#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১১
আমি না খেয়ে আগের মতোই বসে রইলাম।আয়াজ ফ্রেশ হয়ে আসলেন।এসে আমাকে আগের মতো বসে থাকতে দেখে আমাকে খাইয়ে দিলেন জোড় করে।প্লেট রাখতে চলে যান।আমি তাও আগের মতো বসে আছি।আয়াজ রুমে ঢুকলেন একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে।আমাকে শপিং ব্যাগটা হাতে দিয়ে বললেন,,,”এটা পড়ে আসো যাও।”
আমি চুপচাপ বসে থাকলাম।উনি এবার আমার কাছে আসতে আসতে বললেন,,,”আজকে মনে হয় তোমার আমার হাতে ড্রেস চেঞ্জ করতে ইচ্ছা করছে।”
আমি ব্যাগটা নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।ড্রেসটা পড়ে বের হতে লজ্জা লাগছে।সাদা রঙের একটা গাউন।গলাটা একটু বড় আমি গলাটা উঁচু করে বের হলাম।উনি বিছানায় বসে ফোন দেখছিলেন।আমাকে বের হতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন।আমাকে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে সুন্দরভাবে ওড়না পড়িয়ে দিলেন।তারপর হালকা সাজিয়ে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আয়াজের দিকে।উনি সাজাতেও পারে।হুট করে আয়াজকে জিজ্ঞেস করে বসলাম,,”আপনি সাজাতেও পারেন!কিভাবে শিখলেন?”
আয়াজ মুচকি হেসে বলল,,”ইউটিউব থেকে দেখে শিখেছি।”
আমরা রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।পার্টিতে ঢুকার সাথে সাথে সবাই হামলে পড়ল আয়াজের উপর।আয়াজ আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলেন।সবাই জিজ্ঞেস করছিলো আমি কে!উনি বলেছেন সেটা একটু পরই জানতে পারবে সবাই।আয়াজ আমাকে নিয়ে তার ফ্রেন্ডের কাছে গেলেন। একটা মেয়ে আমাকে দেখে বলল,,
“আয়াজ এইটাই ইশা”
আয়াজ মাথা নাড়ালেন।উনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে,,,”তোমাকে দেখার অনেক দিনের শখ ছিল।জানো আয়াজ দু’বছর আগে থেকে তোমার কথা বলেছে আমাদের।”
“আহ আহি থাম তুই”
আয়াজের কথায় আহি মেয়েটা থেমে গেলেন।কি বললো আহি নামের মেয়েটি দুই’বছর।কিন্তু উনার সাথে তো আমার দেখাই এখনো একমাস হয়নি।তাহলে কি উনি আমায় আগে থেকে চিনতেন।কি ভাবছি আমি উনি আমায় কিভাবে চিনবেন।উনি তো আগে আমাদের গ্রামেই যাননি।আয়াজ আমাকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।আহি আপুর সাথে আমার অনেক ভালো বন্ডিং হয়ে গেল কয়েক মূহুর্তেই।উনার সাথে গল্প করতে লাগলাম।আহি আপু আর ইমান ভাইয়া কলেজ লাইফ থেকেই নাকি রিলেশনে ছিলেন।তিনবছর হলো উনারা বিয়ে করেছেন।উনাদের একটা ছোট মেয়েও আছে একবছরের।
আমি আর আহি আপু অনেক সময় গল্প করলাম।আপুর সাথে কথা বলে বুঝলাম আয়াজ সত্যিই আমায় অনেক আগে থেকেই চিনতেন।
আমাদের কথার মাঝেই আয়াজ আমার হাত টেনে স্টেজে নিয়ে গেলেন।
I would like to introduce my wife to all of you. Meet my wife Esha Ayat.
আমি আয়াজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।আমি কখনো ভাবিনি উনি আমায় এভাবে সবার সামনে নিজের ওয়াইফ বলবেন।
আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়াজ আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলেন,,,”আমি তোমারই তাই এখানে এভাবে না দেখে বাসায় গিয়ে আমাকে নিজের সামনে বসিয়ে দেখো”
উনার কথা শুনে দ্রুত অন্যদিকে তাকালাম।সবাই আমার সাথে পরিচিত হতে আসলেন।আয়াজ আমায় খুব সুন্দর করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।আয়াজ আমায় আহি আপুর কাছে রেখে সবার সাথে কথা বলতে গেলেন।আহি আপুর সাথে কথা বলতে বলতে আমি সফট ড্রিংক নিলাম।আমি আর আপু অনেক সময় গল্প করলাম।এর ভেতরে একটা বাচ্চা এসে আমাকে ডেকে সুইমিং পুলের সাইডে নিয়ে গেল।বাচ্চাটা আমাকে রেখে দৌড়ে চলে গেল।আমি পুলের একদম কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম।কেউ হুট করে আমায় ধাক্কা মারল।
আমি ঠাস করে সুইমিং পুলে পড়ে গেলাম।গ্রামে থাকলেও আমি সাঁতার পারি না।অনেক বার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।আমি পানিতে হাবুডুবু খেতে লাগলাম।আরো গাউন পড়া। আস্তে আস্তে চোখটা বন্ধ হয়ে আসছে।ঝাপসা চোখে দেখলাম কেউ আমাকে তার সাথে জড়িয়ে নিলেন।তারপর আর কিছু মনে নেই।
চোখ খুলে আয়াজের মুখটা দেখি।উনি অস্তির হয়ে আমাকে ডাকছেন।আমাকে একটা সোফায় শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার কে কল দিলেন।আমি অবাক হয়ে উনার অস্থিরতা দেখছি।
উনি সবাইকে এখানে থাকতে বললেন।আর হোটেল থেকে যেন কেউ বের না হতে পারে তার নির্দেশ দিলেন।তারপর সবাইকে এক জায়গায় দাঁড় করালেন।উনি একটা মেয়ের সামনে গিয়ে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মারলেন।
মেয়েটাকে সবার সামনে এনে বললেন,,,”তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! তুমি আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছ তোমাকে তো আমি আজকে মেরেই ফেলবো”
মেয়েটাকে আয়াজ আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারলেন।আমি দৌড়ে আয়াজের কাছে গিয়ে উনাকে থামাই।নাহলে মেয়েটা মরেই যেতো।এমনিতেও ঠোঁট কেটে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে।
আয়াজকে জিজ্ঞেস করলাম,,,”এটাই কি নশিন”
উনি হ্যাঁ বলতেই আমি ওকে গিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারলাম।আয়াজ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি বাঁকা হেসে নশিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,”যেটা আমার সেটা শুধু আমারই। আমি খুব ভালো করেই জানি তোদের মতো বেহায়া মেয়েদের কীভাবে সোজা করতে হয়”
নশিন আমাকে চড় মারতে আসলেই আমি ওর হাত ধরে ফেলি।হাত মুচড়ে ধরি।
“তুই আবার সেই একই ভুল করেছিস,আমার গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিস তোকে একটা শিক্ষা না দিলে হচ্ছে না।”
আমি ওকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মাড়লাম।তারপর একটা মহিলা ওয়েটারকে ডেকে বললাম,,,
“একে হোটেলের স্টোর রুমে বন্ধ করে দাও।আর হ্যা এক বোতল পানি সহ।একদিন থকবে বুঝেছো।আমি যদি জানতে পারি ওকে কেউ একদিনের আগে বের করেছে তো তার চাকরি হুস”
মহিলাটি নশিনকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন।নশিন চিল্লিয়ে বলল,,,
“আমি তোকে ছাড়ব না তোকে মেরে আমি আয়াজ নিজের করে নেবো তুই দেখে নিস”
“ওর কথায় আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,,,তুই যা করার করে নিস।আমি ও ইশা আমার কিছুতে হাত বাড়ালে সেই হাত আর হাত থাকে না বুঝলি।আগে আজকে কি করবি তাই ভাব”
আমি আয়াজের কাছে যাই।আয়াজ হা করে তাকিয়ে আছেন।হয়তো ভাবতেই পারেননি আমার এমন রূপ কোনোদিন দেখবেন।আমি উনার এভবে তাকিয়ে থাকা দেখে বলি,,,
“এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই আমি পাত্তা মোটেও দেবো না হুহ।আমি এখনো সকালের কাজের জন্য রেগে আছি”
উনি আমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন।আমরা বাসায় চলে আসলাম।আজকে আমায় সব জানতেই হবে।ফ্রেশ হয়ে আয়াজের রুমে চলে আসলাম।উনিও মাত্রই ওয়াশরুম থেকে বের হলেন।আমি উনাকে বললাম,,,”আজকে কিন্তু আপনাকে সব বলতেই হবে গোমড়ামুখো”
উনি বললেন,,,”এখন সঠিক সময় না সব বলার।সময় আসুক আমি তোমায় সব বলব আমার পিচ্চি বউ”
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,,”আমি মোটেও পিচ্চি নই!কবে সেই সময় আসবে আয়াজ?”
“কি কি বললে তুমি আয়াজ আরেকবার বলো না পিচ্চি বউ।তোমার মুখে আমার নামটা শুনতে অনেক ভালো লাগছে”
আমি কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললাম,,”বলুন আপনি কি আগে থেকেই আমাকে চিনতেন”
উনি আমায় টেনে বারান্দায় নিয়ে গেলেন।আজকেও মনে হয় বৃষ্টি হবে।ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে।উনি আমায় দাঁড় করিয়েে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।চুলে নাক ডুবিয়ে দিলেন।উনার স্পর্শে কেঁপে উঠলাম।আমি উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।
উনি করুন কন্ঠে বললেন,,,”থাকো না প্লিজ কিছুক্ষণ এভাবে”
আমি বললাম,,,”বলুন না আপনি আমাকে কবে থেকে চিনেন আর কিভাবে?”
“আমি তোমাকে ২ বছর আগে থেকে চিনি।আমি তোমাকে প্রথম দেখি ডখন তুমি স্কুল থেকে আসছ ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে বেনুনি ধরে লাফাতে লাফাতে।আর এখন কিছুই বলব না”
আমি আয়াজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম,,,”আমি ঘুমাতে গেলাম টাটা”
উনি আমায় টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন।দু’জন দু’জনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।উনি ফিসফিস করে বললেন,,,
“আমি এতোদিন ভাবতাম আমার পিচ্চি বউ এখনো অনেক ছোট রয়েছে।আজকে আমি বুঝে গেছি আমার পিচ্চি বউ আর পিচ্চি নেই।তুমি আজকে থেকে আমার সাথে থাকবা”
আজ থেকে উনার সাথে থাকতে হবে।আমি তো লজ্জায় মরেই যাবো।হায় আল্লাহ এখন আমি কি করব।উনি তো আমাকে ছাড়বেনও না।আমাকে কথা না বলার সুযোগ দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।লাইট অফ করে এসে নিজেও শুয়ে পড়লেন।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,,
“এখন আর কোনো কথা না চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো”
অস্বস্তি নিয়ে শুয়ে থাকলাম কিন্তু ঘুম আসছে না।উনি মনে হয় এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন।আমি উনার দিকে ফিরে দেখলাম ঘুমিয়ে পড়েছেন।জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে আয়াজের মুখে পড়ছে।আমি উনার দিকে ঝুকে উনার কপালে একটা চুমু দিলাম।হুট করে উনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন।আর বললেন,,,
“জেগে থাকলে তো একটু ও আদর করো না কিন্তু ঘুমিয়ে থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করার কি আছে!জেগে থাকলেই আমায় আদর করতে পারো”
আমি উনার কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।আমি ভাবতেই পারিনি উনি না ঘুমিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করে ছিলেন।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,”আপনি এখনো ঘুমাননি কোনো”
উনি বললেন,,,”ঘুম আসছিলো না তাই।কিন্তু এখন প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দাও”
আমি উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,,,”ছাড়ুন আমায়। আমি আপনাকে ঘুমাতে নিষেধ করেছি নাকি!আমাকে ছেড়ে দিয়ে ঘুমান”
উনি ঘুম ঘুম কন্ঠে বললেন,,”তোমাকে ছাড়লে তো আমার ঘুমই আসবে না”
আমি আর কথা বাড়ালাম না।উনাকে যে কিছু বললেও এখন লাভ হবে না সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।তাই নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
|
|
সময় নিজের গতিতে চলে।আজ সাতদিন হয়েছে ওই ঘটনার।আজকে আমি আর আয়াজ আবার আমাদের বাসায় যাচ্ছি।উনি নাকি আজকে সব প্রমান করে দিবেন।আজকে আমার ভয় লাগছে না।এখন উনি সাথে থাকলে কিছুই ভয় লাগে না।আমি এতো দিনে বুঝেছি উনি আমায় প্রচন্ড ভালোবাসেন।কিন্তু এখনো মুখে বলেননি।
চলবে,,,,,?
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)