে যেতে দাও।আজ ৪ মাস ওকে দেখিনা।প্লিজ,,লেট মি গো।।প্লিজ।।তুমি যা যা বলেছো আমি তো করেছি কিন্তুু–
কথা শেষ হওয়ার আগেই ইশান মেয়েটির সামনে চেয়ার টেনে বসে ধমকে উঠে বলল–কিন্তুু মিথি,সাদির ব্যাপারটায় তুমি গন্ডগোল পাকিয়ে দিলে তাইতো তিশা।এই নমুনা আমার কথা মতো কাজের??তুই তো বিয়ের দিন পালিয়ে যেতিস যদি না আমি সময়মতো আসতাম।তোর কি মনে হয় আমার কথার অবাধ্য হলে তুই তোর ছেলেকে জীবিত পাবি?
তিশাঃঃএমন কেন করছ ইশান ওতো আমাদের ছেলে।তোমারও ছেলে।
ইশান ডেভিল হাসি দিয়ে বলে–ও রিয়েলি,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।।সরি সরি।
হঠ্যাৎ তিশার চুল টেনে ধরে বলে–ওসব ছেলে, বউ মানি না আমার যাকে চাই মানে চাই।নিজের বড় ভাইকে খুন করতে হাত কাঁপলো না আর তো ছেলে।তুই কথা না শুনলে তোর ছেলের লাশ পাবি।।
দরজায় নক করে ভেতরে আসে শর্ট ব্লাক ড্রেস পরা একটা মেয়ে। মেয়েটাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে বেশ মডার্ন।মেয়েটি এসেই ইশান কে উদ্দেশ্য করে বলে–ইশু বেবি,প্লিজ কাম উইথ মি,আই নিড টু টক টু ইউ।
ইশান উত্তরে বলে–জাস্ট কামিং।
মেয়েটি চলে যায়।ইশান যেতে নিলে তিশা আবার বলে–প্লিজ ইশান,লেট মি গো।আই নিড মাই সান,,হি নিডস মি প্লিজ।
ইশান কথার তোয়াক্কা না করে নিচে ড্রইংরুমে এসে শর্ট ড্রেস পরা মেয়েটিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
মেয়েটি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে –প্লিজ,আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে টাচ করার চেষ্টা ও করবে না।
ইশান ফিচেল হেসে বলে–এমন একটা ভাব করছ রুহি যেন তোমাকে টাচ করার জন্য আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক কি জানতে চাও বলো।
রুহিঃঃএখন মরিয়া কেন হবে আমাকে টাচ করার জন্য, এখন তো মিথিকে চাই তোমার তাইনা??
ইশান বারে বসে গ্লাসে মদ ধালতে ধালতে বলে–চাইতো,মিথিকে তো চাই।
রুহিঃঃকেন করছ এসব তুমি?মিথির বাড়িতে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেই পারতে।ওর বাড়ির লোক তো চায় ওকে বিয়ে দিতে।আর তুমি তো ওয়েল সেটেলড।এতো ভালো একজন ডাক্তার।। তাহলে!!!!
ইশান ডেভিল হেসে বলে –এতো প্রশ্নের উত্তর চাই তোমার?
রুহিঃঃহুমম,, চাই।বিকজ আমি আর পারছি না তোমার পাপের সাথি হতে।কোনো কিছু কখনো জানতে না চেয়ে তোমাকে সাহায্য করেছি জাস্ট বিকজ আই লাভ ইউ।
ইশান শয়তানি হাসিটা মুখে রেখে বলে–ওকে,মেলোড্রামা করতে হবে না বলছি।।
সাদি ভাই আমার বড় চাচুর ছেলে।আমার থেকে ২ বছরের বড় ভাই।আর আমার নিজের ভাই নিশান আমার বাড়ির বড় ছেলে ছিল। সে সাদি ভাইয়ের থেকে ৩ বছরের বড়।মেডিকেলে পড়াকালীন আমার তিশার সাথে প্রেম হয়।বন্ধুদের সাথে মিশে ড্রাগস নেওয়া শুরু করলাম।টাকার দরকার ছিল যা বাসা থেকে দিত না।বড় ভাইয়া ইতালি চলে যাওয়াতে আমার শেষ ভরসাও হারায়।সাদি ভাইয়ের সাথে কোনোদিন তেমন সখ্যতা ছিল না আমার।কয়েকদিন পর বাড়িতে গিয়ে দেখি দাদু আর আর চাচিমণি আমার মা কে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে আমার মায়ের নাকি কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে।মাকে সেদিন তারা অনেক কথা শোনায়,মারধোর ও করেছিল।ইশানের চোখ ছলছল করে ওঠে।চোখের কোণের পানি মুছে এক ঢোক মদ গিলে নিজের গলা ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করে–আমি সেদিন দাদু,চাচির পা ধরে বলেছিলাম সব মিথ্যা। আমার মাও বলেছিল কিন্তুু বিশ্বাস করেনি।মাকে বের করে দিল।আমি মায়ের ছেলে হয়ে কিভাবে ঘরে থাকি বলো?
আমিও মায়ের সাথে বেরিয়ে গেলাম।বেরোনোর সময় চাচি আর দাদু বলেছিল যে মায়ের সাথে থাকলে এ বাড়িতে আর কখনো ফেরা যাবে না।তাই মেনে নিয়েছিলাম।মাকে নিয়ে সারারাত ঝড়বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসে ছিলাম।সকালে ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলি যে ভাই,তুই আমাদের তোর কাছে নিয়ে যা।কিন্তুু ও আমার মাকে যা ইচ্ছে বলে গালাগালি করে।মা সব শুনে দৌড়ে হাইওয়ে তে আসতে থাকা দ্রুত গতির বাসের সামনে গিয়ে পড়ে।বাসটা আমার মাকে পিসে দিয়ে চলে যায়,রক্তে রাস্তা ভিজে গিয়েছিল।মাকে হাসপাতালে নিলে জানায় টাকা লাগবে অপারেশন করতে।টাকা তো ছিল না তাই ছুটে বাড়িতে গিয়েছিলাম।বাড়ির গেইটে চাচির সাথে দেখা হলে বলেছিলাম -হেল্প করতে কিন্তুু করে নি।বলেছিল–নষ্টা মেয়ের কোনো ট্রিটমেন্টের টাকা তারা দিতে পারবে না।বাবা ছোট থাকতে মারা গিয়েছিল তাই ওমন ব্যবহার আমাদের সাথে।সেদিন ফেরার পথে ভেবে নিয়েছিলাম সবাইকে শেষ করে দিবো।রাস্তায় টাকার জন্য ঘুরতে থাকলে তোমার বাবা ফেরেশতার মতো আমার জীবনে আসেন।আমার মায়ের চিকিৎসার টাকা দেন কিন্তুু এতো দেরি হয়ে গিয়েছিল যে মা ততক্ষনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিল।মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলাম পুরো।তোমার বাবা তখন আমাকে আশ্রয় দেন, মেডিকেল কন্টিনিউ করতে বলেন,ড্রাগসের নেশা ছাড়িয়ে দিয়ে সাহায্য করেন।শর্ত ছিল তোমাকে বিয়ে করতে হবে।তিশাকে ভালোবাসতাম তাই রাজি হইনি।তিশার কাছে গেলে তিশা বলেছিল ওমন টাকা পয়সাহীন বিএফ দিয়ে সে কি করবে!!তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল।।তোমার বাবা পরে খোঁজ নিয়ে জানায় তিশার আমার বড় ভাই নিশানের সাথে রিলেশন চলছে।সেদিন থেকে চিন্তা করে নি যে নরক করে তুলব ওদের জীবন।তাইতো বছর ২ আগে চাচ্চু আর দাদু যখন চিটাগাং যাচ্ছিল, নির্জন হাইওয়ে তে দাদুকে কিডন্যাপ করিয়ে আনি আর চাচ্চুসহ গাড়ি ট্রাক দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেই।চাচ্চু ফিনিস।
বুড়ো আমার কাছেই আছে।আর রইল নিশান ভাই, তিশার সাথে ভাইয়ের বিয়ের পর আমার আর তিশার কিছু প্রাইভেট মোমেন্টের ছবি ভাইকে সেন্ড করি।ভাই জানতো না যে আমার আর তিশার সম্পর্ক ছিল।ভাই আর তিশা এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি বেধে যায়।ঠিক তখন তিশার হাত থেকে ধাক্কা লেগে আর ভাই সিড়ির রেলিং দিয়ে নিচে পড়ে যায়।ভাই নিচে পড়ে মরেনি,তিশা বেশ ঘাবড়ে ছিল ঠিক তখন আমি গিয়ে ওকে কুল হতে বলি।তিশা ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায় ঐ সুযোগে আমি ভাইয়ের মাথায় কাঠের স্টিক দিয়ে সজোরে আঘাত করি।মাকে করা গালি গুলো মনে করে আঘাত করতে থাকি।যখন বুঝলাম মরে গিয়েছে তখন সেন্সলেস তিশাকে নিয়ে তোমার বাবার প্রাইভেট জেটে কলকাতা আসি।তিশার উইক পয়েন্ট চাচ্ছিলাম আর তাই ওকে বিয়ে করলাম,বাচ্চা হলো, ছেলেকে ওর থেকে দূরে করে ওকে আর ওর ফ্যামিলিকে দিয়ে বিভিন্ন ছেলেদের ফাঁসাতে থাকি।লাস্টলি সাদির জীবনে তিশার এন্টরি ঘটাই।।বাট প্লান ফ্লপ।বাট নো ওয়ারিজ।আই হেভ প্লান বি।।
ইশান কথা শেষ করেই আবার মদ গিলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।রুহি স্তব্ধ মায়ের কষ্টে মানুষ কতটা হিংস্র হতে পারে তার প্রমাণ ইশান।
নিরবতা ভেঙে রুহি বলে–আর মিথির ব্যাপারটা?
ইশান ঢুলুঢুলু পায়ে দাঁড়িয়ে বলে –মিথি মাই জান,,
ওর ১ম স্বামীকে ট্রাক চাপা আমি দিয়েছি।ওই ৪৫ বছর বয়সী হাফমেড লোক আমার সাথে ইশান আহমেদের সাথে বেইমানি করেছিল।।আর আমি না মারলেও সাদি ঠিক ওকে মেরে দিত।
রুহি আবার জিজ্ঞেস করে–তুমি কি করে মিথিকে চিনলে?
কিন্তুু ততক্ষণে ইশান নেশায় জ্ঞান হারিয়ে সোফায় শুয়ে পড়েছে।
রুহি বুঝতে পারল আজ অনেক নেশা করেছে ইশান।
রুহি মেইডের সাহায্যে ইশানকে ঘরে নিয়ে গেল।
রুহি মনে মনে বলল–যাহ!!সাদি আর মিথির ব্যাপারটা জানা হলো না।কি বেইমানি করেছিল ওই লোকটা ইশানের সাথে?আর ইশান কেন বললো ও না মারলেও মিথির বরকে সাদি মেরে দিতো??
সব জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে।।
রুহি একটা বিরক্তির শ্বাস ফেলে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে–আমি আমার ৮ মাস তোমার পেছনে ওয়েস্ট করছি ইশান আহমেদ।সুন ইউ উইল বি ফিনিসড।বলেই রুহি বেরিয়ে যায়।
অপরদিকে মিথি এখনো সাদিকে জড়িয়ে ধরে আছে। সাদি ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে বলল–একা নিরীহ একটা হাত-পা ভেঙে যাওয়া ছেলেকে এইভাবে অত্যাচার করছিস তোর নামে পুরুষ নির্যাতন মামলা করব।
আমি লজ্জা পেয়ে সাদি ভাইকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত দূরে সরে আসলাম,তারপর বললাম–মোটেই না,ওমন আওয়াজ এ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই আরকি–
সাদি –তাই আরকি, আমাকে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে ধরলি যাতে বাকি হাড় গুলোও ভাঙে।
আমি ঠোঁট বাকিয়ে কপাল কুঁচকে সাদি ভাইকে বললাম–মোটেও না।।বলেই বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে।
সাদি ভাই ডান হাতে মাথার চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে সুর তুললেন–তোমার প্রেমে আমি পড়েছি বহুবার—
চোখটা ভাঙা ফুলদানির ওপর পড়তেই বললেন–কাজটা তুই ঠিক করছিস না,মিথির কিছু হলে তোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলব।।
এরমধ্যে মেইড এসে সাদির ঘরটা পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।
এরপর ২০ দিন বেশ ভালোই কাটে।
সাদি সুযোগ পেলেই মিথির সাথে ফাজলামি করে।
এখনো তাই।সাদি এখন স্টিকের সাহায্য নিয়ে একটু হাঁটতে পারে।হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ক্রেপ ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে মিথি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে পাশে ছাদি।মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে মিথির স্হির চোখ দেখে সাদি বলল-কি ভাবছিস?
মিথি-ভাবছি যে এখানে এসেছি প্রায় ১মাস অথচ মা-বাবা একবারও আমার খোঁজ নিলো না।বলতেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল।সাদি ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে না পেয়ে বলল–ঘুরতে যাবি মিথি?
মিথি বেশ উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো-যাবো যাবো।
সাদি-তাহলে যা রেডি হয়ে নে আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
সাদি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১৫ মিনিট,ড্রাইভার চাচা গাড়ি মুছতে ব্যস্ত।আর সাদি ২ মিনিট পরপর বিরক্ত ভঙ্গিতে হাত ঘড়ি দেখছে।অপরদিকে ফুপিকে এসে শুধু বলেছিলাম সাদি ভাই বলেছে আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবে।বলতেই ফুপি বলল –তাহলে চল, তোকে আমি সাজিয়ে দেই।সেই যে শুরু হলো আর ছাড়ার নাম নেই।
শেষে বললাম-ও ফুপি ছাড়ো আর সাজবো না।।
ফুপি বলল–এইতো শেষ।।দেখি মুখটা।
মুখ দেখে ফুপি বললেন–মাশাআল্লাহ,আমার পরি মেয়ে।
আমি ব্যস্ততার ভঙ্গিতে বললাম–আসছি।বহুদিন পর ঘুরতে বের হব তাই এতো আনন্দ হচ্ছে।
বাইরে বেরিয়ে দেখি সাদি ভাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি একটু এগিয়ে আসাতেই মুখ তুলে চাইলেন।।।
সাদি মিথিকে দেখে চোখ সরাতে পারছে না।কালো শাড়ি,খোলা চুল,চোখে কাজল হাতে কালো চুড়ি।ঠিক সাদির স্বপ্নে আসা মিথিপরী।সাদি মনে মনে ভাবছে –মা ঠিক মিথি পাখিকে আমার মনের মতো সাজিয়েছে।।লাভ ইউ মা।।।।

সাদি ভাইয়ের সামনে এসে তুরি বাজিয়ে বললাম –কই হারিয়ে গেলে!! চলো।।
আমি আর সাদি ভাই পেছনে বসলাম গাড়ির। আমি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলাম।
অন্যদিকে মিথির বাতাসে ওড়া চুল সাদির মুখে বারি খাচ্ছে।সাদি অবাক চোখে তার মিথিপরীর দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুদূর আসার পর তাদের গাড়ি একটা নদীর পাড়ে এসে থামে।মিথি তো লাফিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।আর সাদি ধীরে ধীরে তার পিছু যায়।মিথি নদীর পানিতে একটু পা দিয়ে নেমে দাঁড়িয়ে সাদির দিকে পানি ছুঁড়ে মারে,সাদি হালকা ভিজে যায়,তারপর বলে-কি করছিস?উঠে আয় ওই বাঁশবাধানো ঘাটে বসবো।
মিথি একটু মাথা উঁচিয়ে দেখে নিয়ে সাদির পিছে হাঁটা ধরে।সাদি আর মিথি পাশাপাশি বসে আছে পানিতে পা ভিজিয়ে। দুজনেই চুপ করে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত।সন্ধ্যা নামার পূর্বের লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে।নদীর সৌন্দর্য যেন এতে করে কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে। সাদি বেশ হালকা আওয়াজে মিথি কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে –কি ভাবছিস?
মিথি নদীর দিকে চোখ রেখেই বলে–ভাবছি যে আমার মতো মানুষের সাথে লাস্ট কয়েকদিন যা হচ্ছে তা ভালো হচ্ছে।
সাদি চোখ -কপাল কুঁচকে বলে–তোর মতো মানুষ মানে??
মিথি বেশ শিথিল কন্ঠে বলে -এইযে অপয়া বিধবা মানুষ!!
সাদি মুহুর্তেই রেগে যায় চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করে নিয়ে চোখ মেলে দেখে মিথির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সাদি নিজের ডান হাত দিয়ে মিথির কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।মিথি অবাক হয়ে তাকাতেই সাদি নিজের হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে ২ হাতে মিথির মুখ আগলে নেয় আর মিথির কপালে,২ চোখে ভালোবাসার পরশ দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে–আর কোনোদিন যদি নিজেকে বিধবা,অপয়া বলেছিস তো তোর খবর আছে।।
মিথি যেন তার ঠান্ডা হুমকি তে অবাকের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেল।।
এরইমধ্যে দূর হতে মাগরিবের আজানের আওয়াজ শোনা যায়। সাদি মিথির মুখ ছেড়ে মিথির শাড়ির আঁচল ওর মাথায় টেনে দিয়ে বলে চল।
মিথি জিজ্ঞেস করে–এখন কোথায় যাবো?
সাদি–আমার খিদে পেয়েছে,কোনো এতটা রেস্টুরেন্টে এ যাবো খেতে,,চল।
মিথি বিরবির করে বলে–বাড়ি গিয়ে খেলেই হয়।
সাদি পিছন না ঘুরেই উত্তর দেয়-না হয় না,,আমি বাইরের খাবারই খাবো,সাথে তুই ও খাবি,,চল।।
মিথি চোখ ২ টো রসগোল্লা করে ভাবতে লাগল–বুঝল কেমনে এতো আস্তে বললাম।
এসবের মধ্যে মিথি, সাদি গাড়িতে উঠে প্রস্হান করে।
অন্যদিকে কাঁচের মধ্যে তাদের দেখে ইশান বাকা হেসে হাতে থাকা সিগারেটটা বার কয়েক টান দিয়ে বলে–বাহ!!প্রেম করতে এতোদূর এসেছিস সাদি।।বাট ব্যাড লাক,,আমিও পৌঁছে গেলাম।।
বলেই আবারো সিগারেট টানতে লাগল আর ড্রাইভারকে বললো-বাড়িতে চলো,,,আজকের মতো সাদি একটু এনজয় করে নিক কাল ওর জন্য ধামাকা ওয়েট করছে।।

বিঃদ্রঃ আশা করি ইশানের জট টা একটু ক্লিয়ার হয়েছে।মিথির জট টাও ক্লিয়ার হবে আর ২/৩ পর্বের মধ্যে।। কমেন্টে জানাবেন কেমন লাগছে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here