অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_৭

0
119

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭

শেহজাদ যত এগিয়ে আসছে ওয়ামিয়ার কাছাকাছি তত অস্থির হয়ে পরছে ওয়ামিয়া।শেহজাদ রেগে আছে তা তার চোয়াল দেখেই বুঝতে পারছে ওয়ামিয়া।চুখগুলো লালচে আকার ধারণ করেছে।শেহজাদ ওয়ামিয়া থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাড়ালো।শেহজাদকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করছে ওয়ামিয়া।চোখ মুখ শুকিয়ে অল্প একটু হয়ে গিয়েছে।

‘কি শুরু করেছো তুমি?’

ওয়ামিয়া থমকালো।এ সে কোন শেহজাদকে দেখছে।এতোটা কঠোর,শক্ত কন্ঠে আগে তো কথা বলেনি শেহজাদ।তবে আজ কেনো?ওয়ামিয়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শেহজাদ আপ্রান চেষ্টা করছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখার।শান্ত গলায় কথা বলতে চাইছে।

‘কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায় আমি?’

শেহজাদ শান্ত গলায় কথাটা শুধালেও ওয়ামিয়ার কাছে ভয়ংকর শুনালো।ওয়ামিয়া কেঁপে উঠেছে।এ সে কোন শেহজাদ ভাইকে দেখছে।অভিমান হলো।তবে যার উপর অভিমান সে করেছে সে এগুলো বুঝবে না।ওয়ামিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘আপনি এভাবে কেনো কথা বলছো’

‘কিভাবে কথা বলছি আমি!তুমি যা করছো ভেবে করছো তো ওয়ামিয়া। তোমার ভাই বাপ জানলে কি হবে জানো তুমি?

‘কি হবে!কিছুই না।আপনার জন্য আমি সারা দুনিয়ার সাথে লড়াই করতেও প্রস্তুত।’

ওয়ামিয়া থেমে অসহায় কন্ঠে আবারও বলল,

‘আপনি একবার শুধু বলে দেখুন ভালোবাসেন।সারা দুনিয়ার বিপক্ষে গিয়ে আমি আপনার হবো’

শেহজাদের বুকটা জ্বলছে।ভালোবাসার আগুনে জ্বলছে তো সেই কবে থেকেই।ওয়ামিয়া কাঁদছে।ওয়ামিয়ার কথাগুলো বুকে লেগেছে তীরের মতো।তার প্রেয়সী বড় হয়েছে।তার কথার ধরণেই তা প্রামন করছে।শেহজাদ তবুও র্নিলিপ্ত,নির্বাক।ওয়ামিয়ার কান্নার গতি বেড়ে যায়।

‘কান্না থামাও ওয়ামিয়া’

ওয়ামিয়া ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে।শেহজাদ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার প্রহাশ চালায়।চোখ খুলে তাকায় ওয়ামিয়ার কান্নারত মুখশ্রীর দিকে।গালগুলো লাল হয়ে আছে।চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুকনা গড়িয়ে পড়ছে।শেহজাদ পকেটে হাত গুঁজলো।কিছুটা খুঁজে বের করলো।ওয়ামিয়ার দিকে রুমালটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘চোখ মুছে নাও ওয়ামিয়া’

ওয়ামিয়া হাত বাড়িয়ে রুমালটা নিলো।রুমালটা নিয়ে চোখের পানি মুছলো।তবুও গড়িয়ে পরছে।সে কেনো যে তার শেহজাদ ভাইয়ের সামনে আসলে এতো দুর্বল হয়ে পরে।ভালোবাসার জন্য হয়তো।শেহজাদ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

‘আজকের পর থেকে তোমাকে যেনো এখানে না দেখি আমি।আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা ভুলেও করবে না’

‘আমি থাকতে পারবো না’

‘থাকতে তোমাকে হবে।আমায় ছাড়া বাঁচতে শিখে নাও ওয়ামিয়া।আমি সব সময় থাকবো না’

‘তবুও আমি আপনায় না দেখে থাকতে পারবো না।আমার চোখের শান্তি হবে না।আপনায় এক পলক না দেখলে মনটা অশান্ত হয়ে যায়।’

‘এটা তোমার অভ্যাস আর কিছুই না’

‘এটা আমার অভ্যাস নয় শেহজাদ ভাই।আমার ভালোবাসা।আমি ভালোবাসি আপনায়’

‘তোমার বাপ ভাই মানবে না’

‘আপনি একবার মেনে নিন তারপর তাদের কথা ভেবে দেখবো।ভাববেন না তারা সাধু।’

‘এটা কি ধরনের কথা ওয়ামিয়া।মামু এবং মাহিম দুজনই ভালো।হয়তো তাদের সাথে সম্পর্ক ঠিক নেই আমাদের তাই বলে যা তা বলবে’

ওয়ামিয়া তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

‘অন্ধ বিশ্বাস ভালো না।’

‘চুপ থাকো তুমি।ফারদার আমার সাথে দেখা করতে আসলে আমি মামুকে জানিয়ে দেবো’

ওয়ামিয়া চোখ মুছে নেয়।হঠাৎ করেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় তার।শেহজাদ চমকায়।ওয়ামিয়া শক্ত গলায় বলে,

‘আপনি চাইছেন দূরে সরে থাকি আমি আপনার থেকে’

‘হ্যাঁ।আমি চাই তুমি আর বিরক্ত করবে না আমায়’

‘আপনি বিরক্ত হন।’

‘হ্যাঁ’

‘ঠিক আছে।আজকের পর থেকে আপনি এই ওয়ামিয়াকে দেখবেন না।তাকে নিজ হাতে কবর দিলেন আপনি এই মুহূর্তে।’

ওয়ামিয়া থেমে আবার বলে,

‘ভালোবাসি বলে ভাববেন না আমার আত্মসম্মান নেই।ওয়ামিয়া মেহেনাজের আত্নসম্মানে একবার আঘাত করলে শত চেষ্টার পরেও সে ফিরে আসবে না।ভালো না হয় আমি আপনায় দূর থেকেই বাসলাম।কথা দিলাম আপনি নিজ থেকে না আসা পর্যন্ত ওয়ামিয়া আর যাবে না আপনার কাছে।’

******

‘ইফাজ সাহেব আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’

ইফাজ ভ্রু কুঁচকে তাকায় অজিফার দিকে।তার এই মেয়ের হাবভাব মোটেও সুবিধার লাগছে না।কেমন কেমন করে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।নিজে নিজে তাকিয়ে আবার লজ্জায় রাঙা হচ্ছে।সে বেশ বিরক্ত অজিফার কান্ডে।মেয়ে মানুষ হবে ওয়ামিয়ার মতো।ওয়ামিয়াকে সে বোনের নজরে দেখে ছোট থেকেই।মেয়েটা বড্ড ভালো।

‘এই যে ইফাজ সাহেব কোথায় হারালেন’

ইফাজের ঘোর কাটলো।সে বিরক্তিকর কন্ঠে উত্তর দিলো,

‘আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে বলতে ইচ্ছুক নই আমি’

অজিফার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।হাসিটা নিমেষেই গায়েব হলো।ইফাজ এমন কড়াকড়ি উত্তর দিবে ভাবতে পারিনি কখনো।অজিফার খারাপ লাগলো।সে তো ভেবেছিলো ইফাজ হয়তো তার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে।তাই তো সে একটু বেশিই কথা বলছিলো।ভুল হয়েছে তার।

‘দুঃখিত আমি হয়তো একটু বেশিই করে ফেলেছি।তবে তবুও আমি আপনার সাথে কথা বলবো হুহ’

ইফাজ হা করে তাকিয়ে থাকে অজিফার পানে।সে ভেবেছিলো মেয়েটা হয়তো বলবে ঠিক আছে আর বিরক্ত করবো না।তবে এই মেয়ে তবুও কথা বলবে।হায় আল্লাহ।এ সে কার পাল্লায় পরলো।অজিফা মিটমিট করে হেসে বলে,

‘মুখ বন্ধ করুন ইফাজ সাহেব না হলে মাছি ঢুকে যাবে’

ইফাজ দ্রুত স্বাভাবিক হলো।সে হাসবে নাকি এই মেয়েটার উপর বিরক্ত হবে তা বুঝতে পারলো না।ইফাজের নিজের শার্টের কথা মনে পরলো।সে অজিফাকে বলল,,

‘শুনো ওয়ামিয়ার কাছ থেকে আমার শার্টটা নিয়ে দিতে পারবে’

‘শার্টটা তো ওয়ামিয়ার কাছে নেই’

‘তবে কার কাছে’

‘শার্টটা আমার কাছে।কারণ সেদিন শার্টটা ওয়ামিয়া না আমি পরেছিলাম।আর সে আমার ওড়না।’

ইফাজ আরেকবার মুগ্ধ হলো ওয়ামিয়ার কাজে।ওয়ামিয়া তার শার্টটা গায়ে তুলেনি।ইফাজ ভেবে পায় না একটা মানুষকে কিভাবে এতোটা ভালোবাসে ওয়ামিয়া।তর ভাবনার মাঝেই দেখলো ওয়ামিয়া চলে যাচ্ছে।অজিফা এক পলক ইফাজের দিকে তাকিয়ে দৌড় লাগালো ওয়ামিয়ার উদ্দেশ্যে।তার ঠিক লাগছে না ওয়ামিয়াকে।কেমন হেলেদুলে হাঁটছে।ইফাজ স্তব্ধ।কি হলো!কিছুই বুঝলো না সে।তবে কিছু একটা হয়েছে।

দৌড়ে শেহজাদের সামনে আসলো ইফাজ।শেহজাদ মলিন মুখে ওয়ামিয়ার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।ইফাজ হাঁপিয়ে উঠেছে।ইফাজ শেহজাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ভাই ওয়ামিয়া এভাবে চলে গেলো কেনো?’

‘ওর কি থাকার কথা ছিলো ইফাজ’

‘আপনি চাইলেই তো তাকে নিজের কাছে রাখতে পারেন ভাই’

‘চাইলেই সব কিছু সম্ভব না।আজকে সে বলেছে আর সে আসবে না’

‘আপনি তো ভালোবাসেন ভাই তাকে তাহলে কেনো এতো দূরত্ব’

‘বুঝলে ইফাজ কখনো কখনো তীব্র আকুলতা নিয়েও দূরে সরে যেতে হয়।’

‘কেনো ভাই কেনো’

‘ওয়ামিয়া ছোট’

‘সে অনেক ছোট না ভাই।সামনে এইচএসসি দিবে।সব কিছুই বুঝে।তার থেকে বড় কথা ভালোবাসে আপনাকে’

‘আমি চাই না ওর বাপ ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হোক’

ইফাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘জানি না ভাই কি আপনাদের শেষ পরিনতি। তবে ওয়ামিয়া আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে এটা সত্য।’

‘বাড়িতে চলো ইফাজ’

******

রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদছে ওয়ামিয়া।শেহজাদের কথায় আজ সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এভাবে বলতে পারলো।লোকটা তো তাকে ভালোবাসে তবে কেনো এমন করে।ছোটবেলায় তো কত বার বলেছে।তবে এখন না কেনো?শুধু পরিস্থিতি ভিন্ন বলে।তার কাউকে চাই না শুধু শেহজাদকে চাই।তার বাবা ভাই কেনো বুঝে না কিছু।

‘আজ আপনি আমায় একটু বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন শেহজাদ ভাই।আপনার ওয়ামিয়া কাঁদছে শেহজাদ ভাই।আপনি তো ওয়ামিয়ার চোখের পানি সহ্য করতে পারতেন না।আর আজ নিজেই কাঁদালেন আমায়।’

ওয়ামিয়ার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।আজ মন মতো কাঁদবে সে।রাস্তায় অজিফা অনেকবার জিজ্ঞেস করলেও ওয়ামিয়া।নির্বাক ছিলো।মুখ খুলেনি।বেচারি না পেরে চুপ ছিলো।ওয়ামিয়া ইগনোর করবে আজ থেকে।যদিও কষ্ট হবে।তবুও সে শেজ মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে ক্ষনিকের জন্য দূরত্ব মেনে নিবে।তাদের বিচ্ছেদ তো পাঁচ বছর আগেই হয়েছে।এখন শুধু জোড়াতালি লাগাতে চাইছে ওয়ামিয়া।

‘শেহজাদ ভাই আর সহ্য করতে পারছি না এই দূরত্ব কবে মেটাবেন।আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই পাথর মানব’

ওয়ামিয়া শেহজাদের দেওয়া রুমালটা যত্ন করে রেখে দিলো।ডাইরি খুলে লিখতে বসলো,

প্রিয়…..

ভালোবাসায় এতো যন্ত্রনা কেনো বলুন তো।আমি তো শুধু ভালোবেসেছি আপনায়।এমন ভয়ংকর অনুভূতি কারো না হোক।আজ আপনি বলেছেন আমি বিরক্ত আমাতে।তবে আমি জানি এটা আপনার মনের কথা না।আপনি আমায় ভালোবাসেন আমার থেকেও বেশি।আমি জানি আপনি কোনো না কোনো অজুহাতে আসবেন আমার কাছে।অপেক্ষায় আছি শখের পুরুষ।

ভালোবাসি পাথর মানব🖤

#চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here