অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_২১(বোনাস পর্ব)

0
206

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২১(বোনাস পর্ব)

“কি হয়েছে দেখি দেখি কোথায় লেগেছে”

ইটে বেঁধে পরে গিয়েছি।অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।ফায়াজ স্যার ফোনের লাইট অন করে বললেন,,”পা দেখাও দেখি কি হয়েছে”

আমি বললাম,,,”বেশি লাগেনি স্যার চলুন আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি সবার থেকে”

দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম।অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছি।পরে যেতে নিলে ফায়াজ স্যার আমায় ধরে ফেলেন।আমি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।

উনি বিরক্ত নিয়ে বললেন,,,”আমি তোমাকে ইচ্ছা করে ধরিনি সো নরাচড়া করো না আস্তে আস্তে আমার কাঁধে ভর দিয়ে চলো।”

কিন্তুই এই অন্ধকারে পাহাড় থেকে নামবো কিভাবে তার থেকে চলুন আমরা কাংলাক পাড়ায় আবার গেলাম।উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমার অস্বস্তি হচ্ছে না কেন!অন্য কেউ হলে তো আমি তার আশেপাশেও থাকতাম না।স্যারের সাথে থাকলে আমার অদ্ভুত ফিলিংস হয়।মনে হয় আমি আয়াজের কাছে আছি।

উনি আমাকে নিয়ে গ্রামের একটা বাড়িতে গেলেন।বললেন,,,,”আমরা কি আজকের রাতটা এখানে থাকতে পারি”

লোকটা বলল,,,
“কে হয় এইটা তোমার”

“আমার পিএ”

এবার লোকটা অদ্ভুতভাবে আমাদের দিকে তাকালো।আমাদের দুজনকে একটা রুমে রেখে লোকটা চলে গেলো।ফায়াজ স্যার আমায় বিছানার উপর বসিয়ে দিলেন।
উনি বললেন,,,”আজকের রাতটা কোনো মতে থাকো কালকে ডক্টর দেখিয়ে নিয়ো রিসোর্টে গিয়ে।”

কথাটা বলার পর আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলিনি।উনিও চুপ করে আছেন আমিও।কিছু সময় পর কয়েকটা মহিলা রুমে ঢুকলো।স্যারকে বাহিরে যেতে বলল।স্যার বাইরে যেতেই উনারা আমাকে শাড়ি পড়াতে লাগলো।

আমি বললাম,,,”কি করছেন আপনারা আমাকে এভাবে শাড়ি পড়াচ্ছেন কেনো?”

একটা মেয়ে বলল,,,”এই মেয়ে চুপ থাকো ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেরাও আবার মুখে বড় বড় কথা।”

আমি অবাক হলাম কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছি আমি অবাক হয়ে বললাম,,,”কি বলছেন আপনারা এইগুলো কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছি আমি আর শাড়ি পড়াচ্ছেন কেনো”

“এখন তো কিছুই জানবে না।আর শাড়ি কেনো পড়ানো হচ্ছে সেইটা একটু পরেই জানবে।”

বাইরে ফায়াজ স্যারের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে মনে হচ্ছে চিল্লাচ্ছে।আমাকে রেডি করে ধরে বাইরে নেওয়া হলো।বাইরে গিয়ে জানতে পারলাম এরা সবাই ভেবেছে আমরা নষ্টামি করি লোকটা সবাইকে বলতেই সবাই আমাদের বিয়ের ব্যাবস্তা করে।

৫ বছর আগের কথা মনে পরে গেলো।এভাবেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল।আমি সবাইকে উদ্দেশ্যে করে চিল্লিয়ে বললাম,,,”আমি বিবাহিত আপনারা এমন করছেন কেনো?উনি আমার স্যার হয়”

এরা আমাদের কোনো কথা শুনলো না জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিলো।আমি মানি না এই বিয়ে।স্যার ও হয়তো মানেন না।আমাকে সব মেয়েরা মিলে একটা ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলো।ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।টেনে ছিড়ে ফেললাম সব।

কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,”আমার আয়াজকে ছাড়া কেউ ছিলো না আর না থাকবে মানি না আমি এই বিয়ে কিছুতেই মানি না।”

বেশ রাতে ফায়াজ স্যার রুমে আসলেন।ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি নেশা করেছেন।কিন্তু উনি তো নেশা করার ছেলে না। আমি ঠিক হয়ে বসলাম।উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।ভয় লাগছে আমার যতই আমি মানি না কেন উনি তাও আমার স্বামি।

ফায়াজ স্যার এসে আমার দিকে ঝুঁকলেন।আমি পেছাতেও পারব না দেওয়াল ঘেঁষে বসে আছি।ফায়াজ স্যারের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমি উনি আমায় টান মেরে দাঁড় করালেন।ব্যাথা পেলাম কিন্তু শব্দ করলাম না।উনি আমার কোমড়ে হাত রাখলেন শিউরে উঠলাম।মনে হচ্ছে সামনের মানুষটা আয়াজ কিন্তু না উনি অন্যকেউ ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।উনি শক্ত করে ধরলেন আমায়।জানি লাভ হবে না ছাড়ানোর চেষ্টা করেও।উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছেন।

উনি বললেন,,,”তোমাকে আজ অনেক দিন পর এতো কাছ থেকে দেখছি বউ।তোমাকে আদর করতে ইচ্ছা করছে বউ খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়”

ফায়াজ আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো।ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু ছাড়ছেন না উনি।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলেন।তারপর কানে কানে ফিসফিস করে বললেন,,,”চলো তোমাকে আজকে প্রচুর আদর করি”

“ছাড়ুন আমায় প্লিজ ছাড়ুন”

উনি আমায় বিছানায় শুইয়ে দিলেন।শত চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি আমি।
|
|
সকালে উঠে দেখি উনি আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন।নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃনা হচ্ছে।কেনো আসতে গেলাম আমি এখানে।রুমের সাথে থাকা ওয়াশরুম থেকে গোসল করে আসলাম।আগের সেই জিন্স আর টপসটা পরেছি।ওয়াশরুম বের হয়ে আসতেই দেখি ফায়াজ মাথা চেপে ধরে বসে আছেন।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি এক কোনায়।

ফায়াজ আমাকে আমার কাছে এসে বলেন,,,
“কালকে রাতে কি হয়েছিল আমি কি তোমার সাথে কিছু করেছি”

“আপনি কি কিছু করবেন আমার তো নিজের প্রতিই ঘৃনা হচ্ছে।প্লিজ ফ্রেশ হয়ে আসুন রিসোর্টে যাবো আমি”

ফায়াজ অপরাধী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আমি বসে বসে কাঁদতে লাগলাম।ফায়াজ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আমার কাছে আসলেন।

চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,,,”আ’ম স’রি কালকে রাতের জন্য আর তোমাকে আমার কিছু বলার আছে”

“আমি শুনতে চাই না”

“তোমাকে যে শুনতেই হবে”

আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু উনার কথায় থমকে গেলাম।

“কি বললেন আপনি”

“আমি ফায়াজ না ইশা পাখি।আমি আয়াজ”

“আপনি মিথ্যা বলছেন”

“আমি মিথ্যা বলছি না”

“তাহলে কেনো আপনি এতো দিন নিজের পরিচয় দেননি”

উনি স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,,,,”কারণ আছে আর আমি তোমাকে এখনও বলতাম না যদি কালকে রাতে আমি তোমার সাথে”

“চুপ করুন!আপনি প্রচুর খারাপ।আমাকে ৫টা বছর কষ্ট দিয়েছেন।এখনও দিচ্ছেন।কেনো আয়াজ কেনো করলেন”

উনি আমাকে কাঁদতে দেখে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,,,”আমি বলবো তোমায় তুমি কেঁদো না জান।কষ্ট হয় খুব বেশি।”

আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,,”লাগবে না এখন আপনাকে আমাকে কষ্ট দিয়েছেন আপনি”

“আচ্ছা তুমি যদি এখন চলে যাও তাহলে আর কখনো আমাকে পাবে না আই প্রমিস আমি তোমার সামনে কোনো দিনও আসবো না”

আমি চলে যাচ্ছিলাম আয়াজের কথাশুনে দাঁড়িয়ে গেলাম।ছুটে আয়াজকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,”আপনি আবারও আমাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন।না না আমি আপনাকে আমার কাছ থেকে আর যেতে দিবো না”

“আমি যাবো না বউ তোমাকে ছেড়ে।ভালোবাসি যে তোমায় খুব বেশি।”

“কাল রাতের জন্য সরি বউ”

“যা হবার তা হয়ে গিয়েছে তাই এটা নিয়ে বেশি ভাববেন না”

আমরা রিসোর্টে চলে আসলাম।আমরা সারা রাত কোথায় ছিলাম এই নিয়ে প্রশ্ন করতে করতে পাগল বানিয়ে দিয়েছে সবাই।আয়াজ সবাইকে থামিয়ে বললেন,,,,”সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমরা কংলাক পাড়ায়ই ছিলাম।”

আমরা আরো দুই দিন সাজেক কাটিয়ে ঢাকা চলে আসলাম।এই কয়েকটা দিন আমার অসম্ভব ভালো কেটেছে।আমি যে আয়াজকে খুঁজে পেয়েছি।আমার অভিমান এখনো কমেনি।উনি উনার ভালোবাসা দিয়ে তা দূর করার চেষ্টা করছেন।সাজেক এ থাকতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমায় ফোন দিয়ে ডাকতেন।আমরা বের হয়ে আশেপাশে ঘুরে বেড়াতাম।এখন উনার পাগলামি সব বেড়েছে আগের থেকে।আমি কিছু বলতে গেলেই বলেন আগে ছোট ছিলে তাই কিছু বলতাম না কিন্তু এখন তুমি আর ছোটো নেই।এখন তো তোমাকে শুধু আদর করবো।এগুলো বলেই আমাকে চুপ করিয়ে দেন।

আমার অভিমান কমেছে।কিন্তু আয়াজের সাথে অভিনয় করছি।কালকে এসেছি ঢাকা।আজকে বন্ধ অফিস।সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানাতে গেলাম।হঠাৎ পেটে স্পর্শ পেতে চমকে উঠলাম।আয়াজের ছোঁয়া এগুলো বুঝতে পারছি।

চুল খুলে দিলেন।চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলেন।আমি ছাড়িয়ে নিলাম।

“আপনি বাসায় কিভাবে ঢুকলেন”

“আমার কাছে চাবি আছে তাই”

“আপনার কাছে চাবি কোথা থেকে আসলো”

“আছে আমার কাছে এখন খাবার দাও খিদে লেগেছে”

আমি আর আয়াজ দু’জনে খাবার খেয়ে নিলাম।জানি উনি আজ সারাদিন আমার সাথেই থাকবেন। আমি আয়াজকে জিজ্ঞেস করলাম,,,

“আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন আয়াজ আর কিভাবে এক্সিডেন্টই বা হয়েছিল?”

চলবে,,,,,?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here