অভিমানে_তুমি #ফারিয়া_আফরিন_ঐশী #পর্বঃ৫

0
446

#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৫

সাদি আর মিথি শহরের বেশ বড় একখানা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।সাদি আয়েশ করে বসে ফোন দেখছে আর তার ফাকে আড় চোখে বারবার সামনে বসে থাকা মিথিকে দেখছে।আর মিথি সে তো চারপাশ দেখতে ব্যস্ত।মিথি কখনো এতবড় রেস্টুরেন্ট দেখেনি।তাই চোখ ঘুরিয়ে সব দেখে নিচ্ছে।।সাদি মেনু কার্ডটা মিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে–দেখ,কি খাবি তুই?
মিথি–আমি কি দেখব!!আপনি খেতে এসেছেন আপনি খান।।
সাদি–একা খাওয়ার হলে তোকে নিয়ে এসেছি কেনো!!স্টুপিড!!!
মিথি মুখটা ভেংচি দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে–আমি মোটেই স্টুপিড নই সাদি ভাই।জানেন,,আমার স্কুলে সবাই বলত আমি অনেক বুদ্ধিমতি।
সাদি একটু হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করে বলে–ও বাবা!!তাই আমিতো ভাবতাম তুই একটা গাধী।
মিথি চোখ বড়বড় করে বলে–মোটেই না, সাদি ভাই।
সাদি দাঁত কটমট করে বলে-চুপ,এমন ভাই ভাই করছিস যেন আমি তোর মায়ের পেটের আপন ভাই।আর একবার ভাই বললে থাপড়ে তোর দাঁত ফেলে দিবো।
মিথি –মায়ের পেটের ভাই না হন ফুপির ছেলে তো।আর আপনি বড় ভাই বলব নাতো কি বলবো মামা!!!
সাদি কপাল কুঁচকে কোনো উত্তর না দিয়ে মেনু কার্ডটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওয়েটার ডেকে অর্ডার করে দেয়।
খাবার আসার পর মিথি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থেকে বলে–সাদি ভাই!!!এসব আবার কেমন ধরনের খাবার??
সাদি–এগুলো ম্যাক্সিকান খাবার।টেস্ট করে দেখ ভালো লাগবে।।
সাদি ভাই দেখিয়ে দিলেন যে কিভাবে খেতে হয়।
খাওয়া শেষ করে মুখ ভার করে সাদি ভাইয়ের দিকে তাকালাম,সাদি ভাই বিল পে করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন–কি রে ওমন বুচির মতো করে দেখছিস কেনো আমায়?
মিথি–আচ্ছা সাদি ভাই খাবার গুলো এই রেস্টুরেন্টের লোকেরা রান্না করতে ভুলে গিয়েছিল।
সাদি –এই খাবার গুলো এমনই হয়।
মিথি মুখটা একটু বেকিয়ে বলে-টাকা দিয়ে এই ঘাস পাতা খেতে আসলাম,,হায়রে!!
সাদি –হুমম,আমার ঐ ঘাস পাতাই ভালো লাগে,আর আমার সাথে থাকলে তোর ও এই ঘাস পাতা খেতে হবে।এখন চল।।
বলেই সাদি স্টিক নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরল।মিথিও পেছনে বকবক করতে করতে হাঁটা ধরল।সাদি আর মিথি গাড়িতে উঠল।তারপর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিল।মিথি একমনে জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছে আর সাদি মিথিকে।হঠ্যাৎ মিথি বাইরের দিকে তাকিয়েই বলে –মেঘ করেছে,মনে হয় বৃষ্টি হবে তাইনা সাদি ভাই।।।
সাদি আনমনে মিথিকে দেখতে দেখতে বলে–হুমম,হয়তো।
তারপর আর তাদের মধ্যে কোনো কথা হয় না।প্রায় ৫/৬ মিনিট পর ঝুম বৃষ্টি নামে।মিথি হঠ্যাৎ সাদির দিকে ফিরে সাদির হাত ধরে ঝাকিয়ে বলে–সাদি ভাই বৃষ্টি হচ্ছে।।
তারপর ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে-কাকু গাড়ি থামাও।
ড্রাইভার সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে-কি কইরব বাবা?
সাদি-চাচা একদম গাড়ি থামাবেন না,অলরেডি ৭.৩৫ বেজে গিয়েছে। বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
মিথি এবার একটু আবদার নিয়ে সাদির শার্টের ফোল্ড করা হাতা টেনে ধরে আহ্লাদী ভঙ্গিতে বলে–প্লিজ সাদি ভাই,একটু ভিজি,দেখো রাস্তায় তেমন কেউ নাই।৫ মিনিট ভিজবো মাত্র প্লিজ।।।।
সাদি মিথির মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে না পেরে বলল–চাচা,গাড়ি থামান।
ড্রাইভার গাড়ি থামানোর সাথেই মিথি লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।তারপর ২ হাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভিজতে থাকে আর সাদি গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে ভিজতে থাকা মিথিকে দেখতে থাকে।ড্রাইভার তার মধ্যে ২ বার সাদিকে ডাকে কিন্তুু সাদি মিথিকে দেখতে এতোই ব্যস্ত যে সে শুনতেই পায় নি।তারপর ড্রাইভার সাদির কাঁধে হাত রাখতেই সাদি বাস্তবে ফিরে বলে-জি চাচা,কিছু বলবেন?
ড্রাইভার –হুমম বাবা,বলছিলাম যে চা খাবে তুমি?
সাদি–হুমম তা তো খাবো কিন্তুু এই বৃষ্টিতে চা কোথায় পাবেন চাচা?
ড্রাইভার –তুমি ওসব চিন্তা করো না বাবা,আমি চা নিয়ে আসছি, তুমি বসো।।
সাদি–আচ্ছা চাচা,ছাতা নিয়ে যাবেন।
ড্রাইভার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে মিথি কে বলে–মিথি মা আর ভিজো না,ঠান্ডা লাগবে।
মিথি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে–জি আচ্ছা কাকু আর মাত্র ২ মিনিট ভিজবো।
ড্রাইভার মুচকি হেসে পাগলী বলে বেরিয়ে যায়।
সাদি আবারো বাইরে তাকিয়ে মিথিকে ডাক দেয়।
সাদি–মিথি উঠে আয় গাড়িতে আর ভিজতে হবে না।
মিথি সাদির ডাক শুনে গাড়িতে উঠে আসে।।
মিথি-ধুর!!বাড়িতে থাকলে বেশ ভালো হতো।
সাদি কপাল কুঁচকে বলে-কেন??
মিথি –তাহলে ছাদে বসে ভেজা যেত।আর আপনাদের ছাদটা খুব সুন্দর।
সাদি একদৃষ্টিতে মিথির দিকে তাকিয়ে আছে,,বৃষ্টিতে ভেজার কারণে মিথির শাড়িটা ওর গায়ের সাথে লেপ্টে আছে আর আঁচলটা উঠিয়ে রাখার কারণে মিথির ফর্সা পেট টা বেশ ভালোভাবেই সাদির চোখে পড়েছে।সাদি যেন মিথির এক অপরূপে মুগ্ধ হচ্ছে। আর মিথি সে তো বকবক করেই যাচ্ছে। সাদি হঠ্যাৎ করেই একহাতে মিথির কোমড় চেপে মিথিকে তার অনেক কাছে নিয়ে আসে।মিথি আচমকা এমন হওয়াতে সাদির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে–কি করছ সাদি—
বলে শেষ করার আগেই সাদি আঁকড়ে ধরল তার ঠোঁট।
মিথি চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে আছে,তারপর বুঝতে পেরে শুরু হলো ধাক্কা কিন্তুু মিথির রোগাটে হাতের ধাক্কা সাদিকে সরাতে ব্যর্থ।ক্লান্ত হয়ে চুপচাপ হয়ে রইল।বেশ কিছুক্ষণ পর সাদি নিজেই মিথিকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে এলো।
মিথি ছলছল চোখে সাদিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদি বলে-প্লিজ,কোনো কথা বলিস না।আর এমন কাজের ব্যাখা ও চাস না।সময় হলে নিজেই জানতে পারবি।তারপর মিথি চুপ করে আবারো বাইরে তাকিয়ে রইল।ড্রাইভার চাচা চা নিয়ে আসলে সাদি চা টা মিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,–নে চা খা,অনেক ভিজেছিস, চা খেলে একটু ভালো লাগবে।
মিথির কোনো হেলদোল না দেখে এবার ধমক দিয়ে বলল–কি হলো??নে চা টা।।
মিথি মাথা নিচু করে ঘুরে চা টা নিয়ে আবার ঘুরে গেল।সাদি ব্যাপারটা বুঝেও কিছু বলল না।তার ড্রাইভারকে বলল–চলেন চাচা,বাড়ির দিকে ফেরা যাক।।
কিছুক্ষণ পর তারা বাড়ি পৌঁছে গেল।মিথি গাড়ি হতে নেমে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
সাদি ড্রাইভারের সাহায্যে নেমে বাড়ির ভেতরে গেল।
ড্রইংরুমে তার মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে।
তখন ফুপি ভ্রু নাচিয়ে বলে–কি ব্যাপার!!!আমার ছেলে যে আজ অনেক খুশি।।
সাদি একটু হেসে জড়িয়ে রেখেই বলে–হুমমম।।অনেক খুশি।।আর থ্যাংক ইউ মা এন্ড লাভ ইউ।
ফুপি ও বেশ হেসে বলল–লাভ ইউ টু।।
এবার যা যা ফ্রেস হয়ে নে তারপর খাবি তো।।
সাদি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে উপরে চলে যায়।
মিথি ফ্রেস হয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ঘরটা পুরো অন্ধকার, বাইরের সোডিয়ামের আলোতে কিছুটা চিকন আলোতে ঘরটা বেশ সুন্দর লাগছে।সাদি খাওয়ার জন্য মিথিকে ডাকতে এসে দেখে মিথি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।
তা দেখেই সাদির মেজাজটা বিগড়ে গেল।সাদি দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ঘরে এসে মিথিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একহাতে মিথিকে জড়িয়ে ধরে বলে–এতো কান্নার কি হলো শুনি??
মিথি—আপনি তখন—
সাদি কথা শেষ করার আগে নিজেই বলে—কি করেছি আমি??ভ্রু নাচিয়ে।।
মিথি–জানেন না কি করেছেন??বেশ রাগ নিয়ে।।
সাদি একটু আয়েশি ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলে–না তো,,তুই বল।।
মিথি ঠোঁট ফুলিয়ে বলে-পঁচা,বাজে লোক একটা,ছাড়ুন আমায়।বলে সাদিকে ছাড়িয়ে ঘর থেকে চলে যায়।
আর সাদি গান গাইতে গাইতে থাকে–“আমার সকল অভিযোগে তুমি,তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি”!!!
তারপর নিজেও নিচে চলে যায়।
পরেরদিন দুপুর ২ টা,,,

সাদি পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর কাঁদছে।আর আশেপাশের দোকান গুলোতে ফোন হতে একটা ছবি বের করে দেখাচ্ছে যে ছবির মানুষটাকে দেখেছে কিনা!!!!!ক্লান্ত হয়ে সাদি রাস্তার চায়ের দোকানের একটা বেঞ্চে বসে পরে।তারপর আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়,সাথে সাথেই গড়িয়ে পড়ে চোখের জল।।তারপর ফোনের শব্দের চোখ খুলে পকেট হতে ফোন বের করে কানে ফোন নেয়।।
ফোনের অপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনে বলে—আমি এখুনি আসছি।।
তারপর উঠে ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে নিজের লোকেশন বলে।।ড্রাইভার আসলেই গাড়িতে উঠে বলে—এ্যাপোলো হসপিটাল চলেন,ফাস্ট।
আর সাদি গাড়িতে বসে টেনশনে হাঁসফাঁস করতে থাকে।।।
#চলবে
১২০০ শব্দের পর্ব😊😊

বিঃদ্রঃ কয়েকজনের অভিযোগ ছিল যে রহস্য রাখতে গিয়ে গল্পটা রোমান্টিক হচ্ছে না।তাই একটু রোমান্টিক পর্ব লিখলাম😊😊😊
কমেন্টে জানাবেন কেমন লাগছে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here