অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_১৪

0
102

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

তার সাথে আমার দেখা হয় না আজ কতগুলো দিন।পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুই তিন দিন হবে হয়তো।বাড়ি থেকেও বেরোই না।ভালো লাগে না। মালা আসে মাঝে মাঝে। গল্প করি। আমাদের সময়টাতে গ্রামের মেয়েদের অনেক তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তবে আমার ভাইজান আর আব্বু আমাকে পড়াতে চায়। আমি নিজেও পরতে চাই। যদিও বেশি ভালো ছাত্রী না। তবুও তারা আমায় কখনো বিয়ের জন্য চাপ দেয়নি।

আজ বেরবো বাড়ি থেকে।অনেক দিন হলো খোলা হাওয়ায় নিশ্বাস নেই না। চার দেওয়ালের মাঝে বন্ধি হয়ে আছি।মালাকে সাথে করে নদীর পারে আসলাম। কাশফুল ফুটেছে।কাশফুলের মেলা বসেছে। শুনেছি রাজনীতিতে ঢুকেছে মুনতাসিব ভাই। জীবনে সব থেকে বেশি ঘৃণা আমি এই জিনিসটাকে করি। রাজনীতির জন্য অনেকে তার পরিবার হারিয়েছে। এর ভয় পাই আমি! কেনো সে রাজনীতিতে জড়ালো। সে কি পারতো না এগুলো না জড়িয়ে।

পেছন থেকে কেউ একজন চোখ বন্ধ করে ধরে।আমি চমকে উঠি।কে হতে পারে।মালা কোথায়! ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলাম মালা কোথায় গেলো ঠিক পেলাম না।

‘কে! কে ছাড়ুন’

ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম তবে কাজ হলো না। কিছুক্ষণ পর কেউ চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলল।সামনে তাকাতেই হতভম্ব হলাম। আমার সামনে মুনতাসিব ভাইকে দেখলাম। ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। লোকটা হাসছে। পরনে কালো রঙা শার্ট। দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ফর্সা শরীরে মানিয়েছে বেশ শার্টটা। মুনতাসিব ভাই আমার কিছুটা কাছে এসে বলল,

‘তুই কি আমার হবি শেহতাজ’

আমি হতভম্ব হলাম।কি বলছে এই লোক! ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম তার পানে। সে হাসলো আমার অবস্থা দেখে। অনেক গুলো কাশফুল এগিয়ে দিলো আমার দিকে। আমি তখনও হা করে তাকিয়ে আছি। আমি কি স্বপ্ন দেখছি! নাকি সবই সত্যি।

‘কিরে উত্তর দিলি না’

‘তুমি কি বলছো মুনতাসিব ভাই’

‘আমার হবি তুই! সারাজীবন আগলে রাখবো তোকে ওয়াদা করছি। আমার হয়ে যা।দুনিয়ার সব সুখ এনে দিবো তোর কাছে’

‘তুমি সত্যি বলছো তো?কিছুক্ষণ পর বলবে না তো শেহতাজ এগুলো মজা ছিলো’

‘নারে পাগলি এমন কিছুই বলবো না। হবি আমার?’

‘আমি ভালোবাসি মুনতাসিব ভাই তোমাকে।ভীষণ ভালোবাসি’

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললাম তাকে।সে হেসে আঙুল ছুঁইয়ে গাল থেকে পানি মুছে দিলো।সে এখনো বেশ খানিকটা দূরে দাড়ানো।সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

‘আমিও ভালোবাসি তোকে।বিয়ে করবি আমায়’

‘হ্যাঁ’

দুজন ঘুরলাম অনেক। নৌকা করে অনেক দূরে ঘুরিয়ে আনলো সে আমায়। আজকের দিনটা এতো ভালো কাটবে ভাবতে পারিনি।আমার ভালোবাসার মানুষও আমায় ভালোবাসে।এর থেকে সুখের কি আছে। ভালোবাসি আমি তাকে। সেও বাসে। কি শান্তি।আজ আমার থেকে সুখী হয়তো এই দুনিয়ায় কেউ নেই।

*****

ডাইরিটা পরলো। এরপর অনেক খুনসুটি মুহুর্ত আছে তাদের প্রেমের সেগুলো পড়লাম। তবে শেষ করতে পারিনি। কীভাবে তাদের বিয়ে হলো তাও পরতে পারলাম না।দরজা ধাক্কাচ্ছে বাইরে থেকে।আচ্ছা আদেও কি দাদাজান তাদের মেনে নিয়েছিলো। মেনে তো নেওয়ারই কথা কারণ আমি তো ছোট থেকেই একসাথে দেখে আসছি সবাইকে। ফুপিআম্মুর কাছে মানুষ আমি। ভীষণ ভালোবাসি তাকে। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে আমাদের সাথে নেই।

কালকে কি শেহজাদ আদেও আসবে।সে তো অন্য কোনো পুরুষের সাথে কথা বলতেও চায় না। আবার সামনে যাবে। অসম্ভব!কখনোই না।যদি শেহজাদ ভাই না আসে তাহলে সে আবারও ভয়ংকর কিছু করবে তবে অন্য কোনো পুরুষের নিকট যাবে না।

‘ভালোবাসি শেহজাদ ভাই। ভীষণ ভালোবাসি’

******

‘ভাই জানেন তো কাল দেখতে আসছে ওয়ামিয়াকে’

‘হ্যাঁ জানি আমি ইফাজ’

‘আপনি কি ওকে অন্য পুরুষের সামনে যেতে দিবেন’

‘কখনোই না ওয়ামিয়া মেহনাজ এই শেহজাদ ইমতিয়াজ খানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাকে অন্য কেউ দেখতে আসবে আর আমি চুপ করে বসে থাকবো।কখনোই না। অন্য পুরুষের সান্নিধ্যে কখনোই সে যাবে না আমি শেহজাদ জীবিত থাকা কালীন’

‘এতো ভালোবাসেন ভাই তাকে’

‘তোমার কল্পনার ও বাইরে ইফাজ আমি তাকে কতো ভালোবাসি। সে আমার নেশা! যা ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। পাঁচ বছর অনেকটা সময় অনেক কষ্টে থেকেছি। তবে আর না।তাকে পৰতি নিয়ত প্রত্যাখান করে কষ্ট দিয়েছি। নিজেও পেয়েছি। কাল আমি তাকে নিয়ে আসবো আমার কাছে। সম্পূর্ণ রূপে। সে নিজের অধিকার নিয়েই এ বাড়িতে প্রবেশ করবে’

‘ভাই আমি চাই আপনারা দুজন ভালো থাকুন সব সময়। এমন ভালোবাসা এ যুগে দেখা যায় না। এখন তো মানুষ জামাকাপড়ের মতো প্রেমিকা বদলায়’

‘ইফাজ তুমি যেদিন কাউকে ভালোবাসবে তখন গভীর ভাবে অনুভব করতে পারবে সব কিছু।’

‘হ্যাঁ ভাই দোয়া করো আমার কপালেও যেনো ওয়ামিয়া মতো কেউ জোটে যে আমায় অনেক বেশি ভালোবাসবে।’

‘ইফাজ তুমি হাজার খুঁজে ও আরেকটা ওয়ামিয়া মেহেনাজ পাবো না। সে এক পিসই এবং শুধু আমার’

‘জানি ভাই। তবে দোয়া করো যেনো কেউ আমায় খাঁটি ভাবে ভালোবাসে। কোনো রূপ মিথ্যা না থাকে’

‘ইফাজ তোমাকে কিন্তু অজিফা মেয়েটা ভালোবাসে। ভেবে দেখতে পারো’

‘ভাই ওই বাঁদর মেয়ে। বাদ দাও। জীবনেও না।’

শেহজাদ মৃদু হেসে বলল,,,,’দেখা গেলো সেই তোমার ভাগ্যে লেখা থাকলো’

‘না না ভাই এ কথা আর বলবে না। ওই মেয়ে জীবমেও না।আমি গেলাম’

ইফাজ বের হতেই শব্দ করে হেঁসে উঠলো শেহজাদ। ইফাজের জন্য অজিফাই একেবারে পারর্ফেক্ট মেয়ে। দুজনকে বেশ ভালোই মানাবে। শেহজাদ এসব ভাবা বাদ দিলো। কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুব দিলো।

********

হুমায়ন শেখ বসে আছেন শেহতাজ আর তার ছবি নিয়ে। ছবিটা অনেক পুরানো। যখন শেহতাজের বিয়ে হয়নি তখনকার।আচ্ছা খুব কি ক্ষতি হতো আজ তার বোনটা তাদের মাঝে থাকলে।ভীষণ মিস করে বোনটাকে। দুষ্ট পাগলি বোনটা যে তাদের মাঝে আজ পাঁচ বছর ধরে নেই তা মনে আনলেই বুকটা কেঁপে উঠে।খুব লি ক্ষতি হতো! আল্লাহ তায়ালা চাননি তাই হয়তো নেই। তবে মনকে যে বুঝ দিতে পারেন না।

‘কেনো এমনটা হলো শেহতাজ। দেখ আমি নিজ হাতে কালকে দুজনকে আলাদা করতে চাইছি। তবে আদেও কি তা সম্ভব। মেহনাজ তো বলেই দিয়েছে সে তার শেহজাদ ভাই ছাড়া অন্য কারো সামনে যাবেই না। আমি চাই না তোর মতো আমার এক মাত্র মেয়েটাকেও হারাতে। ওকে যে আমি ভীষণ ভালোবাসি। খান পরিবার অভিশপ্ত পরিবার ওখানে আমি কি করে নিজের মেয়েকে পাঠাই। মৃত্যুর মুখে কি করে ঠেলে দেই’

হুমায়ন শেখ কাঁদছেন।মায়া বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন সব কিছু। স্বামীর কান্নায় যে তার বুকেও ঝড় তুলছে। কাল শেহজাদ আসবে তা নিশ্চিত। তবে এসে কি করে তাই দেখার পালা। সে হুমায়ন শেখকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিলেন।মেয়েটা রাতেও খায়নি।কি করবেন তিনি। মেয়েকে হাজার বোঝালেও যে খেতে আসবে না। তার রাগ,জেদ সম্পর্কে অবগত তারা। ওয়ামিয়া শান্ত তবে রেগে গেলে তাকে সামলানো দায়। আরো নিজের ভালোবাসা নিয়ে কথা মেয়ে কখনোই আপোষ করবে না।

বেশ কিছু সময় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রুমে প্রবেশ করেন।হুমায়ন শেখ কারো আসার শব্দ পেয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।মায়া বেগম এসে পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘আপনি কাঁদবেন না মাস্টারমশাই। সব ঠিক হয়ে যাবে’

হুমায়ন শেখ জড়িয়ে ধরেন মায়া বেগমকে।মায়া বেগম ও শান্তনা দিতে থাকেন। লোকটাকে ভালোবাসেন তিনি অনেক।সেই লোকটা তার সামনে কাঁদছে। সহ্য হচ্ছে না তার। গম্ভীর মুখেই মানায় তার মাস্টারমশাইকে।

‘কিছু ঠিক হবে না মায়া।সব এলোমেলো হয়েছে পাঁচ বছর আগেই’

******

সকাল সকাল শেখ বাড়ির পরিবেশ বেশ রমা রমা। বাড়ির মেয়েকে দেখতে আসবে। মাহিম আর হুমায়ন শেখ তো বাজার করে এনেছেন ব্যাগ ভর্তি করে। রামিশা শাশুড়ী মার সাথে কাজে সাহায্য করছে।মায়া বেগম আর রামিশা মিলে রান্না বান্না করছে। তবে ওয়ামিয়া এখনো রুমের দরজা খোলেনি। দরজা আঁটকে বসে আছে।ওয়ামিয়ার অবস্থা বেহাল। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ভয় হচ্ছে। চিন্তায় মাথা ধরে আসছে। আদেও আসবে তো তার শেহজাদ ভাই!

#চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here