#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩
‘আব্বু আমি কিছু কথা বলতে চাই’
দুপুরে খেতে বসেছে খান পরিবার। ইফাজ,মুনসাসিব আর শেহজাদ। মেহবুবা খান খাবার বেড়ে দিচ্ছে।শেহজাদের কথা শুনে খাওয়া ছেড়ে সবাই তাকায় তার দিকে।শেহজাদ খেতে খেতে বলে,
‘আমি তাকে বিয়ে করতে চলেছি আব্বু খুব তাড়াতাড়ি’
সবাই চমকায়।শেহজাদ বিয়ে করবে!ইফাজ হতভম্ব হয়ে বসে আছে।কি বলছে! যে লোকটা সব সময় ইগনোর করে সব কিছু ঠিক হওয়ার অপেক্ষা করে সে বিয়ে করবে তাড়াতাড়ি। এটা থমকানোর বিষয়। ইফাজ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। মুনতাসিব খান বলেন,
‘তার তো আসতেই হতো। এখন তোমার যখন ইচ্ছে তখনই আনবে।নিয়ে আসো তাকে।’
‘আব্বু তুই সত্যি বলছিস?’
‘হ্যাঁ ফুপি’
মেহবুবা তো বেশ খুশি।ওয়ামিয়া মেহেনাজ তবে খান বাড়িতে বউ হয়ে আসছে।কতো গুলো দিন দেখে না মেয়েটাকে।বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্যই দেখেনি।ইফাজের ফোনে অবশ্য ছবি দেখেছে। তা দেখেই বুঝেছে ওয়ামিয়া মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দরী।মুনতাসিব খান মনে মনে ভীষণ খুশি হন।মেয়েটা তাহলে আসছে তার বাড়িতে।কত বছর পর বাড়িতে প্রাণ ফিরে আসবে।এক সময় দুই বাড়িতে কতই না আনন্দ ছিলো।শেহজাদ খাওয়া শেষ করে উঠে যায়।ইফাজ তখন ও বিশ্বাস করতে পারছে না।শেহজাদ যাওয়ার আগে ইফাজের দিকে তাকি শাসিয়ে বললো,
‘তুমি এগুলো অজিফা বা ওয়ামিয়াকে বলবে না’
কথাটা শোনা মাত্রই বিষম খেলো ইফাজ।মেহবুবা খান দ্রুত পানি এগিয়ে দিলো।ততক্ষণে শেহজাদ স্থান ত্যাগ করেছে।ইফাজ পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো।শেহজাদ কিভাবে জানলো। ইফাজ ভুলে গিয়েছিলো এটা শেহজাদ ইমতিয়াজ খান। খাওয়া শেষে উঠে গেলো।মেহবুবা অজিফা নামটা শুনে মনে করতে লাগলেন মেয়েটা কে! অবশেষে মনে পরলো মেয়েটা ওয়ামিয়ার বান্ধবী ছোট বেলায় দেখেছিলো।বেশ ভালো। চঞ্চল দুষ্ট একটা মেয়ে।
*******
‘কি রে আজ তোর মন খারাপ কেনো শেহতাজ’
মুনতাসিব ভাইয়ের কথায় আমি মন খারাপ করে বললাম,
‘অনেক দিন হলো ঘুরতে যাই না’
‘তো এই খানে মন খারাপ করার কি আছে।মন খারাপ না করে পরতে বোস দ্রুত।আমার কাজ আছে।’
আমিও মন খারাপ করে পড়তে বসলাম।আজ মুনতাসিব ভাই বেশি সময় পড়ালো না। এইচএসসি পরীক্ষার আর কয়েকটা দিন বাকি আছে।মুনতাসিব ভাই ৪৫ মিনিটের মতো পড়িয়ে চলে গেলেন।আমার বিষয়টা ভালো লাগলো না।যে লোকটা এতো সময় ধরে পড়ায় সে আজ এতো কম সময় কেনো পড়ালো!আমিও বের হলাম বাড়ি থেকে আজকে একটু খান বাড়িতে যাবো।রেশমি আন্টির সাথে গল্প করতে।যেই ভাবা সেই কাজ।বের হলাম খান বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়ির ভেতরে ঢোকার সময় ভেতর থেকে হাসাহাসি করার শব্দ শুনলাম।ভেতরে ঢুকতেই একটা ঝটকা খেলাম।মুনতাসিব ভাই একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
মেহবুবা পাশে বসা। মেয়েটা কথা বলছে আর হাসতে হাসতে মুনতাসিব গায়ে ঢলে পড়ছে।আমার লাগছে ভীষণ। তাহলে এই বজ্জাত লোক এর জন্যই আমায় আজ বেশি সময় পড়ায়নি। এটা তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চোখ ছলছল করে ওঠে আমার। তবে কি বলবো আমি অধিকার নেই যে কিছু বলার। অধিকার থাকলে কখন ওই শাক চুন্নি মেয়েটাকে সরিয়ে দিতাম আমার মুনতাসিব ভাইয়ের কাছ থেকে। বাড়ি থেকে বেরোতে যাব তখনই মেহবুবা ডেকে উঠলো।
‘শেহতাজ আপু যে কখন আসলে। আসো ভেতরে আসো’
মেহবুবার কথায় না চাইতেও ভেতরে এসে সোফায় বসালাম।এক বারের জন্য তাকায়নি তার দিকে।মেহবুবা হেসে বলল,,
‘আপু কেমন আছো’
আমি জোরপূর্বক হেসে বললাম,,
‘ভালো আছি মেহবুবা তুমি?’
‘আমিও ভালো আছি। এই দেখো আমাদের ফুপাতো বোন সুপ্তি।’
‘ওহ কেমন আছেন আপু?’
‘ভালোই আছি’
মেয়েটাকে দেখে বেশি সুবিধার মনে হলো না।কথা বার্তা ঠিক নেই।কেমন কেমন! আমার দিকে ও কিভাবে তাকাচ্ছে। আচ্ছা সে কি পছন্দ করে মুনতাসিব ভাইকে। আমি বেশিক্ষণ থাকি নি।কারণ তাকে অন্য কারো সাথে সহ্য হচ্ছিল না আমার। সহ্য হবেই বা কি করে। নারী তার শখের পুরুষের আশেপাশে কাউকেই সহ্য করতে পারে না।বলতেও পারছি না আবার সইতেও পারছি না। আমার অবস্থা ও তাই! যা তা অবস্থা।
–
–
আজকে শেষ দিন মুনতাসিব ভাইয়ের আমাকে পড়ানোর।আমি এই কয়েকদিন কথা বলেনি তার সাথে ঠিক মতো না তাকিয়েছি। সে হয়তো পছন্দ করে না আমায়। সুপ্তি নামের মেয়েটার সাথে বেশ ভাব তার। যত দিন ছিলো আমাকে কম পরিয়েছে। মেয়েটার সাথে ছাদে বসে গল্প করেছে। আমার জ্বলছিলো। বুকের ভেতর পুরছিলো। মালা বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু কি বলবে! মুনতাসিব ভাই আসলেন। আমি বই বের করে পড়া শুরু করলাম। শেষে এসে মুনতাসিব ভাই বললেন,,,,
‘শোন কাল প্রশ্ন দেখে ঘাবড়াবি না। পড়ে বুঝে সুন্দর করে লিখবি’
আমি নিচের দিকেই দৃষ্টি রেখে বললাম,,,’আচ্ছা’
উনি হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তবে আমি তাকায়নি। কেনো তাকাবো! মনে আছে মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে।আরো কত কি! আমার সাথে কথা বলতে আসলেই শুধু হাসতে পারে না। অন্য সবার সাথে হাসতে হাসতে কথা বলে। পঁচা লোক কোথাকার। মুনতাসিব ভাই হঠাৎ বলে উঠেন,
‘শেহতাজ তুই আর আগের মতো দুষ্টমি করিস না কেনো?’
আমি চমকে উঠলাম।আসলে গভীর ভাবনায় ছিলাম। তাই হঠাৎ কথা বলায় কেঁপে উঠেছি সাথে ভয় ও পেয়েছি। আসলেই সেদিন পর থেকে আমি তাকে জ্বালাই না। পড়বো না পড়বো না বলে বাহানা ও দেই না। চুপচাপ হয়ে গিয়েছি। আমি তাচ্ছিল্য হেসে বললাম,
‘পরিস্থিতি সবাইকে পরিবর্তন করে মুনতাসিব ভাই। আর সব সময় কি আর ছোট থাকবো বড় তো হতেই হবে। চুপচাপ হয়েছি,শান্ত হয়েছি, নিজেকে পরিবর্তন করেছি’
মুনতাসিব ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।কেনো জানি না। তবে তার গভীর চোখ কিছু বলতে চাইছিলো। আমি বুঝিনি। কি বলতে চাইছিলো উনি। উঠে চলে গেলেন।আমি ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়া পানে। এরপর বই খাতা গুছিয়ে চলে আসলাম ছাদে। মালা ও আসবে একটু পর। নীলার সাথে অতো গভীর সম্পর্ক না আমার। আগে অনেক মিশলেও এখন মিশি না। সে মুনতাসিব ভাইকে পছন্দ করে এটা জানার পরেও যে আমি ভালোবাসি তাকে। এর জন্যই মূলত তার সাথে কথা বলি না।
********
ডাইরি বন্ধ করলো ওয়ামিয়া।একবারে সব সম্ভব না।তবে কিছু একটা আছে অতীতে যা তার ফুপি আম্মুর মৃত্যু সাথে জড়িয়ে আছে। তবে কি নীলা! কে জানে।রামিশা ডেকে গেলো তাকে।মাথায় ওড়না দিয়ে বের হলো রুম থেকে।বাড়ি থেকে বেরোই না একদিন হলো।বসার ঘরে সবাই বসে আছে।ওয়ামিয়া যেতেই হুমায়ন শেখ মুখটা আগের তুলনায় আরো গম্ভীর করে ফেলেন।ওয়ামিয়া স্বাভাবিক। না তার মুখে হাসি আছে আর না দুঃখ। তাকে দেখে বুঝতে পারবে না কেউ কিছু।ওয়ামিয়া হুমায়ন শেখের বিপরীত সোফাতে বসে।
‘কাল তোমাকে দেখতে আসবে আমার বন্ধুর ছেলে।আশা করি কোনো ঝামেলা করবে না’
ওয়ামিয়া রাগলো।সবাইকে বলেছে সে ভালোবাসে সে শেহজাদকে।তবে অন্য ছেলের সামনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।সে দাঁড়িয়ে যায়।একটু উচ্চস্বরে বলে উঠে,
‘আমি আগেই জানিয়েছি আমি ভালোবাসি শেহজাদ ভাইকে। অন্য পুরুষের সামনে কখনোই যাবো না। শেহজাদ ভাই বাদে অন্য কারো জন্য সাজবে না ওয়ামিয়া মেহেনাজ।’
‘গলা নামা মেহেনাজ তুই ভুলে যাচ্ছিস কার সাথে কথা বলছিস তুই।’
‘আমি ভুলিনি আমি কার সাথে কথা বলছি আমি কথা বলছি হুমায়ন শেখের সাথে।যাকে আমি চিনি না। আমার আব্বু এমন না। হুমায়ন শেখ এমন।’
মাহিম রাগে ফুঁসছে।হুমায়ন শেখ উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেন,
‘কাল তারা আসবে তুমি যাই করো না কেনো তাদের সামনে তোমাকে যেতে হবে’
‘আমি ওয়ামিয়া মেহেনাজ কখনোই অন্য পুরুষের সামনে যাবো না। আমি ভালোবাসি একজনকেই এবং তার সামনেই যাবো।’
‘তুমি কালকে তাদের সামনে বসছো এটাই আমার শেষ কথা’
হুমায়ন শেখ স্থান ত্যাগ করলেন।ওয়ামিয়া রাগে থরথর করে কাঁপছে। এটা তার আব্বু কখনোই না। কখনোই সে এতো নিষ্ঠুর হতে পারে না। সে চিনছে না এই হুমায়ন শেখ আর মাহিম শেখকে।কারা এরা।ওয়ামিয়া চিল্লিয়ে বলে,
‘আমি যাবো না। কাল আসবে আমার শেহজাদ ভাই আমাকে নিতে।অন্য পুরুষের নিকট কখনোই ছাড়বে না সে আমায়’
ওয়ামিয়া দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকালো।মায়া বেগম কেঁদে দিলেন।মেয়েটা যে শেহজাদকে বড্ড ভালোবাসে তা তার চোখ দেখেই বুঝেছেন। এটা যে হওয়ার ছিলো। শেহতাজের ও তো এটাই ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু কেনো হুমায়ন এমন করে।যা হবার তা তো কেউ আটকাতে পারবে না। কাল যে ঝড় আসছে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সে।রামিশা এগিয়ে আসে শাশুড়ীকে সামলাতে।সে নিজেও কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।কি হবে কাল?কোন ঝড় আসবে?
#চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। দুঃখিত কালকে দিতে চাইলেও দিতে পারিনি।