দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে বসলাম।ভয় হচ্ছে অনেক,ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক।আজকে আমার বিয়ে হয়েছে,হুট করেই বিয়েটা হয়েছে।জোড় করে বিয়েটা দেওয়া হয়েছে আমাদের।১৬ বছর বয়সে বিয়ে হওয়া এখনকার যুগে স্বাভাবিক না।আমার ভয় হচ্ছে আরো একটা কারনে কিছুদিন আগে আমার বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে,বাসর রাতে ওর বর নাকি ওর শাড়ি খুলতে চেয়েছিল ও বাঁধা দিতে ওকে নাকি অনেক মেরেছিল।আর নাকি বাজে কি কাজ করতে চেয়েছিল।আচ্ছা আয়াজ ও কি আমার সাথে এমন করবে!উনি তো শহুরে শিক্ষিত ভদ্র ছেলে।
হঠাৎ দরজা লাগানো শব্দে আমার ঘোর কাটল।আয়াজ এসেছেন,মোমবাতির ঝাপসা আলোতে দেখলাম আমার দিকে একবার তাকিয়ে কাবার্ড থেকে ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।এতোক্ষণে আমার এক ঘুম দেওয়া হয়ে যেত,গ্রামে এতো রাত অব্দি কেউ জেগে থাকে না।এখন রাত বারোটা বাজে।
১০টার সময় আয়াজের কোনো বোন হয়তো,সে আমাকে সাজিয়ে দিয়ে আয়াজের ঘরে বসিয়ে গেছে।আয়াজের পরিবারের প্রায় কেউই বিয়েটা মেনে নেয়নি,উহু নেবে কি করে আমি যে গ্রামের মেয়ে।ওমন সুন্দর,শিক্ষিত ছলের সাথে কি আমার মতো এসএসসি পাশ করা মেয়েকে মানায়। আয়াজের দাদি আর বাবাই শুধু আমার সাথে কথা বলেছেন।আয়াজের দাদি আমাকে বলে গেছে,”আজকে আয়াজ যা চাইবে তাই যেনো দেই।”
“কিন্তু আয়াজ আমার কাছে কি চাইবে?”
ওনাকে দেওয়ার মতো আমার কিছুই নেই।আমি তো খালি হাতেই বাড়ি থেকে এসেছি।এইসব ভাবতে ভাবতেই আয়াজ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসেন।উনি হয়তো গোসল করেছেন,তাই গামছা দিয়ে চুল মুছছেন।উনি এবার বেডের কাছে এসে আমার পাশে বসেন,আমার ভয় লাগতে শুরু করল আমি কাঁপতে লাগলাম।উনি আমার কাঁপা-কাঁপি দেখে বলেন,
“রিলাক্স আমাকে ভয় পাবার কারণ নেই,শান্ত হও”
উনার কথায় আমার কাঁপা-কাঁপি একটু কমে।আমাকে স্বাভাবিক হতে দেখে উনি গম্ভীর কন্ঠে বলেন,
“দেখো আমাদের দু’জনের কারো ইচ্ছেতেই বিয়েটা হয়নি,কিন্তু আমি মনে করি মানুষের বিয়ে একবারই হয়।যেভাবেই হোক হয়েছে বিয়েটা,তাই আমাদের দু’জনেরই বিয়েটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”
প্রথমে উনার গম্ভীর কন্ঠ শুনে ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়েছি।তারপর আমি আয়াজের কথায় হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াই।উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।উনার তাকানোতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে তাই একটু নড়েচড়ে বসলাম।উনি হঠাৎই আমাকে বলেন,
“তুমি কি রাতে খেয়েছো”
আমি উনার কথা শুনে কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না,কারণ না বলতে আমার লজ্জা লাগছিল।উনি হয়তো আমার মুখ দেখে কিছু বুঝতে পারলেন,তাই কিছু না বলেই হয়তো দরজা খুলে বাহিরে চলে গেলেন।
আমি বসে বসে শাড়ির আঁচল মুচড়া মুচরি করতে লাগলাম।কিছুক্ষনের ভিতরেই উনি একটা খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢোকেন।প্লেটটা আমার সামনে রেখে আমাকে খেতে বলে উনি দরজা লাগাতে চলে যান।
আমি প্লেটটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিলাম।এরপর উনি আমাকে বেডে ঘুমাতে বলে,সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।আমি তো বিন্দাস মুডে ঘুমিয়ে পড়লাম।
|
|
রোদের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল।সকাল হয়ে গেছে।রুমে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাড়ে সাতটা বাজে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আয়াজ সোফাতে ঘুমিয়ে আছে।আমি উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে শাড়ি ঠিক করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলাম আয়াজও ঘুম থেকে উঠে পেরেছেন।
উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।আকাশে মেঘ জমেছে,দক্ষিণা হাওয়া বইছে।আমি চোখ বন্ধ করে পরিবেশটা উপভোগ করতে লাগলাম।এখন গ্রামে থাকলে আম্মুর বকা খেয়ে ফারিনকে নিয়ে বেরিয়ে যেতাম পরিবেশটা উপভোগ করতে,ফারিন আমার সব থেকে কাছের বান্ধবী।
“নিচে চলো সকালের খাবার খেতে হবে”
আয়াজের কথা কানে আসতেই আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম।উনিও আমার দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন,আমিও উনার পিছুপিছু নিচে চলে এলাম।
নিচে আসতেই দেখতে পারলাম সবাই টেবিলে খেতে বসে গেছে।আয়াজ গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল,আর আমাকে ইশারায় উনার পাশের চেয়ারে বসতে বলেন।আমিও কোনো কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে উনার পাশে বসে পড়লাম।সবাই আমার দিকে কেমন বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আবার নিজেদের খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।খাওয়ার মাঝখানে আয়াজের বাবা আমাকে বলেন,,
“ইশা মা খাচ্ছো না কেন”
হঠাৎ উনার কথায় হকচকিয়ে গেলাম,সবাই খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে তাকায়।সবার চাইনি দেখে ভড়কিয়ে গেলেও,নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
“এইতো খাচ্ছি হে হে”
আসলে আমি এতোক্ষণ না খেয়ে খাবার হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম।উনি হয়তো খেয়াল করে কথাটা বলেছেন।খাওয়ার শেষ সময় আয়াজ সবাইকে বললেন,
“আমি আজকেই ইশাকে নিয়ে ঢাকায় আমার ফ্ল্যাটে চলে যাবো”
সবাই আয়াজের কথায় অবাক হয়ে আয়াজের দিকে শুধু আয়াজের বাবা বাদে।উনি হয়তো জানতেন এমনই হবে।এরপর আয়াজ আমাকে উপরে যেতে বলে,আমি হাত ধুয়ে উপরে চলে আসলাম।
উনি রুমে এসে আমাকে বললেন,
“তোমার যা যা লাগবে গুছিয়ে নাও”
আমি মুখ কালো করে বললাম,”আমার তো এখানে কিছুই নেই”
আয়াজ আমাকে বলল,
“ওহ আমি ভুলেই গেছিলাম তুমি রেডি হয়ে নাও।oh shit,তোমার তো আর শাড়ি নেই।তুমি দাঁড়াও আমি আসছি।”
এই বলে উনি রুম থেকে বের হয়ে যান।কিছুসময় পর উনি একটা শাড়ি নিয়ে রুমে আসেন।শাড়িটা আমার হাতে দিয়ে বলেন,
“এটা পড়ে নাও”
এই বলে উনি উনার জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যান।আমিও তাড়াতাড়ি করে শাড়িটা পড়ে নিলাম।আমার শাড়ি পড়া শেষ হতেই উনি বের হলেন ওয়াশরুম থেকে।উনি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যান।আমিও উনার পিছুপিছু নিচে নামলাম,উনি উনার আম্মুর কাছে গিয়ে বিদায় নেন উনার আম্মু কেঁদে কেঁদে কি যেনো বলছিলেন দূরে থাকার জন্য শুনতে পায়নি।
কিছুক্ষন পর উনি আমার কাছে এসে বলেন,,
“চলো তাহলে”
|
|
দীর্ঘ ৫ ঘন্টা জার্নি করার পর আমরা আয়াজের ফ্ল্যাটের সামনে আসলাম উনি সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে লিফটে উঠলেন।৬ তলায় এসে লিফট থামতেই উনি বের হলেন পিছন পিছন আমিও বের হলাম।উনি একটা ফ্ল্যাটের সামনে এসে লক খুলে ভেতরে ঢুকলেন।আমিও পিছুপিছু ঢুকলাম।
উনি আমায় একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললেন,
“আজ থেকে এইটা তোমার রুম,আমার রুমের ধারে কাছেও যেনো যাওয়া না হয়”
আমি উনার অগোচরে মুখ ভেংচি দিলাম।তারপর বললাম,,
“আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার রুমে যাবো”
উনি আমার কথায় রেগে গেলেন হয়তো,তাই কিছুটা রাগী কন্ঠে বললেন,
“আমি তো তোমায় ভদ্র ভেবেছিলাম,এখন দেখছি ভারি অভদ্র তুমি”
আমি উনার কথার জবাব না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি তেরই পায়নি।যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখলাম রাত হয়ে গেছে।রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে আয়াজকে খোঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলাম না।হয়তো বাইরে গিয়েছেন।
আমি ফ্ল্যাটটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, ফ্ল্যাট টাতে ৩ টা রুম একটায় আমাকে থাকতে দিয়েছেন আরেকটায় উনি নিজে থাকেন আর বাকি থাকলো একটা রুম, আমি রুমটার ভিতরে ঢুকলাম। রুমটায় অসম্ভব সুন্দর কয়েকটা পেইন্টিং, আমি পেইন্টিং গুলো দেখতে লাগলাম।একটা পেইন্টিং এ চোখ আটকে গেল।একটা মেয়ে দু’পাশে বেনি করে স্কুল ড্রেস পড়ে লাফাতে লাফাতে কোথাও হয়তো যাচ্ছে,মেয়েটির পিছন পাশ দেখা যাচ্ছে শুধু।পেইন্টিং টা এতো সুন্দর যে মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার চোখের সামনেই আছে।
আমি পেইন্টিং গুলো আবার ঠিকমতো রেখে রান্না ঘরে চলে এলাম।প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।একটা ডিম ভাজতে গিয়ে রান্না ঘরের অবস্তা খারাপ করে ফেলেছি।ইশ,এখন আমার কি হবে!আয়াজকে যতটুকু দেখে বুঝলাম উনি অনেক বদ মেজাজি।
নিজেকে নিজে বললাম,”ইশারে তোর আজকে খবর আছে”
চলবে…?
#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)