অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_১০

0
359

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১০

বাসায় আসার পর আমি আর নিজের রুম থেকে বের হয়নি।আয়াজের সামনে পড়ার ইচ্ছা নেই আমার।এখন আমি আমার রুমের ছোট্ট বারান্দাটায় বসে আছি।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আকাশটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। ফোনটা বের করে কয়েকটা পিক তুলে নিলাম।আমি দাঁড়িয়ে পাশের বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ওখানে একটা ছেলে মেয়ে বসে গল্প করছে।মনে হচ্ছে হাসবেন্ড ওয়াইফ।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম,আয়াজের সাথে আমার সম্পর্কটা যদি স্বাভাবিক থাকতো। কতো ভালো হতো।

আমি আর ওদিকে তাকালাম না।কিছুক্ষণ বারান্দায় থেকে রুমে চলে আসলাম।ফোনেও দেখতে ইচ্ছা করছে না।বই আছে কিন্তু কি পড়বো ভাবছি।তাও বই বের করে দেখতে লাগলাম।একঘন্টা ধরে বই নিয়ে বসে আছি।কোনো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা।বই রেখে রুম থেকে বের হলাম।কোথাও ওনাকে না দেখে স্বস্তি পেলাম।আমার যখন প্রচন্ড মন খারাপ হয় তখন আমি টিভিতে গান ছেড়ে উড়াধুড়া নাচি।এটা আমার বদঅভ্যাস।আমি আজকেও তাই করলাম।

টিভিতে গান ছেড়ে দিয়ে উড়াধুড়া নাচতে লাগলাম।বাড়িতে থাকলে আহিনকে নিয়ে নাচতাম।কিন্তু এখানে একাই নাচতে হবে।আমাকে সঙ্গ দেওয়ার কেউনেই।অনেক সময় নেচে।ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়লাম।হঠাৎ করে আয়াজ বললেন,,,

“যাক অবশেষে তোমার পাগলা ডান্স শেষ হয়েছে।আমি তো ভেবেছিলাম আজকে সারারাত তুমি এভাবে নাচবে!আর আমার ঘুমের বারোটা বাজাবে”

আয়াজ দেয়ালে হেলান দিয়ে কথাগুলো বললেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আমি হতভম্ব।উনি কখন আসলেন!আমার এই পাগলা নাচ দেখে ফেলেছেন।হায় আল্লাহ আমার এখন কি হবে।

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,”আপনি তো বাসায় ছিলেন না তাহলে বাসায় আসলেন কিভাবে?”

উনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সোফার কাছে আসলেন।আমার দিকে ঝুকলেন।আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।কিছু সময় পার হওয়ার পর চোখ খুললাম।দেখলাম আয়াজ আমার থেকে দূরে দাড়িয়ে আছেন।উনার হাতে রিমোট তাহলে রিমোট নিতেই আমার দিকে ঝুঁকেছিলেন।আর আমি কি ভেবেছি।

উনি টিভি বন্ধ করে বললেন,,,”তুমি যদি বাসা ঠিকমতো না চেক করো তাহলে তো এমনই হবে।”

“আমি তো সবকিছুই চেক করেছিলাম ভালো করে তাহলে”

উনি সোফায় বসতে বসতে বললেন,,”তুমি আমার রুমের ওয়াশরুমটা চেক করতে ভুলে গেছিলে”

আমি আর কোনো কথা বললাম না।ভালো লাগে না কিছু ধূর।আমি চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম।বারান্দায় গিয়ে হাওয়া খেতে লাগলাম।রাতেও খাওয়ার সময় আয়াজের সাথে তেমন কথা বলিনি।খেয়ে নিজের রুমে চলে এসেছি।
|
|
ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিলাম কলেজে যাওয়ার জন্য।আজকে গিয়ে লামিসার ফোন নাম্বার নিব।রুম থেকে বের হতেই আয়াজ ডাক দিলেন খেতে।আমি খেয়ে উঠে গেলাম।আয়াজ আমায় বললেন,,,
“তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো আমি আসছি”

উনি এই বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।আমি ফোন টিপতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর আয়াজ চলে আসলেন।উনার ড্রেস দেখে বুঝলাম উনি ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়েছিলেন।
উনি আমায় কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে বলললেন,,,”আমি তোমাকে নিতে আসব তাই পাকনামি করে নিজে যাওয়ার চিন্তা করো না।”

উনি কথাগুলো বলে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে চলে গেলেন।আমি ক্লাস রুমে চলে আসলাম।লামিসা আগে থেকেই বসে আছে।আমি লামিসার পাশে বসে বলি,,,”কখন আসলে”

“এইতো মাত্র,তোমার লেট হলো কেনো”

“আয়াজের জন্য হয়েছে”

ও উল্লাসিত কন্ঠে বলল,,”আজকে বলো তোমার আর তোমার বর এর গল্প।কিভাবে বিয়ে হয়েছে তোমাদের?”

আমি বললাম,,,”আসলে আমি তো গ্রামের মেয়ে।আর গ্রামে তো এমনিতেও মেয়েদের বেশি লেখাপড়া করতে দেয় না।তাই এসএসসির পরই আমায় আয়াজের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।”

আমায় মিথ্যা বলতে হলো।কারণ সত্যটা আমি কাউকে বলতে পারব না।লামিসা জিজ্ঞেস করল,,,”তা জিজু কি করে”

“উনি তো একটা কোম্পানির এমডি”

“নাম জানো কোম্পানির”

আমি মাথা নেড়ে না বললাম।ও আমায় আরো অনেক কিছু বলতে লাগল।যেগুলো শুনে আমার লজ্জা লাগছিল ভীষণ।শেষে না পেরে বললাম,,,”তুমি প্লিজ থামো আমি আর শুনতে চাই না”

লামিসা মুখ বাঁকিয়ে বলল,,,”কেনো তোমার বর তোমার সাথে এগুলো কিছু করেনি”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,”না আমি আর উনি এখনো আলাদা রুমে থাকি”

লামিসা অবাক হয়ে বলল,,,”কি তুমি আর ভাইয়া এখনো আলাদা থাকো”

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।ও মাথায় হাত দিয়ে বলল,,,”হায় আল্লাহ তুমি তো এখনো ছোট বাচ্চা।আচ্ছা সমস্যা আমি তোমাকে শিখিয়ে দেবো সব”

আমি বললাম,,,”লাগবে না আমার উনার সামনে এমনি যেতেই অনেক লজ্জা লাগে”

আর কথা বলতে পারলাম না।স্যার চলে এসেছেন।আমরা আজকেও মনোযোগ দিয়ে ক্লাসগুলো করলাম।ব্রেক দিয়েছে।আমি আর লামিসা ক্যানটিনের দিকে যাচ্ছি।হুট করে একটা ছেলের সাথো ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলাম।চোখমুখ খিচে বন্ধ করে আছি।কিছুসময় পড় ও যখন পড়লাম না থখন চোখ খুলে দেখি ছেলেটা আমায় ধরে আছে।আমি তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। ধাক্কা দেওয়ার ফলে ছেলেটা কিছুটা ধূরে সরে গেলো।আমি লামিসার হাত ধরে ক্যান্টিনে চলে আসলাম।

আমি আর লামিসা গল্প করতে লাগলাম।লামিসা দুইটা কফি ওর্ডার দিয়েছে।গল্প করার মাঝে।যেই ছেলেটার সাথে আমার ধাক্কা লেগেছে সেই ছেলেটা এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

ছেলেটা আমাকে বলল,,”তখন যে আমি তোমাকে বাঁচালাম তার জন্য তুমি আমাকে ধন্যবাদ দিলে না কেন”

আমার বিরক্তি নিয়ে বললাম,,”আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন তাই পড়া থেকে বাঁচিয়েছেন”

ছেলেটা হেসে বলল,,””সে যাই হোক আমরা পরিচিত তো হতে পারি আমি সাইফ তোমার নাম?”

আমি বললাম,,,”আমি আপনার সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছুক নই!আপনি আসতে পারেন”

সাইফ নামের ছেলেটা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি প্রচুর বিরক্ত।যায় না কেন এই ছেলে।লামিসা কফি আনতে গিয়েছিল।সাইফকে দেখে বলে,,”আপনি এখানে কেন”

সাইফ বললল,,”তোমাদের সাথে পরিচিত হতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তোমার বান্ধবী তো আমার পরিচিত হতে ইচ্ছুকই নয়।”

আমি আবার বললাম,,,”আপনি যেতে পারেন”

সাইফ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।আমি লামিসাকে বললাম,,,”ছেলেটা কি পাগল নাকি বললাম চলে যেতে তার জন্য হাসলো কেন”

লামিসা কফি খেতে খেতে বলল,,”আরে বাদ দাও।তোমার ফেসবুক আইডিটা দেও”

আমি বললাম,,”আমার তো ফেসবুক আইডি নেই”

“কি তোমার ফেসবুক আইডি নেই!তোমার ফোনটা দেও আমি খুলে দিচ্ছি।”

আমি ওকে ফোনটা দিলাম।ও আইডি খুলে দিল।লামিসা আমায় জিজ্ঞেস করল,,,”তুমি কি ছবি দিবে তোমার”

“হ্যাঁ”

আমি লামিসাকে আমার মুখ দেখা যাচ্ছে না এমন একটা পিক দিতে বললাম।ও তাই দিয়ে দিল।লামিসা বলল,,”জিজুর পুরো নামটা বলো তো”

“কেনো কি করবে”

“আরে বলোই না”

“আনভীর আয়াজ খান”

লামিসা ফেসবুকে নাম দিয়ে সার্চ দিল।হঠাৎ করে লামিসা চিল্লিয়ে উঠল।আমি বললাম,,”কি হয়েছে?”

ও আমায় আয়াজের পিক দেখিয়ে বলে,,,”এটা তোমার বর আয়াজ”

আমি পিকটা দেখে বলি,,”হ্যাঁ এই তো উনি”

এবার লামিসা বলল,,”এবার আমার কি হবে আমার ক্রাশ বিয়ে করে ফেলেছে রে”

অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলছে ও ওর ক্রাশ কে!আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,,”তোমার ক্রাশ কে আর কার সাথে বিয়ে হয়েছে?”

“আরে তোমার বর হলো ঢাকার নামকরা কোম্পানির এমডি।ফেমাস লোক,সবাই আনভীর আয়াজ বলতে পাগল।মেয়েরা তো উনি বলতেই অঙ্গান।আমিও উনার ওপর ক্রাশ খেয়েছিলাম।কিন্তু ভাগ্য কি দেখেছ উনিই আমার জিজু হয়ে গেলেন”

লাস্টের কথাটা ও মন খারাপ করে বলল।আমি ওকে শান্তনা দিয়ে বললাম,,”আরে তুমি উনার থেকে ভালো ছেলে পাবে দেখেনিও”

লামিসা আমাকে গুতা দিয়ে বলল,,”হইছে আর পাম দেওয়া লাগবে না।”

আমি আর লামিসা ক্লাসে চলে আসলাম।সব ক্লাস শেষ করে আমি আর লামিসা বের হলাম।সবাই বের হচ্ছে।আমি আর লামিসা গল্প করতে করতে বের হচ্ছিলাম গেট দিয়ে।হঠাৎ সাইফ এসে সামনে দাঁড়ালো।

“তোমার ফেসবুক আইডিটা কি দেওয়া যাবে মিস”

আমি কোনো কথা না বলে লামিসাকে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলাম।হুট করে সাইফ আমার হাত ধরে বসে।আমি অবাক হয়ে যাই।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করি।কিন্তু সাইফ আরো জোড়ে চেপে ধরে।আমি ঠাস করে চড় বসিয়ে দেই।অসভ্যতামি আমার পছন্দ না।

সাইফ চড় খেয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো।আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,”আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার।হা’উ ডে’য়ার ই’উ!”

আমি আয়াজের দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমি রেগে হনহন করে আয়াজের কাছে চলে গেলাম।উনি এতসময় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন।আমার হাত ধরেছে তাও উনি কিছুই বলেননি।আমি গাড়িতে উঠে বসে পড়লাম।রাগ লাগছে প্রচুর।

উনি এসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে।উনি গাড়ি নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলেন।আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,,”আমি বিকালে বাসায় চলে আসব এই নাও এটা খেয়ে নিও”

বিরিয়ানির প্যাকেট ধরিয়ে আমাকে কথাগুলো বলেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।আমি রাগে হনহন করে বাসায় চলে আসলাম।ব্যাগ সোফায় ছুঁড়ে মেরে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারি না কখনোই না।উনি খুব খারাপ খুব।কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।আয়াজের ডাকে ঘুম ভাঙলো।আয়াজ আমায় টেনে তুলে বললেন,,

“খাওনি কেনো”

“ইচ্ছে করেনি তাই,প্লিজ আমায় মুক্তি দিন।দিয়ে আসুন আমাকে”

আয়াজের চোখ দেখেই বুঝলাম উনি রেগে গেছেন।উনি আমায় বিছনার সাথে চেপে ধরে ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলেন।আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।উনি ঠোঁট কামড়ে ছেড়ে দিলেন।নিশ্বাস নিচ্ছি।
জোড়ে জোড়ে উনি আবার আমায় চেপে ধরে বললেন,,,”তোকে আমি ওয়ানিং দিয়েছিলাম মুক্তির কথা না ভাবতে কিন্তু তুই তো তুই আবার বললি।আজকের কথা মনে রাখিস আর খেয়ে নাও সন্ধ্যায় পার্টিতে যেতে হবে।”

উনি আমায় ছেড়ে দিলেন।আমি উনার কলার টেনে বললান,,”যাবো না কোথাও আপনার সাথে।কাপুরুষ কোথাকার অন্য একজন লোক আমার হাত ধরল আর আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ছি ভাবতে ঘৃনা লাগছে আপনি আমার স্বামী”

“অনেক বড় বড় কথা বলেছো এবার থামো খেয়ে নিয়ে রেডি হও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি”

চলবে,,,,?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here